Follow us
Search
Close this search box.

জলপাইগুড়ি থেকে ডুয়ার্স হয়ে নেওড়া ভ্যালি (শেষ পর্ব)

জলপাইগুড়ি থেকে ডুয়ার্স হয়ে নেওড়া ভ্যালি (শেষ পর্ব)

প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের লেখা দুটি পড়তে পারেন নীচের দুই লিঙ্কে
প্রথম পর্বঃ https://torsa.in/jalpaiguri-via-duars-to-newra-valley/
দ্বিতীয় পর্বঃ https://torsa.in/jalpaiguri-to-dooars-to-newra-valley-phase-ii/

 

আজ ১৯ অক্টোবর। চিসাংয়ের হোমস্টেতে ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা ফের পথে। চলেছি কোলাখাম। পথে দেখব ছাঙ্গে ফলস। আবার দেখা হল জলঢাকার সঙ্গে। আপন মনে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। ঝালং, চালসা, ফাগু হয়ে গাড়ি মালবাজার বাইপাসের রাস্তা ধরল। চায়ের বাগান, জঙ্গল, পাহাড়ি রাস্তা। কোথা দিয়ে রাস্তাতেই কেটে গেল ঘন্টা পাঁচেক সময়। ওই চলাই তো একটা ভ্রমণ। আমরা ছাঙ্গে পৌঁছালাম। বর্ষা-পরবর্তী জলপ্রপাত উদ্দাম। বাতাসে ইলশেগুড়ি জলকণা। খাড়াই সিঁড়ি ভেঙ্গে প্রপাতের নীচের দিকে নামা যায় বটে, কিন্তু সে বড় কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কোথাও কোথাও সিঁড়ি নেই।

ছাঙ্গে ফলস। ফটো সৌজন্যঃ ইন্ডিয়া মাইক।

অতঃপর আমরা এসে উঠলাম কোলাখামের দি নেস্ট রিসর্টে। নেওড়া ভ্যালির প্রান্ত ঘেঁষে কোলাখামে পা রেখেই মনটা ভালো হয়ে গেল। ৬২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কোলাখামের পাহাড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপের দিকে নির্নিমেষে চেয়ে থাকতে হয়। জানা গেল, নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন হওয়ায় মোলাকাত হয়ে যেতে পারে বন্য জন্তুর সঙ্গে। না, বন্যপ্রাণীর মুখোমুখি হইনি আমরা, তবে নানা জাতের পাখি চোখে পড়েছে।

কোলাখাম থেকে দেখা সকালের কাঞ্চনজঙ্ঘা। ফটোঃ লেখক।

আগ্রহীরা নেওড়া ভ্যালির নানা পথে ট্রেক করতে পারেন। আমরা পায়ে হেঁটে কোলাখাম গ্রামের খানিকটা ঘুরে এলাম। সেই পরিক্রমায় পাহাড়ি জীবন ও প্রকৃতির নানা ছবি দেখা গেল। কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দেখে প্রাণ ভরে গেল। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে কোলাখাম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও দেখা পাওয়া যায় পাণ্ডিম, কাবরু, কাবরু ডোম শৃঙ্গেরও।

পরের দিন, অর্থাৎ ২০ অক্টোবর আমরা প্রথমে গেলাম লাভায়। শহরটাকে ঘিঞ্জি মনে হল। ঘুরে দেখলাম লাভা মনাস্ট্রি। বিশালাকার মনাস্ট্রি। ওই মনাস্ট্রির উপর থেকে এক অন্য লাভাকে চাক্ষুষ করা যায়। সে লাভা কিন্তু খুব সবুজ। মনাস্ট্রির পূর্ব দিকটায় ঘন সবুজ উপত্যকা, পাহাড়ের ঢাল দেখে মনে হয়েছে, লাভায় থাকার পরিকল্পনা থাকলে শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে একটু দূরে থাকাই ভালো।

লাভা মনাস্ট্রি চত্বর। ফটো সৌজন্যঃ ট্র্যাভেল ট্রায়াঙ্গল।

লাভা থেকে পাহাড়, জঙ্গলের পথ ধরে আমাদের গাড়ি চলল রিশপের উদ্দেশে। পাথুরে রাস্তা। প্রাচীন সব গাছের গুড়িতে মসের প্রলেপ। একটু নজর রাখলে অর্কিডগুচ্ছের দেখা মিলতে পারে এ পথে। কাঞ্চনজঙ্ঘার সুদীর্ঘ রেঞ্জ দেখলাম রিশপ থেকে। রোদ্দুরে ঝকঝক করছিল মহামহিম কাঞ্চনজঙ্ঘা। হাতে খানিক সময় থাকলে লাভা থেকে ট্রেক করে রিশপ আসা যায়। রিশপে আমাদের থাকার পরিকল্পনা ছিল না। ওই যাকে বলে ঝাঁকিদর্শন। তবে রিশপে একটা রাত থাকতে পারলে ভালো হয়। কারণ, রিশপ থেকে সকালের সুদীর্ঘ কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জে সূর্যোদয়ের দৃশ্য অসাধারণ। ছবিও দেখেছি সেরকম কিছু দৃশ্যের। আবার আসিব ফিরে, এরকম একটা ইচ্ছে বুকে নিয়ে আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম।

রিশপ। ফটো সৌজন্যঃ পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন।

ফেরার পালা এবার। গন্তব্য শিলিগুড়ি। পথে পড়ল পাপরখেতি। ডুয়ার্সের আরেক অফবিট ভ্রমণ ঠিকানা পাপরখেতি। পাহাড়, নদী, অরণ্য, কুয়াশার রহস্য, বেশ লাগল জায়গাটা। গরুবাথানের পথে লাভা থেকে পাপরখেতি ২২ কিলোমিটার। ডুয়ার্স ভ্রমণের পরিকল্পনায় পাপরখেতিকে যুক্ত করে নেওয়া যেতে পারে বলে মনে হয়েছে। অন্তত একটা দিন শান্ত পাপরখেতিতে কাটানো যেতেই পারে।

থেকে যেতে ইচ্ছে করছিল পাপরখেতিতে। কিন্তু এ যাত্রায় সে উপায় নেই। গরুবাথান, ওদলাবাড়ি পেরিয়ে আমরা পৌঁছলাম গজলডোবায়। প্রশস্ত তিস্তার শান্ত, সুনীল জলরাশি, অনুচ্চ সবুজ পাহাড়, পাখির কলকাকলি নিয়ে এক বাঙ্ময় ছবি যেন গজলডোবা। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে গজলডোবা বড়জোর ২০ কিলোমিটার। এখানে থাকার জন্য রয়েছে ‘ভোরের আলো’ আবাস। গজলডোবায় আমরা ধীরেসুস্থে মধ্যাহ্নভোজন সারলাম।

গজলডোবা

সন্ধ্যা নাগাদ শিলিগুড়ি পৌঁছানো গেল। আলোকিত, ব্যস্ত শিলিগুড়ি। মানসচক্ষুতে পাহাড়, অরণ্য, নদীর সব ছবি ভাসছে। বুকের মধ্যে সবুজের আঘ্রাণ। শিলিগুড়ির এক হোটেলে উঠেছিলাম। কাল দার্জিলিং মেলে কলকাতায় ফেরা।

রাত্রিবাস যেখানে যেখানে

তিস্তা পর্যটক আবাস (পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের লজ, জলপাইগুড়ি), ফোনঃ ০৩৫৬১ ২৫৬ ১৫৮।
গরুমারা এলিফ্যান্ট ক্যাম্প, ফোনঃ ০৩৫৬১ ২৬৬ ৩৪০, ৮৩৩৭০৬৬৮৮২।
পঁয়তাল্লিশ গাঁও হোমস্টে, রঙ্গো, জলঢাকা, ওয়েবসাইটঃ https://paitalish-gaon-homestay-rongo.business.site
দি ওয়াইল্ড উডস রিট্রিট, চিসাং, কালিম্পং, ফোনঃ ৮৯০০৩৭০৮০১।
দি নেস্ট, কোলাখাম, কালিম্পং, ফোনঃ ৯৮৩০৬৮৯১৭৭, ৯৮৩০১০৭৭৮০।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *