Follow us
Search
Close this search box.

সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যের শহর শিলং

সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যের শহর শিলং

‘স্কটল্যান্ড অফ দি ইস্ট’। শিলংয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া ঔপনিবেশিক ইংরেজরা উত্তর-পূর্ব ভারতের শিলং মালভূমিকে প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড নামে চিহ্নিত করেছিল। ওই ‘স্কটল্যান্ড অফ দি ইস্ট’ কথাটি নিয়ে আমার একটু আপত্তিই আছে। প্রথম কথা, শিলং যদি প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড হয়ে থাকে, তাহলে স্কটল্যান্ডকে কেন পাশ্চাত্যের শিলং বলা হবে না? দ্বিতীয়ত, স্কটল্যান্ডের সঙ্গে শিলংয়ের যে খুব মিল পেয়েছি এমনটা নয়। ব্যক্তিগত ধারণার কথা বলছি অবশ্য। বরং ইংল্যান্ডের ‘পিক ডিস্ট্রিক্ট’ নামে খ্যাত ডার্বিশায়ারের সঙ্গে অনেক বেশি মিল খুঁজে পেয়েছি শিলংয়ের।

সরকারি ভাবে আমি ব্রিটিশ নাগরিক। জন্ম ইংল্যান্ডে। কর্মও ওদেশে। থাকি ম্যাঞ্চেস্টারে। ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করি। আর ছুটিছাটা পেলেই চলে আসি ভারতে। বর্তমানে বাবা-মা থাকেন কলকাতায়। সেটা একটা টান। আর বেড়াবার জন্য এ দেশের জুড়ি নেই। ইউরোপের চেয়ে আমাকে অনেক বেশি টানে ভারতের ভৌগলিক, প্রাকৃতিক বৈচিত্র। আর কত জনগোষ্ঠী। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ধারা।

বর্ষশেষের ছুটিতে কলকাতায় এসেছিলাম। আর জানুয়ারিতে (২০২৩) কয়েক দিনের জন্য বেড়িয়ে এলাম শিলং তথা মেঘালয় থেকে। এই প্রথম যাওয়া। প্রথম দর্শনেই শিলংয়ের প্রেমে পড়েছি আমিও। কলকাতা থেকে বিমানে গুয়াহাটি। সরাসরি শিলংয়েই পৌঁছানো যেত বিমানে। কিন্তু সড়কপথে উমিয়াম লেক দেখতে দেখতে যাব বলে গুয়াহাটি। সেরকমটিই চলেছি। কুয়াশামাখা বাতাসের ঝাপটা লাগছে চোখেমুখে। লেকের জলে নানা রঙের বোট ভাসছে। এই উমিয়াম লেক অঞ্চলটির সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের লেক ডিস্ট্রিক্টের অনেকটা মিল পাওয়া যায়। জানি, এভাবে তুলনা টানা চলে না। সেটা মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। কিন্তু ঝামেলাটা পাকিয়ে দিয়ে গেছে তো ওই ইংরেজরাই।

আমেরিকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের কত নাম। সারা বিশ্ব জড়ো হয় সেখানে। আমি মেঘালয়ের লইতলাম ক্যানিয়ন দেখলাম। বিষ্ময়কর গিরিখাত। রঙে-রূপে, গাম্ভীর্যে, সৌন্দর্যে প্রকৃতির এক অবাক করা সৃষ্টি এই লইতলাম ক্যানিয়ন। শিলং শহর থেকে লইতলাম ২৪ কিলোমিটার।

আমার বেড়ানোটা ওই যাকে বলে পয়েন্ট অনুসারে হয় না। পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াই অনেকটা। আঞ্চলিক মানুষজনের সঙ্গে কথা বলি। কখনো বা গাড়িতে চলতে থাকি। হয়তো অনামী কোনও জায়গা ভালো লেগে গেল। সেখানে খানিক সময় কাটানো গেল। এরকম ইতস্তত বেড়াতে বেড়াতে কত যে চার্চ দেখলাম। ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যের সুন্দর সুন্দর চার্চ।

কোনও জায়গায় আধিপত্য বিস্তারের আগে বা জায়গাটিকে নিজেদের বসবাসযোগ্য করে নেওয়ার জন্য সেই জায়গাটিতে আগে খ্রিস্টধর্মের একটা ভিত্তি তৈরি করে নিত সেকালের ইংরেজরা। বৃহত্তর শিলংও তার ব্যতিক্রম নয়। অবশ্য শুধু চার্চের কথা বললেই হবে না। আধুনিক শিক্ষার প্রসারের জন্য স্কুলও তৈরি করত ব্রিটিশরা। গারো আর খাসি মেঘালয়ের দুই আদি জনগোষ্ঠী। খ্রিষ্টধর্ম মেনে চলেন বহু মানুষ। আবার এঁদের মধ্যে অনেকেই একইসঙ্গে প্রকৃতির উপাসক। খাসি ও গারোর পাশাপাশি ইংরেজি মেঘালয়ের সরকারি ভাষা। চলতে ফিরতে দেখেছি, দোকানদার, গাড়িচালক, সাধারণ মানের রেস্তোরাঁর কর্মী বেশ ইংরেজি বোঝেন।

পুলিশবাজার এলাকাটিকে শিলং শহরের কেন্দ্রস্থল বলা চলে। হোটেল-রেস্তোরাঁ, বার, দোকান-বাজার, গাড়ির ঘাঁটি, সব মিলিয়ে পুলিশবাজার সদাব্যস্ত। শপিংয়ের কেন্দ্রও বটে। চাইলে আঞ্চলিক মানুষজনের সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ও হয়ে যাবে এখানে। পায়ে পায়ে একটু দূরে চলে গেলে শিলংয়ের রূপ রস গন্ধ বর্ণ উন্মোচিত হতে থাকবে। বাড়িঘরের গঠনে, সজ্জায় রুচিশীলতার ছাপ স্পষ্ট। ইংরেজরা শিলংয়ের সংস্কৃতিতে, স্থাপত্যে যে একটা বড় রকমের ছাপ রেখে গেছে তা মানতেই হবে।

শিলং বেড়াতে গেলে শিলং পিক, এলিফ্যান্ট ফলস, ওয়ার্ডস লেক ইত্যাদি তো দেখবেনই। দেখে আসবেন ডন বস্কো মিউজিয়ামটিও। অসাধারণ একটি মিউজিয়াম এটি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে মনে রাখার মতো একটা পরিচয় ঘটে যাবে এখানে।

চেরাপুঞ্জি, মাওলিনং গিয়েছিলাম। নৌকায় চড়ে ডাওকি নদীতে বেড়িয়েছি। সবই ভালো লেগেছে। তবে শিলং শহরটা মনের ক্যামেরায় তোলা রইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *