Follow us
Search
Close this search box.

সবুজ দ্বীপের রাজার দেশে-৩য় পর্ব

সবুজ দ্বীপের রাজার দেশে-৩য় পর্ব

জারোয়া জঙ্গল> আদিম গুহা > ম্যানগ্রোভ অরণ্য > নানা রংয়ের সৈকত

২১ ডিসেম্বর (২০২২)। ভোর ৩টে এখন। নিঃঝুম পোর্টব্লেয়ার। হোটেলের দোরগোড়া থেকে আমাদের গাড়ি ছাড়ল। আন্দামানের উত্তর প্রান্তের ডিগলিপুর যাছি আমরা। মধ্য-উত্তর আন্দামানের বারাটাং ও উত্তর আন্দামানের রঙ্গত হয়ে আমরা ডিগলিপুর পৌঁছাব।পোর্টব্লেয়ার থেকে ডিগলিপুর ৩২৫ কিলোমিটার। রাস্তায় খাওয়ার জন্য ওই ভোররাতে হোটেল থেকে ব্রেকফাস্ট প্যাক করে দেওয়া হয়েছে।

জঙ্গুলে রাস্তা ধরে চলেছি। সবুজ দ্বীপের রাজার উপযুক্ত রাজ্যপাটই বটে। ঘন্টাখানেক পরে, ভোর চারটে নাগাদ আমাদের গাড়ি জারোয়া সুরক্ষা বনাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বা চেকপোস্টে এসে পৌঁছালাম। অনধকার জমাট বেঁধে আছে চারিদিকে। চেকপোস্টে নাম, আধার নম্বর ইত্যাদি নথিভুক্ত করাতে হয়। চেকপোস্টে বেশকিছু খাবারের দোকান আছে। পরিচ্ছন্ন টয়লেটও পাওয়া যাবে।

জারোয়া ফরেস্ট এরিয়ার মধ্যে দিয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার যেতে হবে আমাদের। দিনে চারটে করে গাড়ির কনভয়কে এই বনাঞ্চলের রাস্তায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। এক একটা কনভয়ে অনেকগুলো করে গাড়ি থাকে। সকাল ৬টার মধ্যে যাঁরা নাম নথিভুক্ত করাবেন তাঁদের সকলকেই যেতে দেওয়া হয়। প্রায় দু’ঘন্টা অপেক্ষা করার পরে আমাদের গাড়ি-সহ একটি কনভয় ছাড়ল। জারোয়া আধ্যুষিত বনাঞ্চলের পথে মোবাইল ফোনের ব্যবহার, ফটো তোলা, খাওয়াদাওয়া, এমনকী গাড়ির জানলার কাঁচ নামানোও নিষেধ।

প্রসঙ্গত, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রাচীন আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির একটি এই জারোয়ারা, দক্ষিণ ও মধ্য আন্দামানের জঙ্গলে এদের বসবাস। জারোয়াদের সংখ্যা কিছুটা হলেও বেড়েছে। গ্রেট আন্দামানিজ, সেন্টিনেল এবং ওঙ্গে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠী। জারোরারা এখন মূলস্রোতের মানুষজন দেখে অভ্যস্ত। তাহলেও, তাদের বিরক্তি উৎপাদিত হতে পারে এমন কাজকর্মের ওপর প্রশাসনের তরফে কড়া নজরদারি রাখার চেষ্টা করা হয়। আমরা কোনও জারোয়া আদিবাসীকে দেখিনি। এরা পর্যটক চলাচলের রাস্তা থেকে তফাতে জঙ্গলের অভ্যন্তরে থাকে। তবে জারোয়া বনাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যাত্রাটা রোমাঞ্চকর অবশ্যই।

এবার আমরা বারাটাংয়ে ঢুকব। তার আগে গাড়ি ছেড়ে দিতে হল মিডল স্ট্রেইটে। জায়গাটা আন্দামানের মিডল অ্যান্ড নর্থ ডিস্ট্রিক্টের রঙ্গত তহসীলের অন্তুর্গত। নীলাম্বর জেটি থেকে বোটে করে আমরা স্ট্রেইট বা প্রণালী পেরলান। মিনিট ১৫ সময় লাগল। তখন সকাল ৮টা। আমাদের গাড়িখানাও বোটে ওই জলপথ পেরল। আবার একটা স্পিড বোটে উঠতে হল। সে বোট চলল খাঁড়িপথে, ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মধ্যে দিয়ে।

জলপথে ম্যানগ্রোভ অরণ্যে।

সে-ও এক রোমাঞ্চকর যাত্রা। মিনিট ২০ জলযাত্রার পরে বোট থেকে নামলাম আমরা। তারপর হাঁটাপথ, প্রায় দেড় কিলোমিটার অসমতল রাস্তা। পথে একটা গ্রাম পড়ল। জল-জঙ্গল পরিবেষ্টিত গ্রাম। কয়েক ঘরের নিরালা বসতি। গুহার প্রবেশদ্বারে পোঁছালাম।

বারাটাং শহর।

লক্ষ লক্ষ বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল বারাটাং দ্বীপের গুহা। স্ট্যালাকটাইট-স্ট্যালাগমাইট প্রক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম জমে গুহার মধ্যে তৈরি হয়েছে বিচিত্র সব প্যাটার্ন, অবয়ব। নানা দেবদেবীর অবয়ব কল্পনা করে নেওয়া যেতে পারে। গুহার মধ্যে দিয়ে দিয়ে সরু সরু রাস্তা। অন্ধকার। টর্চ জ্বালিয়ে চলতে হয়। ওপর থেকে জল চুঁইয়ে পড়ছে কোথাও কোথাও। সভ্যতার ব্যস্ততা থেকে কত দূরে এক দ্বীপে অবস্থিত এই আদিম গুহ নিঃসন্দেহে প্রকৃতির আরেকটি অবাক করা স্থাপত্য।

চুনাপাথরের গুহার প্রাচীর।

 

গুহার অভ্যন্তরে।

ফের স্পিড বোটে চড়ে বারাটাংয়ের মূল পথে ফেরা গেল বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ। ফের চলা শুরু। বারাটাং থেকে ডিগলিপুর কমবেশি ২২০ কিলোমিটার। সুতরাং অনেকটা যেতে হবে। এ দিনের রাত্রিবাস ডিগলিপুরে। আরও প্রায় ৮০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছলাম উত্তর-লাগোয়া মধ্য আন্দামানের রঙ্গত শহরে। প্রকৃতির কোলে ছোট শহর। এখানে আমাদের মধ্যাহ্নভোজন সমাধা হল। এখানে বাংলা ও তামিলভাষী খাওয়াদাওয়ার পরে রঙ্গত থেকে আমকুঞ্জ সৈকতে গেলাম আমরা। রঙ্গত থেকে দূরত্ব ৮ কিলোমিটার।

আমকুঞ্জ সৈকত।

আমকুঞ্জ সৈকতের বালির রং কালো। তারপর সুনীল সমুদ্র। আরেক রকমের বর্ণ-বৈচিত্র। খানিক দূরে মরিস ডেরা বিচ। রঙ্গত থেকে ১২ কিলোমিটার। এখানে পাথুরে সৈকত। রঙ্গত থেকে ডিগলিপুরের দিকে প্রায় ২০ কিলোমিটার এগিয়ে পড়ল ধানিনালা সৈকতে যাওয়ার পথ। গভীর ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মধ্যে দিয়ে সেই পথ। কাঠের সাঁকো বা পাটাতনের ওপর দিয়ে যেতে হয়।

ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মধ্যে দিয়ে ধানিনালা সৈকতে যাওয়ার পথ

দু’পাশ উপছে পড়ছে নানান রকমের ম্যনগ্রোভ উদ্ভিদে। পাটাতন ধরে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে সৈকতে পৌঁছলাম। ওই হাঁটাটা বেশ রোমাঞ্চকর। ফিরতেও হল একই পথে। এখানকার সৈকত বেশ নরম দেখলাম।

ধানিনালা সৈকত।

মরিস ডেরা বিচ

আরও অনেকটা রাস্তা পেরিয়ে অতঃপর রাত ৮টা নাগাদ আমরা ডিগলিপুরে পৌঁছলাম।

ফটোঃ প্রেরণা ঘোষ

পরের পর্বে উত্তর আন্দামানের ডিগলিপুর ভ্রমণের কথা।

আগের দুই পর্বের লেখা পড়তে পারেন নীচের দুই লিঙ্কে
প্রথম পর্বঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-king-of-the-green-island-part-1/
দ্বিতীয় পর্বঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-king-of-the-green-island-part-2/

2 Comments

  1. […] আগের তিন পর্বের লেখা পড়তে পারেন নীচের লিঙ্কগুলিতে প্রথম পর্বঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-king-of-the-green-island-part-1/ দ্বিতীয় পর্বঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-king-of-the-green-island-part-2/ তৃতীয় পর্বঃ: https://torsa.in/in-the-land-of-the-king-of-the-green-island-part-3/ […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *