Follow us
Search
Close this search box.

পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা পুরুলিয়ার অপরূপ দুই লেক

পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা পুরুলিয়ার অপরূপ দুই লেক

ঋতু থেকে ঋতুতে রং বদলায় পুরুলিয়া। শীতে, বসন্তে, বর্ষায় ভিন্ন ভিন্ন প্রতিফলন মুরগুমা ও খয়রাবেড়া লেকে। পুরুলিয়ার দুই অপরূপ জলাধারের কথা।

মুরগুমা
পাহাড় আর শাল শিমূল পলাশ পিয়ালের জঙ্গলে ঘেরা টলটলে জলের হ্রদ মুরগুমা। ভ্রমণে রোমান্টিকতার খোঁজ পেতে চাইলে মুরগুমায় আসতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খন্ড সীমান্তে ঝালদা ব্লকে অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে কংসাবতীর শাখানদী শহরজোড়ের ওপর বাঁধ তৈরির কারণে মুরগুমা লেকের সৃষ্টি হয়েছে। পাশ্ববর্তী মুরগুমা গ্রামের নামে হ্রদের নাম। মুরগুমা হ্রদ এলাকা থেকে অযোধ্যা পাহাড়ের মনকাড়া দৃশ্যে মজতেই হবে। আবার অযোধ্যা পাহাড়ের পথে খানিকটা উপর থেকে মুরগুমা লেকের দৃশ্য সহজে ভোলবার নয়।

 

মার্চ, এপ্রিল, মে মাসে পলাশের লালিমা রাঙিয়ে দেয় গোটা মুরগুমা অঞ্চলটিকে। রাতে গ্রাম থেকে ভেসে আসে মাদলের সুর। বাতাসে মহুয়ার আঘ্রাণ। সে এক ঝিম ধরানো পরিবেশ। বর্ষায় মুরগুমার আরেক রূপ। তখন হ্রদের জলে মেঘের খেলা, আর সবুজ আর সবুজ।

পাখির ডাকে ঘুন ভাঙে এখানে। প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন। হাঁটাপথে চলে যান গাড়ুবেরা, বামনী, মামুডি, লখিপুরের মতো গ্রামগুলিতে। লালমাটির প্রকৃতি, আদিবাসী জীবনের রোজনামচা সম্পর্কে একটা ধারণা হবে। ভালো লাগবে এই গ্রাম ভ্রমণ। চাইলে লেকে মাছ ধরতে পারেন। ফটোগ্রাফিতে আগ্রহীদের কাছে মুরগুমা হ্রদ অঞ্চল স্বর্গরাজ্য। আগ্রহীরা জঙ্গলপথে ট্রেক করতে পারেন। মুরগুমাতে থেকে দিনে দিনে বেড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে অযোধ্যা পাহাড়, পাখি পাহাড়, বামনী ও তুর্গা ঝর্ণা, মুখোশ গ্রাম চরিদা, তারপানিয়া হ্রদ, খয়ড়াবেড়া হ্রদ, দেউলঘাটা মন্দির।

যাওয়ার পথ
সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস, হাওড়া থেকে লালমাটি এক্সপ্রেস, হাওড়া-রাঁচি  ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, হাওড়া- পুরুলিয়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, হাওড়া-চক্রধরপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জার, শালিমার স্টেশন থেকে আরণ্যক এক্সপ্রেস পুরুলিয়া জংশনে যায়।

পুরুলিয়া থেকে সড়কপথে মুরগুমা কমবেশি ৫০ কিলোমিটার। পুরুলিয়া স্টেশন বা শহর থেকে গাড়ি পাওয়া যাবে। হাওড়া-হাতিয়া এক্সপ্রেসে ঝাড়খণ্ডের মুরি স্টেশনে নেমে গাড়িতে মুরগুমা পৌঁছানো যেতে পারে। দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। হাওড়া-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে ঝালদা স্টেশনে নেমে সেখান থেকে সড়কপথে মুরগুমা যাওয়া যায় আধ ঘন্টায়। ঝালদা স্টেশন থেকে মুরগুমা ১২ কিলোমিটার।

থাকার ব্যবস্থা
বনপলাশী ইকো হাট : লেকের পাশেই ইকো হাটের অবস্থান। ফোন: ৯৮৭৪৩৬১৯৫১, (০৩৩)৪০০৭-৫৫১০।

পলাশ বিতান জঙ্গল হাট : মুরগুমা লেকের কাছে এই জঙ্গল হাটে রয়েছে ফ্যামিলি কটেজ এবং নন-এসি টেন্ট। ফোন: ৯৬৭৪২২২৬৭০,৯৮৩১৩৪৭১২৩।

 

 
খয়রাবেড়া
সবুজ পাহাড় চারদিকে। তারমধ্যে দারুন সুন্দর এক হ্রদ। পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খন্ড সীমান্তের কাছে পুরুলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে সুবর্ণরেখা নদীর অববাহিকায় খয়রাবেড়া ইরিগেশন ড্যাম ও লেক এখন এক জনপ্রিয় পর্যটন ঠিকানা। গাঢ় সবুজ বর্ণ পাহাড় আর টলটলে জলের সেই হ্রদ চোখ আর প্রাণের আরাম ও শান্তি। চাঁদনী রাতে সমগ্র পরিবেশ আরো মোহময়ী হয়ে ওঠে। আশ্চর্য হয়ে দেখতে হয় রাতের খয়রাবেড়ার তারাভরা আকাশ। স্পষ্ট দেখবেন মিল্কিওয়ে।

 

হ্রদেরে পাশেই অযোধ্যা রেঞ্জের চেমটো ও বাড়া পাহাড়। পাহাড়ের পাশ দিয়ে হাতি চলাচলের রাস্তা। পাহাড়ি জঙ্গল থেকে রাতে কখনো কখনো হরিণ, হায়নার ডাক ভেসে আসে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে হ্রদের পাশেই খয়রাবেড়া ইকো অ্যাডভেঞ্চার রিসর্ট।

 

পাহাড়, হ্রদের শুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত এই রিসর্টে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের নানা আয়োজন। ট্রেকিং, কায়াকিং, মাউন্টেন বাইসাইক্লিং, অ্যঙ্গলিং, আর্চারি প্রভৃতির মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে রিসর্টের ব্যবস্থাপনায়। অতিথিদের নির্দেশ মতো আয়োজিত হয় ক্যাম্পফায়ার, বারবিকিউ, ছৌ নাচ।

ট্রেক করে ওঠা যায় চামটা পাহাড়ে। তবে শীতের মরশুমেই এই উদ্যোগটি নেওয়া ভালো। খয়রাবেরা ড্যামের কাছেই ঝিলিং শিলিং পাহাড়। এই পাহাড়ে রয়েছে আদিবাসীদের বসতি। এরকম কোনও পাহাড়ি গ্রামে গিয়ে আদিবাসীদের জীবনযাপন দেখা যায়। দারিদ্র, কঠিন জীবনযাপনের মধ্যেও মানুষগুলোর শিল্পীসত্ত্বার পরিচয় পাওয়া যায়। স্বল্প পরিসর কুটিরের দেওয়ালে প্রকৃতি আর জীবনচর্চা বিষরে স্বতঃপ্রণোদিত ছবি শহুরে মানুষের কাছে ভাববার বিষয় বৈ কী। আর খয়রাবেরায় থেকেও সমগ্র আযোধ্যা বেড়িয়ে নেওয়া যায়।

যাওয়ার পথ
খয়রাবেড়ার নিকটতম রেল স্টেশন বরাভূম। লালমাটি এক্সপ্রেস, হাওড়া-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, ক্রীড়াযোগ এক্সপ্রেস ,হাওড়া-চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার হাওড়া থেকে ছেড়ে বরাভূম যায়। খয়রাবেড়ার ইকো এডভেঞ্চার রিসর্টের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। পুরুলিয়া শহর থেকে রিসর্টের দূরত্ব ৬৭ কিলোমিটার। উভয় জায়গা থেকেই প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে রিসর্টে আসা যাবে। রিসর্ট থেকেও নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

থাকার ব্যবস্থা
খয়রাবেড়ার ইকো এডভেঞ্চার রিসর্টে থাকার জন্য রয়েছে আধুনিক সমস্ত সুবিধাযুক্ত দ্বিশয্যার এসি কটেজ এবং স্ট্যান্ডার্ড, সুপিরিয়র ও ডিলাক্স টেন্ট। যোগাযোগের নম্বর : ৯৮৩০১৬৯৬৯৪ , ৯৮৩০১৯৯৩৩৫।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *