Follow us
Search
Close this search box.

ঝাঁকিদর্শনে সান্দাকফু

ঝাঁকিদর্শনে সান্দাকফু

দার্জিলিংয়ে ঠাঁই নেওয়ার পর থেকেই সেই সাতসকালে ঘুম ভেঙে যায়। বেরিয়ে পড়ি রাস্তায়। আজ ঘুম ভাঙলো আরও আগে। গোটা দুয়েক কম্বলের ওম পাশে সরিয়ে তড়াক করে উঠে বসলাম। “সকাল সকাল বেরিয়ে পড়বেন কিন্তু,” পইপই করে বলে দিয়েছে আমার, থুড়ি হোটেলের তরুণ ম্যানেজার।

সব ঠিকঠাক হবে তো? মানেভঞ্জন থেকে গাড়ি পাবো তো, পৌঁছানোর পরে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পাওয়া যাবে তো? ম্যানেজার অবশ্য আশ্বাস দিয়ে রেখেছে, সবই নাকি মসৃণ ভাবে হয়ে যাবে। গতকাল রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে ঠিক হয়ে গেল যে আমি আজ সান্দাকফু যাওয়ার জন্য সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ব। কলকাঠি নেড়েছে ওই ম্যানেজারই। প্রস্তাব ও ব্যবস্থাপনা দুই-ই ওর। প্রথমে মনে হয়েছিল ঘাড় ধাক্কা দিয়ে পাঠাচ্ছে। পরিকল্পনা নেই, প্রস্তুতি নেই। আগের দিন রাতে ঠিক করা হল, পরের দিন সকালে সান্দাকফু যাত্রা। এমনটা সাধারণত হয় না বলেই আমার সাধারণ বুদ্ধি বলে।

প্রথমে মাথাটা একটু গরম হলেও পরে বুঝেছি ম্যানেজারের স্বার্থান্বেষী কোনও উদ্দেশ্য নেই। বরং ভার্তৃসম তরুণটির ভাবনা ও সমগ্র আয়োজনের মধ্যে যথেষ্ট আন্তরিকতা রয়েছে। তাঁর কাজকর্মের তৎপরতাও আমাকে অবাক করেছিল।

সেবার কয়েক দিনের জন্য দার্জিলিং গিয়েছি। দিব্যি চলছিল সবকিছু। তবে, হ্যাঁ, হোটেলে, হোটেলের বাইরেও কারুর কারুর “এতদিন দার্জিলিংয়ে আছেন, সাইটসিয়িং হয়নি?”, কংবা “ওঃ, টাইগার হিল থেকে আজকের সানরাইজটা দেখতে পেলেন না, এটা একটা বিগ মিস, বলতেই হচ্ছে মশাই”, এমনধারা মন্তব্য শুনতে হচ্ছিল। সেইসব মন্তব্য একসময় মনে হয় খেপিয়েই তুলল হোটেলের ওই তরুণ ম্যানেজারকে ক্রমশ। এই গতকাল রাতে সে নিদান দিল, “দাদা আপনি সান্দাকফু থেকে বেড়িয়ে আসুন দিকিনি, কাল যাবেন, পরশু ফিরবেন, যাতায়াত ল্যান্ডরোভার জিপে, আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি। ফিরে সান্দাকফুর গল্প শোনাবেন।”

শুনে আমি আবাক। হেসেও ফেলি। আর আমার ওই হাসিই কাল হল। প্রশ্রয়ের হাসি ধরে নিয়ে সে মানেভঞ্জনের কোনও এক মাস্টারজিকে তৎক্ষণাৎ ফোন-টোন করে এবং সম্ভ্রম বজায় রেখে আমার ট্যাঁক-সংক্রান্ত কয়েকটি তথ্য সংগ্রহ করে পরের দিনই আমার সান্দাকফু ভ্রমণ পাকা করে ফেলল মিনিট বিশেকের মধ্যে। আমি সম্মোহিত, বাকরহিত। সে বলে চলে, ” দাদা, কদিন থাকার সুবাদে স্যার থেকে দাদা হয়েছি, রাতেই ব্যগ গুছিয়ে রাখবেন, ব্যাগটা ভারী করবেন না, সকালে কিছু শুকনো খাবার কিনে নেবেন, সকাল সকাল বেরিয়ে পড়বেন হোটেল থেকে। লোয়ার রোডের মোটর স্ট্যান্ড (লেবং কার্ট রোড) থেকে মানেভঞ্জন যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পেয়ে যাবেন। চকবাজার থেকে মানেভঞ্জন, ওই ধরুন ২৫-২৬ কিলোমিটার। রাস্তায় লোক ওঠানামা করবে। সব মিলিয়ে বড়জোর সোয়া-ঘন্টা সময় লাগবে। মানেভঞ্জন গিয়ে মাস্টারজির অফিসের খোঁজ করবেন। যে-কেউ দেখিয়ে দেবে। তারপর সব দায়িত্ব মাস্টারজির।”

মানেভঞ্জন। ফটো: তুষার পাত্র

নির্দেশাবলীর প্রায় একটি ধারাভাষ্য শেষ করে হাসিমুখে আমাকে জরিপ করে প্রকৃতই এক ম্যানেজার এবং অনুজপ্রতিম সেই তরুণ। আমি আমার ঘরে ফিরতে উদ্যোগী হই।

“দাদা, পাক্কা তো, মাস্টারজিকে জানিয়ে দিই আরেকবার?” পেছন থেকে ম্যানেজারের জিজ্ঞাসা। “অ্যাঁ, হুঁ”, আমার উত্তর। “ভালো লাগবে দাদা, চিন্তার কিছু নেই।” দোতলায় আমার ঘর। শ্লথ পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে যুদ্ধজয়ী ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করি, “তুমি গেছ সান্দাকফু”? “তিনবার, দু’বার ট্রেক করে, একবার ল্যান্ড রোভারে ড্রাইভারের সঙ্গী হয়ে। আবার যাবো, মানে ইচ্ছে আছে”, ঝটিতি উত্তর।

যাঁরা ভাবছেন, দাঁও একটা মেরেছে আপনার ওই স্নেহের ম্যানেজার ছোকরা, তাঁদের বলি, অন্যরকমটাও হয়, জানেন। আমারও যে ওকথা মনে হয়নি এমনটি নয়, পরে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, খরচের প্রশ্নে ঠকিনি তো বটেই, বরং আমার কিছুটা সাশ্রয়ই হয়েছে। মানেভঞ্জনের মাস্টারজি বলেছিলেন, “ম্যানেজার সাবের দাদা বলে কথা, তারপর হঠাৎ যাওয়া ঠিক হয়েছে, খরচ যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করেছি, ঘুরে আসুন, আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।” হ্যাঁ বুঝেছিলাম সেটা, আর বার বার মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলাম আমার ম্যানেজার ভাইটিকে, মাস্টারজিকেও।

অন্ধকার পুরোপুরি কাটেনি এখনো। রাস্তার আলোগুলো টিমটিম করে জ্বলছে। প্রবল ঠান্ডা। একটাই রুকস্যাক, অতিরিক্ত একটা গরম জামা, একটা প্যান্ট, অতিরিক্ত একটা সোয়েটার, টুথব্রাশ, পেস্ট, সাবান, দু’তিন প্রকার ওষুধ, এইসব আর কী। যা ঠান্ডা, একটা সোয়েটার, তার ওপর জ্যাকেট চড়িয়ে বেরতে হবে। পরিস্থিতি বুঝে গলায় পেঁচাতে হবে মাফলার। কেভেন্টারস রেস্তোরাঁর নীচে ফুটপাথের এক দোকান থেকে বেশ লম্বা সাইজের একটা মাফলার কিনেছি। গলা, মাথা, কান পেঁচিয়ে বাঁধা যায়।

শুভকাজ, শুভযাত্রার আগে বাঙালির স্নান না করলে চলে না। কথাটা মনে হতেই শরীরটা কেঁপে উঠল। গিজার আছে, তবুও। আকাশ ফর্সা হতে শুরু করেছে। কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। পাহাড়ের মানুষ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ে। না, আর দেরি করা চলে না।

স্নান সেরে, কাঁপতে কাঁপতে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পোশাক-আচ্ছাদিত হয়ে এক হোটেল-কর্মীকে জানিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। সব কাজকর্ম ও হিসেবনিকেশ সেরে ম্যানেজারের শুতে যেতে রাত হয়। ওঠেও একটু বেলায়। ওকে আর জাগালাম না। মানেভঞ্জনে পৌঁছে ফোন করে দেব।

মলের পূর্বপ্রান্তে ঘোড়ার আস্তাবল। তার উল্টোদিকে এক নেপালী দিদির দোকানে সকালে চমৎকার মোমো পাওয়া যায়। সকাল সকাল খুলে যায় দোকান। এখন আর অন্তত ওখানে দোকানটি নেই। পরে গিয়ে খুঁজে পাইনি। বেশি করে ডালে খুরসানির আসলি চাটনি-সহযোগে এক প্লেট ভেজ-মোমো খেয়ে কান দিয়ে ধোঁয়া বেরিয়ে গেল। ডালে খুরসানি এক ধরনের গোলাকার লঙ্কা। নেপালী ভাষায় ‘ডালে’ কথাটির বাংলা অর্থ গোলাকার আর ‘খুরসানি’ মানে লঙ্কা। নেপাল, সিকিম, ভুটান এবং দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের পাহাড়ে ফলে এই প্রজাতির লঙ্কাটি। পৃথিবীর সবথেকে ঝাল লঙ্কাগুলির একটি এই ডালে খুরসানি। সিকিম, দার্জিলিং, কালিম্পংয়ে মোমোর সঙ্গে ডালে খুরসানির চাটনি বা সস পাবেন।

মল থেকে নেহরু রোড ধরে আমার চেনা পাহাড় ঢালের বস্তির (বসতি) সরু পথ ধরে নেমে এলাম লেবং কার্ট রোডে। কাছেই চকবাজার। শহরের কর্মব্যস্ততা শুরু হচ্ছে। তাড়া দিয়ে তাড়াতাড়ি একটা দোকান খুলিয়ে কিছু কুকিজ, কাজুবাদাম, কিছু টি-ব্যাগ আর কয়েকটা ছুরপি কিনে নিলাম। ছুরপি ইয়াকের দুধ থেকে তৈরি একপ্রকার চিজ। খুব শক্ত হয়। তৈরি করার পরে টুকরো টুকরো করে কেটে নিয়ে অনেকটা সময় ধরে শুকোনো হয়। অনেকক্ষণ ধরে মুখে রাখা যায় ছুরপির টুকরো। গলতে থাকে খুব ধীরে। ছুরপি ঠাণ্ডায় শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে। শীতের মরশুমে সিকিম, দার্জিলিং, কার্শিয়াংয়ের বাসিন্দাদের মুখে মুখে ফেরে এই ছুরপি। আসে প্রধাণত নেপাল ও ভুটান থেকে। তৈরি হয় সিকিম, কালিম্পংয়েও। তিব্বতীদের মধ্যে ছুরপি খাওয়ার প্রচলন বেশি। তিব্বতে উৎপাদিতও হয় প্রচুর পরিমাণে। কিনেছিলাম বটে, খেয়েছিলাম দু’টুকরো। খুব যে ভালো লেগেছিল এমনটা দাবি করতে পারি না। তবে ছুরপির সাপ্লাই পেয়ে যারপরনাই আপ্লুত হয়েছিল আমার ল্যান্ডরোভার গাড়ির চালক।

আমাদের ল্যান্ডরোভার গাড়িটি। ফটো: লেখক

ওই চকবাজরের কাছেই লেবং কার্ট রোডে শেয়ার গাড়ির স্ট্যান্ড। সেখানে পৌঁছাতেই নেপালী টুপি পরিহিত এক যুবক এগিয়ে এসে কোথায় যেতে চাই জানতে চাইল। “মানেভঞ্জন”, বলি আমি। সে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে একটা গাড়ির দরজা খুলে আমাকে তার মধ্যে পুরে দিয়ে চলে গেল। এখন গাড়িতে আমি একাই যাত্রী। মাহিন্দ্রা ম্যাক্স। খুব ছোট গাড়ি নয়। বেশিরভাগ আসন পূরণ হলে ছাড়বে। চিন্তায় পড়লাম। আমার তাড়াতাড়ি মানেভঞ্জন পৌঁছানোর দরকার যে।

কিমাশ্চর্যম। কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রীময় মাহিন্দ্রা ম্যাক্স। আমার দুশ্চিন্তাকে অমূলক প্রমাণ করে গাড়ি ছেড়ে দিল অল্প সময়ের মধ্যেই। পরে বুঝলাম, আফিসযাত্রী, ব্যবসায়ী, জরুরি কাজে বেরনো সব মানুষজন এই গাড়িটি ধরার চেষ্টা করেন। পথে কেউ নামছেন, কেউ উঠছেন।

দার্জিলিং শহর থেকে মানেভঞ্জন ২৬ কিলোমিটার। সান্দাকফু যাওয়ার জন্য সরাসরি এন জে পি থেকে মানেভঞ্জন চলে আসা যেতে পারে। এন জে পি স্টেশন চত্বর থেকে মানেভঞ্জন ৮৫ কিলোমিটার। অনেক সান্দাকফুযাত্রী উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য মানেভঞ্জনে (৭০০০ ফুট) একটা রাত কাটান। সেটা ভালো সিদ্ধান্ত।

ঘুম, সুখিয়াপোখরি হয়ে আমাদের গাড়ি চলেছে। জানলার পাশে বসেছি। পাহাড়, ধূপিবন, বুনো ফুল, লোকালয় দেখতে দেখতে চলেছি। সোনালি রোদ্দুরে উদ্ভাসিত হচ্ছে চারিদিক। সহযাত্রীদের সঙ্গে আলাপ হচ্ছে। একজনের ব্যাগ বোঝাই সবুজরঙা ভুট্টায়। চোখ চলে যাচ্ছিল ওই ব্যাগের দিকে। দৃষ্টি এড়ায়নি হাসিখুশি পাহাড়ি মানুষটির। আমার হাতে টাটকা দুটি ভুট্টা তুলে দিলেন। কিছুতেই দাম নেবেন না। লজ্জায় পড়লাম। ব্যাগের পকেট থেকে ছুরপি বের করে প্রায় জোর করে ঠেসে দিলাম ওনার হাতে। ওনার সলজ্জ হাসি সে-দিনের রৌদ্র-উজ্জল সকালটিকে বড় মায়াময় করে তুলেছিল।

পৌঁছালাম মানেভঞ্জন। এক ঘন্টা বিশ মিনিট সময় লাগল। রাস্তায় যাত্রী ওঠানামা করেছে। গোটা গাড়ি ভাড়া করে এলে সময় সংক্ষেপ হবে। এবার মাস্টারজিকে খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু কিছুই করতে হল না। পেটানো চেহারার সৌম্যদর্শন এক পৌঢ় স্মিত মুখে এগিয়ে এলেন। প্রশ্নের আকারে আমার নামটি বললেন। সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়াতে বললেন, “ম্যায় মাস্টারজি হুঁ, আইয়ে।”

ছোট অফিস, দীর্ঘদেহী একটা লোক অদূরে একটি টুলে বসে। মাস্টারজির চেয়ারের সামনে একটা ছোট টেবিল। টাকাপয়সার কথা হয়ে গেল, ম্যানেজারের সঙ্গে যা কথা হয়েছিল তার অন্যথা কিছু হল না দেখে হাঁপ ছাড়লাম। ভোটার আইডেন্টিটি কার্ড নাকি আধার কার্ড, এখন আর মনে নেই, দেখে নিলেন। গাড়ির জন্য ধার্য টাকা দিতে গেলাম। যা বললেন তা দাঁড়াল এই (হিন্দিতে সঠিক বলা হবে না, তাই মাতৃভাষাতেই বলি বরং), “বেড়িয়ে আসুন, তারপর পেমেন্ট করবেন, ফেরার পথে গাড়ি আপনাকে দার্জিলিংয়েই পৌঁছে দেবে, ফিরে এসে ওকে টাকা দিয়ে দেবেন।” একটু অবাকই হলাম। অন্তত অ্যাডভান্স পেমেন্ট বলেও কোনও বস্তু নেই?’ওকে’ বলতে যাঁর দিকে আঙুল নির্দেশ করলেন মাস্টারজি, তিনি অদূরে বসা দীর্ঘদেহী ওই লোকটি। জানা গেল, উনিই গাড়ির চালক এবং আমার গাইডও বটে। পরে জেনেছিলাম আমাদের ল্যান্ডরোভার গাড়িটির মালিকও উনিই।

লোকটি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “চলিয়ে, গাড়ি রেডি আছে।” সবই রেডি আছে দেখছি, আমি খামোখা ভেবে মরছিলাম দেখা যাচ্ছে। মাস্টারজিকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এলাম অফিস ঘর থেকে। আমাকে আসন বাছাইয়ের অপশন দিয়ে সহিসজি গাড়ির পেছনের এবং তার আসনের বাঁ-পাশের দরজা খুলে দিল। তারপর কাছের একটা দোকানে গেল কিছু কিনতে। সেই অবসরে ম্যানেজারকে ফোন করে দিলাম।

গাড়িটির প্রতিও খানিক দৃষ্টি বুলিয়ে নেওয়া গেল। পুরনো ল্যান্ডরোভার। বাইরে থেকে দেখলে বয়সটা চোখে পড়ে। পরে দেখেছিলাম, ইঞ্জিন এখনো শক্তপোক্ত, ঝকঝকে। পঞ্চাশের দশকে ইংল্যান্ডের সলিহ্যালে তৈরি পাহাড়ি পথে চলবার উপযোগী এই ল্যান্ডরোভার গাড়িগুলিকে একসময়ে দার্জিলিংয়ের চা বাগানের কাজে ব্যবহার করা হত, ব্যবহার করত ব্রিটিশ সেনারাও। স্বাধীনতার পরে কিছু গাড়ি চলে আসে দার্জিলিংবাসী মানুষের হাতে। কয়েক বছর আগে পর্যন্তও মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু-ফালুট পথে কার্যত লাফিয়ে লাফিয়ে চলাচল করত শুধু এই প্রাচীন ল্যান্ডরোভারই।

আমাদের যাত্রা হল শুরু। এখানে একটা কথা বলে রাখি। বহু মানুষ সান্দাকফু ও ফালুটের পথে ট্রেক করেছেন, গাড়িতেও গিয়েছেন অনেকে। সেই ভ্রমণ সম্পর্কে লিখেছেনও অনেকে। আমি এখানে আর রোভার-বাহনে সান্দাকফু ভ্রমণের পুঙ্খানুপুণঙ্খ বিবরণ লিপিবদ্ধ করছি না। বরং কিছু দৃশ্য, কিছু অনুভবের কথা বলা যাক।

মানেভঞ্জন থেকে খাড়াই পথে প্রথমে চিত্রে গ্রাম। খুব সুন্দর এবং সবুজ জায়গাটি। এখানে সেখানে রডোডেনড্রন, ম্যাগনোলিয়ার জঙ্গল। জানা গেল, কোনও কোনও শীতে এই চিত্রেতেও তুষারপাত হয়। একটা মনাস্ট্রি আছে এখানে। চিত্রে থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। থাকার ব্যবস্থাও আছে এখানে।

দার্জিলিং, মানেভঞ্জন ও চিত্রে নিয়ে একটা সুন্দর ভ্রমন হতে পারে।

সিঙ্গালিলা গিরিশিরা ধরে আমাদের যাত্রাপথ। এ পথের উচ্চতম জায়গাটি ওই সান্দাকফু, উচ্চতা ১১,৯০৯ ফুট। সান্দাকফু থেকে সবারকুম হয়ে ফালুট। উচ্চতা ১১,৮১১ ফুট। সে যাত্রায় আমার ফালুট যাওয়া হয়নি। আমরা দার্জিলিং ফিরব আগামীকাল সন্ধ্যায়। এই গাড়িটি পরশু সকালে ফের সান্দাকফু যাত্রার জন্য বুক করা রয়েছে।

সিঙ্গালিলা অরণ্যের পথে। ফটো: লেখক

চিত্রে ছাড়িয়ে আমরা লামায়ধুরা নামের একটি জায়গায় চলে এলাম। রডোডেনড্রন, ম্যাগনোলিয়া, প্রিমুলার ঝাড় এখানে সেখানে। ট্রেকারদের জন্য এখানে সাধারণ মানের থাকার ব্যবস্থা আছে। পাশেই নেপালের সীমানা। লামায়ধুরা থেকে হালকা চড়াই পথ ধরে গাড়ি পৌঁছালো মেঘমায়। ছোট পাহাড়ি গ্রাম মেঘমা। অবস্থান ভারতের সীমানাতেই। মেঘমা, নামটি বড় মিষ্টি। মেঘমা নাকি মেঘের আস্তানা। মেঘ-রোদ্দুরের খেলা চলছে তখন সেখানে।

নেপালের গ্রামের মধ্যে দিয়ে পথ। ফটো: লেখক

এ পর্যন্ত টুকটাক মুখ চলছিল বটে, কিন্তু ভারী কিছু খেতে পারলে ভালো হত। সারথী-বন্ধুকে সে-কথা জানাতে সে জানাল, ছোটামোটা একটা দোকান আছে সামনে, চলিয়ে। গ্রাম্য ছোট্ট একটি দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড়াল। সেখানে বিস্কুটের প্যাকেট, ম্যাগি, ডিম সিদ্ধ পাওয়া যায়, ওল্ড মঙ্ক রামের বোতল পাওয়া যায়, চাইলে খুচরোও ঢেলে দেবে গ্লাসে। দোকানি এক মহিলা। কয়েকটি ছানা সহ একটা মুরগি আর একটা মোরগ চরে বেড়াচ্ছে দোকানের সামনে। বাতাসের প্রবাহ ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই। দোকানের বাইরে বেঞ্চে বসলাম। পাহাড়ের পর পাহাড় শুধু। সেইসব পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে সান্দাকফু-ফালুট যাওয়ার পথ।

ড্রাইভার বন্ধু থুকপার অর্ডার দিয়ে কোথায় যেন গেল। নুডল, সবজি, শাকপাতার মিশ্রণে আগুন গরম থুকপা এল। প্রবল ঠাণ্ডা আর খিদেয় সে অমৃত সমান। আরেক পাত্রে জুড়োচ্ছে থুকপা। ওটা চালকজির জন্য। খানিক পরে আবির্ভাব ঘটল সারথী দাজুর । দু-হাতে কতকগুলো আঙুরের মতো দেখতে ফল। জানা গেল, ওগুলো দিয়ে নাকি আঞ্চলিক মদ তৈরি হয়। একটা কামড় দিয়ে দেখলাম, একটু কষা স্বাদ। ফলগুলো হাতে নিয়ে মহিলার মুখে মস্ত হাসি।

মেঘমার উপরের দিকে টংলু। দূরত্ব ২ কিলোমিটার। টংলু থেকে, আহা, সে কী দৃশ্য, সুনীল আকাশের নীচে সুদীর্ঘ কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ ঝকঝক করছে। বিভিন্ন শৃঙ্গের সমাহারে ঘুমন্ত বুদ্ধের অবয়বটিও কী স্পষ্ট। আমার সারথী বন্ধু চিনিয়ে দিল বাঁ-দিক থেকে ডাইনে যথাক্রমে কুম্ভকর্ণের দুই শৃঙ্গ, রোথাং, দক্ষিণ ও উত্তর কাব্রু, কাঞ্চনজঙ্ঘা ও তার নীচের কাব্রু ডোম। সিমভো দক্ষিণ ও উত্তর এবং পাণ্ডিম শিখরগুলি। এই শৃঙ্গগুলির সমাহারে শায়িত বা ঘুমন্ত বুদ্ধের অবয়বটি রুপ নিয়েছে।

সান্দাকফু-পথের বিভিন্ন জায়গা থেকে দেখা যায় ঘুমন্ত বুদ্ধের এমন অবয়ব। ফটো: তুষার পাত্র

খুব থেকে যেতে ইচ্ছে করছিল টংলুতে। থাকার ব্যবস্থাও আছে। কিছু ট্রেকার চোখে পড়ল। কারুর কারুর সঙ্গে আলাপ হল। কৃষ্ণনগর থেকে একটা বড় দল ট্রেক করে টংলুতে এসে পৌঁছেছেন।

টংলু টপের পথে। ফটো: তুষার পাত্র

ওরা আজ থেকে যাবেন এখানে। সত্যি কথা বলতে কী, এখন একটু আপশোসই হচ্ছে। আর দিন দুয়েক আগে যদি সান্দাকফুর প্রস্তাবটা দিত ছেলেটা। ১০,১৩০ ফুট উচ্চতা টংলুর। ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে উত্তর থেকে।

টংলু থেকে নেপালের টুমলিং মাত্র ২ কিলোমিটার। গাড়ি চলেছে উৎরাই পথে। ৯,৬০০ ফুট উচ্চতায় টুমলিংয়ের অবস্থান। মেঘমা থেকে টংলুকে ডানদিকে রেখে সরাসরিও টুমলিংয়ে চলে আসা যায়। দূরত্ব একই, ৪ কিলোমিটার।

মানেভঞ্জং থেকে সান্দাকফু ৩১ কিলোমিটার। আর সান্দাকফু থেকে সবারকুম হয়ে ফালুট আরও ২১ কিলোমিটার। পথের দৈর্ঘ্যের বিচারে এমন কিছু নয়। কিন্তু চড়াই, উৎরাই, জঙ্গুলে ও পাথুরে পথ, সব মিলিয়ে হিমালয় অন্দরের এ পথ যেমন বৈচিত্রময়, যেমন সুন্দর, তেমনই কঠিন। গভীর সব খাদ ঘেঁষে বাঁক নেয় গাড়ি। কখনো কখনো চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে চালকের। পাথুরে পথে গাডির ঝাঁকুনিতে হাড়গোড়ে ঠকঠকানি লাগে। ঝাঁকিদর্শনই বটে। ধন্য এ পথের গাড়ি চালকদের দক্ষতা আর সাহস। এখন অবশ্য মানেভঞ্জন-সান্দাকফু পথের অনেকাংশই কংক্রিটের মসৃণতা পেয়েছে। তাতে ভালো হয়েছে না খারাপ তা নিয়ে অবশ্য বিতর্কের অবকাশ রয়েছে।

টুমলিংয়ে গাড়ি থেমেছে আগের মতোই একটি ছোট দোকানের সামনে। এখানেও দোকানি এক মহিলা। তাঁর সঙ্গে প্রায় দুর্বোধ্য ভাষা ও উচ্চারণে আমার চালক ভাইজির কী সব কথোপকথোন চলতে লাগল। দেহাতি নেপালী ভাষা মনে হল। চা পাওয়া গেল না। জল গরম করে দিল। টি ব্যাগ সঙ্গে ছিল। চা তৈরি হল। তিনজনেই খেলাম। মদ পাওয়া যায়। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ওটা জীবনদায়ী উত্তাপও বটে। উনুনের পাশে দেওয়ালে ঝুলছে দড়ির মতো পাকানো শুকনো মোষের মাংস।

ওদের কথাবার্তার মাঝে চায়ের গ্লাস হাতে আমি একটু পদচারণা করি। হাতে গোনা কয়েকটা ছোট বাড়ি, দু-একটা ছোট দোকান, হোটেল নিয়ে নেপালের প্রান্তিক গ্রাম টুমলিং। দু-দেশেই হরবখত যাতায়াত উভয় দেশের মানুষজনের। বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন তাঁরা। ভালো লাগল এমন মুক্ত পরিবেশ। টুমলিং থেকে অসাধারণ সূর্যোদয় দেখা হল না এ যাত্রায়। তবে এই মধ্যাহ্নে নেপালের ভূমিতে দাঁড়িয়ে রৌদ্রকিরণে উজ্জ্বল কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনও কম রোমাঞ্চকর নয়।

টুমলিং থেকে একটু এগিয়ে সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশদ্বার। সেখানে কাগজপত্র পরীক্ষা হল। আমরা ঢুকে পড়লাম অরণ্যাঞ্চলের মধ্যে। ওক, ফার, ফার্ন, বাঁশের ঘন জঙ্গল। বাঁয়ে পাহাড়ের দেওয়ালে প্রচুর রডোডেনড্রনের ঝাড়। তবে এখন নিষ্পুষ্প। মার্চ-এপ্রিল মাসে রডোডেনড্রনের ফুলে ফুলে রংবাহারী রুপ ধারণ করে সিঙ্গালিলার অরণ্য। সঙ্গী (গাড়ির সারথী, বন্ধুই তো, তাই ওকে আপনি,আজ্ঞে করে উল্লেখ করছি না, আমি ওর পাশেই বসেছি) জানাল, প্রায় ২০ রকমের রডোডেনড্রনের ফুল ফোটে এ অরণ্যে। আমরা এসেছি অক্টোবরে। তবে একেবারে বিমুখ হইনি। অসাধারণ কিছু অর্কিড দেখেছি পাহাড়ি বন্ধুবরের সহায়তায়।

আমরা জঙ্গলের পথে খানিকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেছিলাম। ডানদিকের গভীর খাদ থেকে উঠেছে বিরাট লম্বা সব বাঁশের ঝাড়। জানা গেল, গাছগুলোর মাথায় মাথায় রেড পান্ডা থাকতে ভালোবাসে। কিন্তু সহজে তাদের দর্শন পাওয়া যায় না। সঙ্গী জানালো, গাড়ির শব্দে, মানুষের কণ্ঠস্বরে ওরা সতর্ক হয়ে গা ঢাকা দেয়। ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফারদের অটুট ধৈর্য ও সময়সাপেক্ষ অপেক্ষার ফাঁদে হয়তো বা ধরা দিতে পারেন তেনারা। সাধারণের ভরসা দার্জিলিংয়ের চিড়িয়াখানা। ওখানে কয়েকটি রেড পান্ডা পালিত হচ্ছে।

পাহাড়, খাদ ইত্যাদি নিয়ে প্রায় ৭৯ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে সিঙ্গালিলা অরণ্যের কতটুকুই বা চিনতে পারা গেছে? এ জঙ্গলে রয়েছে ব্ল্যাক প্যান্থার, ক্লাউডেড লেপার্ড, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, চাইনিজ প্যাঙ্গোলিন, বার্কিং ডিয়ার প্রভৃতি। কালিজ ফেজেন্ট, ব্লাড ফেজেন্ট, ট্রাগোপান, স্কারলেট মিনিভেট, রেড-থ্রোটেড হিল প্যাট্রিজ প্রভৃতির মতো পাখির দেখা মেলে এখানে।

ঝিম ধরা নৈঃশব্দ অরণ্যে। শুধু থেকে থেকে কোনও একটি পাখির ডাক শোনা যাচ্ছিল। কোথাও কোথাও পাহাড় থেকে জল চুঁইয়ে পড়ে রাস্তা ভিজে। রোদ্দুরের নামগন্ধ নেই। প্রবল ঠাণ্ডা। আমরা বেরিয়ে এলাম জঙ্গল-পথ থেকে।

বর্ষায়, ১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান বন্ধ থাকে। এ সময় বরং মানেভঞ্জং থেকে ধোত্রে, টংলু, টুমলিং এবং চিত্রে হয়ে মানেভঞ্জং ফিরে আসা যেতে পারে।

অরণ্যপথে আমরা চলে এলাম গৈরিবাস। টুমলিং থেকে গৈরিবাস ৭ কিলোমিটার। জায়গাটির প্রাকৃতিক শোভা সত্যিই মনোরম। প্রচুর বাঁশঝাড় চোখে পড়ল। বসন্তে নাকি গোটা এলাকাটা রডোডেনড্রন ফুলে ছয়লাপ হয়ে থাকে। এই গৈরিবাস থেকে সান্দাকফু পর্যন্ত গোটাটাই প্রাণান্তকর চড়াই পথ। ৮,৬০০ ফুট উচ্চতার গৈরিবাস থেকে উঠে আসতে হবে ১১,৯২৯ ফুট উচ্চতার সান্দাকফু শীর্ষে।

গৈরিবাস থেকে একটু এগিয়েছি আমরা, দূর থেকে একটি শিশুকে কোলে নিয়ে এক পৌঢ়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। গাড়ি গিয়ে থামল তাঁদের কাছে। চালক আর ওই পৌঢ়ার মধ্যে কয়েকটি কথা হল। চালক জানাল, শিশুটিকে নিয়ে মহিলা যাবেন এক আত্মীয়ের বাড়ি। কালিপোখরির খানিক আগে নেমে যাবেন। আমার অনুমতি হলে ওরা গাড়িতে উঠতে পারে। আমাদের গাড়ি তো খালি। চালক-সহ মোট ৯ জন যাত্রীর গাড়িতে আমরা যাচ্ছি মাত্র দু’জন।

গাড়ির দরজা খুলে দিলাম। ভাইজির পাশ থেকে নেমে এসে বসলাম পেছনের আসনে মহিলার মুখোমুখি। ব্যাগ থেকে লজেন্স বের করে দিলাম শিশুটির হাতে। মহিলাকে দিলাম ছুরপি। জানা গেল, নেপালের বাসিন্দা মহিলার নাতি শিশুটি। ওর মা মারা গেছে কোনও এক অসুখে। বাচ্চাটির বাবা, মানে এই পৌঢ়ার পুত্র কাজ করে দূরে কোথাও। মাঝে মাঝে বাড়ি আসে। অল্পসল্প খেতি আছে, এই বিধবা মহিলা সেখানে সবজি ফলান। বাড়িতে কিছু মুরগি আছে। সবজি, ডিম বিক্রি করে অল্পসল্প আয় হয়। ছেলে বাড়িতে এলে কিছু টাকাপয়সা দিয়ে যায়। দিন কয়েক থাকবেন ‘নাতেদার’-এর (নেপালি নাতেদার কথাটির অর্থ আত্মীয়) কাছে। তারপর ফিরে আসবেন বাড়িতে। মহিলার সব কথা যে আমি সরাসরি বুঝতে পারছিলাম এমনটা নয় মোটেই। চালকভাই ধরতাই দিচ্ছিল। কালিপোখরির কিছু আগে মহিলা বারবার ‘ধন্যবাদ” ও ‘নমস্তে’ জানিয়ে নেমে গেলেন। নেপালীতেও ধন্যবাদ জানাতে ‘ধন্যবাদ’ কথাটিই ব্যবহৃত হয় দেখলাম।

চালকভাই জানাল, ওই মহিলা শিশুটিকে নিয়ে প্রায় দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করেছিলেন এরকম একটা গাড়ির জন্য। এ পথে পর্যটকদের গাড়িই ওঁদের ভরসা। যাত্রীসংখ্যা বেশি হলে জায়গা হয় না। তবে চালকরা চেষ্টা করেন রাস্তায় অপেক্ষারত যাত্রীকে গাড়িতে তুলে নিতে। ওরা তো জানেন এ পথে চলার কষ্ট।

ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ ও নেপাল সীমান্ত বরাবর এই সিঙ্গালিলা রিজ বা গিরিশিরা-লাগোয়া গ্রামগুলির মানুষজনের মূল জীবীকা পাহাড় ঢালের ছোট ছোট খেতে কৃষিকাজ। চাষ-আবাদের সঙ্গে পশুপালনও করে থাকেন অনেকে। পর্যটন-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এই অঞ্চলে। হোমস্টে গড়ে আতিথেয়তা পরিষেবা, গাইড, পোর্টার, পর্যটক পরিবহণ ইত্যদির মতো পর্যটন-সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত এই অঞ্চলের অনেক মানুষ। শেরপা, তিব্বতী, লেপচা এবং ছেত্রী, লিম্বু, গুরুং, ভুজেল ইত্যাদির মতো নেপালী জাতিগোষ্ঠীর বসবাস এই অঞ্চলে।

মানেভঞ্জন থেকে শুরু করে চিত্রে, মেঘমা, টংলু, টুমলিং, গৈরিবাস, কালিপোখরি, সান্দাকফু, সরবাকুম, ফালুট, গোর্কে, রাম্মাম, শ্রীখোলা, রিম্বিক, ধোত্রে হয়ে মানেভঞ্জন, এই হচ্ছে সান্দাকফু-ফালুট বেড় দিয়ে পশ্চিম, উত্তর, পূর্ব পথ ধরে ১৩৮ কিলোমিটারের সামগ্রিক মানেভঞ্জন থেকে মানেভঞ্জন পরিক্রমার পথ। ৭-৮ দিনের সময় লাগবে এই দীর্ঘ পথে ট্রেক করতে।

রিম্বিক থেকে মানেভঞ্জনে ফেরার গাড়ি পাওয়া যায়। শ্রীখোলা থেকেও গাড়ির ব্যবস্থা হয়ে যেতে পারে। ধোত্রে, রিম্বিক, শ্রীখোলা, রাম্মাম, গোর্কে, ফালুট হয়ে সান্দাকফু যেতে চাইলে রিম্বিক বা শ্রীখোলা পর্যন্ত গাড়িতে আসা যাবে দার্জিলিং বা মানেভঞ্জন থেকে। শ্রীখোলা থেকে ফালুটের দূরত্ব ৩৬ কিলোমিটার।

যাক, আমাদের পথে ফিরি। গৈরিবাস থেকে ৬ কিলোমিটার চড়াই পথ অতিক্রম করে আমরা পৌঁছালাম কালিপোখরিতে। ১০,৪০০ ফুট উচ্চতায় একটি ছোট জলাশয় কালিপোখরি। জলের রং কালো। জলাশয়টির চারিদিকে প্রার্থনা পতাকা উড়ছে বাতাসে। আঞ্চলিক মানুষের কাছে খুবই পবিত্র জলাশয়টি। নেমে গেলাম জলাশয়ের ধারে। স্পর্শ করলাম সেই বরফশীতল জল। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। উঠে এলাম উপরে।

কালিপোখরি। ফটো: তুষার পাত্র

কালিপোখরি থেকে সান্দাকফু ৬ কিলোমিটার। অত্যন্ত খাড়াই পথ, বুক কাঁপিয়ে দেওয়া সব বাঁক। গাড়ির বনেটের মুখ উপরের দিকে। এ পথে গাড়ির চালকের মনঃসংযোগে কোনওভাবেই ব্যাঘাত করা চলে না।

পথ চলেছে সান্দাকফু অভিমুখে। ফটো: লেখক

বিকেভঞ্জং ছাড়ানোর কিছু পরে এমন পথেই একটি শিশু-সহ এক বিদেশী দম্পতির সঙ্গে দেখা হল। কঠিন চড়াই পথে টুক টুক করে উঠে চলেছেন দু’জনে। শিশুটি ভদ্রলোকের কাঁধে। এক হাতে শিশুটির পা দুটি চেপে রেখেছেন নিজের বুকের সঙ্গে। বাচ্চাটি দু’হাতে পেঁচিয়ে ধরেছে বাবার মাথা, কপাল। ভদ্রলোকের অন্য হাতে হাইকিং স্টিক। পিঠে রুকস্যাক নিয়ে পাশাপাশি হেঁটে চলেছেন মহিলা। সঙ্গে গাইড-কাম-পোর্টার রয়েছে। ওঁদের পাশে এসে গাড়ির গতি কমানো হল। জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ওঁরা গাড়িতে উঠতে চান কিনা জানতে চাইলাম। ওঁরা সহাস্যে ও বিনিত ভাবে সে-প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। মনে মনে স্যালুট জানালাম ওঁদের।

সান্দাকফুতে ওই দম্পতির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। ওঁরা এসেছেন ইটালি থেকে। এই নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য তাঁদের ভারত সফর। শিশুটি তাঁদের একমাত্র পুত্রসন্তান। বয়স তিন বছর। ওই হিমালয় তাঁদের টেনে আনে এই দূরদেশে। উত্তর হিমালয়ের নানা পথে ট্রেক করেছেন। এবার সান্দাকফু, ফালুট, গোর্কে, রাম্মাম পর্যন্ত ট্রেক করে শ্রীখোলা বা রিম্বিক থেকে গাড়িতে মানেভঞ্জন হয়ে দার্জিলিং ফিরবেন। ওঁদের পরবর্তী গন্তব্য নেপাল। বিশেষ আকর্ষণ নেপালের জওলাখেলের কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা। দার্জিলিংয়ের চিড়িয়াখানাও ওঁরা দেখেছেন। দার্জিলিং ফিরে আবার যাবেন চিড়িয়াখানায়।

ছোট্ট সন্তানটিকে নিয়ে কঠিন সব পথে বেড়াতে সমস্যা হয় না? জিজ্ঞেস করেছিলাম ওই দম্পতিকে। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে ওঁরা যা বললেন,তার মর্মকথা হল, একেবারেই নয়, তাঁদের পুত্রটিও খুবই আনন্দের সঙ্গে বেড়ায়, আর এই ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠছে ওর, এটা তাঁদের কাছে খুবই আনন্দের।

শেষ বিকেলে আমরা সান্দাকফুতে উঠে এলাম। কুয়াশা জমাট বাঁধছে চারিদিকে। গন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ, ভ্রমণকালে গন্তব্যে পৌঁছানোর পথটাও সমান উপভোগ্য বলে মনে করি। আমরা একটু থেমে থেমেই এসেছি। সান্দাকফু পৌঁছাতে একটু বিলম্বই হয়েছে। এখন প্রথম কর্তব্য মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই খুঁজে নেওয়া। সান্দাকফু টপের প্রায় মাঝ বরাবর ভারত-নেপাল সীমান্তের এদিকে, মানে ভারতের প্রান্তে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের পোস্ট। একটা বাঙ্কারও রয়েছে সেখানে। ভারতের জাতীয় পতাকা উড়ছে।

সান্দাকফুর ভারত-নেপাল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বাঙ্কারের দখল নিয়েছে ভ্রমণার্থীরা। ফটো: লেখক।

জায়গা পাওয়া গেল নেপাল প্রান্তে শেরপা শ্যালে লজে। চালকভাই তার থাকার ব্যবস্থা আছে এবং রাতে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও সে করে নেবে জানিয়ে তড়িঘড়ি অন্তর্হিত হল। চা খাওয়ার জন্য ডাকলাম পেছন থেকে। সে ঘাড় না ফিরিয়েই হাত নেড়ে তরতর করে নীচের দিকে নেমে গেল। পাশ থেকে একজন পোর্টার বা গাইড মুচকি হেসে বলল, ” ছোড়িয়ে, উও আলগ চীজ পীয়েগা।” বুঝলাম। সারাদিন ওই কঠিন পথে গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত শরীর এখন একটু কড়া পানীয় চাইছে। এই প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মদ এই অঞ্চলে নিয়মিত খাদ্য-তালিকার মধ্যেই পড়ে। সিকিমে একবার এক গাড়িতে যেতে যেতে দেখেছিলাম, সহযাত্রী এক জামাতা বধূ-সহকারে চলেছেন শ্বশুড়বাড়ি, সঙ্গে নিয়েছেন এক ক্রেট বিয়ার।

পাহাড়ে সন্ধ্যা নামে তাড়াতাড়ি। আঁধার নেমে এল আদিগন্ত পাহাড় জুড়ে। লজের ভিতরটা আলোকিত। কাঠে মোড়া আমার ঘরটিতে অ্যাটাচড বাথরুমটি আকারে ছোট হলেও বেশ গোছানো। লজের পেছন দিকটাতে পাহাড়ের ঢাল। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। হাত, পা, মুখে নামমাত্র গরম জল ছুঁইয়ে চলে এলাম লজের রেস্তোরাঁয়। সেখানে কিছু তরুণ-তরুণী গানে, গিটার বাদ্যে আসর জমিয়েছে। গরম ম্যাগি এক বাটি খাওয়া গেল। আলাপ হল তরুণদলের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে। ওরা ফালুট পর্যন্ত যাবে। এসেছে ল্যান্ড রোভারে।

সান্দাকফু থেকে সূর্যাস্তের কাঞ্চঞ্জঙ্ঘা। ফটো: তুষার পাত্র

রেস্তোরাঁর এক কোনায় মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক একা বসে আছেন। নজর একটি বড়সড় চৌকো কাগজে। ওনার অনুমতি নিয়ে বসলাম ওই টেবিলে। দু’কাপ চা অর্ডার দিলাম। বিহারের মানুষ। সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছেন পার্মানেন্ট কমিশনে। অবসর নিয়েছেন বছর দুয়েক আগে। মাঝে মাঝে ট্রেকিং, হাইকিংয়ে বেরিয়ে পড়েন। ট্রেক করেই সান্দাকফু এসেছেন। সঙ্গে গাইড আছে। আগামীকাল সকালেই বেরিয়ে পড়বেন ফালুটের উদ্দেশে। তারপর গোর্কে, রাম্মাম, শ্রীখোলা হয়ে মানেভঞ্জন ফিরবেন। ভালো লাগলে পুরো পথটাই পায়ে হেঁটে ফিরবেন বলে জানালেন।

আমি এ পথের একটা ম্যাপ পর্যন্ত কেনার সময় পাইনি। তখন গুগুলে তথ্য পাওয়ার এমন সুবিধা ছিল কিনা মনে পড়ছে না। থাকলেও তেমন ফোন আমার কাছে ছিল না। আর সান্দাকফুতে মোবাইল নেটওর্কাও পাওয়া যায় না, এখনো। সময় পাওয়া গেলে দার্জিলিং মলের অক্সফোর্ড বই বিপনি থেকে সান্দাকফু পথের ম্যাপটি কিনে নেওয়া যেত। টেবিলে মেলে রাখা ম্যাপটির ওপর ঝুঁকে পড়লাম আমিও।

একবার লজের বাইরে বেরিয়েছিলাম। এক পশলা বাতাসে শরীরের রক্ত যেন জমে গেল। লজে ফিরে আসতেও কষ্ট হচ্ছিল। মাথায় যন্ত্রনা। শুনলাম সান্দাকফু শীর্ষে আজকের তাপমাত্রা মাইনাসের ঘরে নেমে আসতে পারে। ঘরে ঢুকে শুধু জুতোটা খুলে পরিহিত সমস্ত পোশাক-সহ কয়েক প্রস্থ লেপ-কম্বলের নীচে সেঁধিয়ে গেলাম কোনওরকমে। একটা কাঁপুনি হচ্ছিল শরীরজুড়ে। লজের একটি ছেলে কয়েকটি গরম জলের বোতল লেপ-কম্বলের নীচে ঢুকিয়ে দিয়ে গেল বিছানা গরম রাখার জন্য। ঘন্টাখানেক পরে শরীরটা সুস্থ বোধ হল। মালুম হল শীতের মুখে সান্দাকফুর ঠাণ্ডা। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বরফে ঢেকে যায় সান্দাকফু।

রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে বিছানা নিলাম। কিন্তু ঘুম আর আসে না। বিছানায় যেন জল ঢালা রয়েছে। নতুন করে গরম জল ভরা বোতলগুলো ছডিয়ে রয়েছে বিছানাময়। সব বিছানাতেই দেওয়া হয়েছে কয়েকটি করে গরম জলের বোতল। কিন্তু তাতে কী। ঠাণ্ডায় এপাশ-ওপাশ করতে থাকি কেবলই। দীর্ঘ রাত আর কাটতে চায় না যেন।

চটকা ভাঙ্গলো দরজায় টোকার শব্দে। কে যেন বলতে বলতে যাচ্ছে, “বাহার আও, সানরাইজ দেখনা হোগা।” লজেরই কেউ হেঁকে যাচ্ছে। ধড়ফড়িয়ে উঠি। বাইরে অন্ধকার এখনো। অনেকেই বেরিয়ে পড়েছে লজের সামনের ফাঁকা জায়গাটায়। উঁচু জায়গাগুলোর দখল নিয়েছে চিত্রগ্রাহকরা।

অকস্মাৎ এভারেস্ট শিখরে সোনার বরণ। বিষ্ময়ের মুখোমুখি দাঁড়ানো মানুষগুলোর মধ্যে একটা চাপা উল্লাস খেলে গেল। এবার কাঁচা সোনার রং ধরল কাঞ্চনজঙ্ঘায়, তারপর সেই অলৌকিক আলোকবর্ণ ছড়িয়ে পড়ল কুম্ভকর্ণের দুই শৃঙ্গ, পাণ্ডিম, রোথাং, মাকালু, কাব্রু, কাব্রু ডোম, সিমভো শিখরগুলিতে। জাগলেন ঘুমন্ত বুদ্ধ।

বিশ্বের উচ্চতম পাঁচটি পর্বতশৃঙ্গের চারটিরই দেখা মেলে এই সান্দাকফু থেকে। এই চার শৃঙ্গ হলঃ মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে ও মাকালু।

ঘাসে ঘাসে শিশিরবিন্দু রাতের ঠাণ্ডায় জমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তুষারকণায় পরিণত হয়েছিল। চারপাশের ওই অজস্র তুষারবিন্দু সকালের প্রথম আলোয় ঝিকিয়ে উঠল।

আমার চালক দাজুর দেখা পাওয়া গেল। হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এল। আসলে অনেক কষ্ট করে, টাকাপয়সা খরচ করে যাঁরা এখানে আসেন, তাঁরা খুশি হলে খুশি হয় এঁরাও, এই গাইড, পোর্টার, গাড়ির চালকরাও। মুখটুক ধুয়ে চালকভাইকে সঙ্গে নিয়ে এসে বসলাম রেস্তোরাঁয়। চা-টা খেতে খেতে চালকভাই জানাল, এক ‘জোড়ী’ আমাদের গাড়িতে দার্জিলিং ফিরতে চায়। চালকভাই কিছু টাকার কথা বলেছে। ওঁরা রাজি হয়েছেন। আমার অনুমতি হলে ওঁদের ডেকে আনতে পারে। জানালাম, “আমার তো অসুবিধা কিছু নেই। গোটা ব্যাপারটা তুমি বুঝে নাও।”

দাজু ডেকে আনল একজোড়া তরুণ-তরুণীকে। জানা গেল, সদ্যই বিবাহ হয়েছে তাঁদের। দু’জনেই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। বিয়ের পরে এই তাঁদের প্রথম একত্রে ভ্রমণ। চিত্রে থেকে ট্রেক করে এসেছেন সান্দাকফু। শারিরীক অবস্থা আবার ট্রেক করে ফেরার অনুকূল নয়। গাইড়-সহ ওঁরা মোট তিনজন যাত্রী। ল্যান্ড-রোভারে আমাকে একা দেখে চালক ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওঁরা। আমার অসুবিধা কিছু নেই জানিয়ে দিলাম ওঁদের। টাকাপয়সার ব্যাপারটা চালকের সঙ্গেই বুঝে নিতে বললাম। ওঁরা খুশি। চালক দাজুও খুশি।

খাওয়াদাওয়া সেরে বেলা ১১টা নাগাদ সকলকে নিয়ে সান্দাকফু থেকে গাড়ি নামতে শুরু করল। গল্পসল্প করতে করতে আমরা চলতে থাকলাম। বার দুয়েক গাড়ি থেমেছিল পথে। একটু হাঁটাহাঁটি করে নেওয়া গিয়েছিল সেই অবসরে।

গাড়ি এসে থামল চকবাজারের কাছে। দম্পতি টাকা মিটিয়ে দিলেন চালকভাইকে। আমাকে, দাজুকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওঁরা বিদায় নিলেন। কোনও একটা হোটেল খুঁজে নেবেন বলে জানালেন। ওঁদের গাইড দার্জিলিং পৌঁছানোর আগেই নেমে গিয়েছিল।

কথা অনুযায়ী চালক ভাইয়াকে টাকাপয়সা মিটিয়ে দিলাম। আলাদা একটু টাকাও দেওয়া গেল। বিদায় কালে আমার হাতটা টেনে ধরল দাজু। তারপর হাতের তালুতে গুঁজে দিল একশো টাকার কয়েকটা নোট। কি ব্যাপার? দাজুর জবাব, “ওঁদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি না, সে টাকার খানিকটা তোমারও প্রাপ্য।” বললাম, “ওটা তুমিই রাখো।” ভাইয়ের মুখটা কেমন করুণ হয়ে উঠল। ধীরে ধীরে বলল, “ইয়ে গলদ হোগা, ইয়ে পাপ হোগা।” অতঃপর টাকা ক’টা নিই।

মূল পথে চকবাজার থেকে মলের দিকে উঠছিলাম। রাস্তার দু’পাশে শীতবস্ত্রের প্রচুর দোকান বসেছে। দাঁড়িয়ে পড়ি একটা দোকানের সামনে। ম্যানেজার সাব-এর জন্য একটা উপহার কিনব।

একটু ওপর থেকে দেখা সান্দাকফুর ছোট্ট জনপদ। ফটো: তুষার পাত্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *