Follow us
Search
Close this search box.

কাশ্মীরঃ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা পাঁচ ঠিকানা

কাশ্মীরঃ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা পাঁচ ঠিকানা

কাশ্মীর উপত্যকার ভ্রমণ মানচিত্রে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ভ্রমণ ঠিকানা। জায়গাগুলো তো ছিলই। পর্যকদের কাছে উন্মুক্ত হচ্ছে সেগুলি। গড়ে উঠছে পর্যটন পরিকাঠামো। এখানে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এরকম পাঁচটি জায়গার কথা –

দুধপথরী

শ্রীনগর থেকে মাত্র ৪৬ কিলোমিটার দূরে বদগম জেলার দুধপথরী জায়গাটি কাশ্মীরের পর্যটন মানচিত্রে নতুন সংযোজন। ৮৯৬০ ফুট উচ্চতার দুধপথরীতে রয়েছে পাইন বনে ঘেরা বিস্তীর্ণ বুগিয়াল। সেখানে চরে বেড়ায় ভেড়ার পাল। তরতরিয়ে বয়ে চলে এক নদী। ছোটবেলায় দেখা ছবির বই থেকে উঠে আসা একটা মন ভালো করে দেওয়া ছবি যেন দুধপথরী। মাউন্ট তাতাকুটি ট্রেকিং শরু হয় এই দুধপথরী থেকেই।

শীতের দুধপথরী বরফে বরফে সাদা। সবুজের লাবণ্যে ডুব দিতে চাইলে মে থেকে নভেম্বর দুধপথরী ভ্রমণের সেরা সময়।

যাওয়ার পথ

 শ্রীনগর থেকে গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি দুধপথরী পৌঁছানো যায়। শ্রীনগরের লালচক থেকে বাদগাম যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। বাদ্গাম থেকে গাড়িতে খানসাহিব হয়ে দুধপথরী চলে যাওয়া যাবে।

থাকার ব্যবস্থা

দিনে দিনে দুধপথরী বেড়িয়ে শ্রীনগর ফিরে আসা যায়। রাত্রিবাসের জন্য দুধপথরীতে রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর পর্যটনের ইগলু হাট।

নীলনাগ

৮৯০০ ফুট উচ্চতায় পাইনবনে ঘেরা বিশাল ঘাসের প্রান্তর। সেখানে কত বুনোফুল। পিছনে তুষারাবৃত সব পর্বতশৃঙ্গ। সবুজ প্রান্তরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে দুধগঙ্গা নদী। সবুজ প্রান্তরের ওপর দিয়ে খানিকটা হেঁটে গেলে আপনি পৌঁছাবেন টলটলে জলের এক হ্রদের কিনারে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে সেই হ্রদের জলের রং আশ্চর্য রকমের নীল। ভূস্বর্গ কাশ্মীরের অপরূপ সৌন্দর্য প্রতিফলিত হয় নীলনাগ হ্রদের জলে। হ্রদের তীরে বসুন। ডুবে যাবেন প্রাণ জুড়োনো সৌন্দর্যের মধ্যে।

 

যাওয়ার পথ

শ্রীনগর থেকে নীলনাগ ৪৭ কিলোমিটার। গাড়ি ভাড়া করে চলে যাওয়া যায়। যুসমার্গ গিয়ে নীলনাগ বেড়িয়ে না এলে পরে আপশোস হবে। যুসমার্গ থেকে নীলনাগ মাত্র ৪ কিলোমিটার। ছোট একটা ট্রেক করে চলে যাওয়া যায় নীলনাগে। চাইলে দিনে দিনেই শ্রীনগর থেকে নীলনাগ বেড়িয়ে আসা যায়।

থাকার ব্যবস্থা

থাকার ব্যবস্থা যুসমার্গে। যুসমার্গ রিসর্ট(জম্মু-কাশ্মীর পর্যটন উন্নয়ন নিগমের হোটেল), ফোনঃ ০১৯৪-২৫০২২৭৪, ০১৯১-২৫৪৯০৬৫। হোটেল কংপোশ। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করবেন জম্মু-কাশ্মীর পর্যটন উন্নয়ন নিগমের আগের নম্বর দুটিতেই। শ্রীনগরে থেকে দিনে দিনেই নীলনাগ থেকে বেড়িয়ে আসা যায়।

কোকেরনাগ

শ্রীনগর থেকে ৭৬ কিলোমিটার। কোকেরনাগ উপত্যকায় একত্রিত হয়েছে প্রকৃতির নানা আঙ্গিক। চির, পাইনের বন, যত্রতত্র ফুল, পাহাড়ের উপর থেকে বয়ে আসা অনেকগুলো জলধারা, পহাড়ের ধাপে যত্ন করে তৈরি চমৎকার বাগান, এ সব নিয়ে ৬৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কোকেরনাগ এক জাদুকরী সৌন্দর্যের নাম। কোকেরনাগের পাহাড়ি জলধারাগুলিতে ট্রাউট মাছ পাওয়া যায়। ট্রাউটের চাষও হয় এখানে। রামধনু রঙা ট্রাউট, বাদামী ট্রাউটও পাওয়া যায় এখানে। আছে একটি প্রাকৃতিক প্রস্রবন। তার জল অত্যন্ত স্বাস্থকর। এই জলের টানে প্রচুর পর্যটক ছুটে আসেন কোকেরনাগে। কোকেরনাগের কাছাকাছি আরেক পর্যটনকেন্দ্র দকসুম। একই যাত্রায় ভূস্বর্গের ছবির দেশ থেকে বেড়িয়ে আসা যায়।

যাওয়ার পথ

শ্রীনগর থেকে শেয়ার জিপে অনন্তনাগ পৌঁছে সেখান থেকে আরেকটি শেয়ার জিপে কোকেরনাগে চলে আসা যায়। অনন্তনাগ থেকে কোকেরনাগ -এর দূরত্ব হলো প্রায়  ১০ কিলোমিটার।

থাকার ব্যবস্থা

কোকেরনাগ রিসর্ট (জম্মু-কাশ্মীর পর্যটন উন্নয়ন নিগমের হোটেল), ফোনঃ ০১৯৪-২৫০২২৭৪, ০১৯১-২৫৪৯০৬৫। এখানে যোগাযোগ করে আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

দকসুম

শ্রীনগর থেকে ৮৫ কিলোমিটার। গাড়িতে ২ থেকে আড়াই ঘন্টার পথ। অনন্তনাগ থেকে ৪২ কিলোমিটার। পৌঁছে যাওয়া যায় ৮৫০০ ফুট উচ্চতায় এক স্বর্গরাজ্য দকসুমে। পীরপাঞ্জাল পর্বতমালা, কনিফারাস বৃক্ষের জঙ্গল, তৃণভূমি, ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা কিছু কুটির, আর ভৃঙ্গী নদীর বয়ে চলার শব্দ। এই সব নিয়েই দকসুম। কাশ্মীরের এক অনিন্দ্যসুন্দর অফবিট ভ্রমণ ঠিকানা।

নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি শীতের মরশুম। তখন বরফে মোড়া দকসুমের আরেক রূপ। গাছের ডাল থেকে ঝোলে বরফের শিকল। এপ্রিল থেকে জুন গ্রীষ্ম। তখন দকসুমের আবহাওয়া আরামদায়ক। ট্রেকিং, ক্যাম্পিংয়ের আদর্শ সময়। দকসুম থেকে নানা পথে ট্রেক করা যায়। এরপর বর্ষা। বৃষ্টিস্নাত দকসুমের তখন আরেক রূপ। ভৃঙ্গী নদীর চঞ্চল রূপটি প্রত্যক্ষ করা যায় এই বর্ষার মরশুমেই। ভৃঙ্গীর জলে ছিপ ফেলে মাছ ধরা যায়। ভৃঙ্গী নদীতে প্রচুর ট্রাউট মাছের বিচরণ।

দকসুম থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ১১২০০ ফুট উচ্চতায় সিন্থন টপ যাওয়া যায়। ব্রেং ভ্যালিকে কাশ্মীরের ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বলা হয়। ব্রেং ভ্যালির দক্ষিণ-পূর্বে সিন্থন টপের অবস্থান। সিন্থন টপ থেকে কাশ্মীর ও জম্মুর বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাখির চোখে দেখা যায়। শীতে সিন্থন টপে যাওয়ার পথ বন্ধ থাকে, তখন দকসুম পর্যন্ত যাওয়া যাবে।

যাওয়ার পথ

শ্রীনগর থেকে দকসুম ৮৫ কিলোমিটার। শ্রীনগর থেকে দকসুম যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি, প্রাইভেট কার, বাস পাওয়া যাবে। কাছের রেলস্টেশন হলো অনন্তনাগ।

থাকার ব্যবস্থা

প্যারাডাইস রিট্রিট, দকসুম, ফোনঃ ০৯৭৯৭৯-৬৫৭৮৬। কয়েকটি ডিলাক্স হোটেলও আছে এখানে।

ওয়ারওয়ান ভ্যালি

কাশ্মীর ও লাদাখের মধ্যে কাশ্মীরের কিস্তওয়ার জেলায় ওয়ারওয়ান ভ্যালির অবস্থান। লাদাখের জাঁসকর ভ্যালির সঙ্গে যোগ রয়েছে ওয়ারওয়ান উপত্যকার। কানিতাল পাসের মধ্যে দিয়ে সেই যোগাযোগ। দৈর্ঘ্যে ৩০ কিলোমিটার ও প্রস্থে ৩ কিলোমিটার ওয়ারওয়ান উপত্যকার গড় উচ্চতা ৮৫০০ ফুট। পাহাড়ে ঘেরা এই উপত্যকায় রয়েছে দারুণ সব জলপ্রপাত, সবুজ কার্পেটের মতো পশুচারণ ভূমি, প্রাচীন সব সেডার বৃক্ষ, নদী, বুনো ফুলের ঝাড়, চাষের খেত। ওয়ারওয়ান নদীর দুই পারে রয়েছে কয়েকটি গ্রাম। নিভৃত উপত্যকার বিষ্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঞ্চলিক অধিবাসীদের জীবন-চিত্র চাক্ষুষ করতে পারাটাও ওয়ারওয়ান ভ্যালি ভ্রমণের এক বিশেষ পাওনা।

ওয়ারওয়ান ভ্যালি ট্রেকারদের কাছেও স্বর্গরাজ্য। এখান থেকে মারোয়া ভ্যালি হয়ে সিন্থন টপ, সুখনাই-কানিতাল-জাঁসকর ট্রেক করা যায়। কানিতালের ১৩০০০ ফুট উচ্চতায় রয়েছে কাশ্মীরের অন্যতম বৃহৎ হিমবাহ। ওয়ারওয়ান উপত্যকার শেষ গ্রাম সুখনাই। এখান থেকে কানিতাল হিমবাহ ২০ কিলোমিটার।

যাওয়ার পথ

শ্রীনগর থেকে ওয়ারওয়ান ভ্যালির প্রবেশদ্বার ইনশান গ্রামের দূরত্ব ১২৪ কিলোমিটার। অনন্তনাগ থেকে ইনশান গ্রাম ৫০ কিলোমিটার। শ্রীনগর থেকে অনন্তনাগ ৫৯ কিলোমিটার। যাওয়া যায় গোটা গাড়ি ভাড়া করে বা শেয়ার জিপে। কোকেরনাগ থেকে গাড়িতে ওয়ারওয়ান পৌঁছাতে ঘন্টা চারেক সময় লাগে। দকসুম থেকে ওয়ারওয়ান ৬৮ কিলোমিটার।

থাকার ব্যবস্থা

ওয়ারওয়ান ভ্যালির গ্রামগুলিতে কিছু হোমস্টে রয়েছে। গ্রামের মানুষজন খুবই অতিথিপরায়ণ। তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ‘ওয়ারওয়ান ভ্যালি ইকো টুরিস্ট সোসাইটি’র সঙ্গে, এই নম্বরেঃ ০৬০০৫৭-০৯৪৮৮।

তথ্যের জন্য দেখতে পারেন জম্মু-কাশ্মীর পর্যটন উন্নয়নের এই ওয়েবসাইটটিঃ www.jktdc.co.in

জম্মু-কাশ্মীর পর্যটনের কলকাতা অফিসের ঠিকানাঃ ১২, চৌরঙ্গী রোড, কলকাতা-৭০০০১৬। ফোনঃ ০৩৩-২২২৮-৫৭৯১।

ফটোঃ তপন মুখোপাধ্যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *