কুয়ালালামপুর শহরের প্রতীক ৮৮ তলার পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের অবজার্ভেশন ডেক থেকে দেখছিলাম শহরটিকে। স্বপ্নের মতো মনে হয়।
মালয়েশিয়ার রাজধানী শহর কুয়ালালামপুর। ওই ৮৮ তলা থেকে নেমে এলে কেমন লাগে শহরটাকে? আমাদের মালয়েশিয়া সফরে চার দিন ছিলাম কুয়ালালামপুরে।
শহরটা চষে বেড়িয়েছি বাসে, ট্রেনে, ওলা-উবেরের মতো ওখানকার গ্রাব অ্যাপের গাড়িতে। দেখার পরে শহরটাকে এক কথায় আসাধারণ মনে হয়েছে। এতটা প্রত্যাশা ছিল না। আসার আগে মনে হয়েছিল, কেমন আর হবে, আমাদের দেশের কোনও বড় শহরের মতোই হবে হয়তো। কিন্তু শহরটা বেড়ানোর পরে, স্বীকার করতে স্বিধা নেই, কুয়ালালামপুর শহরটাকে আমার বেশ মনে ধরেছে। কেন?
ওপর ওপর চাকচিক্য দিয়ে চোখ ভোলানো নয়, একটা বড় ও পর্যটক-প্রিয় শহরের ব্যবস্থাপনার মধ্যে যে পরিকল্পনা ও গভীরতা থাকতে হয়, সেটা আছে এ শহরটিতে। রাস্তাঘাট প্রশস্ত ও পরিচ্ছন্ন। পরিকল্পনামাফিক ফ্লাইওভারের কারণে শহরে গতি আছে। ট্র্যাফিক আছে, কিন্তু সুনিয়ন্ত্রিত। পুলিশ আছে, তবে রাস্তায় বেশি দেখা যায় না তাঁদের। সি সি ক্যামেরায় চোখ সেঁটে থাকে তাঁদের। বেচাল হলেই নিমেষে পুলিশের বাইক পৌঁছে যায় অকুস্থলে। খুব প্রয়োজন না হলে কেউ হর্ন বাজায় না। ফুটপাথের যত্রতত্র চায়ের দোকান বা পান-সিগারেটের দোকান চোখে পড়েনি। কোথাও কোথাও আস্থায়ী বাজার দেখেছি। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেই বাজার বসে। বাজার শেষে দোকানদারদের জায়গাটিকে আগের আবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হয়। ফুটপাথে জবরদখল চোখে পড়েনি। রাস্তাঘাটে রাজনৈতিক ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টার দেখিনি।
বাস, ট্যাক্সি ছাড়াও শহর জুড়ে জালের মতো বিছিয়ে রয়েছে তিন ধরণের রেল পরিবহণ ব্যবস্থা। গ্রাব অ্যাপের গাড়ির পরিষেবা এখানকার ওলা, উবেরের চেয়ে অনেক ভালো। এই অ্যাপ-ভিত্তিক গাড়ি পিক-আপ পয়েন্টে পৌঁছাতে ১০ মিনিটের বেশি দেরি করলে আপনি ক্ষতিপূরণ পাবেন। অনেক জায়গায় হাঁটা ও সাইকেল চালানোর জন্য আলাদা লেন রয়েছে। স্ট্রিট আর্ট তথা গ্রাফিতির ব্যবহার শহরটাকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে।
শহরের ইতিউতি অল্পস্বল্প দারিদ্রের চিহ্ন চোখে পড়েছে। তবে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ এখানে। লোকজন ভদ্র ও বিনয়ী, উপকারীও বটে। রাতের শহর নিরাপদ। অনেক রাত পর্যন্ত বিদেশী মহিলাদের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখেছি।
ফ্রি বাসের আরোহী
কুয়ালালামপুরে পরিবহণের খরচ কম। ওখানে পেট্রোল-ডিজেলের দামও অবশ্য কম। আমাদের এখানকার তুলনায় অর্ধেকেরও কম। তা বলে ফ্রি বাস? কুয়ালালামপুরে আসার পর থেকেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় এক ধরণের বাস দেখছি। তাতে লেখা ‘ফ্রি বাস’। একদিন হোটেলের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, সবুজ রংয়ের একটা বাস এসে থামলো। তার গায়ে লেখা ‘ফ্রি বাস’। দু-একজন ওঠানামা করল। কথায় আছে, সস্তার তিন অবস্থা। আর এ তো একেবারে ফ্রি, অন্তত তাই লেখা আছে। কিন্তু প্রচলিত ধারণার সঙ্গে মিলছে না তো। ঝাঁ চকচকে ইলেক্ট্রিক চালিত এ সি বাস। এ বাস ফ্রি বিশ্বাস হতে চায় না। নাকি বিজ্ঞাপণের চমক? নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে মাথায়।
একদিন বিকেলে সুরিয়া কে এল সি সি মল মল থেকে বেরিয়ে দেখি সামনে সেই বাসগুলো। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে ওটা একটা বাসস্ট্যান্ড। কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো কি সত্যি ফ্রি বাস? ভদ্রলোক বললেন, ঠিক তাই। উনি আমাদের গন্তব্য জানতে চাইলেন। বললাম, বুকিট বিন্টাং। শপিং মল, রেস্তোরাঁ, পাব, বার ইত্যাদি নিয়ে বুকিট বিন্টাং কুয়ালালামপুরের এক বিখ্যাত বাণিজ্যিক ও বিনোদন কেন্দ্র। ওই ভদ্রলোক সামনের একটা বাস দেখিয়ে বললেন, ওই বাসটা যাবে, ছাড়বে এখনই, তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন। বাসের অটোমেটিক দরজা বন্ধ হওয়ার মুখে আমরা তিনজন উঠে পড়লাম বাসে। ড্রাইভার আমাদের স্বাগত জানালেন হাসিমুখে।
পরের পর্বে ফ্রি বাসে সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা জানাব।
ফটোঃ লেখক
1 Comment
[…] ‘মালয়েশিয়া ভ্রমণঃ কুয়ালালামপুর শহর- প্রথম পর্ব’ শীর্ষক লেখাটি পড়তে পারেন এই লিঙ্কেঃ https://torsa.in/malaysia-tour-kuala-lumpur-city-part-i/ […]