আজ ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪। দু’দিন থাকা হল কানহায়। কানহা বেড়ানোর কথা লিখেছি সম্প্রতি।
লেখকের ‘কানহার জঙ্গলে হাতির স্নান, বাঘের রাজকীয় চলন’ শীর্ষক লেখাটি পড়তে পারেন এখানে https://torsa.in/kanha-forest/
আজ গন্তব্য জবলপুর। কানহা থেকে জবলপুর ১৭৫ কিলোমিটার। ব্রেকফাস্ট সেরে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ সড়কপথে রওনা দেওয়া গেল। রাস্তার বেশিরভাগটাই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। কানহার অরণ্যাঞ্চল। জবলপুরে মধ্যপ্রদেশ পর্যটনের হোটেল কালচুরি রেসিডেন্সিতে থাকার ব্যবস্থা ছিল। লাঞ্চ সারতে সারতে বেলা গড়িয়ে গেল। বিশ্রামে কাটল সে-বেলাটা।
বেড়িয়ে দেখা জবলপুর
পরের দিন সকালে শুরু হল আমাদের জবলপুর বেড়িয়ে দেখা। জবলপুরের মার্বেল রক প্রকৃতির এক অসাধারণ শিল্পকর্ম। আট কিলোমিটার দীর্ঘ গর্জের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নর্মদা নদীতে বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে। নৌকা করে বেড়ালাম খানিকক্ষণ নর্মদায়, গর্জের মধ্যে। দারুন এক অভিজ্ঞতা। দু’পাশে মার্বেল পাথর ক্ষয়ে অপূর্ব সব ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি।
পরের গন্তব্য ছিল ভেড়াঘাটের ধুয়াঁধার জলপ্রপাত। দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল জলপ্রপাতের গর্জন। এখন তো শীতের মরসুম। বর্ষায় এই জলপ্রপাতের রূপ কী হতে পারে তা আন্দাজ করা যায়। নর্মদা নদী ৯৮৫ ফুট উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এখানে। সৃষ্টি হয়েছে বিখ্যাত ধুয়াঁধার জলপ্রপাতের। ভেড়াঘাটে নর্মাদার উপর দিয়ে রোপওয়ে রয়েছে। নর্মদার পূর্ব পার থেকে পশ্চিম পারে যাওয়া যায় কেবল কারে চড়ে। রোপওয়ে থেকে ধুয়াঁধার জলপ্রপাতকে পাখির চোখে দেখা গেল।
ব্যালেন্সিং রক জবলপুরের আরেকটি বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক। মধ্যপ্রদেশের গোঁদ রাজবংশের রানি দুর্গাবতীর স্মৃতিধন্য মদনমহল দুর্গের কাছে ব্যালেন্সিং রকের অবস্থান। একটি বৃহদাকার প্রস্তরখণ্ড আরেকটি বৃহত্তর প্রস্তরের উপর ভারসাম্য বজায় রেখে অবস্থান করছে যুগ যুগ ধরে। দুটি প্রস্তরখণ্ড মাত্র ৬ বর্গ ইঞ্চি জায়গা জুড়ে পরস্পরকে স্পর্শ করে আছে। ৬.৫ রিখটার স্কেলের ভূকম্পেও দুই পাথরের ভারসাম্য টাল খায়নি। দেশ-বিদেশের ভূতাত্ত্বিক ও পর্যটকরা এই ব্যালেন্সিং রক দেখতে আসেন।
২০০ সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছালাম মদনমহলে। রানি দুর্গাবতী মোঘলদের অঞ্চল দখলের প্রবণতায় মধ্য ভারতে বড় বাধা হয়ে উঠেছিলেন। এ দুর্গ থেকে অনেক যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন রানি দুর্গাবতী। নিহত হন যুদ্ধক্ষেত্রেই। দুর্গে থাবা বসিয়েছে কাল। অনেকাংশে বিধ্বস্ত। যতটা দেখা যায় তা-ও অবাক করবে।
বিকেলে হটেলে ফিরলাম। খানিক বিশ্রাম। পরে গ্বারীঘাটে নর্মদা নদীতীরে সন্ধ্যারতি দেখলাম। বেশ লাগল। হরিদ্বার বা বারাণসীর আরতির মতো আকারে অত বৃহৎ নয় আয়োজন। পরিবেশ মন কাড়ে।
অমকরকন্টক
৫ ফেব্রুয়ার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ রওনা দিয়ে মোটরপথে অমকরকন্টক পৌঁছানো গেল বেলা আড়াইটে নাগাদ। উঠলাম এম পি টি হলিডে হোমস ও রিসর্টসের এম পি টি হলিডে হোমসে (অমরকন্টক) মধ্যাহ্নভোজনের পরে খানিক বিশ্রামের পরে সন্ধ্যায় হাঁটাপথে চলে এলাম নর্মদা
কুণ্ড। সবুজে ঘেরা বড় মন্দির চত্বর। সেখানে পবিত্র কুণ্ড, ছোট আকারের এই জলাশয় নর্মদা নদীর উৎস। মধ্যপ্রদেশের অমরকণ্টক থেকে যাত্রা শুরু করে পশ্চিমবাহিনী নর্মদা গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে মিলিত হয়েছে। নর্মদা আরতি দেখলাম সন্ধ্যায়।
পরের দিন, ৬ ফেব্রুয়ারি, অমরকণ্টক খানিক বেড়িয়ে দেখা গেল। দেখলাম অরন্ডি গুহা, কবীর চবুতরা, কপিলধারা প্রপাত, দুধধারা জলপ্রপাত, নানা মন্দির। প্রকৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে রয়েছে অমরকণ্টক। পরিবেশটা ভালো লাগে। ভালো কথা, দুধধারা প্রপাতটি ঠিক করে দেখতে হলে ৫০০ মিটার নীচের নামতে হয়। রাস্তা করা আছে। নর্মদা নদীর চলনের ধারায় সৃষ্টি হয়েছে জলপ্রপাতগুলির।
এ দিন সন্ধ্যায় আবার পাতাল ভুবনেশ্বর মন্দির, দুর্গাধারা প্রপাত ও সোন উদ্গম মন্দির বেড়িয়ে এলাম ফের। সবশেষে আবার গেলাম কুণ্ড চত্বরে। করুণার ধারায় টলটলে নর্মদা কুণ্ড।
এবারের কানহা, জবলপুর ও অমরকণ্টক বেড়ানোর সমাপ্তি ঘটল আজ। আগামীকাল বিলাসপুর থেকে (১২১০১) জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে হাওড়া ফেরার যাত্রা শুরু বিকেল ৪টে ১০-এ।
ফটোঃ লেখক