সবুজ পাহাড়ে ঘেরা বিশাল এক লেক। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকে সুবর্ণরেখা নদীর অববাহিকায় খয়রাবেরা এলাকায় ইরিগেশন ড্যাম তৈরির কারণে একেবারে প্রকৃতির কোলে জন্ম নিয়েছে অপরূপ এই সরোবরটি। খয়রাবেরায় লেক নামেই পরিচিত। বর্ষায় টলটলে জলের সেই হ্রদে আলোর কত রং। শীতে নীল আকাশের নীচে পাহাড়-জঙ্গল, লেক। সবুজের ছায়া পড়ে জলে। চাঁদনী রাতে সমগ্র পরিবেশ মোহময়। আশ্চর্য হয়ে দেখতে হয় রাতের খয়রাবেড়ার তারাভরা আকাশ। স্পষ্ট দেখবেন আকাশগঙ্গা বা মিল্কি ওয়ে। বসন্তের খয়রাবেরায় পলাশের সাজ দেখে অবাক হতে হয়।
হ্রদের পাশেই অযোধ্যা রেঞ্জের এবং বাররা পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে হাতি চলাচলের রাস্তা। পাহাড়ি জঙ্গল থেকে রাতে কখনো কখনো হরিণ, হায়নার ডাক ভেসে আসে।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে হ্রদের তীরে খয়রাবেড়া ইকো অ্যাডভেঞ্চার রিসর্ট। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাযুক্ত কটেজ ও টেন্টে থাকার ব্যবস্থা। টেন্ট-বাসে বেশ রোমাঞ্চের স্বাদ পাওয়া যায়। রিসর্টে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের নানা আয়োজন রয়েছে । ট্রেকিং, কায়াকিং, মাউন্টেন বাইসাইক্লিং, অ্যঙ্গলিং, আর্চারি প্রভৃতির মতো রোমাঞ্চকর খেলাধূলায় অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে রিসর্টের ব্যবস্থাপনায়। অতিথিদের নির্দেশ মতো আয়োজিত হয় ক্যাম্পফায়ার, বারবিকিউ, ছৌ নাচ।
প্রিয়া এন্টারটেনমেন্টস প্রাইভেট সংস্থার একটি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উদ্যোগ খয়রাবেরা ইকো অ্যাডভেঞ্চার রিসর্ট। ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘ছুটি’, ‘হাটে বাজারে’, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’-র মতো প্রবাদপ্রতিম সব ছবি প্রযোজনা করেছে প্রিয়া এন্টারটেনমেন্টস। পর্যটনের ক্ষেত্রেও সেই পরিশীলিত রুচির ছাপ রাখতে চাইছে সংস্থা। খয়রাবেরার ইকো অ্যাডভেঞ্চার রিসর্ট ছাড়াও সিকিমের টেমি চা-বাগানের ১৭৫ বছরের হেরিটেজ বাংলোটিও এই সংস্থার পরিচালনাধীন।
ট্রেক করে ওঠা যায় চেমটো পাহাড়ে। তবে শীতের মরশুমেই এই উদ্যোগটি নেওয়া ভালো। খয়রাবেরা ড্যামের কাছেই ঝিলিং শিলিং পাহাড়। এই পাহাড়ে রয়েছে আদিবাসীদের বসতি। এরকম কোনও পাহাড়ি গ্রামে গিয়ে আদিবাসীদের জীবনযাপন দেখা যায়। দারিদ্র, কঠিন জীবনযাপনের মধ্যেও মানুষগুলোর শিল্পীসত্ত্বার পরিচয় পাওয়া যায়। স্বল্প পরিসর কুটিরের দেওয়ালে প্রকৃতি আর জীবনচর্চা বিষরে স্বতঃপ্রণোদিত ছবি শহুরে মানুষের কাছে ভাববার বিষয় বৈ কী। খয়রাবেরায় থেকেই আযোধ্যা পাহাড় অঞ্চলটি বেড়িয়ে নেওয়া যায়।
খাদ্য উপকরন হিসেবে পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি এলাকার পাঁঠা বা অযোধ্যা পাহাড় এলাকার মুরগির মাংসের সুনাম আছে। সরবরাহ পাবেন খাওয়ার টেবিলে। রিসর্টের বাগানে জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত সব্জি ব্যবহৃত হয় কিচেনে। পুরুলিয়ার ঘরানায় তৈরি পোস্তর বড়া, অনবদ্য স্বাদের তেল-কইয়ের সুনাম তৈরি হয়েছে।
যাওয়ার পথ
খয়রাবেড়ার নিকটতম রেল স্টেশন বরাভূম। লালমাটি এক্সপ্রেস, হাওড়া-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, ক্রীড়াযোগ এক্সপ্রেস ,হাওড়া-চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার হাওড়া থেকে ছেড়ে বরাভূম যায়। খয়রাবেড়ার ইকো এডভেঞ্চার রিসর্টের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। পুরুলিয়া শহর থেকে রিসর্টের দূরত্ব ৬৭ কিলোমিটার। উভয় জায়গা থেকেই প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে রিসর্টে আসা যাবে। রিসর্ট থেকেও নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
খয়রাবেড়ার ইকো এডভেঞ্চার রিসর্টে থাকার জন্য রয়েছে আধুনিক সমস্ত সুবিধাযুক্ত দ্বিশয্যার এসি কটেজ এবং স্ট্যান্ডার্ড, সুপিরিয়র ও ডিলাক্স টেন্ট। ভাড়াঃ কটেজ ৭,৯৯৯ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড টেন্ট ৭,৯৯৯ টাকা, সুপিরিয়র টেন্ট ৮,৯৯৯, ডিলাক্স টেন্ট ১০,৫০০ টাকা। সঙ্গে যুক্ত হবে ট্যাক্স। সবক্ষেত্রেই ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি।
যোগাযোগের নম্বর: ৯৮৩০১৬৯৬৯৪ , ৯৮৩০১৯৯৩৩৫ (ইকো অ্যাডভেঞ্চার রিসর্ট)।