পশ্চিমঘাট পর্বতমালার শৈল শহর মাথেরন বেড়িয়ে খান্ডালা-লোনাভালার পথে
গতকাল মাথেরনের পথে দস্তুরিনাকা নামের এক জায়গায় মহারাষ্ট্র টুরিজমের প্রপার্টিতে এসে উঠেছি। এখান থেকে মাথেরন ৩ কিলোমিটার। রসিকজনেদের অভিজ্ঞতা, মাথেরন সুন্দর বর্ষায়। আমরা জুলাই মাসে এসেছি। এখানে এখন ভরা বর্ষা। নাসিক, সাপুতারা, ভান্ডারদারা বেড়িয়ে মালসেজ ঘাটের মধ্যে দিয়ে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অভ্যন্তরে এই আনিন্দ্যসুন্দর শৈল শহরটির প্রান্তে এসে পৌঁছেছি।
পরের দিন সকাল সকাল ব্রেকফাষ্টের পর মাথেরন বেড়াতে বেরলাম ট্রেনের সময় সূচি অনুসারে। দস্তুরিনাকা থেকে টয়ট্রেনে সওয়ার হলাম আমরা প্রসঙ্গত, নেরাল থেকে মাথেরন হিল রেলওয়ের টয় ট্রেনে মাথেরন ২১ কিলোমিটার। দস্তুরিনাকা থেকে ৩ কিলোমিটার। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মধ্যে দিয়ে সেই রেল যাত্রা মনে রাখার মতো। রেলপথটি তৈরি হয়েছে ব্রিটিশ আমলেই। ১৯০১ থেকে ১৯০৭ সালের মধ্যে এই ন্যারোগেজ রেলপথটি গড়ে ওঠে। মাথেরন হিল রেলওয়ে ইউনেস্কোর হেরিটেজ রেলওয়ের স্বীকৃতি পাওয়ার পথে অনেকটা এগিয়েছে।
হিল স্টেশন হিসেবে মাথেরনকে চিহ্নিত করেছিল কিন্তু ব্রিটিশরাই। নানা উন্নয়নের কাজ হয়েছিল তাঁদের আমলে। এখনো পরিবেশ সংরক্ষণের ঐতিহ্যটি মান্যতা পাচ্ছে মাথেরনে। ভালো লাগে সেটা। পুরনো হিল স্টেশন মাথেরন তার প্রকৃত রূপটি বজায় রাখতে পেরেছে। বেড়িয়ে দেখার জন্য দু’রকমের ব্যবস্থা আছে। হয় ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে হবে, না হলে হাতে টানা রিকশায়। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার ব্যবস্থা। পায়ে হেঁটে বেড়ানোর কিছু সমস্যা আছে। যেমন, কোথাও কোথাও নির্দিষ্ট রাস্তা নেই, কখনও জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, কখনও চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে এগতে হবে। তাছাড়া, দর্শনীয় জায়গাগুলো ছড়িয়ে রয়েছে নানা দিকে। অগত্যা আমরা কয়েকজন হাতে টানা রিকশায় আর বাকিরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে বেড়িয়ে পড়লাম। মাথেরনের উচ্চতা ২৬২৫ ফুট। অঞ্চলটির ব্যাসার্ধ ৭ কিলোমিটার।
পাহাড়ি রাস্তায় ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ চলা শুরু হল। হাতে টানা রিকশা দু’জন করে চালায়। একজন সামনে থেকে টানে, অপরজন পিছন থেকে ঠেলে। আর প্রত্যেকটাতে একজন করেই যাত্রী নেওয়া হয়। মাথেরনে দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায় থাকবে লুইসা পয়েন্ট, সানসেট পয়েন্ট, প্যানরামা পয়েন্ট, আলেকজান্ডার পয়েন্ট, শার্লট লেক, ইকো পয়েন্ট ইত্যাদি। পাহাড়ের পর পাহাড়, অরণ্য, উপত্যকা, উপত্যকার এদিক সেদিক মেঘ ওড়ে, কোনও কোনও এলাকায় কুয়াশায় মোড়া রহস্যময়তা।
আনেকটা বেড়িয়ে, মুষলধারার বৃষ্টিতে লম্বা সময় ধরে ভিজে আমাদের সবার মাথেরন ভ্রমন ভালো লাগার কারণগুলো পরপর সাজালে তা হয় এরকম, জঙ্গুলে ও পাহাড়ি পথে রিকশায় ও অশ্বপৃষ্ঠে ভ্রমণ, বর্ষার কারণে সর্বত্র প্রবল বেগে ধাবিত ঝর্ণাধারার আবাক করা সব দৃশ্য, তৃতীয়ত, দূষণে আক্রান্ত হয়নি এমন একটি শৈল শহর যার অচেনা একটা রূপের এই বর্ষায় ফুটে ওঠা। আর যেটা আমাদের মনে ধরেছে সেটা হল, কম মানুষের সমাগম। মাথেরন তাই পরিচ্ছন্নও বটে।
আমাকে অবাক করল যে ব্যাপারটা তা হল, সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে কারুর শরীর খারাপ হল না। একেই মনে হয় বলে স্থানমাহাত্ম্য।
দুটো দিন কেটে গেল মাথেরনে। আমাদের পরের গন্তব্য খান্ডালা হয়ে লোনাভালা। নেরালে ফেরার ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা, এদের এখান থেকেই গাড়ি নিতে হবে। সেই গাড়ি নেরালে আমাদের গাড়ি যেখানে পার্কিংয়ে আছে সেখানে ছেড়ে দেবে। অতএব চারটে আলাদা আলাদা গাড়িতে বাড়তি পয়সা খরচ করে যেতে হবে। আমাদের গাড়িকে উপরে আসতে দেওয়া হবে না। বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের ভ্রমণ বাসনায় রাজ্যভিত্তিক আঞ্চলিক নিয়মকানুন অনেক ক্ষেত্রেই সাধ আর সাধ্যের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
যাইহোক, প্রসঙ্গে ফিরি। মাথেরন থেকে সড়কপথে লোনাভালা কমবেশি ৫৬ কিলোমিটার। লোনাভালা আর খান্ডালা মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি দুই শৈল শহর। আমরা খান্ডালা-লোনাভালার পথে যাত্রা করলাম।
পরের কথা আগামী পর্বে
ফটো সৌজন্যঃ উপর থেকে যথাক্রমেঃ ট্র্যাভেল ট্রায়াঙ্গেল, মুম্বাই ট্রেকার্স, বম্বে ভিউ হোটেল, উইকিওয়ান্ড।
মাথেরনগামী টয়ট্রেনের ভিডিওঃ লেখক
লেখকের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরঃ 9433456266, 9007966182
1 Comment
[…] আগের দুই পর্ব পড়ার লিঙ্ক প্রথম পর্বঃ https://torsa.in/maharashtra-in-monsoon-first-part/ দ্বিতীয় পর্বঃ https://torsa.in/maharashtra-in-monsoon-second-part/ […]