Follow us
Search
Close this search box.

কুয়ারি পাস ট্রেক

কুয়ারি পাস ট্রেক

একে একে পেরিয়ে চলেছেন দেবপ্রয়াগ রুদ্রপ্রয়াগ কর্ণপ্রয়াগ নন্দপ্রয়াগ ও বিষ্ণুপ্রয়াগ। গাড়িতে ঋষিকেশ থেকে রওনা হয়েছেন সকাল সকাল। সন্ধ্যা নাগাদ পৌঁছাবেন করচি গ্রামে। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার জোশীমঠ ব্লকের করচি কুয়ারি পাস ট্রেকের বেসক্যাম্প। ঋষিকেশ থেকে করচি ২৭০ কিলোমিটার। পিপলকোটি পেরনোর পর থেকে ল্যান্ডস্কেপ বদলাতে থাকবে। গাড়িতে গড়ে ১০ ঘন্টা সময় লাগে। করচির উচ্চতা ৭,৮৮৫ ফুট।

কুয়ারি পাস উত্তরাখণ্ডের একটি পুরনো ট্রেকিং ডেস্টিনেশন। পাসটি জোশীমঠ ও ঘাট উপত্যকাকে যুক্ত করেছে। যাঁরা প্রথম প্রথম ট্রেক করছেন বা ট্রেক শুরু করতে চলেছেন, তাঁদের কাছে কুয়ারি পাস ট্রেক আদর্শ। এই ট্রেকের জন্য সময় কম লাগে। পথের উচ্চতা বাড়তে থাকে ক্রমশ। পথ বিপজ্জনক নয়। কাঠিন্যের দিক থেকে এই ট্রেককে মাঝারি স্তরের (ট্রেকিংয়ের পরিভাষায় লেভেল-১ ক্যাটেগরির) বলা চলে। তবে ট্রেকারদের শারিরীক দিক থেকে অবশ্যই সুস্থ-সবল হতে হবে। পথে কোথাও কোথাও খাড়া চড়াই পেরতে হবে। ট্রেকিংয়ের পথে পড়বে প্রাচীন অরণ্য, তৃণভূমি। ট্রেক-পথ থেকে দ্রোনাগিরি বা দুনাগিরি, হাতি (হাতি-ঘোড়া), চৌখাম্বা, নীলকণ্ঠ শৃঙ্গ, মাউন্ট নন্দাদেবী এবং পঞ্চচুল্লির দৃশ্যাবলী হতবাক করে দেয়। এখানে থাকছে কুয়ারি পাস ট্রেকের একটি রূপরেখা।

প্রথম দিনটা কাটবে করচি পৌঁছাতে। সেদিন রাত্রিবাস ওখানেই।

দ্বিতীয় দিন করচি থেকে ট্রেক শুরু। কিছুটা এগনোর পরে দূরে বিশাল বিশাল হিমবাহ-সহ দ্রোনাগিরি পর্বতের আশ্চর্য করে দেওয়া দৃশ্য ভেসে উঠবে। ওক, পাইন, ম্যাপেলের অরণ্যের মধ্যে দিয়ে খাড়াই পথ। প্রায় ৩ কিলোমিটারের ট্রেক করে পৌঁছাবেন আখরোটঘেট্টায় (৯,২৬৫ ফুট)। এদিন আখরোটঘেট্টাতেই ক্যাম্প পড়বে।

তৃতীয় দিন ৯,২৬৫ ফুট উচ্চতার আখরোটঘেট্টা থেকে ১১,০০০ ফুটের খুল্লরায় উঠে আসবেন। ওকের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে অধিকাংশ পথ। খুল্লরার কাছাকাছি পৌঁছে একটু পিছনে বাঁ-দিকটায় লক্ষ্য রাখুন। দ্রোনাগিরি, ও হাতি পর্বত ভেসে উঠবে আকাশের ক্যানভাসে। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে খুল্লরা এলাকা থেকে নীলকণ্ঠ ও কামেট শৃঙ্গ চোখে পড়বে।

চতুর্থ দিনের গন্তব্য তালি হয়ে কুয়ারি পাস। পথের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৭ কিলোমিটার। প্রায় ৯ ঘন্টা সময় লাগবে। পথের দৈর্ঘ্য ও সময়ের হিসেব বিবেচনা করলে বোঝা যাচ্ছে, সামনে চড়াই আছে। সর্বোচ্চ পয়েন্টের উচ্চতা সাড়ে ১২,৫০০ ফুট। খুল্লরা থেকে সকালে ট্রেক শুরু করে ঘন্টা দেড়েক খাড়াই পথে হাঁটার পরে উঠে আসবেন একটি গিরিশিরায় (রিজ)। এই গিরিশিরাটি ‘লর্ড কার্জনস ট্রেল’এর অন্তর্গত। প্রসঙ্গত, ভারতের ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের প্রথম বাংলা ভাগের রূপকার। ওই ১৯০৫ সালেই কার্জন সাহেব ঘাট উপত্যকার মধ্যে দিয়ে কুয়ারি পাসে পৌঁছেছিলেন। লর্ড কার্জন একজন পাকা ট্রেকারও ছিলেন। প্রথম লপ্তে যাঁরা কুয়ারি গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন লর্ড কার্জন।

যাইহোক, অনেক বিষ্ময় অপেক্ষা করছে এই রিজ বা গিরিশিরায়। দেখবেন আকাশের ক্যানভাসে চৌখাম্বা, নীলকণ্ঠ, নীলগিরি, দ্রোনাগিরি, হাতি পর্বতশৃঙ্গের এক হতবাক করে দেওয়া সমাহার। চলার পথের মুখোমুখি দেখা দেবে ত্রিশূল ও নন্দাদেবীর অংশবিশেষ। এ যেন প্রকৃতই এক অ্যাম্পিথিয়েটার। ওই গিরিশিরার একাংশ থেকে পঞ্চচুল্লিরও দেখা পাওয়া যাবে।

ছেড়ে যেতে মন চাইবে না। এগতে তো হবেই। পৌঁছাবেন এক বুগিয়াল তথা তৃণভূমিতে। কুয়ারি পাসের আপার বুগিয়াল এটি। আরও ঘন্টাখানেক চলার পরে উঠে আসবেন কুয়ারি টপে। এখান থেকে ২০-২২টি শৃঙ্গের দেখা পাওয়া যায়। ফের নেমে আসুন গিরিশিরায়। সামনে আরও কিছুটা এগনোর পরে পৌঁছাবেন ঝান্ডি টপে। উচ্চতা ১২,৫০০ ফুট উচ্চতায় ঝোড়ো বাতাস বিতে পারে। ঠান্ডাও প্রবল। কুয়ারি পাস একটি ডিপ্রেশন অঞ্চল। কুয়ারি টপ থেকে পাস অঞ্চলটিকে দেখবেন।

ঝান্ডি টপে কিছুটা সময় কাটানোর পরে নীচে নামার পালা। নেমে আসবেন চিত্রকণ্ঠ তৃণভূমিতে। তারপরে অরণ্যপথে নেমে আসবেন তালিতে। পথে দেখবেন গোল্ডেন ওকের জঙ্গল। নিশ্চুপ আরণ্য। পৌঁছাবেন তালির ক্যাম্পে। অরণ্যবেষ্টিত ক্যাম্পসাইট।

পঞ্চম দিন তালির ক্যাম্পসাইট থেকে খানিকটা উপরের দিকে উঠে তালির লেকে চলুন। লেক এলাকা থেকে ফের নানা পর্বতশৃঙ্গের দেখা পাবেন। চড়াই পথে আরও উঠে আসবেন খাড়া পাহাড় ঢালের প্রায় ঝুলন্ত এক পথে। সমগ্র ট্রেলের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর পথ এটি। ধীরে, মনযোগ সহকারে পথের এই অংশটি পেরতে হবে। পথটি শেষ হবে হঠাৎই। ঢুকে পড়বেন গরসন বুগিয়ালে। আড়াআড়ি পেরতে হবে এই বুগিয়ালটি। এখান থেকেও নানা পর্বতশৃঙ্গের দেখা পাওয়া যাবে।

তারপর দুই থেকে আড়াই ঘন্টা ধরে নেমে চলা। পৌঁছাবেন পড়িয়ার গ্রামে। একটি মন্দির আছে পড়িয়ারে। শান্ত, সমাহিত পরিবেশে মন্দির চত্বরে বসে খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিতে ভালো লাগবে।

তারপর উৎরাই পথ ধরে আবারও নামতে থাকা। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন আপার আউলিতে। সেখান থেকে উৎরাই পথে আরও হাজার ফুট নেমে এসে এবং আউলির কেন্দ্রস্থলে পৌঁছাবেন। চাইলে পঞ্চম রাতটা আউলিতে থাকতে পারেন। অন্যথায় চলে আসুন জোশীমঠে।

পরের দিন জোশীমঠ থেকে ঘরে ফেরার যাত্রা।

আয়োজন
বিভিন্ন ট্রেক এজেন্সিই কুয়ারি পাস ট্রেক পরিচালনা করে থাকে। নামী ট্রেকিং সংস্থা ইন্ডিয়াহাইকস দীর্ঘদিন ধরে কুয়ার পাস ট্রেক পরিচালনা করে আসছে। উপরোক্ত রূপরেখাটি ইন্ডিয়াহাইকস ট্রেক-সূচি অনুসরণ করেছে। ৫ রাত ৬ দিনের ট্রেক। ২০২৩-এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪-এর মে পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে কুয়ারি পাস ট্রেকের সূচি রয়েছে এই সংস্থার। জি এস টি ও বিমার প্রিমিয়াম-সহ ট্রেক ফি ১০,৭৭৫ টাকা। ঋষিকেশ থেকে করচি পর্যন্ত পৌঁছানো এবং আউলি থেকে ঋষিকেশ বা হরিদ্বার বা দেরাদুনে ফেরার খরচ নিজেদের। গাড়িতে প্রতি পিঠে এক্ষেত্রে খরচ ৮-১০ হাজার টাকা। সহ-ট্রেকারদের মধ্যে খরচটা ভাগ হয়ে যায়। গাড়ির ভাড়া দিতে হয় চালককে।

যোগাযোগ
Indiahikes
Dehradun Office: No.85/10, Neshvilla Road, Dehradun – 248001
Bengaluru Office: 139, Defence Colony Road, Defence Layout, Sahakar Nagar, Bengaluru, Karnataka 560092
Phone: 080 468 01269
mail: info@indiahikes.com

একা বা কয়েকজন মিলে নিজেদের মতো করে ট্রেক করতে চাইলে বিশেষজ্ঞ গাইডের সঙ্গে পরামর্শ করবেন অবশ্যই। দীনেশ সিং বিস্ত, রামলাল পঁওয়ার ও তঁর ভাই মেঘরাজ পঁওয়ার উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন গন্তব্যের জন্য ট্রেক আয়োজন করে থাকেন। ট্রেকারদের কাছে পরিচিত নাম। যোগাযোগ করতে পারেন। যোগাযোগ করতে পারেন অন্য কোনও অভিজ্ঞ গাইডের সঙ্গেও। দীনেশ সিং বিস্তের ইমেল অ্যাড্রেসঃ dinesh.bisht282@gmail.com ফোনঃ ৮৯৫৮ ০৮৪২৮২।
রামলাল পঁওয়ার বা মেঘরাজ পঁওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরঃ ৯৪১১৩ ৮০৮১৮/৯৪৫৬১ ৯৬৯১৯/৮৯৭৯৫ ৭৬০৯৮।

কুয়ারি পাস ট্রেকের রুট ম্যাপ ও ট্রেক-পথ থেকে দেখা দৃশ্যাবলীর ফটো: ইন্ডিয়াহাইকস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *