Follow us
Search
Close this search box.

পাহাড়ের ছয় অফবিট ঠিকানা

পাহাড়ের ছয় অফবিট ঠিকানা

গুলমা

একদিকে চায়ের বাগান, অন্যদিকে মহানন্দা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য। গা-ছমছমে এক রাস্তা চলে গিয়েছে মাঝখান দিয়ে। জঙ্গল থেকে প্রায়ই সেই রাস্তায় উঠে আসে হাতি। মহানন্দা অরণ্যের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে রেলপথ। কাছেই গুলমা স্টেশন। গুলমা থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলপথের ছবির মতো সুন্দর স্টেশন শুকনা। চালু হয়েছিল ১৮৮০ সালে। শুকনায় দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের একটি সুন্দর মিউজিয়াম আছে। শুকনা মহানন্দা অভয়ারণ্যের একটি প্রবেশদ্বারও বটে।

ছবি সৌজন্য: ইন্ডিয়ারেলইনফো ডট কম

জায়গাটা গুলমা। অবস্থান দার্জিলিং জেলায়। শিলিগুড়ি থেকে গাড়িতে বড়জোর ৪০ মিনিটের পথ। পৌঁছে যাওয়া যায় অরণ্য, চা বাগান, নদী দিয়ে ঘেরা স্বপ্নমাখা গুলমায়। পশ্চাৎপটে থাকবে কার্শিয়াংয়ের পাহাড়শ্রেণি। প্রসঙ্গত, জনপ্রিয় হিন্দি ছবি ‘বরফি’ ও ‘জগগা জাসুস’-এর বেশকিছু দৃশ্যের লোকেশন ছিল এই গুলমা।

চা বাগানের মধ্যে দিয়ে ২ কিলোমিটার হেঁটে চলে যেতে পারেন চায়ের কারখানায়। একদিন চলে যান গুলমা স্টেশনে। ভালো লাগবে। আশপাশের জঙ্গল-ঘেঁষা গ্রামগুলি হল শিসামারা, চম্পামারি, বাবুবাসা প্রভৃতি।

হাঁটতে হাঁটতেই চলে যেতে পারেন মহানন্দার চরে। বর্ষায় নদী জাগে। দূর থেকে মহানন্দার উপরের সেতুটি যেন এঁকে রাখা একটা ছবি।

গুলমার পথে হাঁটাই একটা রোমাঞ্চ। বন্য হাতি মহারাজের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়।

যাওয়ার পথ

এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে একটা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে আধঘন্টা থেকে চল্লিশ মিনিটের মধ্যে গুলমায় চলে আসা যায়।

থাকার ব্যবস্থা

হামরো হোম ( গুলমা) হোমস্টে থাকার ভালো ব্যবস্থা। উল্টোদিকেই মহুরগং টি এস্টেট। গৃহকর্তা কৃষ্ণ থাপা। যোগাযোগের নম্বরঃ ৯৭৩৩০ ৭১৭১৬। টোল ফ্রি নম্বরঃ ১৮০০ ১২৩ ৩৭৫৯।

মহালদিরাম

এখানে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানায় নীচে নেমে আসা মেঘ। কুয়াশায় ছেয়ে থাকে জঙ্গুলে পথ। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে আকাশে ঝকঝক করে কাঞ্চনজঙ্ঘা। পাহাড়ের পর পাহাড়। সবুজে সবুজ চারিদিক। মহানন্দা অভয়ারণ্যের চৌহুদ্দির মধ্যে কার্শিয়াংয়ের কাছে ৫,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থান মহালদিরাম বা মালদিরামের।

কাছেই সুন্দর দুই গ্রাম, বাগোরা ও চিমনি। বাগোরা থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ্য করা যায়। চিমনি গ্রামের অ্যালপাইন অরণ্যের রূপ আপনাকে বিষ্মিত করবে। শেলপু পাহাড়ের চা বাগান চোখের আরাম প্রাণের শান্তি। বেড়িয়ে আসতে পারেন লাটপাঞ্চার, মংপু, কার্শিয়াং থেকে।

যাওয়ার পথ

এন জে পি থেকে মহালদিরাম ৫৭ কিলোমিটার। স্টেশন চত্বর থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে মালদিরাম চলে আসা যায়। কার্শিয়াং থেকে মালদিরাম ১৭ কিলোমিটার।

থাকার ব্যবস্থা

স্যালামান্ডার জঙ্গল ক্যাম্পঃ ৭৯০৮৭০৪৪৭১। সোনম হোমস্টেঃ ৯৮৩০০১১৭১৫।

বুনকুলুং

পাহাড়ের ধাপে ধাপে সবুজের ঢেউ। বজরার খেত ওগুলো। সামনেই সিংবুল টি এস্টেটের চায়ের বাগান। তার মধ্যে দিয়ে পায়ে হাঁটা পথ ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় নদীর ধারে। জঙ্গল, পাহাড়, ফুল, প্রজাপতি, নদী, নানা শেডের সবুজ একত্রিত হয়ে এক আশ্চর্য করা ছবি এঁকেছে বুনকুলুং গ্রামটিতে। ট্রাউট মাছ চাষের জন্যও খ্যাতি আছে বুনকুলুঙের। উন্নতমানের ট্রাউট চাষের জন্য দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল বুনকুলুংকে একটি মডেল গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করেছে। খুব ভালো মধু পাওয়া যায় বুনকুলুংয়ে।

মিরিক থেকে বুনকুলুং ১৫ কিলোমিটার। বুনকুলুং বেড়াতে গেলে চা-বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটবেন, নদীর তীরে গিয়ে দাঁড়াবেন। দু-দুটো নদী বইছে গ্রামের মধ্যে দিয়ে। বালাসন ও মুর্মাখোলা।

 

বজরা খেতের বাতাসে আপনি তরতাজা হয়ে উঠবেন। দিনে দিনে মিরিক লেক, মিরিকের বোকার মনাস্ট্রি, গয়াবাড়ির চা বাগান, রংবঙের কমলালেবুর বাগান এবং সৌরিনী বাজার থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন।

যাওয়ার পথ

এন জে পি, শিলিগুড়ি থেকে মিরিক হয়ে বুনকুলুং ৪৮-৫০ কিলোমিটার। মিরিক পর্যন্ত শেয়ার গাড়িতে এসে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বুনকুলুং যাওয়া যাবে। দার্জিলিং থেকে মিরিক, সৌরিনী হয়ে বুনকুলুং পৌঁছানো যায়।

থাকার ব্যবস্থা :

বুনকুলুং ইকো হাটস,ফোন ৯০৭৩০২৬১৪৫। বুনকুলুং রিট্রিট ইকো হাট, ফোন ৭৪২৭৯৯১৪৯১। বুনকুলুং জঙ্গল ক্যাম্প, ফোন ৯৬৭৪১২৩৪৪৯।

চাটাইধুরা

ব্যস্ত দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার। কিন্তু ঘন সবুজ কনিফার অরণ্যে ঘেরা শান্ত নিরালা চাটাইধুরা যেন অন্য জগৎ। দার্জিলিং জেলার নতুন ভ্রমণ ঠিকানা। চাটাইধুরায় প্রকৃতি নিবিড়ভাবে ঘিরে থাকবে আপনাকে। প্রায় ৭,০০০ ফুট উচ্চতার চাটাইধুরা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য অপরুপ। চাটাইধুরার হাওয়াঘর ভিউপয়েন্ট থেকে নীচের উপত্যকা, কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ হিমালয়ের নানা শৃঙ্গ, দার্জিলিং শহর, সান্দাকফু শীর্ষের দৃশ্য অনবদ্য। খানিকটা ট্রেক করে হাওয়াঘর ভিউপয়েন্টে উঠতে হয়।

জঙ্গলের পাশের নিরালা রাস্তা ধরে হাঁটুন। নানা পাখির দেখা পাবেন। কাছেই পরিচিত ভ্রমণ ঠিকানা লেপচাজগৎ। চাটাইধুরা থেকে বড়জোর দেড় কিলোমিটার। হাঁটাপথেই লেপচাজগৎ থেকে বেড়িয়ে আসা যায়। চাটাইধুরা থেকে ঘুম ৫ কিলোমিটার। ঘুম স্টেশন থেকে টয়ট্রেনে চড়ে খানিকটা বেড়িয়ে আসতে পারেন। দিনে দিনে দার্জিলিং থেকে বেড়িয়ে আসা যায়।

যাওয়ার পথ

শিলিগুড়ি থেকে চাটাইধুরা ৬৩ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি অথবা এন জে পি থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি চাটাইধুরা চলে আসা যায়। শিলিগুড়ি থেকে ঘুম ৫৮ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি অথবা এন জে পি থেকে শেয়ার গাড়িতে ঘুম পৌঁছে সেখান থেকে আরেকটা গাড়িতে চাটাইধুরা চলে আসা যায়।

থাকার ব্যবস্থা

লপচান হোমস্টে, ফোনঃ ৮৯১৮৬-৮১২২৯, ৮৩৪৩৮-১৯৮৩৯।

বিজনবাড়ি

দার্জিলিংয়ের ভ্রমণ মানচিত্রে বিজনবাড়ি দ্রুত বিশিষ্ট জায়গা করে নিচ্ছে। ঘুম স্টেশন রোড় থেকে ২২ কিলোমিটার। পাহাড়ে ঘেরা একটি উপত্যকার মধ্যে বিজনবাড়ির অবস্থান। উচ্চতা ২,৫০০ ফুট। গাড়ি চলবে উৎরাই পথে। পথে পড়বে হিমা জলপ্রপাত, কয়েকটি চোখ জুড়ানো চা বাগান। আর পথের কয়েকটি জায়গা থেকে উপরের দিকে দার্জিলিং শহরটিকে দেখা যাবে নতুন চোখে। সবমিলিয়ে অপূর্ব সুন্দর এক পথ ধরে যাত্রা শেষে আপনি পৌঁছাবেন বিজনবাড়ি।
বিজনবাড়ির এক প্রান্ত দিয়ে বইছে ছোটা রঙ্গীত নদী। এ কারণে বিজনবাড়ির উপত্যকাটি সুফলা। কমলালেবু্,আনারসের বেশ কিছু বাগিচা রয়েছে নদী-সন্নিহিত এলাকায়। ফল ছাড়াও নানা সবজি ও শস্যের চাষ হয় বিজনবাড়ির উর্বর জমিতে। বিজনবাড়ির লোধমা এলাকায় একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। বিজনবাড়ির পুলবাজার বা পালবাজার এলাকায় রয়েছে সুন্দর একটি মন্দির। পাথর খোদাই করে দুর্গা, শিব, গণেশের মূর্তি তৈরি করা হয়েছে।

বিজনবাড়ি ঘুরে দেখতেই অনেকটা সময় লেগে যাবে। দেখবেন দার্জিলিংয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জীবনযাপন। উপত্যকার নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ান। ছোটা রঙ্গীত নদীর ধারে গিয়ে বসুন, চাইলে নদীতে মাছ ধরতে পারেন। হাইকিং, ট্রেকিংয়ে আগ্রহ থাকলে বিজনবাড়ি দারুণ এক স্ট্র্যাটেজিক কেন্দ্র হতে পারে। বিজনবাড়ি থেকে রেলিং (৮ কিলোমিটার) হাইকিং হতে পারে। হেঁটেই চলে যাওয়া যায় সোম টি এস্টেট, ঘন্টা চারেক সময় লাগবে। চলে যেতে পারেন কলবংয়ে। এখান থেকে সিকিমের কিছু অঞ্চল দেখা যায়।

যাওয়ার পথ

সকালে দার্জিলিংয়ের বাসস্ট্যান্ড থেকে বিজনবাড়ি যাওয়ার বাস ছাড়ে। দার্জিলিংয়ের চক বাজার এলাকা থেকে বিজনবাড়ি যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পাবেন। ঘুম থেকেও বিজনবাড়ি যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যাবে।

থাকার ব্যবস্থা

বিজ্জু ভ্যালে ভিলেজ রিট্রিট, ফোনঃ ৯৭৩৫৫-৮৫৫৫৫। মেগিটার হোমস্টে, ফোনঃ ৯৯৩২১-৭৮১১৩, ৯৩৮২২-০৫৬৭২। রেলিং রঙ্গীত রিসর্ট, ফোনঃ ৯৮০০৩-১৫৩৪০।

লামাগাঁও

বিজনবাড়ি থেকে ছবির মতো ১২ কিলোমিটারের পাকদণ্ডী পথ ধরে চলে আসুন দার্জিলিং জেলার শান্ত, সুন্দর গ্রাম লামাগাঁও । মূল দার্জিলিং শহর থেকে দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটারে। ৫,২০০ ফুট উচ্চতার লামাগাঁও থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য এককথায় অসাধারণ। শীতে লামাগাঁওয়ের গভীর খাদ ঘন কুয়াশায় ভরে থাকে। জানলা, দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে আসে সেই কুয়াশা। গ্রীষ্মের লামাগাঁও খুব আরামদায়ক। পাহাড়ের ঢালে জৈব চাষ হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে লামাগাঁওয়ের ঘন সবুজের সঙ্গে কমলা রঙের মিশেল ঘটে। তখন লামাগাঁও বড় বর্ণময়।

পরিষ্কার দিনে লামাগাঁওয়ের পাহাড় থেকে দার্জিলিংয়ের বিস্তৃত চা বাগান দেখা যায়। দেখা যায় দার্জিলিং শহরটিকেও। রাতের দার্জিলিংয়ের আলোর মালা খুবই রোমান্টিক। আর মাথার উপরে থাকবে তারকাখচিত আকাশ। সকালে লামাগাঁওয়ের রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুন। পাখির ডাকে চমৎকৃত হবেন। পাহাড়ি ফুলের রঙের বাহার মন ভালো করে দেবে। চোখে পড়তে পারে অর্কিডগুচ্ছ।
যেতে পারেন ১২ কিলোমিটার দূরের বিজনবাড়ি। যাওয়ার রাস্তাটি খুব সুন্দর। চাইলে বিজনবাড়িতে ছোটা রঙ্গীতে মাছ ধরতে পারেন। ছোট ছোট ট্রেক করতে পারেন লামাগাঁও থেকে। আর নিখাদ প্রকৃতির মধ্যে বিশ্রামের সু্যোগ তো রইলই।

যাওয়ার পথ

এন জে পি থেকে লামাগাঁও ১০২ কিলোমিটার। এন জে পি অথবা শিলিগুড়ি থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি লামাগাঁও পৌঁছে যাওয়া যায়। অন্যথায় এন জে পি অথবা শিলিগুড়ি থেকে ঘুম পর্যন্ত এসে সেখান থেকে আরেকটি গাড়িতে লামাগাঁও চলে আসা যাবে। দার্জিলিং থেকে লামাগাঁও ৩০ কিলোমিটার, ঘুম থেকে ৪০ কিলোমিটার।

থাকার ব্যবস্থা

লামাগাঁও হোমস্টে। এটি লামাগাঁওয়ের পুরনো হোমস্টে। হোমস্টের জমিতে বিভিন্ন সবজি ও ফলের চাষ করা হয়। ট্রেকিং, ফিশিং, সাইটসিয়িংয়ের ব্যাপারে হোমস্টে থেকে সহায়তা করা হয়। ফোনঃ ৭০৪৭০-৯৮৬৯৫।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *