Follow us
Search
Close this search box.

কাশ্মীর: পহলগাম থেকে দকসুম ও সিন্থন টপ

কাশ্মীর: পহলগাম থেকে দকসুম ও সিন্থন টপ

আজ ৭ এপ্রিল (২০২৩)। পহলগাম থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় রওনা দিলাম দকসুমের উদ্দেশে। পথে মার্তণ্ড মন্দির দেখে নেব। বছর দুয়েক আগেও দকসুম ছিল কাশ্মীরের প্রায় অচেনা এক ঠিকানা। এখন অনেকেই দকসুমে যাচ্ছেন। ৮,৫০০ ফুট উচ্চতার অফবিট দকসুম কাশ্মীর উপত্যকার আরেকটি অনন্য ছবি।

পহলগাম থেকে দকসুম ৭৮ কিলোমিটার। শ্রীনগর থেকে ৯৮ কিলোমিটার। পথে মার্তণ্ড মন্দির চত্বরের কাছে গাড়ি থামল। অনন্তনাগ শহরের কাছাকাছি এই মন্দিরচত্বরটি। সংস্কৃতে সূর্যের আরেক নাম মার্তণ্ড। সূর্যদেবের মন্দির রয়েছে এখানে। কাশ্মীরের ইতিহাসকার কহ্লণের ভাষ্য অনুসারে কারকোটা বংশের রাজা ললিতাদিত্য মুক্তপিদার শাসনকালে, অষ্টম শতকে মার্তণ্ড মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল। দেবতা সূর্য ছাড়াও এখানে রয়েছে দুর্গা মন্দির, শিব-পার্বতী মন্দির, গণেশ মন্দির, রাম দরবার।

মার্তণ্ড মন্দির চত্বর।

মার্তণ্ড মন্দির দেখে এগিয়ে চলা। পথে পড়ল অছাবল। এখানে একটি প্রাচীন পস্রবণকে ঘিরে সেই মুঘল আমলেই গড়ে উঠেছিল সুন্দর একটি উদ্যান। কাশ্মীরের আরেকটি মুঘল গার্ডেন এটি। মুঘল সম্রাজ্ঞী নুর জাহানের প্রিয় জায়গা ছিল অছাবল। পথের ধারে ধারে আপেলের বাগিচাগুলোতে ফুলের মেলা। আপেল ফুল। দূরে পীরপঞ্জাল পর্বতশ্রেণি। রাস্তার সৌন্দর্য প্রাণ মাতিয়ে দেয়।

বেলা ১টা নাগাদ দকসুমে পৌঁছালাম। পীরপঞ্জালের পাহাড়ের সারি, আশ্চর্য সবুজ কনিফারের অরণ্য, পশুচারণ ভূমি, ভৃঙ্গি নদীর প্রবাহ, সবমিলিয়ে দকসুম এক অপরুপ ছবি। ভৃঙ্গির কুলকুল ধ্বনি যেন দকসুমের আবহসঙ্গীত। ভৃঙ্গি নদীতে প্রচুর ট্রাউট মাছ পাওয়া যায়। মৎস শিকারে আগ্রহীরা ছিপ নিয়ে ট্রাউট শিকারে বসে পড়তে পারেন। হাতে সময় থাকলে অবশ্যই। সরঞ্জামের জোগান পাওয়া যাবে দকসুমে।

লেখকের কাশ্মীর সিরিজের কাশ্মীরঃ পহলগাম থেকে আরু হয়ে বেতাব ভ্যালি শীর্ষক লেখাটি পড়তে পারেন এই লিঙ্কেঃ https://torsa.in/”>https://torsa.in/aru-and-betab-valley-from-pahalgam/

আমাদের পহলগাম থেকে আসা গাড়ি রইল বিশ্রামে। আঞ্চলিক নিয়ম অনুসারে দকসুম থেকে অন্য গাড়ি ভাড়া করতে হল। যাব সিন্থন টপ। উচ্চতা ১২,৪১৪ ফুট। দকসুম থেকে সিন্থন টপ ৩০ কিলোমিটার। গাড়ি ছাড়ল। রাস্তার দু’পাশে রাশিরাশি বরফ। মাঝখানের কালো পিচ রাস্তা। প্রতিটি বাঁকের আড়াল থেকে ভেসে উঠতে থকল নতুন নতুন দৃশ্য। উন্মোচিত হতে থাকল কাশ্মীর উপত্যকার অন্দরমহল।

দকসুমে সস্ত্রীক লেখক।

দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার ব্রেং উপত্যকা এবং চেনাব উপত্যকার কিস্তওয়ার জেলার মধ্যে অবস্থিত সিন্থন টপ। এ পথ একটি পাসও বটে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সিন্থন টপে যাওয়ার সেরা সময়। বছরের বাকি সময় সিন্থন টপ ও সেখানে যাওয়ার পথ বরফে বরফে দুরুহ হয়ে ওঠে। শীতের মরসুমে রাস্তা বন্ধ থাকে। শ্রীনগর থেকে সিন্থন টপ সাড়ে ৩ ঘন্টা। পহলগাম থেকে আড়াই ঘন্টার যাত্রা।

সিন্থন টপ।

পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে সে এক আশ্চর্য পথ। কোথাও কোথাও রাস্তার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে বরফগলা জলের ধারা। প্রথম দিকে অ্যালপাইন অরণ্যে ছাওয়া পাহাড়ের সব ঢাল। নীচে দেখা যায় অপূর্ব সব উপত্যকা। তারপর অরণ্যের বিস্তার কমতে থাকল। পথ চলেছে শ্যাওলা রঙের পাহাড়সারির মধ্যে দিয়ে। গভীর সব খাদের পাশ দিয়ে। কোথাও কোথাও মনে হচ্ছিল, সামনের পথ যেন আকাশে মিশে গেছে। তারপর আরেকটি বাঁক। এমন পথ ধরে সিন্থন টপে উঠে আসা। পাহাড় আর উপত্যকার বিস্তার চতুর্দিকে। খানিকক্ষণ ছিলাম সিন্থন টপে।

সিন্থন টপের রাস্তা।

তারপর নেমে আসা। সিন্থন টপ থেকে নেমে এলাম দকসুমে বেলা ৩টে নাগাদ। লাঞ্চ হল। দকসুমের পার্কে খানিক ঘোরাঘুরি হল। দকসুমে থাকার ভালো জায়গা দকসুম রিট্রিট (ফোনঃ ৭০০৬৯ ৪৬৪৬২)। আমরা দকসুমে থাকিনি। পহলগামে ফিরে এসেছিলাম। ফেরবার পথে কোকেরনাগে যাত্রাবিরতি হয়েছিল।এখানে সুন্দর একটি ঝর্ণা আছে। মূল ঝর্ণা থেকে মুরগির পায়ের আঙুলের মতো কয়েকটি ধারা বয়ে চলেছে। কাশ্মীরি ‘কোকের’ কথাটির অর্থ মুরগি। ঝর্ণা-সংলগ্ন পার্কটিও খুব সুন্দর।

কোকেরনাগ পার্ক।

আজও আমাদের রাত্রিবাস পহলগামে। কাল সকালে শ্রীনগরের উদ্দেশে যাত্রা করব। টিউলিপ গার্ডেন দেখে যাঁরা পহলগামে এসেছেন তাঁরা উচ্ছ্বসিত। আমরা কাল যাব জবরওয়ান পর্বতের পাদদেশে টিউলিপের বাগিচায়। পরশু গুলমার্গ যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

পহলগাম পৌঁছালাম সন্ধ্যার মুখে। গাড়ি থেকে নামতেই লিডার নদীর দিক থেকে বয়ে আসা এক পশলা ঠান্ডা বাতাসে হাড়গোড় কেঁপে গেল। হুড়মুড়িয়ে হোটেলের ঘেরাটোপে ঢুকে পড়লাম। এক কাপ গরম চা দরকার এখন।

হেডার ফটোঃ গ্রেটার কাশ্মীর।
অন্য সবক’টি ফটোঃ লেখক।

পরের পর্বে শ্রীনগর ও গুলমার্গ বেড়ানোর কথা –

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *