Follow us
Search
Close this search box.

কানহার জঙ্গলে হাতির স্নান, বাঘের রাজকীয় চলন

কানহার জঙ্গলে হাতির স্নান, বাঘের রাজকীয় চলন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৪। হুজুর সাহিব ননদেদ সুপারফাস্ট উইকলি এক্সপ্রেস (১২৭৬৮) বেলা সোয়া-২টো’য় ছাড়ল সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে। মহারাষ্ট্রের ননদেদ শহরে গোদাবরী নদীর তিরে হুজুর সাহিব গুরুদ্বার শিখদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। আমরা নামব মহারাষ্ট্রের গোঁদিয়া জংশন স্টেশনে।
পরের দিন, ১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায় মহারাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বে গোঁদিয়ায় পৌঁছানো গেল। এবার গন্তব্য কানহা। রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের ‘দি জঙ্গল বুক’এর সেই প্রেক্ষাপট। কানহার অরণ্যে চলেছি আমরা। মধ্যপ্রদেশের মৈকল পর্বত-শৃঙ্খলের ৯৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কানহা জাতীয় উদ্যান ও টাইগার রিজার্ভের বিস্তার। মৈকল সাতপুরা পর্বতমালার অংশ। মহারাষ্ট্রের গোঁদিয়া জংশন স্টেশন থেকে মধ্যপ্রদেশের কানহার দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার। গোঁদিয়ার অবস্থান মহারাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে। কানহা অরণ্যের বিস্তার মধ্যপ্রদেশের মন্ডলা ও সাতপুরা জেলায়। এই অরণ্য সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মর্যাদা পায় ১৮৭৯ সালে। বণ্যপ্রাণ অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পেয়েছে যথাক্রমে ১৯৩৩ ও ১৯৫৫ সালে।

গাড়ি বুক করা ছিল। কানহার উদ্দেশে রওনা হওয়া গেল। চলার পথে প্রাতরাশ। সাড়ে ১১টা নাগাদ কানহার গ্র্যান্ড টাইগার রিজার্ভে এসে উঠলাম। বুকিং ছিল। থাকা এবং ব্রেকফাস্ট থেকে লাঞ্চ, ডিনার, সন্ধ্যার চা-স্ন্যাক্স ইত্যাদি সহ ভাড়া নির্দিষ্ট হয়ে থাকে।

ওই দিনই বিকেলের জঙ্গল সাফারি বুক করা ছিল। সকালের সাফারি শুরু হয় ভোরবেলায়। মরসুম অনুসারে সাফারির সময়ের একটু হেরফের ঘটে থাকে। হাতির পিঠে চড়েও জঙ্গল সাফারি হতে পারে কানহায়। আমাদের জিপ সাফারির ব্যবস্থা ছিল।

লাঞ্চ সেরে সাফারি জিপে চড়ে আড়াইটে নাগাদ জংগলমুখো হওয়া গেল। কানহা অরণ্যের মুক্কী গেট থেকে সাফারি শুরুর বুকিং ছিল। রিসর্ট থেকে মুক্কী গেটের দূরত্ব এক কিলোমিটার। জিপে সর্বোচ্চ ছয় জন সাফারি-যাত্রা করতে পারেন। সঙ্গে ড্রাইভার ও একজন গাইড। মোট আট জনের ব্যবস্থা।

জঙ্গলের কোর এলাকায় ঢোকার পরিকল্পনা রয়েছে জানা গেল। মধ্যপ্রদেশ-মাহারাষ্ট্রের সীমান্তের বাঘের জঙ্গলে যাত্রা শুরু হল আমাদের। পাখির ডাক শুনছি নানা দিক থেকে। বাঁদর ও হরিণ প্রচুর। চিতল হরিণ, বার্কিং ডিয়ার বা কাকর হরিণ, বিশালদেহী সম্বর। বারসিঙা হরিণ ( বড় শিংওয়ালা হরিণ) দেখলাম। এই বন্যপ্রাণীটি মধ্যপ্রদেশের রাজ্য-প্রাণীর মর্যাদা পায়। পেঁচা, ময়ূর দেখা দিচ্ছিল থেকে থেকে। ঝিম ধরা একটা নৈঃশব্দ চারিদিকে। অকস্মাৎ ব্রেক কষল জিপের চালক। তারপর সে এক অবাক করা দৃশ্য। রাজকীয় চালে জিপ চলাচলের রাস্তা পেরচ্ছে বাঘ।
ভ্রুক্ষেপহীন। পথের আরেক দিকের জঙ্গলে ঢুকে গেল সে। ছবি তোলার কথা মনেই পড়েনি। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ সেদিনের সাফারির সমাপ্তি ঘটল।

পরের দিন সকালেও আমাদের সাফারি ছিল। আগের দিনের সাফারিতেই সত্যি কথা বলতে কী প্রাণ জুডিয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় দিন দেখেছিলাম সকালের আলোয় উদ্ভাসিত অরণ্যের আরেক রূপ। বুনো আঘ্রাণ। মাটির গন্ধ। কত রকমের যে পাখির ডাক। নাম না জানা ফুল।

বিকেলে রিসর্ট থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে খাপা জোনে বঁজরা নদীতে হাতিদের স্নান দেখতে যাওয়া হল। যা জানা গেল, আগে থেকেই হাতিরা এখানে চান করত। বন বিভাগের হাতি এরা। রাজ্যের বন বিভাগ আগ্রহী ভ্রমণার্থীদের বিকেলের দিকে হাতির দলের জলকেলি দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। মন্দ নয় আইডিয়াটা। জঙ্গলের মধ্যে নদিতে হাতির স্নান। আরেক জগত যেন। সূর্য পশ্চিমে ঢলতে শুরু করেছে। দুটো হাতি চান করছিল তখন। সকলেই খুশি।

সে দিন সানসেট পয়েন্ট থেকে জংগলের দিগন্ত প্রান্তে অপূর্ব এক সূর্যাস্ত দেখেছিলাম।

হাতির স্নান, আঞ্চলিক রাম মন্দির দর্শন ও সানসেট পয়েন্টে যাওয়ার জন্য আলাদা খরচ লাগে।

আগামী কাল সকালে আমরা যাব জবলপুর। নৌকায় নর্মদা নদীতে খাণিকক্ষণের জন্য ভেসে পড়ার খুব ইচ্ছে। পরের গন্তব্য অমরকন্টক। পরের লেখায় জবলপুর ও অমরকন্টক বেড়ানোর কথা জানাব।

তোর্সা ডট ইনঃ অনলাইনে কানহার অরণ্যে সাফারি বুক করা যাবে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমেঃ https://www.kanhakislinationalpark.in/kanha-online-safari-booking.php
ফোনঃ (কানহা ন্যাশনাল পার্ক)- 88025 19000

কয়েকটি হটেল

মগলি রিসর্টস, কানহা, ফোনঃ 94251 56245
গ্র্যান্ড টাইগার রিসর্ট, কানহা, ফোনঃ 88895 02888
কানহা রিসর্ট, ফোনঃ 93769 03457
দি বাঘ, কানহা, ফোনঃ 7637 296 34০
কানহা আর্থ লজ, ফোনঃ 11 4013 2680

হেডার ছাড়া অন্য সবক’টি ফটোঃ লেখক
হেডার ফটোঃ কানহা জাতীয় উদ্যান

1 Comment

  1. ভাস্কর দাসগুপ্ত says:

    দারুন লিখেছিস। তোর লেখা গুলো পড়ে খুব ভালো লাগে। দরকার মতো ইনফরমেশন গুলো থাকে যেমন places তো stay, safari timming একটু খরচ গুলো জানলে ভালো হয়। আরো লেখার অপেক্ষা রইলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *