Follow us
Search
Close this search box.

সবুজ দ্বীপের রাজার দেশে-২য় পর্ব

সবুজ দ্বীপের রাজার দেশে-২য় পর্ব

এই মাঝ-ডিসেম্বরে না-ঠান্ডা না-গরম আবহাওয়া পোর্টব্লেয়ারে। পর্যটকরা আসছেন দ্বীপভূমিতে বেশ ভালো সংখ্যায়। আজ ১৮ ডিসেম্বর (২০২২)। বড়দিনের আবহ, তারপরের ভ্রমণে বর্ষশেষের উদযাপন। যাইহোক, আজ আমরা হ্যাভলক দ্বীপে যাচ্ছি। গতকাল সেলুলার জেল, তিরঙ্গা পার্ক, করবিনস কোভ বিচ ইত্যাদি দেখেছি।

সকাল ৭ টা নাগাদ পোর্টব্লেয়ারের হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। জলযানে উঠব পোর্টব্লেয়ার শহরের দক্ষিণাংশে ফোনিক্স বে জেটি থেকে। ঝকঝকে রোদ। দূরের সমুদ্র ঘন নীল। সাড়ে ৮টা নাগাদ আই টি টি ম্যাজেস্টিক ক্রুজে উঠে বসা গেল। অনলাইনে টিকিট বুক করা ছিল। হোটেল থেকে ব্রেকফাস্ট প্যাক করে দিয়েছিল। সমুদ্রে চোখ রেখে জলে দুলতে দুলতে খাওয়া বেশ একটা অভিজ্ঞতা। সমুদ্র যে খুব শান্ত ছিল বলা যাবে না। বরং উথালপাথাল ঢেঊ পাওয়া গেল যাত্রাপথে। ফোনিক্স বে থেকে হ্যাভলকে পৌঁছাতে দেড় থেকে দু’ঘ্ন্টা সময় লাগে। আমরা বেলা সোয়া দশটা নাগাদ হ্যাভলক দ্বীপে পৌঁছলাম। হ্যাভলক হলিডে বিচ রিসর্টে ঘর বুক করা ছিল।

পোর্টব্লেয়ারের কমবেশি ৪০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বাংশে হ্যাভলক দ্বীপটি। ব্রিটিশ জেনারেল হেনরি হ্যাভলকের নামানুসারে নামকরণ হয়েছিল হ্যাভলক আইল্যান্ড। বর্তমানে সরকারি নামে স্ব্ররাজ দ্বীপ। স্নানপর্ব সেরে দ্বিপ্রাহরিক আহারান্তে চললাম রাধানগর সৈকতে। হ্যাভলকের জেটি এলাকা থেকে রাধানগর বিচ ১২ কিলোমিটার। হ্যাঁ, দর্শনের পরে বলতেই হবে, রাধানগর সৈকত আশ্চর্য করে দেওয়ার মতোই এক সুন্দর সৈকত।

রাধানগর সৈকত।

পারের দিকে স্বচ্ছ জলের নীচে বালি দেখা যায়। তারপর, অনন্ত সুনীল জলরাশি। সাদা বালির প্রশস্ত সৈকত ও তার তীর ধরে আন্দামানের সবুজ। অবাক করা সূর্যাস্ত দেখলাম রাধানগর সৈকত থেকে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ১০টি সৈকতের একটি আন্দামানের হ্যাভলক দ্বীপের এই রাধানগর সৈকত। রাধানগর থেকে খানিকটা এগিয়ে গোবিন্দনগর নামের একটা সৈকত আছে।গাড়িতে মিনিট দশেক সময় লাগে।

রাধানগরে সূর্যাস্ত।

পরের দিন বেলা ১০টা নাগাদ আমরা হ্যাভলকের জেটিতে হাজির। এলিফ্যান্ট সৈকতে যাচ্ছি। পৌনে ১২টা নাগাদ এলিফ্যান্ট আইল্যান্ডে পৌঁছালাম বোটে চড়ে। ১১টা নাগাদ হ্যাভলক থেকে বোট ছেড়েছিল। হ্যাভলকের উত্তর প্রান্তে এই সৈকতটি। হ্যাভলক থেকে জঙ্গলের পথে হেঁটেও এলিফ্যান্ট বিচে পৌঁছানো যায়। সাড়ে ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার দূরত্ব হবে।

হ্যাভলকগামী ক্রুজ। সামনে লেখক।

এলিফ্যান্ট সৈকতের জলের নীচে রং-বেরংয়ের প্রবালের জগৎ, রঙিন মাছ, সামুদ্রিক কচ্ছপের শ্লথ গতিতে সাঁতরে যাওয়ার দৃশ্যাবলী সারা পৃথিবী থেকে পর্যটন-প্রিয় মানুষকে এখানে টেনে আনে। রকমারি ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা আছে এলিফ্যান্ট সৈকতে। স্কুবা ডাইভিং, স্নরকেলিং, সি-ওয়াকিং, জেট স্কি, গ্লাস-বটম বোট রাইড ইত্যাদির রমরমা এখানে। সমুদ্রের উল্টোদিকে বন্য আন্দামান। উঁচু উঁচু গাছ।

এলিফ্যান্ট বিচ

গোটা তিনেক স্পোর্টসে অংশগ্রহণ করেছিলাম। দাম কম বলা যাবে না অবশ্য। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এলিফ্যান্ট সৈকত জমজমাট। তবে দিনের প্রথমার্ধে বিচে পৌঁছে যাওয়া ভালো। বেলা ৩টে নাগাদ ফেরার বোটে চড়ে বসলাম। বিকেল ৪টেয় হ্যাভলকে।

এলিফ্যান্ট সৈকত লাগোয়া সমুদ্রে প্রবালের রাজ্য।

পরের দিন সকালে গেলাম হ্যাভলক দ্বীপের কালাপাথর বিচে। আমাদের হোটেল থেকে জায়গাটার দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। সমুদ্রের তীর ধরে সৈকতে যাওয়ার রাস্তাটা খুব সুন্দর। মিহি সাদা বালির সৈকতে ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে কালো রঙের পাথরের খণ্ড। তীর-সংলগ্ন জলেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাথর। এখানে সমুদ্র-স্নান চলবে না। কালাপাথর বিচ থেকে আরেকবার রাধানগর বিচে এলাম। কিছুটা সময় কাটানো গেল রাধানগরে।

কালাপাথর সৈকত।

অতঃপর হোটেলে ফিরে লাগেজ নিয়ে চলে এলাম হ্যাভলক জেটিতে। জেটির কাছাকাছি একটা রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ সেরে বেলা সোয়া ৩টে নাগাদ পোর্টব্লেয়ার ফেরার ক্রুজে উঠে বসা গেল। সন্ধ্যার পোর্টবলেয়ার ভ্রমণার্থী, আঞ্চলিক মানুষজন, আলোয় ছয়লাপ।

কাল যাব উত্তর আন্দামানের ডিগলিপুর। আন্দামান ট্রাঙ্ক রোড ধরে বরাটাং, রঙ্গত হয়ে পোর্টব্লেয়ার থেকে ডিগলিপুর ৩২৫ কিলোমিটার।

হ্যাভলক মানচিত্র সৌজন্য: ম্যাপস অফ ইন্ডিয়া।

ফটোঃ প্রেরণা ঘোষ

(ক্রমশ)

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *