Follow us
Search
Close this search box.

কর্নাটকের গোকর্ণ

কর্নাটকের গোকর্ণ

কর্নাটকের উত্তর কন্নড় জেলায় গোকর্ণ একটি ছোট্ট শহর। সৈকত তীরবর্তী মন্দিরনগরী হিসেবে খ্যাত গোকর্ণকে ভিত্তি করে বেড়িয়ে নেওয়া যায় আরবসাগরের তীরবর্তী অনেকগুলো পর্যটন কেন্দ্র, নামকরা সব সৈকত। বেড়ানোর সেরা সময় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি। কীভাবে বেড়াবেন, কোথায় কোথায় বেড়াবেন, কোথায় রাত্রিবাস করলে সুবিধা হবে সে-সব তথ্য নিয়ে সুচিন্তিত ভ্রমণ-পরিকল্পনাটি ছকেছেন তুষার পাত্র।

গোকর্ণ সমুদ্র সৈকত। ছবিঃ সৌজন্যে পি. সুরভি।

কী ভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে ট্রেনে যশবন্তপুর। যশবন্তপুর থেকে গোকর্ণ রোড স্টেশনে যাওয়ার ট্রেন ধরবেন। গোকর্ণ রোড স্টেশন চত্বর থেকে অটো বা গাড়িতে গোকর্ণ।

কোথায় কোথায় বেড়াবেন

গোকর্ণ,কারোয়ার,মুরুদেশ্বর,যোগ জলপ্রপাত, কুদলে বিচ,ওম বিচ,হাফমুন বিচ,প্যারাডাইস বিচ, মিরজান ফোর্ট ও ইয়ানা কেভ।

কী ভাবে বেড়াবেন

প্রথম দিন: হাওড়া থেকে সকাল ১০.৫০-এ হাওড়া-যশবন্তপুর দুরন্ত এক্সপ্রেসে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে যাত্রা শুরু।

দ্বিতীয় দিন: বিকেল ৪টেয় যশবন্তপুরে নেমে ওখান থেকেই সন্ধ্যে ৬.৪৫-এ ধরুন কারোয়ার এক্সপ্রেস।

তৃতীয় দিন: সকাল ৬.৫০-এ গোকর্ণ রোড স্টেশনে নেমে গাড়িতে বা অটোতে গোকর্ণ। ছোট শহর গোকর্ণ। বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। চাইলে সৈকত-সংলগ্ন কোনও রিসর্টে থাকতে পারেন। এ দিনটা শহর বেড়িয়ে আর বিচে ঘোরাঘুরি করে কাটান।

চতুর্থ দিন: গোকর্ণ সৈকত ছাড়াও আরও চারটে বিচ আছে কাছাকাছি। কুদলে বিচ, ওম বিচ, হাফমুন বিচ এবং প্যারাডাইস বিচ। আজ সারাদিন সৈকতগুলো বেড়িয়ে দেখুন। চাইলে সৈকত ভ্রমণের জন্য টু-হুইলার ভাড়া নেওয়া যায়। সবুজ পশ্চাৎপটে স্বর্ণাভ সৈকতভূমি আর সুনীল আরবসাগর যেমন চোখের আরাম তেমনই প্রাণের শান্তি। আরবসাগরতীরের সৈকতগুলির বিশিষ্ট সৌন্দর্য আবিষ্কার করতে চাইলে কর্ণাটকের এই সৈকতগুলিতে একবার পা রাখতেই হবে। গোয়ার কথা মনে রেখেই এ কথা বলছি।

কুদলে বিচ।

পঞ্চম দিন: আজ বেশ লম্বা একটা জার্নি থাকবে। বেরিয়ে পড়ুন খুব সকালে। বেড়িয়ে আসুন মুরুদেশ্বর থেকে, দেখে আসুন যোগ জলপ্রপাত। মুরুদেশ্বরে বিচ এবং ফোর্ট অবশ্যই দেখবেন। একদিকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা,অন্যদিকে আরব সাগর। মাঝে মুরুদেশ্বর। মুরুদেশ্বর সৈকতের বিশেষ আকর্ষণ ধ্যানমগ্ম মহাদেবের বিশালাকার মূর্তিটি।পর্বত আর সমুদ্রের মাঝে কন্ডুকাগিরি টিলার চূড়ায় ১২৩ ফুট উচ্চতার শিবমূর্তিটির সামনে দাঁড়ালে সব ক্লান্তি নিমেষে দূর হয়ে যায়।

মুরুদেশ্বর বিচ।

 

যোগ জলপ্রপাত।

 

মুরুদেশ্বর সৈকতের বিশেষ আকর্ষণ ধ্যানমগ্ম মহাদেবের বিশালাকার মূর্তি।

মুরুদেশ্বর এবং ভাটকলের অন্যান্য সৈকত থেকে আরব সাগরের মধ্যে দেখা যায় একটি ছোট্ট দ্বীপ। মুরুদেশ্বর সৈকত থেকে দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। এটি নেত্রানী দ্বীপ। পিজিয়ন আইল্যান্ড নামেও পরিচিত। সৈকত থেকে বোটে করে দ্বীপে পোঁছতে কমবেশি ঘন্টা দেড়েক সময় লাগে।এই নেত্রানী দ্বীপটিকে বেড় দিয়ে আছে প্রবালপ্রাচীর। সেই প্রবাল রাজ্যে খেলে বেড়ায় রং-বেরঙের সামুদ্রিক মাছ। সব মিলিয়ে সে এক স্বপ্নের জগৎ।স্কুবা ডাইভিং ও স্নরকেলিং-এর এক বিশেষ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে নেত্রানী।

নেত্রানী দ্বীপ।

মুরুদেশ্বর থেকে যোগ জলপ্রপাত ৯০ কিলোমিটার। মুরুদেশ্বর বেড়িয়ে হাতে সময় থাকলে জলপ্রপাতটি দেখে আসবেন। তবে আমাদের এই যাত্রায় সন্ধ্যার মধ্যে গোকর্ণে ফিরে আসতে হবে এবং গোকর্ণেই রাত্রিবাস।

ষষ্ঠ দিন: সকালে একটা গাড়ি নিয়ে ঘুরে আসুন ইয়ানা কেভ এবং মিরজান ফোর্ট থেকে। কুমতা অরণ্যের মধ্যে প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টি ইয়ানা কেভ। মিরজান দুর্গের অনেক ইতিহাস। দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীর এক মূল্যবান নিদুর্শন এই দুর্গটি। আজ বিকেলটা ফ্রি। এই সময়টা কাটাতে পারেন পছন্দের কোনও একটা বিচে। সন্ধ্যবেলায় টুকটাকি কেনাকাটা।

ইয়ানা কেভ।

সপ্তম দিন: আজ সকালে গোকর্ণ থেকে আমরা যাব কারোয়ার। দূরত্ব ৬০কিলোমিটার। বন্দর শহর কারোয়ার। উত্তর কন্নড় জেলার সবচেয়ে বড় শহরও এই কারোয়ার। কারোয়ারের সৈকতটিও অত্যন্ত সুন্দর। অবশ্যই যাবেন রবীন্দ্রনাথ টেগোর বিচে। ডাইভিং, স্নরকেলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। কারোয়ার থেকেও যোগ জলপ্রপাতটি দেখে আসা যায়। কারোয়ার থেকে যোগ জলপ্রপাত ৫০ কিলোমিটার। বেড়িয়ে আসতে পারেন কূর্মগড় দ্বীপ থেকেও। হোটেলের অভাব নেই কারোয়ারে। বিভিন্ন মান ও দামের হোটেল পাবেন এখানে। আজ কারোয়ারেই রাত্রিবাস।

রবীন্দ্রনাথ টেগোর বিচ, কারোয়ার।

অষ্টম দিন: টেগোর বিচের কাছেই রয়েছে ওয়ার মিউজিয়াম। ভারতীয় নৌবাহিনীর নানা ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায় এই মিউজিয়ামটি ঘুরে দেখলে। আগের দিন দেখা না হয়ে থাকলে আজ দেখে আসুন। কারোয়ার শহর থেকে টেগোর বিচ আড়াই কিলোমিটার। সুন্দর এই সৈকতটিকে আরেকবার দেখে আসা যায়। দেখে আসতে পারেন নাগনাথ মন্দিরটিও। গোছগাছের কাজটিও থাকবে। এ দিন সন্ধ্যা ৬টায় কারোয়ার থেকে যশবন্তপুরের ট্রেন ধরতে হবে।

ওয়ারশিপ মিউজিয়াম।

 

নাগনাথ মন্দির।

নবম দিন: সকাল ৮টায় পৌঁছে যাবেন যশবন্তপুরে।এখান থেকে বেলা এগারোটায় ছাড়ছে হাওয়াগামী দূরন্ত এক্সপ্রেস। সারা দিন রাত কাটাবে ট্রেনে।

দশম দিন: সারাদিন ট্রেনে ভ্রমনের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে বিকেল ৪.৪৫ এ আপনি পৌঁছে যাবেন হাওড়া স্টেশনে।

খেয়াল রাখবেন, দুরন্ত এক্সপ্রেস হাওড়া এবং যশবন্তপুর থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন চলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *