প্রথম পর্বে মালয়েশিয়ার রাজধানী শহর কয়ালালামপুরের ফ্রি বাসে উঠে পড়ার কথা বলেছিলাম। হ্যাঁ, বিনা ভাড়ার ঝকঝকে এসি বাস। চালক স্বাগত জানালেন। আমরা বসলাম। কয়েকটি সিট খালি। বাস চলতে শুরু করল। ভারতের মানুষ, যতদূর ভাবতে পেরেছিলাম তার চাইতেও ভালো ব্যবস্থা।
আরামদায়ক আসন। সামনের দিকে দুটো ডিসপ্লে। একটায় বিজ্ঞাপন চলছে, নিঃশব্দে। আরেকটায় যাত্রাপথের চলমান ছবি ফুটে উঠছে। সঙ্গে ঘোষণা। এমন বাসে যাত্রার জন্য কোনও ভাড়া লাগে না। আঞ্চলিক যাত্রী, পর্যটক, ধনী, দরিদ্র, সকলের জন্যই এই বাস।
ভারতবর্ষের মানুষ আমি, যারপরনাই অবাক হয়েছিলাম সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায়। মিনিট দশেকের মধ্যে আমাদের গন্তব্য বুকিট বিন্টাংয়ে পৌঁছালাম। বুকিট বিন্টাং কুয়ালালামপুরের এক বিখ্যাত বাণিজ্যিক ও বিনোদন কেন্দ্র। কিন্তু মাথা থেকে এই ছোট্ট যাত্রাটির গোটা ব্যাপারটা ঝেড়ে ফেলা গেল না।
‘মালয়েশিয়া ভ্রমণঃ কুয়ালালামপুর শহর- প্রথম পর্ব’ শীর্ষক লেখাটি পড়তে পারেন এই লিঙ্কেঃ https://torsa.in/malaysia-tour-kuala-lumpur-city-part-i/
পরের দিন যেন ডাক পাঠালো ওই বাস, সবদিনই কি ওরকম বাসের পরিষেবা পাওয়া যায় একইভাবে, এইরকম সব প্রশ্ন তৈরি হচ্ছিল? কৌতূহলটা তাড়া করছিল। পরের দিন দুপুরে ওই ফ্রি বাসে চড়ে একাই চলে গেলাম সুরিয়া কে এল সি সি মলে। ওখানে দক্ষিণ ভারতীয় চেন রেস্তোরাঁ সারভানা ভবনের একটা আউটলেট আছে। ওখানে লাঞ্চ সেরে খানিক ঘোরাঘুরি করে ফের সেই বাসে। আলাপ হল এক যুবকের সঙ্গে। জানতে চাইলাম, ফ্রি বাস। কিন্তু ভিড় নেই কেন? সপ্রতিভ ছেলেটি জানালো, এগুলো শর্ট রুটের বাস। যাঁরা দূরে যাবেন তাঁরা এ বাসে উঠবেন না। তাছাড়া, যাঁদের সামর্থ আছে তাঁরা সাধারণত এ বাসে ওঠেন না। যুবকের বক্তব্যের শেষাংশ শুনে আমি অবাক। মনে মনে ভাবলাম ফ্রি বাসের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার শিকড় চারিয়ে গেছে গভীরে। একটা সামাজিক ব্যবস্থাপনা, বোধ যুক্ত রয়েছে এই ধারার পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে।
খোঁজ নিয়ে দেখলাম, গ্রিন লাইন, ব্লু লাইন, ওরেঞ্জ লাইন, পিঙ্ক লাইন প্রভৃতির মতো মোট ১১টি রুটের ফ্রি বাস চলে কুয়ালালামপুর শহরে। প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করন ফ্রি বাসে। এসি বাস। অনুগ্রহ নয়। পরিষেবা।
এবার যাই গোড়ার কথায়। আমাদের মালয়েশিয়া ভ্রমণ শুরু হয়েছে লাংকাও দ্বীপ দিয়ে। বেড়ানোর পরিকল্পনা থেকে শুরু করে, টিকিট কাটা, হোটেল বুকিং, ভিসা সবই নিজেরা করেছি এবার। ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুর, সেখান থেকে বিমান বদলে আন্দামান সাগরে ছবির মতো দ্বীপ-শহর লাংকাও চলে এসেছিলাম।
পরের পর্বে লাংকাও বেড়ানোর কথা।
ফটোঃ লেখক।
ক্রমশ-
1 Comment
[…] মালয়েশিয়া ভ্রমণঃ কুয়ালালামপুর শহরের … […]