Follow us
Search
Close this search box.

পিরামিডের দেশে

পিরামিডের দেশে

প্রথম পর্ব

দিল্লি বিমানবন্দর থেকে গালফ এয়ারের বাহরিনগামী বিমান উড়ল ভোর ৫-৪০-এ। বাহরিন থেকে কায়রোর বিমান ধরতে হবে। যাচ্ছি পিরামিডের দেশ ইজিপ্ট তথা মিশরে। আজ ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২। আগের দিন রাতে কলকাতা থেকে দিল্লি বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছিলাম। বাহরিনের বন্দর থেকে বিমান উড়ল সময়মতোই, বেলা সোয়া ১০টায়। ইজিপ্টের রাজধানী শহর কায়রো পৌঁছালাম দুপুর ১টা নাগাদ। কলকাতার সঙ্গে তুলনা করলে কায়রোর সময় সাড়ে ৩ ঘন্টা পিছিয়ে। নিয়মমাফিক করনীয় কাজগুলো সেরে বেরিয়ে এলাম বিমানবন্দর থেকে। গরমের দেশ হলেও এই শীতের মরসুমে কায়রোর আবহাওয়া বেশ মনোরম।

গাড়ি চলেছে হোটেলের পথে। উঠব পিরামিডস পার্ক রিসর্ট হোটেলে। কায়রো এয়ারপোর্ট থেকে দূরত্ব ৫৪ কিলোমিটার। কায়রো শহরের মধ্যস্থল থেকে কায়রো বিমানবন্দর ২২ কিলোমিটার। কায়রো শহরের জানজট নিয়ে অনেক কথা শুনেছি অভিজ্ঞদের কাছ থেকে। বিষয়টি নিয়ে একটু আশঙ্কাতেই ছিলাম। তবে তেমন কিছু ঘটেনি। প্রচুর গাড়ি, প্রচুর মানুষ রাস্তায়। এই ভরদুপুরে তা তো হবেই। জনসংখ্যার বিচারে ইজিপ্ট পৃথিবীর চতুর্দশতম জনবহুল দেশ। প্রচুর সাদা চামড়ার মানুষজন চোখে পড়ছে রাস্তায়। পর্যটক বলেই মনে হচ্ছে। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার টানে সারা পৃথিবী থেকে ভ্রমণার্থীরা আসেন এ দেশে। শীতের কায়রো জমজমাট।

আফ্রিকার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিম এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ইজিপ্টের উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পুবে রেড সি বা লোহিতসাগর, উত্তর-পূর্বে প্যালেস্তাইনের গাজা স্ট্রিপ ও ইজ্রায়েল, দক্ষিণে সুদান ও পশ্চিমে লিবিয়া। দেশটির সরকারি নাম আরব রিপাবলিক অফ ইজিপ্ট। প্রধান ভাষা আরবি। ধর্ম মূলত ইসলাম। কত সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন ঘটে গেছে দেশটিতে। নীল নদ দিয়ে বয়ে গেছে কত জল। বিদ্রোহ, বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ইজিপ্ট ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয় ১৯২২ সালে।

হোটেলে পৌঁছানো গেল। বেশ বড়সড় বিলাসবহুল হোটেল। বিমানে, বিমানবন্দরে কেটেছে অনেকটা সময়। একটু ক্লান্ত তো বটেই। মধ্যাহ্নভোজনের পরে খানিক বিশ্রামান্তে তৈরি হয়ে নিলাম। গিজার পিরামিডে লাইট আ্যান্ড সাউন্ড শো দেখতে যাব। গিজা আমাদের হোটেলের কাছাকাছি। ৭-৮ কিলোমিটার হবে। সন্ধ্যায় শুরু হল অনুষ্ঠান। ধ্বনি-সহযোগে পিরামিডের গায়ে ফুটে উঠছে ইজিপ্টের ইতিহাসের নানা অধ্যায়। ভালোই লাগছিল। বাদ সাধলো ঠান্ডার প্রকোপ। শীতের রাতের মরুভূমি এমনিতেই শীতল। সেইসঙ্গে ঝোড়ো ঠান্ডা হাওয়ার দাপট সুস্থির হয়ে বসতে দিচ্ছিল না। যথেষ্ট শীতের পোশাকে আচ্ছাদিত হয়ে বসার দরকার ছিল। স্ফিংসের গায়ে রঙিন আলো পড়েছে। হোটেলে ফিরতে উদ্যোগী হলাম।

রাতের আলোকিত স্ফিংস।

গিজার পিরামিড

পরের দিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর সকালে হোটেলে প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়লাম গিজার উদ্দেশে। দিনের আলোয় ঘুরেফিরে পিরামিড দেখব। আগেই বলেছি, হোটেলের কাছাকাছিই পিরামিডের প্রান্তর। জানা গেল, আগে অনেক দূর থেকে পিরামিডের চূড়া দেখা যেত। হাইরাইজের রমরমায় সে দৃশ্য অদৃশ্য হয়েছে। গিজায় পাশাপাশি দুটি পিরামিড, তৃতীয়টি একটু দূরে এবং তুলনামূলক ভাবে আকারেও একটু ছোট। যেন মেলা বসেছে পিরামিড প্রান্তরে। প্রচুর দর্শনার্থী। তার চেয়ে বেশি স্যুভেনির বিক্রেতার সংখ্যা। পিরামিডের ছবি ছাপানো টি-শার্ট, কাঠ, পাথরের তৈরি পিরামিড, তুতেনখামেনের মুখোশ-সহ নানাকিছু বিক্রির চেষ্টায় রয়েছে ফেরিওয়ালারা। কখনো কখনো কেনার জন্য ঝুলোঝুলি।

একসময় একটু দূর থেকে দেখছিলাম তিনটি পিরামিডকে। কোন কালে ভিনগ্রহ থেকে এসে পড়েছে বলে মনে হয়। তবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করি কি করে? বৃহত্তম পিরামিড ‘খুফু’ তৈরি হয়েছিল খ্রীষ্টপূর্ব ২৬ শতকে। কী বিশাল মাপের স্থাপত্য। হাজার হাজার বছর আগে ধূ ধূ মরুভূমিতে কী বিশাল কর্মযজ্ঞ, প্রায় অভাবনীয়। এখন কি পৃথিবীটা ছোট হয়ে গেছে? ওই যে স্ফিংসের মূর্তিটি, এক নারীর মাথা, সিংহের দেহ এবং শরীরের সঙ্গে জোড়া দুটো পাখির ডানা, ওই বিশাল মাপের আপাত-অদ্ভুদ ভাস্কর্যে একসময় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিল মানুষের বিশ্বাস, সংস্কৃতি, ধর্ম, ঐতিহ্যের সম্মিলিত ভাবনা। ইজিপশিয়ান ও গ্রিক পুরাকথায় স্ফিংসের উল্লেখ পাওয়া যায়।

উচ্চতম পিরামিডটির নাম ‘খুফু’ (৪৮১ ফুট),’গ্রেট পিরামিড’ ও ‘চেওপস’ নামেও খ্যাত এই পিরামিড এবং পৃথিবীর সপ্ত-আশ্চর্যের অন্তুর্ভুক্ত। উচ্চতার নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে থাকবে খাপরে (৪৭১ ফুট) আর ‘মেনকউরে’ (২১৩ ফুট)। আর পিরামিডের প্রহরায় রয়েছে স্ফিংস। এরকমটাই বিশ্বাস ইজিপ্টের মানুষের।

সাকারার স্টেপ পিরামিড

গিজা থেকে গেলাম সাকারা। গিজা-সাকারা দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। আদি স্টেপ পিরামিড দেখলাম এখানে। মোট ছ’টি ধাপে উপরের দিকে উঠেছে এই পিরামিড (উচ্চতা ২০৫ ফুট)। গিজার পিরামিডের আন্তত একশ বছর আগে তৈরি হয়েছিল সাকারার এই পিরামিডটি। সে হিসেবে প্রাচীনতম পিরামিড এটিই। এক সময় এই পিরামিডকে স্বর্গের সিঁড়ি বলা হত। ফারাও জোসেরের মৃতদেহ সমাধিস্থ করার জন্য ইমহোটেপের পরিকল্পনা অনুসারে খ্রীষ্টপূর্ব ২৬ শতকে তৈরি হয় সাকারার এই স্টেপ পিরামিড। বহুমুখী প্রতিভার আধিকারী ছিলেন ইমহোটেপ। নীল নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক সময়েও গুরুত্ব পায় ইমহোটেপের মতামত।

পিরামিড পরিক্রমা শেষে কায়রো ফেরা গেল। বড়দিনের সন্ধ্যায় আলোয় সেজেছে শহর। আমাদের হোটেলেও উৎসবের আবহ। কাল যাব আলেকজান্দ্রিয়ায়।

 

ফটো: লেখক
পরবর্তী অংশ আগামী পর্বে

5 Comments

  1. […] প্রথম পর্বের লেখাটি পড়তে পারেন এই লিঙ্কেঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-1/ […]

  2. […] প্রথম পর্বের লেখাটি পড়তে পারেন এই লিঙ্কেঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-1/ […]

  3. […] প্রথম পর্বের লেখাটি পড়তে পারেন এই লিঙ্কেঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-1/ […]

  4. […] প্রথম পর্বের লেখাটি পড়তে পারেন এই লিঙ্কেঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-1/ […]

  5. […] প্রথম পর্বের লেখাটি পড়তে পারেন এই লিঙ্কেঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-1/ […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *