Follow us
Search
Close this search box.

ভারতের শতবর্ষ পেরনো পাঁচ রেস্তোরাঁ

ভারতের শতবর্ষ পেরনো পাঁচ রেস্তোরাঁ

রেস্তোরাঁ যখন খাদ্য-ঐতিহ্যের সংরক্ষক। রেস্তোরাঁ যখন ইতিহাস ও বর্তমানের মেলবন্ধন। রেস্তোরাঁ যখন কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। রেস্তোরাঁ যখন খাদ্যের রূপ, রস, বর্ণ, আঘ্রাণের উদযাপন। পুরনো হয়েও নতুন এমন পাঁচটি রেস্তোরাঁর কথা। তোর্সা ডট ইন প্রতিনিধির প্রতিবেদন।

লিওপোল্ড কাফে, মুম্বই

দেওয়ালে বুলেটের ক্ষতগুলো রয়ে গিয়েছে। রেখে দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে মুম্বইয়ে সন্ত্রাসীদের অটোমেটিক রাইফেল থেকে ছুটে আসা গুলির চিহ্ন ওগুলো। আজমল কাসভ ও তার দলবলের অকস্মাৎ হানায় মুম্বইয়ের কোলবা এলাকায় লিওপোল্ড কাফের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল কিছু নিরীহ মানুষের। ওই চিহ্নগুলো সন্ত্রাসের সেই তাণ্ডবলীলাকে মনে করিয়ে দেয়।

অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই কাফে তথা রেস্তোরাঁট। দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধ, ভারতে স্বাধীনতার উত্তাল আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জন, দেশভাগ, মুম্বইয়ের দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী হয়ে ওঠা, সে এক দীর্ঘ যাত্রা। প্রতিষ্ঠা ১৮৭১ সালে। পেরিয়ে গিয়েছে দেড়শো বছরের বেশি সময়। লিওপোল্ড কাফে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। মুম্বইয়ে গেলে লিওপোল্ড কাফেতে একবার ঢুঁ মারা যেতেই পারে। ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখবেন, ততক্ষণে টেবিলে পরিবেশিত হবে শেফার্ডস পাই, ওয়ালনাট পাই, চিলি মটন, লিওপোল্ড স্পেশাল চিকেন ড্রাই, গোল্ডেন মাশরুম ইত্যাদি।

ঠিকানাঃ লিওপোল্ড কাফে, কোলবা কজওয়ে, অলিম্পিয়া কফি হাউসের বিপরীতে, মুম্বই- ৪০০০০১। ফোনঃ ০২২-২২৮২-৮১৮৫।

করিমস, দিল্লি

সারা রাত ধিকি ধিকি উত্তাপ; সকালে উষ্ণ সেই নিহারি দিয়ে ব্রেকফাস্ট। ঘুরে ফিরে এসে রাতে চিকেন বা মটন জাহাঙ্গিরি দিয়ে ডিনার। ভাবা যায়। যায় তো বটেই। পুরনো দিল্লির করোল বাগ এলাকায় গিয়ে জামা মসজিদের কাছাকাছি কাবাবিয়ান গলি নামের রাস্তাটি খুঁজে বের করুন। আবিষ্কারের মতো মনে হবে প্রথম যাঁরা যাবেন তাঁদের কাছে। করিমস রেস্তোরাঁয় পৌঁছাবেন। ওখানকার খাওয়ার পাতে নতুন করে স্বাদ-আঘ্রাণের আবিষ্কার অবশ্য নিত্যদিনের ঘটনা। মোগলাই খানার ঘরানাটি রক্ষিত হচ্ছে এখানে। শিক কাবাবের রহিসি আঘ্রাণ, মটন কোর্মার বর্ণ সে তো শুধু বলবার কথা নয়। করিমস চালু হয়েছিল ১৯১৩ সালে।

ঠিকানাঃ জামা মসজিদ মেট্রো গেট নম্বর-১, গলি কাবাবিয়ান, জামা মসজিদ, ওল্ড দিল্লি, দিল্লি-১১০০০৬। ফোনঃ ০১১-২৩২৬-৯৮৮০।

টুন্ডে কাবাবি, লখনউ

আওয়াধ বা আউধ রাজ্যটি ব্রিটিশদের অধিকারে আসে ১৮৫৬ সালে। আউধের রাজধানী ছিল ফৈজাবাদ। তবে ইংরেজদের উপস্থিতি, কেল্লা, কার্যালয় ইত্যাদি গড়ে ওঠার কারণে লখনউ ক্রমশ নামী শহর হয়ে উঠল। সে আউধ নেই, সে নবাবও নেই। ওয়াজেদ আলি শাহ আউধের শেষ নবাব। তবে নবাবদের শাসনকালের আউধি খাদ্য-সংস্কৃতির কিছু ঝলক থেকে গিয়েছে।

লখনউয়ের টুন্ডে কাবাবি রেস্তোরাঁটি সেই খাদ্য-সংস্কৃতিকে লালন করে চলেছে। ১৯০৫ সালে লখনউয়ের চক এলাকায় হাজি মুরাদ আলি টুন্ডে কাবাবি রেস্তোরাঁটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনায় ডান হাতটি খুইয়েছিলেন মুরাদ আলি। লোকমুখে তাঁর নাম হয়ে দাঁড়াল ‘টুন্ডে’। প্রকৃতই একজন রন্ধনশিল্পী ছিলেন মানুষটি। নতুন নতুন খাদ্য উদ্ভাবনা ছিল তাঁর বাঁ-হাত কী খেল। লখনউয়ের বিখ্যাত টুন্ডে বা তুন্ডে কাবাব হাজি মুরাদ আলির আরেকটি সৃষ্টি। কাবাব ছিল আগেও। তবে মুখে দিলে গিলে যায় এমন কাবাব, ওই টুন্ডে কাবাব অপামর মানুষের দিল জয় করে নিল।

লখনউয়ের টুন্ডে কাবাবি রেস্তোরাঁয় টুন্ডে কাবাব ছাড়াও পাবেন বিরিয়ানি, জয়কা-এ-মটন, লাজিজ-এ চিকেন ইত্যাদির মতো নবাবি ঘরানার ডিশ। নিরামিষ পদও পাওয়া যাবে।

ঠিকানাঃ টুন্ডে কাবাবি, ওল্ড মির্জাবাদ রোড, আমিনাবাদ, লখনউ-২২৬০১৮। ফোনঃ ০৫২২-৪৩০-৭২২৩।

দোরাবজি অ্যান্ড সনস, পুনে

পুনের এই আইকনিক পার্সি রেস্তোরাঁটির প্রতিষ্ঠা ১৮৭৮ সালে। আকারে ছোট, ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ দোরাবজি অ্যান্ড সনসের ধনসাক ডাল, মটন ধনসাক, চিকেন ফরচা, রেস্তোরাঁর নিজস্ব ঘ্রানার চিকেন কাটলেটের আস্বাদ সুবিদিত। দীর্ঘ লালিত রন্ধনশৈলীর সঙ্গে পরিচয় হবে এখানে।

ঠিকানাঃ দোরাবজি অ্যান্ড সনস, শপ-৮৪৫, দস্তুর মেহের রোড, ক্যাম্প এরিয়া, পুনে, মহারাষ্ট্র-৪১১০০১। ফোনঃ ০২০-২৬১৪-৫৯৫৫।

গ্লেনারিজ, দার্জিলিং

ঔপনিবেশিক আমলের দার্জিলিংয়ের সাহেবি খানা-বাহারের একটা আঁচ পাওয়া যায় দার্জিলিং মলের কাছে অবস্থিত এই রেঁস্তোরাটিতে। সেট আপে চোখ ধাঁধাঁনোর মারকাটারি চেষ্টা নেই। ঐতিহ্যের সম্ভ্রমটি বজায় থাকে শতবর্ষ পেরনো রেস্তোরাঁর আনাচে কানাচেও। চিকেন হ্যামবার্গার স্টেক, ফিস অউ গ্রাটিন, বেকড চিজ ম্যাকরনি, হট চকোলেট হিমশৈলর চূড়া মাত্র। খাদ্যে যাঁরা ইতিহাস, সংস্কৃতির খোঁজে থাকেন তাঁতের একবার গ্লেনারিজে যেতেই হয়। বর্তমানে কাফে, বেকারি ও বার নিয়ে সামগ্রিক গ্লেনারিজ। কন্টিনেন্টাল, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান ঘরানার রকমারি খাদ্যের সম্ভার পাবেন এখানে।

ঠিকানাঃ নেহরু রোড (ক্লক টাওয়ারের কাছে), চক বাজার, দার্জিলিং-৭৩৪১০১। ফোনঃ ৯৬৩৫১ ৬২০০৫।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *