Follow us
Search
Close this search box.

উমেদ ভবন প্যালেসে কিছুক্ষণ

উমেদ ভবন প্যালেসে কিছুক্ষণ

দাঁড়িয়ে আছি জোধপুরের উমেদ ভবন প্যালেসের সবুজ গালিচা-সম প্রাঙ্গণে। প্রাসাদের মিউজিয়াম ঘুরে দেখে বেরিয়ে এসেছি একটু আগে। এখনো কেমন একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছি।

সেলিব্রেটিদের কল্যাণে জোধপুরের উমেদ ভবন এখন সাধারণ্যে যথেষ্ট পরিচিত। বলিউডের রানি মুখার্জি থেকে ক্রিকেটের বিরাট কোহলি, দীপিকা পাড়ুকোনরা চার হাত এক করার জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন ইটালিরব ভিলা দেল বলবিয়েনেল্লোতে। আল্পস পর্বতের কোলে লেক কোমোর ধার ঘেঁষে ইটালির অন্যতম রোমান্টিক ওয়েডিং ডেস্টিনেশন ভিলা দেল বলবিয়েনেল্লো। দেখিনি সেই ভিলা। তবে যতটুকু জেনেছি এবং উমেদ প্যালেস যেমন দেখলাম তাতে মনে হয়েছে, ভিলা দেল বলবিয়েনেল্লোকে ধারে ও ভারে টক্কর দিতে পারে রাজস্থানের উমেদ ভবন প্রাসাদ। সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, স্থাপত্য শৈলীর বৈশিষ্ট্য, আভিজাত্য এবং বৈভবে বরং এগিয়ে থাকবে দেশি গার্ল প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আর মার্কিন পপ তারকা নিক জোনাসের বাসর ঘরের ঠিকানা এই উমেদ ভবন প্যালেস।

জোধপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের চূড়ায় এই রাজপ্রাসাদের অবস্থান। জোধপুরের মহারাজা উমেদ সিংয়ের ইচ্ছায় ও উদ্যোগে ১৯২৯ থেকে ১৯৪৩, প্রায় ১৪ বছর ধরে স্থপতি হেনরি ভন ল্যাঞ্চেস্টারের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছিল এই প্রাসাদ। তখনকার দিনে খরচ হয়েছিল এক কোটি টাকা। ২৩ একর জায়গা জুড়ে সবুজ গালিচার মাঝখানে সোনালী হলুদ স্যাণ্ড স্টোনের প্রাসাদের অন্দর সজ্জায় রয়েছে মাকরানা মার্বেল এবং বার্মিজ টিক উডের চোখ কপালে তুলে দেওয়া কারুকাজ। মেঝেতে ব্ল্যাক গ্ৰানাইট, লাউঞ্জে পিঙ্ক স্যাণ্ড স্টোনের ব্যবহার সৌন্দর্য রচনার শৈলীতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। বনেদি রুচি, বর্ণাঢ্য ইতিহাস, আশ্চর্য করা স্থাপত্যের ঝংকার শোনা যায় প্রাসাদের অভ্যন্তরে। বহিরাঙ্গে ফরাসি শিল্পরীতি ‘বো জাঁ’-র প্রভাব রয়েছে। প্রাসাদের অন্দরসজ্জায় কাম্বোডিয়ার অঙ্কোরভাট মন্দিরের ভাস্কর্যের ছাপ স্পষ্ট। প্রাসাদে রয়েছে ৩৪৭টি ঘর এবং একটি বিশাল ব্যাঙ্কোয়েট হল।

প্রাসাদের বর্তমান মালিক উমেদ সিংয়ের নাতি গজ সিং। তিনি তাজ গোষ্ঠীকে এই ভবনের লিজ দিয়েছেন। তাজ গ্রুপের হোটেল এখন এই প্রাসাদ। এই গোষ্ঠীই এখন প্রসাদের পরিচালনা এবং রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে। প্রাসাদের একটি অংশে তৈরি হয়েছে মিউজিয়াম। রাজ পরিবারের ব্যবহৃত নানা সামগ্ৰীর বিশাল সম্ভার এখানে স্থান পেয়েছে। সংগ্ৰহশালাটি ঘুরে দেখতে পারেন আগ্রহী দর্শকরা। টিকিটের মূল্য ত্রিশ টাকা। প্রাসাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চোখ ধাঁধানো বৈভবের আঁচ পাওয়া যায় মিউজিয়ামটি ঘুরে দেখলেই।

তাজ গ্ৰুপ এই প্রাসাদকে পৃথিবীর অন্যতম বিলাসবহুল হোটেলের রূপ দিয়েছে। হোটেলে ৬৪টি স্যুট আছে। রাজকীয় ধাঁচে তৈরি স্যুটগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে তাদের মান অনুযায়ী। নামগুলো সুন্দর। মহারাজা স্যুট, মহারানি স্যুট, রয়্যাল স্যুট এবং রেগাল স্যুট ইত্যাদি। রেস্তোরাঁ, যোগা স্টুডিও, স্পা ইত্যাদি নিয়ে বিশাল আয়োজন। টেনিস কোর্টই আছে চারটে। আছে বিলিয়ার্ড রুম, মার্বেল সজ্জিত স্কোয়াস বোর্ড। প্রাসাদের বাগানে ইতি উতি ঘুরে বেড়ায় ময়ূর।

হোটেলে দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ৬১,৫০০ টাকা, রয়্যাল বেডরুমে একটি রাত থাকার খরচ ১,৭১,০০০ টাকা। এই অঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হবে ট্যাক্স। বিলাসী ও অর্থবানেরা থাকুন গে হোটেলে। কিন্তু এমন একটি ঐতিহ্যশালী প্রাসাদ সাধারণ মানুষ দেখবেন না? সেইজন্যই মিউজিয়ামের ব্যবস্থা। মাত্রই ৩০ টাকার টিকিট কেটে ঢুকে পড়া যায় প্রাসাদের পরিসরে। ওই মিউজিয়ামটি ঘুরে দেখলেও ইতিহাস, শিল্প, ভারতীয় বনেদিয়ানার সঙ্গে পরিচয় হয়।

রাজস্থানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর জোধপুর। এখানেই এক সময় ছিল মারোয়াড় রাজ্যের রাজধানী মন্ডোর। রাজস্থানের বৃহত্তম শহর জয়পুর। এই জয়পুর যেমন পিঙ্ক সিটি, গোলাপী শহর, জোধপুর তেমন নীলাভ নগরী। ব্লু সিটি। বাড়িঘর, হাভেলি, মন্দির, দুর্গে নীল বর্ণের নানা শেডের এক বিস্তৃত ক্যানভাস যেন শহরটা। ঐতিহ্যবাহী মারোয়াড়ি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় হয় শহরটাতে।

বেড়িয়ে দেখার আছে অনেক কিছুই। বিশালাকার মেহেরনগড় ফোর্ট অবশ্যই বড় আকর্ষণ। অতীতের মন্দোরের ছায়া দেখতে যেতে পারেন মন্দোর গার্ডেনে। যশবন্ত থাড়া, মোতি মহল, উমেদ প্যালেস, বালা সমুন্দ লেক, কৈলানা লেক, গণেশ টেম্পল, রাই-কা-বাগ প্যালেস, যশবন্ত সাগর ড্যাম এবং সিদ্ধিনাথ শিব টেম্পল এবং আরও আনেক কিছু।

রাজস্থানে বেড়াতে গিয়ে বুড়ি ছোঁয়া করে যোধপুর দেখলে শহরটির রূপ, রসের নাগাল পাওয়া যাবে না। জোধপুর আলাদা করে সময় দাবি করে। সঙ্গে রাখা যায় জয়শলমীরকে।

হাওড়া থেকে প্রতিদিন রাত ১১.৪০ মিনিটে ছাড়ছে ১২৩০৭ আপ যোধপুর সুপারফফাস্ট এক্সপ্রেস। দুটো রাত ট্রেনে কাটিয়ে ভোর ভোর পৌঁছে যাবেন যোধপুরে।

তোর্সা ডট ইনঃ জোধপুরে থাকার জন্য সাধারণত অসুবিধা হয় না। পছন্দ মতো হোটেল খুঁজে নিতে পারেন। এখানে কয়েক’টি হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর রইলঃ।
হোটেল ঘুমর (রাজস্থান পর্যটনের হোটেল), জোধপুর, ফোনঃ ০২৯১-২৫৪৪০১০, ৮৫৬২০ ৮১০০০।
কৃষ্ণপ্রকাশ হেরিটেজ হাভেলি, জোধপুর (মাকরানা মহল্লার কাছে), ফোনঃ ৯৮২৯২ ৪১৫৪৭।
কানকারিয়া হেরিটেজ, গুলাব সাগর, জোধপুর, ফোনঃ ৭৭৪৪০ ৩৬৮২৯।
জোধপুর হেরিটেজ হাভেলি, গোলে নদী, জোধপুর, ফোনঃ ৭২২১৯ ৬৮২৩৮।
চন্দ্রা ইন, এয়ারপোর্ট রোড, জোধপুর, ফোনঃ ৯৩৫১৫ ০৫৩৯৯।
কলিঙ্গ হোটেল, স্টেশন রোড, জোধপুর, ফোনঃ ২৯১২৬ ১৫৮৭১।
হোটেল হাভেলি ইন, সজতি গেট, জোধপুর, ফোনঃ ৯৫৮৭৩ ৭৭৭৩০।
রোহিদা ক্যাম্প ওশিয়ান (ডেজার্ট ক্যাম্প), জোধপুর শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার, ফোনঃ ৯৪১৩৫ ২২১৮৮।

উমেদ ভবন প্যালেস (তাজ গ্রুপ হোটেল), জোধপুর
ওয়েবসাইটঃ https://www.tajhotels.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *