Follow us
Search
Close this search box.

ডুবলাগড়ির নিরালা সৈকতে

ডুবলাগড়ির নিরালা সৈকতে

যাওয়ার কথা পুরী, চলে এলাম ডুবলাগড়ি। ২০২৩-এর জুনের কথা। ৩০ জুন ছুটি নিলে পরপর চারদিনের ছুটি পাওয়া যাচ্ছে। সেই হিসেবে পুরী বন্দেভারতের টিকিট কাটলাম। তারপর শুরু হল হোটেলের খোঁজ। আমার পছন্দের হোটেল একটাও পেলাম না। সব হাউসফুল।খেয়ালই করিনি ওই সময়টায় উল্টোরথ। তৎক্ষনাৎ টিকিট ক্যানসেল। কোথায় যাওয়া যায়?

কোথায় যাওয়া যায়? চলো ডুবলাগড়ি। ডুবলাগড়ি যাওয়ার প্রোগ্রাম ছিল শীতে। হঠাৎ করে চলে এল সুযোগ। ডুবলাগড়ির গ্যালাক্সি নেচার ক্যাম্পে দুদিনের বুকিং করে ফেললাম।

ঈদের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে দুগ্গা দুগ্গা বলে দু’জনে বেরিয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে। খড়্গপুর থেকে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বালাসোরের ঠিক আঠারো কিলোমিটার আগে হলদিপাড়া। ওখান থেকে বাঁ দিকে টার্ন নিয়ে আরো আঠারো কিলোমিটার দূরে গ্যালাক্সি নেচার ক্যাম্প। পৌঁছাতেই ওয়েলকাম ড্রিংক, ডাবের জল।

বরাদ্দ এসি কটেজে জিনিসপত্তর রেখে ক্ষণিকের বিশ্রাম। তারপর ক্যাম্পের দরজা ঠেলে ঝাউয়ের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে গেলাম সি বিচে। দিগন্ত-প্রসারিত ঝকঝকে সোনালী সৈকত। ঝাউবনের সবুজ ক্যানভাসকে পিছনে রেখে সামনে যত দূর চোখ যায় শুধু সাগরের ফেনিল তরঙ্গমালা। বর্ষার দুপুরে নির্জন সমুদ্র সৈকতে আমরা দুটো মাত্র প্রাণী। বালুকাবেলায় বসে দেখলাম সমুদ্রের নানা ছন্দ। তারপর দু’দিন শুধুই সমুদ্রে যাওয়া আসা, আর স্রোতে ভেসে পড়া। লাল কাঁকড়াদের লুকোচুরি খেলা ডুবলাগড়ি সৈকতের আরেকটি আকর্ষণ। হট্টগোল নেই, ছোটাছুটি নেই। খাওয়াদাওয়া, সৈকতে পদচারণা, দিনের বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের রং বদল, মুড বদল দেখতে দেখতে দুটো দিন কেটে গেল। নিখাদ বিশ্রামে শরীর-মন চাঙ্গা হয়।

চাইলে এক দিন সকালে বা বিকেলে বেড়িয়ে আসা যায় মোহানা থেকে। এখানে একটা এক ঘন্টার বোটিং হয়। জলযান মোহনা থেকে সমুদ্রে গিয়ে খানিক পরে ফিরে আসে। খরচ ৪০০ টাকা। আমরা যখন ডুবলাগড়ি গিয়েছিলাম তখন সাময়িক ভাবে এই সার্ভিস বন্ধ ছিল। সকালে সমুদ্র থেকে মাছ ধরার ট্রলারগুলোর ফেরে একে একে। নানা জাতের টাটকা সামুদ্রিক মাছের বিরাট বাজার বসে এই মোহনা এলাকায়।

এবার আসি ক্যাম্পের কথায়। খাওয়াদাওয়া বেশ ভালো। অন্যান্য সুযোগ সুবিধা মাঝারি মানের। তবে এটাও ঠিক যে, ওটা একটা ক্যাম্প। সে-কথা ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ মনে করিয়ে দিয়ে থাকেন। তবে মানতেই হবে, আলোর মালায় সাজানো রাতের ক্যাম্প খুব সুন্দর। ক্যাম্পের প্রতিটি কর্মী খুবই ভদ্র এবং আন্তরিক। মন ছুঁয়ে যায় ওদের আতিথেয়তা।

দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুরের ভিড় এড়িয়ে কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতই নিরালা সমুদ্র সৈকতে দুটো দিন কাটাতে মন চাইলে ভবিষ্যতে আপনার গন্তব্য হতেই পারে ওড়িশার ডুবলাগড়ি।

যাওয়ার পথ: কলকাতা থেকে কোলাঘাট হয়ে খড়্গপুর । তারপর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বালাসোরের ঠিক আঠারো কিলোমিটার আগে হলদিপাড়া থেকে বাঁ দিকে টার্ন নিয়ে আরো আঠারো কিলোমিটার দূরে ডুবলাগড়ি। কলকাতা থেকে সড়কপথে ডুবলাগড়ির দূ্রত্ব ২৪৪ কিলোমিটার।ট্রেনে এলে নামতে হবে বালাসোর স্টেশনে। বালাসোর থেকে ডুবলাগড়ির দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। অটো ভাড়া সাতশো টাকা। আর গাড়িতে বারোশো টাকা। বলে রাখলে ক্যাম্প থেকে গাড়ি পাঠায়। ভাড়া একই।

থাকার ব্যবস্থাঃ থাকার জন্য ডুবলাগড়িতে রয়েছে গ্যালাক্সি নেচার ক্যাম্প।( ফোনঃ 9748360830)
বাবলস অফ লাক্সারি ( ফোনঃ 9339815846) এবং ওসান ব্রিজ রিট্রিট (ফোনঃ 8093092360)। আরও ক্যাম্প আছে। উনিশ-বিশ তফাত।

আগেই বলেছি, আমরা ছিলাম গ্যালাক্সি নেচার ক্যাম্পে। এখানে দু ধরনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। টেন্ট ও কটেজ। টেন্টের ভাড়া জনপ্রতি ১৩০০টাকা। বিভিন্ন ধরনের টেন্ট আছে। নন-এসি কটেজের ভাড়া জনপ্রতি ১৮০০ টাকা এবং এসি কটেজ ভাড়া জনপ্রতি ২৫০০টাকা‌। থাকা-খাওয়া সহ ভাড়া। এর মধ্যে ধরা আছে সকালের বেড-টি, ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, বিকেলের স্ন্যাক্স এবং ডিনার। একটা কথা, ঘরে বসে সমুদ্র দেখার আশা নিয়ে ডুবলাগড়ি আসবেন না। সমুদ্র উপকূল এবং বনাঞ্চল রক্ষার নিয়ম অনুযায়ী এই ক্যাম্পগুলোর অবস্থান সমুদ্রের দিক থেকে ঠিক ঝাউবনের পিছনে। তবে ঝাউবনের ভিতর দিয়ে সমুদ্রের দূরত্ব খুবই অল্প।

ফটোঃ লেখক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *