Follow us
Search
Close this search box.

সবুজ দ্বীপের রাজার দেশে-চতুর্থ পর্ব

সবুজ দ্বীপের রাজার দেশে-চতুর্থ পর্ব

ডিগলিপুর থেকে রস ও স্মিথ আইল্যান্ড, কালিপুর বিচ, শ্যামনগরের মাড ভলক্যানো বেড়ানোর কথা

উত্তর আন্দামানের সবচাইতে বড় শহর ডিগলিপুরে পৌঁছালাম রাত ৮টা নাগাদ। দক্ষিণ আন্দামানের তুলনায় ভ্রমণার্থীদের ভিড় এদিকটায় অনেক কম। দূরত্বের কারণেই হয়তো। আন্দামান ট্রাঙ্ক রোড ধরে বারাটাং, রঙ্গত হয়ে পোর্টব্লেয়ার থেকে ডিগলিপুর ৩২৫ কিলোমিটার। বন্য আন্দামান দেখতে হলে উত্তর আন্দামানে একবার আসতে হবে। যাইহোক, সেই অন্ধকার সকালে বেরিয়েছি। বেশ ধকল গেছে সারাদিনে। ডিগলিপুরে হোটেল ঠিক করা ছিল। স্নান করে, নৈশাহার সেরে সোজা বিছানায় এবং ঘুমের দেশে।

আজ ২২ ডিসেম্বর (২০২২)। ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম। রস ও স্মিথ আইল্যান্ড দেখতে যাব। ডিগলিপুরের এরিয়াল জেটিতে পৌঁছালাম। জায়গাটা উপকূল রক্ষা বাহিনীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

স্মিথ আইল্যান্ডে যাওয়ার পথে

জেটিতে প্রবেশের আগে কোস্টগার্ডের দপ্তরে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। আধার কার্ডের মতো পরিচয়পত্রের দরকার হয়। স্পিড বোটে চড়ে আমরা স্মিথ আইল্যান্ডে পৌঁছালাম। আধঘন্টা সময় লাগল। রস ও স্মিথ দুটি পৃথক দ্বীপ। মাঝে স্যান্ডবার বা প্রাকৃতিক বালির বাঁধ। জোয়ারে ওই স্যান্ডবার জলে ডুবে থাকে। ভাটায় সেই বাঁধ জেগে ওঠে। এই স্যান্ডবারের ওপর দিয়ে স্মিথ আইল্যান্ড থেকে রস আইল্যান্ডে যাওয়া যায়, তবে অনুমতির প্রয়োজন হয়।

স্মিথ আইল্যান্ডে

নীল জলরাশি, দুই দ্বীপের মধ্যে যোগাযোগকারী বালুপথ, আর দ্বীপভূমির সবুজ বনাঞ্চল, সবমিলিয়ে চমৎকার এক দৃশ্য। স্মিথ আইল্যান্ডের সমুদ্রে স্নান করা যায়। স্মিথ আইল্যান্ডে যাওয়ার সময়ে আরেকটা দ্বীপের পাশ দিয়ে গেলাম। নাম ব্রাশ আইল্যান্ড। দূর থেকে দেখলে এই দ্বীপটিকে অনেকটা টুথব্রাশের মতো দেখতে লাগে, তাই এমন নাম। পর্যটকদের এই দ্বীপে নামার অনুমতি নেই।

স্মিথ আইল্যান্ড থেকে ফেরার পথে মাঝ-সমুদ্রে বিশালাকার এক কচ্ছপ দেখলাম। সাঁতার কেটে চলেছে স্মিথ আইল্যান্ডের দিকে। কূর্ম আবতারের এই হঠাৎ আবির্ভাবে বোটের আমরা সকলে উচ্ছ্বসিত। কচ্ছপ বা কূর্ম বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার। প্রথম অবতার মৎস্য। সমুদ্র, সামুদ্রিক প্রাণ, তার গুরুত্ব কতশত কাল আগে মানুষের অনুভবে, ধর্মীয় দর্শনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। রস, স্মিথ আইল্যান্ড এবং ডিগলিপুরের কালিপুর বিচে সামুদ্রিক কচ্ছপেরা ডিম পাড়ার জন্য বাসা বাঁধে। দূর-দূরান্ত থেকে অলিভ রিডলে প্রজাতির কচ্ছপেরা ডেরা বাঁধে এই দ্বীপগুলিতে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি নাগাদ আসে, আবার বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ফিরতি পথে যাত্রা করা মে মাসে।

স্মিথ-রস আইল্যান্ড দেখে আমরা ডিগলিপুর ফিরে কালিপুর বিচে গেলাম। বিচের রং খানিকটা ধূসর, ‘ভলক্যানোয়িক গ্রে’ যাকে বলে। সমুদ্রের পারের দিকের জল আশ্চর্য রকমের স্বচ্ছ। দূরের সমুদ্র কী যে সুন্দর নীল। বিস্তৃত বর্ণবাহার। কালিপুর বিচ থেকে স্যাডেল পিক দেখা যায়। আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সর্বোচ্চ (৭৩২ মিটার) শৃঙ্গ এটি। ট্রেক করে পাহাড়ে ওঠা যায়।

কালিপুর বিচ

কালিপুর বিচ থেকে হোটেলে ফেরা গেল। লাঞ্চ সেরে বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম ফিরতি পথে। আপাতত গন্তব্য রঙ্গত। রাত্রিবাস হল রঙ্গতের এক হোটেলে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গলের গন্ধ গাঢ় হতে থাকল। আরণ্যক পরিবেশে আঁধারও ঘন।

পরের দিন, দিন না বলে ভোর রাত বলা ভালো। ভোর ৪টের সময় আমাদের গাড়ি ছাড়ল। পথে বারাটাং দ্বীপের শ্যামনগরে মাড ভলক্যানো দেখা হল। গাড়ি চলাচলের রাস্তা থেকে সামান্য একটু হেঁটে যেতে হয়। বেশ কয়েকটি গহ্বর রয়েছে এখানে। গ্যাস-সহ কাদামাটি উদ্গীরণ হয় গহ্বরগুলি থেকে।

মাড ভলক্যানো যাওয়ার পথ

বারাটাং শহরে পৌঁছালাম সকাল সাড়ে ৬টায়। বোটে মিডল স্ট্রেইট পেরিয়ে সেই আসার দিনের মতোই চেকপোস্টে নামধাম নথিভুক্ত করাতে হল। গাড়ির কনভয় জারোয়া জঙ্গল পেরবে।

মাড ভলক্যানো এলাকা

পরের পর্বে চিড়িয়া টাপু এবং রস ও নর্থ বে আইল্যান্ড বেড়ানোর কথা

ফটোঃ প্রেরণা ঘোষ

আগের তিন পর্বের লেখা পড়তে পারেন নীচের লিঙ্কগুলিতে
প্রথম পর্বঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-king-of-the-green-island-part-1/
দ্বিতীয় পর্বঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-king-of-the-green-island-part-2/
তৃতীয় পর্বঃ: https://torsa.in/in-the-land-of-the-king-of-the-green-island-part-3/

1 Comment

  1. […] আগের চার পর্বের লেখা পড়তে পারেন নীচের লিঙ্কগুলিতে প্রথম পর্বঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-king-of-the-green-island-part-1/ দ্বিতীয় পর্বঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-king-of-the-green-island-part-2/ তৃতীয় পর্বঃ: https://torsa.in/in-the-land-of-the-king-of-the-green-island-part-3/ চতুর্থ পর্বঃ https://torsa.in/https-torsa-in-https-torsa-in-in-the-land-of-the-king-of-the-green-island-part-4/ […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *