Follow us
Search
Close this search box.

কালিম্পংয়ের সিলারিগাঁও, ইচ্ছেগাঁও

কালিম্পংয়ের সিলারিগাঁও, ইচ্ছেগাঁও

পাশাপাশি দুই পাহাড়ি গ্রাম। ট্রেক করে যাওয়া যায় এ পাহাড় থেকে ও পাহাড়ে। কালিম্পিংয়ের কাছাকাছি। সিলারিগাঁও তো বটেই, ইচ্ছেগাঁও-ও এখন পাহাড়প্রেমীদের কাছে পরিচিত দুই ভ্রমণ ঠিকানা। চিরনতুনও বটে।

সিলারিগাঁও

৬,০০০ ফুট উচ্চতায় পাইনের ঘন জঙ্গলে ঘেরা শান্ত সিলারিগাঁওয়ের প্রেমে না পড়ে উপায় নেই। কালিম্পং থেকে দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। অল্প কিছু পরিবারের বসবাস সিলারিগাঁওয়ে। পাইনের জঙ্গলের পশ্চাৎপটে ছোট ছোট রংচঙে বাড়িগুলো খুব সুন্দর লাগে দেখতে। কাঞ্চনজঙ্ঘার সুদীর্ঘ রেঞ্জ দেখা যাবে সিলারিগাঁও থেকে। দেখার মতোই সে দৃশ্য। সিলারিগাঁওয়ের গর্বিত বাসিন্দারা তাঁদের প্রিয় গ্রামটিকে ‘নতুন দার্জিলিং’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। পর্যটক-প্রিয় জায়গা হলেও খুব শান্ত সিলারিগাঁও। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রেশি নদী। নদীর অন্য পাড়ে সিকিম। চাষ আবাদ চলতে থাকলেও কয়েক বছর ধরে পর্যটন অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সিলারিগাঁওয়ে। হোমস্টে তৈরি হয়েছে অনেকগুলো। সাদামাটা রিট্রিটও আছে।

সিলারিগাঁও থেকে ইচ্ছেগাঁওয়ে যাওয়া যায় ট্রেক করে। রামিতে দাড়াও তো কাছেই। সিলারিগাঁও থেকে যেমন কাঞ্চনজঙ্ঘার অসাধারণ রূপ দেখবেন তেমন নীচের দিকে দেখবেন রেশি নদীর প্রবাহ। অল্প ট্রেক করে যেতে পারেন তিনচুলে ভিউপয়েন্ট। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে সপার্ষদ কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য যে তাক লাগিয়ে দেবে তা হলপ করে বলা যায়। সিলারিগাঁও থেকে ৩ কিলোমিটার ট্রেক করে চলে যেতে পারেন সাইলেন্ট ভ্যালি। পাইনের জঙ্গলে ঘেরা একটা প্রায় সমতল অঞ্চল। বর্ষায় সেখানে জল জমে। শব্দ বলতে শধু পাখির ডাক। সিলারিগাঁও থেকে ক্রসহিল ১০ কিলোমিটার। ক্রসহিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যাস্ত ভোলবার নয়। দিনে দিনে বেড়িয়ে আসতে পারেন কালিম্পং শহর, লাভা থেকে।

ইচ্ছগাঁও

অল্পদিনেই ইচেগাঁও কালিম্পঙের একটি জনপ্রিয় ভ্রমণ ঠিকানা হয়ে উঠেছে। বাঙালি পর্যটকদের কাছে ইচেগাঁও সহজ কথায় ইচ্ছেগাঁও। লেপচা ভাষায় ‘ইচেগাঁও’ কথাটির অর্থ উঁচু গ্রাম বা উঁচুতে অবস্থিত গ্রাম। পাহাড়ের শীর্ষে ৫,৮০০ ফুট উচ্চতায় গড়ে উঠেছে বসতি। দোকানপাট। কালিম্পং থেকে দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। পর্যটনের ব্যবসাই জীবীকা অর্জনের প্রধান অবলম্বন ইচ্ছেগাঁওয়ের অধিবাসীদের। ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে হোমস্টে। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা। দোকান রয়েছে অনেকের। পর্যটকদের প্রয়োজন হতে পারে এমন নানা সামগ্রী মায় নানা কিসিমের ওয়াইন পেয়ে যাবেন দোকানগুলিতে। গাড়ির ব্যবসা রয়েছে অনেকের। সাইটসিয়িং, প্যাকেজ টুরের জন্য প্রয়োজন হয় গাড়ির। মোট কথা, আঞ্চলিক অধিবাসীরা সমবেত উদ্যোগে পর্বত-শীর্ষে গড়ে তুলেছেন একটি সুন্দর ভ্রমণ ঠিকানা।

কেন যাবেন পাহাড়ের উপরে ওই উঁচু গ্রামে? কারণ অনেকগুলো। প্রথমত, ইচেগাঁও বা ইচ্ছেগাঁও থেকে, আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে, কাঞ্চনজঙ্ঘার অসাধারণ ভিউ পাওয়া যায়। সূর্যোদয়ের দৃশ্য মন কেড়ে নেবে। দ্বিতীয়ত, পাইন, কনিফারের জঙ্গলে ঘেরা ইচ্ছেগাঁওয়ের পরিবেশটি ভালো লাগবে। ৩০-৩৫টি পরিবারের জোটবদ্ধ বসবাস ওই পর্বত-শীর্ষের বিভিন্ন স্তরে। পাথরে বাঁধানো সরু সরু রাস্তা, সিঁড়ি দিয়ে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যাতায়াতের ব্যবস্থা। রাস্তার ধারে ধারে, বাড়ির চত্বরে ফুলের গাছ। বসতবাড়ির একাংশে হোমস্টে। কেউ কেউ অবশ্য আলাদা বাড়ি তৈরি করেছেন হোমস্টের জন্য। থাকার জন্য কাছাকাছি আলাদা বাড়ি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। নেপালী পরিবারই বেশি। হোমস্টগুলি খুবই অতিথিপরায়ণ। ইচ্ছেগাঁওতে থাকলে খুব কাছ থেকে পাহাড়ের মাথায় বসবাসকারী এই মানুষগুলির জীবনধারা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। কীভাবে পাহাড়ি মানুষগুলো ধীরে ধীরে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের নিয়মনীতিগুলো আত্মস্থ করলেন সে-কথা শোনা যায় তাঁদের মুখ থেকেই। রাতে ইচ্ছেগাঁওয়ের আরেক রুপ। হোমস্টেগুলিতে আলো জ্বলে উঠবে। চায়ের কাপ নিয়ে আড্ডা জমে উঠবে পর্বত-শীর্ষের ধাপগুলিতে। আর নীচের উপত্যকায়, কালিম্পংয়ের অসংখ্য আলোক বিন্দু যেন লক্ষ জোনাকীর আলো হয়ে জ্বলে উঠবে।

ডামসাং ফোর্ট ইচ্ছেগাঁও থেকে ৬ কিলোমিটার। লেপচা রাজার উদ্যোগে ১৬৯০ সালে তৈরি এই ফোর্ট অ্যাংলো-ভুটান যুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়। ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। কাছাকাছির মধ্যে থাকতে চাইলে রামধুরা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন। কালিম্পং থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার। কালিম্পংয়ের নতুন টুরিস্ট স্পট রামধুরা অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খাদের ধারে ধারে হোমস্টে, রঙিন ছাতা চা নিয়ে বসুন কোথাও মহামহিম কাঞ্চনজঙ্ঘার মুখোমুখি। কোথা দিয়ে সময় কেটে যাবে। চাইলে রামধুরা থেকে সিঙ্কোনা প্ল্যান্টেশনের মধ্যে দিয়ে পুরনো জলসা বাংলো পর্যন্ত ট্রেক করতে পারেন। কিংবা একটু এগিয়ে যেতে পারেন হনুমান টক। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার দারুণ এক ভিউপয়েন্ট জায়গাটি।
ইচ্ছেগাঁওয়ে থেকেই দিনে দিনে কালিম্পং শহর বেড়িয়ে আসতে পারেন। পেডং, ঋষিখোলা, আরিতার থেকে বেড়িয়ে আসা যেতে পারে। ইচ্ছেগাঁও থেকে পেডং ১৫ কিলোমিটার, ঋষিখোলা সাড়ে ৩৬ কিলোমিটার, আরিতার লেক ৪৫ কিলোমিটার।

মোটর চলাচলের পথে ইচ্ছেগাঁও থেকে সিলারিগাঁও ১৬ কিলোমিটার। ট্রেকপথের দৈর্ঘ্য মাত্র আড়াই কিলোমিটার। ঘন্টা দেড়েক সময় লাগে। ১০-১২ বছরের বাচ্চারাও আভিভাবকদের সঙ্গে এ পথে ট্রেক করতে পারে। সঙ্গে একজন আঞ্চলিক গাইডের দরকার হবে। সিলারিগাঁও থেকে আরও ৩ কিলোমিটার ট্রেক করে যাওয়া যায় রমিতে দাড়া। চমৎকার একটি ভিউপয়েন্ট এই রামিতে দাড়া। কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জের বিভিন্ন শৃঙ্গ, শায়িত বুদ্ধের প্রতিরূপ দেখা যায় রামিতেদাড়া থেকে। দেখা যায় বাঁকের পর বাঁক পেরিয়ে তিস্তার বহে যাওয়া এবং তিস্তা ও রেশি নদীর মিলনস্থলটি। এখন সিলারিগাঁও থেকে গাড়িতেও রামিতেদাড়া যাওয়া যাচ্ছে। তবে ট্রেক করে যাওয়ার মজাই আলাদা।

যাওয়ার পথ

এন জে পি থেকে ইচ্ছেগাঁও ৮৮ কিলোমিটার ও সিলারিগাঁও ৯৩ কিলোমিটার। প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি চলে আসা যায় দুই জায়গাতেই। এন জে পি অথবা শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং পৌঁছে সেখান থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে ইচ্ছেগাঁও বা সিলারিগাঁও চলে আসা যায়।
একটা কথা বলে রাখা ভালো, গাড়ি পাহাড় পেঁচিয়ে ইচ্ছেগাঁওয়ের শীর্ষে ওঠে একটা স্তর পর্যন্ত। তারপর স্তরে স্তরে
বিভিন্ন হোমস্টে। উঠতে হবে পাথরের সিঁড়ি ভেঙ্গে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে একটু অসুবিধে হতে পারে। তবে থেমে থেমে উঠলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

থাকার ব্যবস্থা

সিলারিগাঁওয়েঃ মাউন্ট ভিউ ভিলেজ রিসর্টঃ ৯৬৩৫০-০৫৩১৮। হেভেন ভ্যালি হোমস্টে, ফোনঃ ৮৭৬৮০-১১৩০৬, ৬২৯৬৬-০৭৫৫৭। দি সিলারি সোজার্ন হোমস্টে, ফোনঃ ৯৯০৩২-৯৫৯২০। আর্যাস্টিক হোমস্টে, ফোনঃ ৮৩৪৮৩-৩১১৯২। নিরজ হোম স্টে সিলারি, ফোনঃ ৯০০২৬-২৭৩৮৪। সুমিক্ষা হোমস্টে, ফোনঃ ৮৩৪৮৫-৩৩২৩৫, ৯৮৭৪২-২১৪৪২। নির্মলা ভিলজ রিসর্ট হোমস্টে, ফোনঃ ৯৯৩৩৯-২২৮৫৯। হামরো হোম, সিলারিগাঁও, হেল্পলাইন নম্বরঃ ১৮০০-১২৩-৩৭৫৯। চাঙ্গামা হোমস্টে, ফোনঃ ৮৯৬৭৩-৯০৬৯০। বনলতা হোমস্টে, ফোনঃ ৯৪৩৪৪-৫২২৬২, ৮২৯৩০-৬৬১৬৪।

ইচ্ছেগাঁওয়েঃ তাশি হোমস্টে, ফোনঃ ৭০৯৮৭-৮৩২৮৭, ৮১১৬১-৮৮২৯০। মেরিগোল্ড হোমস্টে, ফোনঃ ৭৬০২৭-৮৯৬৬৭। খাওয়াস হোমস্টে, ফোনঃ ৮০১৭৯-১৭০০৮। রিগজেন হোমস্টে, ফোনঃ ৭০০৩১-০৯৫০৪। খাম্বু হোমস্টে, ফোনঃ ৭৬০২৯-৭৭৯১৮। ইচ্ছেগাঁও হোমস্টে, ফোনঃ ৮৯৭২৪-৭০২২০।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *