Follow us
Search
Close this search box.

ক্রিসমাসের বো ব্যারাকস, নিউ মার্কেট, পার্ক স্ট্রিট

ক্রিসমাসের বো ব্যারাকস, নিউ মার্কেট, পার্ক স্ট্রিট

বো ব্যারাকসের নিজস্ব কার্নিভাল

বৌবাজারের পিছন দিকে, আরও নির্দিষ্ট করে বলতে হলে বৌবাজার পুলিশ স্টেশনের পিছনে (সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ বা এখনকার চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউ থেকে একটু ভিতরে ঢুকতে হয়) কলকাতার পুরনো অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পাড়া বো ব্যারাকস। নিউ মার্কেট এলাকা থেকে বো ব্যারাকের দূরত্ব ২ কিলোমিটারের কম। ক্রিসমাসে উৎসবমুখর বো ব্যারাকে একবার ঢুঁ মারতে পারলে এক অন্য অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া যায়। বৌ-বাজারের ‘বৌ’ শব্দটি ইংরেজদের মুখে হয়েছিল ‘বো’। পুরনো হয়ে যাওয়া লাল রংয়ের ক’টি বাড়ি। এক সময় বাড়িগুলো ছিল ব্রিটিশ সেনা ব্যারাক। তৈরি হয়েছিল ১৯১৮ সালে। হাওড়া স্টেশনের স্থপতি হলসে রিকার্ডো বো ব্যারাকের নকশা তৈরি করেছিলেন। স্থাপত্যে স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শহর তৈরির প্রভাব লক্ষ্য করা যায় বলে বিদ্বজ্জনেরা মনে করেন।

১০০ বছর পেরিয়ে গেছে বাড়িগুলোর। রং চটেছে। চৌক আকারের বাড়ি, গাঢ় সবুজ রংয়ের দরজা-জানলা। বাড়িগুলিতে মূলত অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। ব্রিটিশদের পরিত্যাগের পর থেকেই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবারগুলো বসবাস করছে এই বাড়িগুলিতে। কিছু খ্রিস্টান চিনা, অল্প কিছু খ্রিস্টান বাঙালি ও পার্সি সম্প্রদায়ের মানুষও বসবাস করেন বো ব্যারাকস এলাকায়।

পুরনো এলাকা, পুরনো বাড়িঘর, পুরনো রাস্তা, গলি ইত্যাদি এই ক্রিসমাসের সময়টায় যেন কোন এক জাদুবলে পাল্টে যায়। রঙিন আলো, ক্রিসমাস ট্রি, জিঙ্গল বেলের সুর, খাদ্য-পানীয়ের পসরা নিয়ে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বো ব্যারাকস জমজমাট। উৎসব চলে পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত।

বো ব্যারাকস রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সচিব অ্যাঞ্জেলা গোবিন্দরাজ জানাচ্ছেন, বিধ্বংসী কোভিড পর্বের পরে এ বছরই বো ব্যারাকসের ক্রিসমাস উৎসব তার প্রচলিত ছন্দে ফিরছে। থাকবে নানা অনষ্ঠান।

বো ব্যারাকসেরে কিছু পরিবারে নিজস্ব ঘরানায় ওয়াইন তৈরি করে এ সময়ে। কিনতেও পাওয়া যায়। বো ব্যারাকসের ঘরে তৈরি কেকে থাকে দীর্ঘ ঐতিহ্যের ছোঁয়া। অন্য স্বাদ। ভিন্নতর ঘ্রাণ। ঠিক দোকান থেকে কেনা কেকের মতো নয়। এ সময়ে কিনতে পাওয়া যাবে। খাদ্যরসিকদের জন্য থাকবে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান নানা পদ।

বো ব্যারাকসে সান্তা আসেন হাতে টানা রিক্সায় চড়ে। পাড়ার ছেলেপেলেরা রিকশা টানে। বো ব্যারাকসের নতুন প্রজন্মের অনেকেই অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ইউরোপে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই ক্রিসমাস পালন করতে বো ব্যারাকসে ফেরেন।

একটা এলাকা জুড়ে ছড়ানো ক্রিসমাসের ঐতিহ্যের উৎসবের সাক্ষী থাকতে হলে বো ব্যারাকসে একবার ঢুঁ তো মারতেই হয়। বো ব্যারাকস তার নিজের মতো করে ক্রিসমাস কার্নিভাল আয়োজন করে।

নিউ মার্কেটে পাম কেকের আঘ্রাণ

ব্রিটিশ আমলের সাহেবদের বাজার হগ মার্কেট তথা এখনকার নিউ মার্কেটের উত্তরের প্রবেশদ্বার এলাকাটা (পাশের রাস্তা ঢুকে গেছে জানবাজারে) এই ক্রিসমাসের সময়ে কেকের মিষ্টি আঘ্রাণে ভুরভুর করে। আঞ্চলিক বেকারিতে তৈরি হরেক কেক পাওয়া যাবে এখানে। সন্ধ্যায় পাওয়া যাবে হাতে গরম কেক।

বাজারের মধ্যে খানিকটা ঢুকলে ১২০ বছরের পুরনো, ব্রিটিশ রাজ আমলে প্রতিষ্ঠিত ইহুদি বেকারি নাহুম অ্যান্ড সন্সের পুরনো বনেদি কাউন্টারের সামনে রসিক খদ্দেরদের লাইন এ সময়ের চেনা দৃশ্য। পাম কেক, প্যাস্ট্রি, ব্রাউনি, কুকিজের সুগন্ধ আর নস্টালজিয়া মিলেমিশে একাকার এখানে। নাহুম অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড কনফেকসার্সের ফোন নম্বরঃ ০৩৩-২২৫২-০৬৫৫।

সাদা চামড়ার ক্রেতাদের জন্য গথিক স্থাপত্যে তৈরি বাজারটি খুলে দেওয়া হয়েছিল ১৮৭৪ সালের ১ জানুয়ারি। পরে মার্কেট কমপ্লেক্সের নাম হয় স্যার স্টুয়ার্ট হগ মার্কেট। সংক্ষেপে হগ মার্কেট। হগ মার্কেট তথা নিউ মার্কেট কলকাতার প্রথম পুরসভা নিয়ন্ত্রিত বাজার। হগ সাহেব তৎকালীন ক্যালকাটা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যন ছিলেন।

নিউ মার্কেট সংলগ্ন সাদার স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের হোটেলগুলো ক্রিসমাসে জমজমাট। রাস্তায় বিদেশীদের জটলা। সন্ধ্যায় কোথাও বা গিটার-সহযোগে তাঁদের গান, আড্ডার আসর চোখে পড়বে এ সময়। নিউ মার্কেটের পিছনে সাদার স্ট্রিটের (ফায়ার ব্রিগেডের সদরদপ্তরের কাছে) রাজস স্প্যানিশ কাফে (৭, সাদার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০১৬) এখন কলকাতায় বেড়াতে আসা বিদেশীদের কাছে প্রিয় আড্ডার জায়গা। স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, মেক্সিকান, আমেরিকান, ইংলিশ খাবারদাবার পাওয়া যায় এখানে। রাজস স্প্যানিশ কাফের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরঃ ০৩৩-২২৫২-৩৪৫৬।

উচ্ছল পার্ক স্ট্রিট

ক্রিসমাসের আবহে ঝকমকে পার্ক স্ট্রিটের জনস্রোতে একবার গা ভাসাতে না পারলে চলে না। ২০১১ সাল থেকে পার্ক স্ট্রিটে ক্রিসমাস কার্নিভাল আয়োজিত হচ্ছে (কোভিডকাল ছাড়া) বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা সহ। উৎসবের মূল কেন্দ্র পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্ক। এ বছর কার্নিভাল শুরুর ঘন্টা বাজবে ২১ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টেয়। কার্নিভাল বা উৎসব চলবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মাঝে ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর অ্যালেন পার্ক বন্ধ থাকবে। তবে তাতে পার্ক স্ট্রিটের ঝকমকানির খামতি থাকবে না। কাছেই সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চ।

ওই ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর ছাড়া অ্যালেন পার্কে থাকবে নানা অনুষ্ঠান। রাতে সঙ্গীতানুষ্ঠান। আশেপাশে বসবাসকারী অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, পার্সি ও চিনা পরিবারগুলির তৈরি রকমারি খাদ্যের পসরা বিশেষ আকর্ষন। অঞ্চলিক বেকারির কেক, কুকিজের আঘ্রাণে আমোদিত হয় অ্যালেন পার্ক। সান্তা ক্যাপ, ডেভিলস হর্ন বিকোয় দেদার।

ফ্লুরিজে ( Flurys) (১৮ পার্ক স্ট্রিট, ফোনঃ 98313 71927) ব্রেকফাস্ট দিয়ে শুরু করে দিনভর ক্রিসমাসের কলকাতা বেড়িয়ে রাতে মোকাম্বো (২৫ বি, মির্জা গালিব স্ট্রিট, তালতলা, কলকাতা-১৬ ফোনঃ 033 2229 0095) বা ট্রিঙ্কাস ( ১৭, পার্ক স্ট্রিট, কলকাতা-১৬, ফোনঃ 82402 59201) বা কোয়ালিটি ( ১৭, পার্ক স্ট্রিট, কলকাতা-১৬, ফোনঃ 98310 90898) বা অন্যত্র ডিনারের মধ্যে দিয়ে দিনের শেষ, সে এক রহিসি উদযাপন বটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *