নীলনদে ক্রুজ যাত্রা, লাক্সর দর্শন, সাবমেরিনে লোহিত সাগরের তলদেশে প্রবালের রাজ্যে
৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, এডফুর মন্দির দেখতে গিয়েছিলাম সকালে। ক্রুজ থেকে নেমে ঘোড়ার গাড়িতে করে এডফুর মন্দির চত্বরে পৌঁছেছিলাম। এ যেন টাইম মেশিনে চড়ে অতীতেত ইজিপ্টে পৌঁছানো। মন্দির পরিদর্শন করে চলে এলাম ক্রুজে। পরবর্তী গন্তব্য লাক্সর। পথে এসনা লক দেখা হল। সাদা কথায় এসনা লক হল নীল নদের ওপর একটি বাঁধ ব্যবস্থা। চাষের জল বন্টনের সঙ্গে জলযানের চলাচলের সুবিধার জন্য লক এলাকায় জলস্তর নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে।
আবু সিম্বেল বেড়িয়ে ক্রুজে উঠেছি আগের দিন দুপুরে। এ দিন লাক্সর পৌঁছালাম বিকেলে। নীলনদের ওপর দিয়ে সেই দীর্ঘ যাত্রায় বর্তমান আর অতীত একত্রিত হয়ে ছিল। লাক্সর পৌঁছে আমরা শেষ বিকেলে লাক্সর মন্দির দেখতে গেলাম। প্রাচীন মন্দির। ফারাওদের আমলে তৈরি। পূজিত হতেন দেবতা আমন রা, তাঁর স্ত্রী মাট ও পুত্র খনসু। যা অতীতে হয়নি তা হয়েছে আধুনিক সময়ে। গ্রিস থেকে আসা এক সেনা কর্মী মুহম্মদ আলি প্রতাপের সঙ্গে ইজিপ্ট শাসন করেছেন পঞ্চাশ বছর। ফরাসি, ইংরেজ ও তুর্কিদের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধ করে টিঁকে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সন্ধির জন্য বিংশ শতকের চল্লিশের দশকে মাঝে মাঝেই মন্দিরের স্তম্ভ, প্লেট এমনকী দেওয়ালের অংশ পর্যন্ত ভেঙে ইংরেজ ও ফরাসিদের উপহার দিয়েছিলেন। সেগুলো সংরক্ষিত হচ্ছে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের বড় বড় মিউজিয়ামগুলিতে।
২০২২-এর শেষ দিন আজ। সকালে হট এয়ার বেলুনে করে আকাশে ওড়ার ব্যবস্থা ছিল। বর্ষশেষের দিন, লাক্সর জমজমাট। প্রচুর বিদেশী পর্যটক চোখে পড়ছে। বেলুন উড়ল আকাশে। রুক্ষ টিলা, বালিয়াড়ি, নীলনদের প্রবাহ, প্রাচীন সব পুরাকীর্তির এক বিশাল ক্যানভাস ফুটে উঠল চোখের সামনে। এক অন্যরকমের অভিজ্ঞতা বলতেই হবে।
বেলুন-যান থেকে নেমে আমরা একে একে কানার্কের মন্দির, ভ্যালি অফ কিংস, অ্যাভিনিউ অফ দি স্ফিংস, মিশরের প্রথম মহিলা রানী হাটশেপসুটের মন্দির, তুতেনখামেনের মমি দেখলাম। সেই একই ব্যাপার, চলাফেরা বর্তমানের বাস্তবে, মনটাকে ছুঁয়ে থাকে ইতিহাসের অনুরণন। আর বিশালতার এক অনুভব। কার্নাক মন্দিরের চত্বরটাই কী বিশাল।
পরের গন্তব্য হারগাদা। লোহিত সাগরের তীরে সৈকত শহর হারগাদা এক ঝলমলে সৈকত শহর। ওঠা হল সমুদ্র তীরের এক পাঁচতারা হোটেলে। বর্ষবরণের রাত। হোটেলেও বেশকিছু ইউরোপিয়ান পর্যটক চোখে পড়ল। হোটেলে বর্ষবরণ হল সমারোহের সঙ্গে। যোগ দিলাম সে উৎসবে। খাওয়াদাওয়া হল চমৎকার।
২০২৩-এর প্রথম দিন আজ। হোটেল থেকে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। সুনীল সমুদ্র। সঙ্গে সবুজের একটা আভা আছে। এক ধরনের শ্যাওলা জন্মায় এই সমুদ্রে। মৃত শ্যাওলার রং বাদামী-লাল।সেই মৃত শ্যাওলার বিস্তার সমুদ্রের রংকে লালচে করে তোলে। তাই রেড সি। লোহিত সাগরের বর্ণ-বৈচিত্র দেখা তখনও বাকি ছিল। সেটা দেখা গেল জলের নীচে। সমুদ্রের অভ্যন্তর দর্শনের জন্য ব্যবহৃত সাবমেরিনে চড়ে সমুদ্রের তলদেশে গিয়েছিলাম আমরা। মাছের ঝাঁক দেখলাম। আর দেখলাম বর্ণময় সব প্রবাল।
সমুদ্র দেখে হোটেলে ফিরে এলাম। নববর্ষে হোটেল অতিথি সমাগমে পরিপূর্ণ। নিখরচায় ড্রিংকস পরিবেশিত হচ্ছে। আমাদের বেরিয়ে পড়তে হবে। হারগাদা থেকে আজই কায়রো ফিরব। ৩৮০ কিলোমিটার সড়কপথ। ঘন্টা ছয়েক সময় লাগবে।
(পরের পর্বে সমাপ্য)
হট এয়ার বেলুনের ফটোঃ নাইল ক্রুজ
অন্য সবক’টি ফটোঃ লেখক
প্রথম পর্বের লেখাটি পড়তে পারেন এই লিঙ্কেঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-1/
দ্বিতীয় পর্বের লেখা পড়ার লিঙ্কঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-2/
তৃতীয় পর্ব পড়বেন এই লিঙ্কেঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-3/
চতুর্থ পর্বঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-4/
1 Comment
[…] পঞ্চম পর্বঃ https://torsa.in/in-the-land-of-the-pyramids-part-5/ […]