Follow us
Search
Close this search box.

দকসুম থেকে সিন্থন টপ

দকসুম থেকে সিন্থন টপ

কনিফারের অরণ্য, বিস্তৃত মখমল-সবুজ তৃণভূমি, নদীর প্রবাহ, পশুপালকদের কুটির, পীরপঞ্জাল পর্বতশ্রেণি, সবমিলিয়ে ৮৫০০ ফুট উচ্চতায় কাশ্মীরের আরেকটি অনিন্দ্যসুন্দর ছবি।

দকসুম। এক আশ্চর্য করা সৌন্দর্যের ঠিকানা। কাশ্মীর উপত্যকার নতুন ভ্রমণ ঠিকানা। দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। শ্রীনগর থেকে দিনে দিনে দকসুম বেড়িয়ে আসা যায়। একটা দিন দকসুমে থাকার ব্যবস্থা করা গেলে তার চেয়ে ভালো কিছু হয় না।

দকসুম।

চুপচাপ দকসুমে ভৃঙ্গি নদী-প্রবাহের কুলকুল ধ্বনি যেন সঙ্গীতের মূর্চ্ছনা। বর্ষায় উচ্ছল নদীর ভরা রূপ প্রাণে ঢেউ তোলে। সবুজ তৃণভূমিতে বা ভৃঙ্গি নদীর তীরে ক্যাম্পে থাকার ব্যবস্থা করা যায়। ভৃঙ্গি নদীতে প্রচুর ট্রাউট মাছ পাওয়া যায়। মৎস শিকারে আগ্রহ থাকলে ছিপ হাতে বসে পড়তে পারেন ভৃঙ্গির পারে। কোনও পোহালের সঙ্গে আড্ডা জমতে পারে তৃণভূমির গালিচায়। কাশ্মীরী ভাষায় পশুপালককে পোহাল বলা হয়।

শ্রীনগর থেকে দকসুম ৯৭ কিলোমিটার। গাড়িতে ঘন্টা দু’য়েক সময় লাগে। অনন্তনাগ-কিস্তওয়ার সড়ক (জাতীয় সড়ক এন এইচ-১বি) ধরে অনন্তনাগ, অছাবল, কোকেরনাগ ছাড়িয়ে দকসুম।

পথে অছাবল ও কোকেরনাগে ঢুঁ মারা যায়। অছাবল মুঘল সম্রাজ্ঞী নুর জাহানের প্রিয় জায়গা ছিল। এখানকার মুঘল গার্ডেনটির যথেষ্ট খ্যাতি আছে। হাতে সময় থাকলে কোকেরনাগের ঝর্ণাটি দেখে নেওয়া যেতে পারে। মূল ঝর্ণা থেকে মুরগির পায়ের আঙুলের মতো কয়েকটি ধারা। কাশ্মীরী কোকের কথাটির অর্থ মুরগি।

দকসুমের তৃণভূমি।

দকসুম থেকে সিন্থন টপ

পাহাড়-প্যাচানো রাস্তা ধরে উঠতে উঠতে কোনও কোনও জায়গা থেকে মনে হবে রাস্তা ঢুকে গেছে আকাশের মধ্যে। সে-আকাশের কত রূপ, রং। তারপরেই আরেকটি বাঁক পেরিয়ে যাওয়া। আপনি চলেছেন সিন্থন টপে। উচ্চতা ১২,৪০০ ফুট। দকসুম থেকে ৩২ কিলোমিটার। টপ পর্যন্ত পুরো পথটাই যাওয়া যাবে গাড়িতে। সিন্থন টপে যেতে চাইলে দকসুমে অন্তত একটা দিন থেকে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়।

দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার ব্রেং উপত্যকা এবং চেনাব উপত্যকার কিস্তওয়ার জেলার মধ্যে অবস্থিত সিন্থন টপ। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সিন্থন টপে যাওয়ার সেরা সময়। বছরের বাকি সময় সিন্থন টপ ও সেখানে যাওয়ার পথ বরফে বরফে দুরুহ হয়ে ওঠে। শীতের মরসুমে রাস্তা বন্ধও থাকে। শ্রীনগর থেকে সিন্থন টপ সাড়ে ৩ ঘন্টা ও পহেলগাম থেকে আড়াই ঘন্টার যাত্রা। দিনে দিনে দেখে আসা যায় না এমনটা নয়। তবে ভৃঙ্গির তীরে শুয়ে-বসে প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়ার অবকাশ তেমন পাওয়া যাবে না।

অল্প শীতে সিন্থন টপ যাওয়ার রাস্তা।

অনন্তনাগের সঙ্গে কিস্তওয়ারের যোগাযোগ ঘটিয়েছে সিন্থনের পার্বত্য পথ। তাই এ পথ একটি পাসও বটে। পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে দিয়ে সেই আশ্চর্য পথ। কোথাও কোথাও রাস্তার ওপর দিয়ে বয়ে যায় বরফগলা জলের ধারা। প্রথম দিকে অ্যালপাইন অরণ্যে ছাওয়া পাহাড়ের সব ঢাল। নীচে দেখা যায় অপূর্ব সব উপত্যকা। তারপর অরণ্যের বিস্তার কমতে থাকবে। পথ যাবে শ্যাওলা রঙের পহাড়সারির মধ্যে দিয়ে। রাস্তা চলতে থাকবে গভীর খাদের পাশ দিয়ে। সিন্থন টপে উঠে আসবেন। পাহাড় আর উপত্যকার বিস্তার চতুর্দিকে। উপত্যকার মধ্যে মধ্যে অদ্ভুদ সব মেঘপুঞ্জ অকল্পনীয় সব তুলির টান। অবাক আপনাকে হতেই হবে।

ফিরে আসবেন দকসুম, কিংবা সরাসরি শ্রীনগর।

দকসুমে থাকার ব্যবস্থা

প্যারাডাইস রিট্রিট, দকসুম, ফোনঃ ৭০০৬৯ ৪৬৪৬২।

হোটেল বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন জম্মু ও কাশ্মীর পর্যটন উন্নয়ন নিগমের এই নম্বরেওঃ (০১৯৪) ২৫০২২৭৪। দকসুমে জম্মু-কাশ্মীর পর্যটন বিভাগের একটি টুরিস্ট হাট আছে।

 

ফটো: তপন মুখোপাধ্যায় / আসিফ ভাই,দকসুম (প্যারাডাইস রিট্রিট)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *