Follow us
Search
Close this search box.

হানলে থেকে রাতের আকাশ

হানলে থেকে রাতের আকাশ

রাতের আকাশে মেরু আলোকের নৃত্য বা সুমেরুপ্রভা বা উদীচী ঊষা বা অরোরা বোরিয়ালিস দেখতে সারা পৃথিবী থেকে কত মানুষ বেড়াতে যান এই গ্রহের উত্তর প্রান্তে। নরওয়ে, আইসল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড প্রভৃতি দেশের অরোরা বেল্টের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেই অকল্পনীয় দৃশ্যের সাক্ষী থাকা যায়। এবার এ দেশেও বিস্মিত করার মতো রাতের আকাশ দেখা যাবে লাদাখের চাংথাং অঞ্চলের হানলে থেকে। লাদাখের রাজধানী শহর লে থেকে চুমাথাং হয়ে হানলে ২৭৫ কিলোমিটার। ঘন্টা দশেক সময় লাগে একপিঠে।

চাংথাংয়ের কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয়েছে নাইট রিজার্ভ। আলোর দূষণ নেই গ্রামগুলিতে। খুব সচেতন ভাবেই রাতের আলো নিয়ন্ত্রিত হয় গোটা অঞ্চলটিতে। মধ্যমণি হানলে, আঞ্চলিকদের উচ্চারণে ‘আনলে’। উচ্চতা ১৪,৭০০ ফুট। ইন্ডিয়ান ইন্স্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স হানলেতে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র গড়েছে। অবজার্ভেটরিতে বসেছে সাড়ে ৬ ফুট ব্যাসের টেলিস্কোপ। পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম অপ্টিক্যাল অবজার্ভেটরি এটি।

ভারত-তিব্বত সীমান্তের কাছাকাছি নিভৃতে থাকা হানলের প্রকৃতি অপরূপ। একটা পাহাড়ের শীর্ষে অবস্থান করছে ১৭ শতকের হানলে মনাস্ট্রি। সেই মনাস্ট্রি চত্ব্রর থেকে চারআশের পাহাড়ের দৃশ্যাবলী সহজে ভোলবার নয়। হানলে নদী-সংলগ্ন প্রান্তরে বুনো গাধা চরে বেড়ায়। তিব্বতী গ্যাজেলের (একপ্রকার হরিণ) আবাস এই হানলে। সবমিলিয়ে লাদাখের ভ্রমণ মানচিত্রে হানলে পাকাপোক্ত জায়গা করে নিতে চলেছে।

হানলের কথা উঠলে সোনম ওয়াংচুকের কথাও আসবে। ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিটিতে আমির খান অভিনীত চরিত্রটি বাস্তবের সোনম ওয়াংচুকের আদলে রূপায়িত হয়েছে। মানুষটি একাধারে ইঞ্জিনিয়ার, উদ্ভাবক, শিক্ষাবিদ, পরিবেশবিদ ও সমাজকর্মী। বর্তমানে বছর সাতান্নর সোনম ওয়াংচুক এই ধরিত্রীর বিধ্বংসী উষ্ণায়ণ প্রতিরোধের যুদ্ধে শামিল রয়েছেন। প্রয়োজনে লাদাখের সামাজিক বা পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানম্ন্ত্রীকে পত্রাঘাত করতে ছাড়েন না। নানা কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ম্যাগসেসে, গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড ফর সাস্টেনেবেল আর্চিটেকচার-সহ নানা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। হানলে ও স্ংলগ্ন অঞ্চলকে ‘নাইট স্যাংচুয়ারি’ হিসেবে প্রস্তুত করার প্রক্রিয়ায়, আঞ্চলিক মানুষজনকে এ ব্যাপারে সচেতন করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সোনাম ওয়াংচুকের।

মে থেকে সেপ্টেম্বর হানলে বেড়ানোর সেরা সময়। লে থেকে চুমাথাং বা চামথাং হয়ে সরাসরি হানলে পৌঁছানো যায়। প্যাংগং লেক বেড়াতে গেলে সেখান থেকে চুসুল হয়ে হানলে যাওয়া হেতে পারে। সো মোরিরি (লেক) এলাকা থেকে সুমডো, মাহে, লোমা হয়েও হানলে যাওয়া যেতে পারে। আবার এমন হতে পারে যে, লে থেকে যাত্রা শুর করে প্যাংগং, হানলে ও সো মোরিরি লেক বেড়িয়ে ফের লে না ফিরে মানালি-লে হাইওয়ে ধরে মানালিতে এসে রাত কাটানো গেল। সারচুতে গাড়ি প্রবেশ করবে হিমাচল প্রদেশে। লে থেকে বিশদ খোঁজখবর নিয়ে নেওয়া উচিত হবে যাত্রা শুরুর আগে। সাম্প্রতিকতম তথ্য হাতে থাকা দরকার। যেমন, লে থেকে হানলে যাওয়ার বাস আছে, সপ্তাহে দিন দুয়েক চলাচল করে। দিন বদলাতে পারে। তবে হানলের আকাশ, সঙ্গে শীতল মরুভূমির দুটি টলটলে হ্রদ, রুক্ষ পাহাড়, নানা রংয়ের প্রান্তর, পথের বাঁক, সবমিলিয়ে লাদাখের একটা দিক বেড়ানো হয়ে যায়। সঙ্গে লে তো থাকলই।

হানলের প্রায় ১৫ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে এক অন্য আকাশ দেখার জন্য অন্তত একটা রাত তো হানলেতে থাকতে হবে। হানলে-সংলগ্ন গ্রামগুলিতে কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে। সোনম গেস্টহাউস হানলেতে থাকার জন্য বেশ ভালো ব্যবস্থা। যোগাযোগের নম্বরঃ ৯৪৬৯২ ২৪৩০২, ৮৯৯১৯ ২২০২৯। হানলের খলডো গ্রামে আরও কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে।

হানলের হেডার ফটো সৌজন্যঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া,
হানলে অবজার্ভেটরি ফটো সৌজন্যঃ স্টারস্টার্ক ফটোস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *