আজ ৩ জানুয়ারি, ২০২৩। গতকাল সৈকত শহর হারগাদা থেকে ৩৮০ কিলোমিটার সড়কপথ পাড়ি দিয়ে ফের কায়রোয় পৌঁছেছি। ২০২২-এর ২৪ ডিসেম্বর কায়রো থেকেই আমাদের ইজিপ্ট ভ্রমণ শুরু হয়েছিল। আজ ইজিপ্টে আমাদের শেষ দিন। লাঞ্চ সেরে এয়ারপোর্টে যাব। কয়রো থেকে বাহরিন এবং বাহরিন থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতা। এই আমাদের ঘরে ফেরার সূচি। সকালের দিকে খানিকটা সময় পাওয়া যাচ্ছে। হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। শীতের সকাল। বেশ ঠান্ডা। ইজিপ্ট বেড়াবার সেরা সময় এই শীতের মরসুমটাই। রাস্তায় প্রচুর বিদেশি পর্যটক চোখে পড়ছে। কিছু বাঙালি ভ্রমণার্থীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।
হাজার বছরের পুরনো শহর কায়রো। বেশিরভাগ অংশ নীলনদের পূর্ব তীরে। শহর জুড়ে গগনচুম্বি অট্টালিকার সারি নজর কাড়ে। আগে নীলনদের এপার থেকে পিরামিডের তিনটি চূড়া দেখা যেত বলে জানা গেল। এখন সে দৃশ্য অদৃশ্য হয়েছে হাইরাইজের আড়ালে। পৃথিবীর সব প্রাচীন শহরেরই নিজস্ব একটা চরিত্র থাকে। যতই আধুনিকতার স্রোত বয়ে যাক না কেন, যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা সেই চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলির টানেই তো পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা বেড়াতে আসেন এরকম জায়গাগুলিতে। এ প্রসঙ্গে আমাদের দেশের বারাণসী শহরটির কথা মনে আসে। প্রচুর বিদেশী পর্যটক বারাণসীতে আসেন ওই প্রাচীনতার সুরটিকে ধরবার চেষ্টায়।
কায়রোয় চোখ ধাঁধানো শপিং মলের অভাব নেই। আবার যুগ যুগ ধরে উচ্চকিত, প্রাণচঞ্চল দেশীয় বাজারও আছে। তার কোনও কোনওটি যেন ‘সহস্র এক আরব্য রজনী’ থেকে উঠে আসা চিত্র। শহর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রোমান, আরবিক, অটোমান শাসনকালের নানা স্থাপত্য। প্রাচীন মসজিদ, মসোলিয়াম তথা সমাধিস্থল।
কায়রোর মানুষজন বেশ কৌতুকপ্রিয়। কথাবার্তায় পেঁচিয়ে থাকে রসিকতা। মানুষে মানুষে মিলমিশের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য কায়রোর সংস্কৃতি। কায়রোর অধিবাসীরা মূলত মুসলিম। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদেরও বসবাস রয়েছে এ শহরে। সব সময়েই একটা উৎসব উৎসব পরিবেশ কায়রোয়। রাস্তাগুলি প্রশস্ত। যানবাহন, মানুষও প্রচুর। কখনো কখনো যানজট তৈরি হয় শহরের ব্যস্ত এলাকাগুলিতে। সে-ও কায়রোর চেনা চিত্র। বিদেশীরা কায়রোর রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াতে পারেন নির্বিঘ্নে। বাজারে, রাস্তায় কীভাবে ওখানকার মানুষজন যেন ভারতীয়দের চিনতে পারে। অনেক সময়েই ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া রব উঠেছে আমাদের দেখে। এখানকার একটা নিয়ম আমার অবশ্য ভালো লাগেনি। রেস্তোরাঁয় বাইরে থেকে কেনা জল নিয়ে ঢোকা যাবে না। রেস্তোরাঁ থেকেই কিনতে হবে তুলনামূলক ভাবে বেশি দামে।
ইজিপ্টের মুদ্রা ইজিপশিয়ান পাউন্ড। বর্তমানে ১ মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য কমবেশি ৩০ ইজিপশিয়ান পাউন্ড। আমাদের ভ্রমণকালে ১ মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ২৪ ইজিপশিয়ান পাউন্ড। সে সময়, মানে এই ২০২৩-এর জানুয়ারিতে ১ ইজিপশিয়ান পাউন্ডের ভারতীয় রুপিতে দাম ছিল ৪ টাকা (রুপি)। এখন ১ ইজিপশিয়ান পাউন্ড= ২.৬৭ ভারতীয় রুপি (২৯ অগস্ট, ২০২৩-এর বিনিময় হার অনুসারে)।
বাইরে রৌদ্রকরোজ্জ্বল হিমেল সকাল। গুটি গুটি ঢুকে পড়লাম কায়রোর তাহরির স্কোয়ারের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ইজিপশিয়ান অ্যান্টিকুইটিসে। এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারও বটে। এ যেন ভিনগ্রহের কোনও জায়গা। প্রাচীন চিত্রকলা, ভাস্কর্য, লিপি ইত্যাদির সঙ্গে মণিমাণিক্যের ছড়াছড়ি।
ফারাওদের আমলের বিস্ময়কর বৈভবের নিদর্শন সব। প্রথম লপ্তে পিরামিডের সঙ্গে এই মিউজিয়ামটিও দেখেছি। কিন্তু এ দর্শন দু’একদিনের ব্যাপার নয়। মনযোগ দিয়ে দেখতে গেলে অনেকগুলো দিন লেগে যাবে। ইতিহাসের ছাত্রছাত্রীদের কাছে এই সুবিশাল মিউজিয়ামটি অমূল্য এক সম্পদ।
ওই রহস্যময় ও বিশালাকার সংগ্রহশালার মধ্যে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে খানিকক্ষণের জন্য প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম গৃহপানে যাত্রা সমাগত। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলাম সংগ্রহশালা থেকে। বেলা খানিক গড়িয়েছে ইতিমধ্যে। তাহরির স্কোয়ার জমজমাট। হোটেলে ফিরব। দুপুরের আহার সেরে রওনা হতে হবে বিমানবন্দরের পথে।
সর্বোচ্চ ফটোঃ স্টেপ পিরামিডের প্রান্তরে লেখক।
আগের পাঁচ পর্ব
প্রথম পর্বের লেখাটি পড়তে পারেন এই লিঙ্কেঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-1/
দ্বিতীয় পর্বের লেখা পড়ার লিঙ্কঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-2/
তৃতীয় পর্ব পড়বেন এই লিঙ্কেঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-3/
চতুর্থ পর্বঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-4/
পঞ্চম পর্বঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-5/