Follow us
Search
Close this search box.

পন্ডিচেরির ফরাসি ও তামিল ‘কোয়ার্টার’

পন্ডিচেরির ফরাসি ও তামিল ‘কোয়ার্টার’

ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলে পণ্ডিচেরিতে (পুদুচেরি) একটা খাল (গ্র্যান্ড ক্যানাল) কাটা হয়েছিল। তার পুব পারে গড়ে উঠেছিল ফরাসিদের সমুদ্রমুখী বসতি। ‘ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার’। তামিলদের বসতি তখন ঘন হয়ে এসেছিল গ্র্যান্ড ক্যানালের পশ্চিমে তীরে। সে ‘তামিল কোয়ার্টার’। সোজা কথায় ‘ব্ল্যাক টাউন’।

পণ্ডিচেরিতে ফরাসি সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের আন্দাজ পেতে পণ্ডিচেরি শহরের ওই ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার এলাকায় পায়ে হেঁটে সুন্দর বেড়ানো যায়। পণ্ডিচেরির রু দুমাস, রু সাফরেন, রু রোমাইন রোনাল্ড এবং লা বোর্ডোনাইসের মতো রাস্তাগুলি ধরে হাঁটলে পণ্ডিচেরির ফরাসি ঐতিহ্যের ছবিটা বেশ ফুটে ওঠে। ফরাসি ‘রু’ শব্দটির অর্থ রাস্তা।

ফরাসি গঠনশৈলীর বাড়িঘর, চার্চ, কাফে, নগর পরিকল্পনা এবং খাবারদাবারে এক টুকরো ফ্রান্স খুঁজে পাওয়া যায় এখনো পণ্ডিচেরির এই ফেঞ্চ কোয়ার্টারের। উল্লেখ্য, ফ্রেঞ্চ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পণ্ডিচেরিতে তাদের ট্রেডিং পোস্ট তৈরি করেছিল ১৬৭৪ সালে। আর ফরাসিদের শাসনমুক্ত পণ্ডিচেরি ভারতের অধিকারে এসেছিল ১৯৫৪ সালে।

ওই গ্র্যান্ড ক্যানালের ওদিকটায়, পশ্চিম পারে অর্থাৎ তামিল কোয়ার্টারে ভ্রমণার্থীদের পদছাপ কম পড়ে। পন্ডিচেরি বা পুদুচেরির সামগ্রিক ছবিটা চাক্ষুষ করতে হলে ওদিকটায় একবার যেতে হয়। ওটা পুদুচেরির হেরিটেজ এলাকা। পাল্টে যায় ঘরবাড়ির চেহারা। মূল দরজায় হিন্দু দেবদেবির ছবি, বাড়ির বাইরের দিকে কাঠের থামওয়ালা টানা বারান্দা, ভিতরের দিকে উঠোন ঘিরে ঘর। লাল মেঝে। ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারে বোগেনভেলিয়া ফুলের বাহার চোখে পড়ে। তামিল কোয়ার্টারে বেলফুলের ঘ্রান। মন্দির। প্রাচীন বাড়ি। এই তামিলাঞ্চলের ঈশ্বরণ কভিল স্ট্রিট, পেরুমল কভিল স্ট্রিট ধরে খানিক বেড়ালে পণ্ডিচেরির ঐতিহ্যের ছবিটা খানিকটা পরিষ্কার হয়।

আরও পড়তে পারেনঃ ‘নীল সমুদ্র, সোনালী সৈকত, ফরাসী ঐতিহ্যের পন্ডিচেরি’
https://torsa.in/blue-sea-golden-beach-pondicherry-of-french-tradition/

বৃহত্তর তামিল কোয়ার্টার এলাকার মধ্যেই স্থান হয়েছে ‘ক্রিশ্চিয়ান কোয়ার্টার’এর। বর্তমান পণ্ডিচেরির মহাত্মা গাঁধি রোডের কাছে ইমাকুলেট কনসেপশন চার্চকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল খ্রিস্টানদের বসতি। রু স্ট্রিট থেরেসা, রু লাপোর্টে রাস্তা দুটি ধরে খ্রিস্টান পাড়ার মধ্যে ঢুকে পড়া যায়। লক্ষ্যনীয়, ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারে কিন্তু ইংলিশ কোয়ার্টারের জায়গা হয়নি।

শুধু ক্রিশ্চানপাড়া কেন, মুসলিমদের আবাসিক অঞ্চল তথা মুসলিম কোয়ার্টারেরও পত্তন ঘটেছিল ওই ব্ল্যাক টাউন তথা তামিল কোয়ার্টারের মধ্যেই। কুতবা মসজিদকে বেড় দিয়ে গড়ে উঠেছিল মুসলিম প্রধান অঞ্চলটি। ঘরবাড়ির গঠনরীতিতে তামিল স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে ইসলামিক ঘরানার অলংকরণ যুক্ত হয়েছে। ১৬৯৩-এ ডাচেদের তৈরি পণ্ডিচেরি ফোর্টের মানচিত্রে কুতবা মসজিদের উল্লেখ পাওয়া যায়। বর্তমানে মসজিদটির আবস্থান মোল্লা রোডে।

পণ্ডিচেরি ভ্রমণে ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারের সঙ্গে তামিল কোয়ার্টারও বেড়িয়ে দেখা গেলে এখানকার সংস্কৃতির ও ঐতিহ্যের চালচিত্রটি অনেকটা স্পষ্ট হয়।

ফটোঃ অর্চিতা সুরি, ট্র্যাভেল আর্থ, লক্ষ্মী শরত, পণ্ডিচেরি পর্যটন, সিটি সিকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *