ভারতে শীতের মরশুম মানে উৎসবের মরশুম। দেশের নানা প্রান্তে আয়োজিত হয় উৎসব, মেলা। গত বছর সেইসব উৎসব আয়োজনায় বাধ সেধেছিল কোভিড। মহামারীর কবল থেকে এখনো মুক্ত নই আমরা। নতুন স্ট্রেনের আবির্ভাবও ঘটেছে। তবে জীবন বন্দিত্ব মানে না। বছরশেষে উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সাবধানতা অবলম্বনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আশাবাদীও হই।
বিষ্ণুপুর মেলা
শীতে বিষ্ণুপুর চমৎকার। বাঁকুড়ার হিমেল আবহে মিঠে রোদ্দুর গায়ে মেখে টেরাকোটা মন্দিরগুলো ঘুরে দেখার মজাই আলাদা। আর সময়টা যদি হয় ডিসেম্বরের শেষ দিকটা, তবে তো একেবারে উৎসবমুখর বিষ্ণুপুরের মধ্যে গিয়ে পড়া। এ সময়টায় বিষ্ণুপুরে আয়োজিত হয় বিরাট মেলা। বিষ্ণুপুর উৎসব। এবছর ৩৪তম বিষ্ণুপুর মেলা আয়োজিত হবে ২৩-২৭ ডিসেম্বর। মেলার মূল কেন্দ্রটি থাকবে বিষ্ণুপুর হাইস্কুল ও কে জি ই আই চত্বরে।
বিষ্ণুপুর ঘরানার সঙ্গীত ও নৃত্য, লোকনৃত্য, রাঢ়বঙ্গের হস্তশিল্পের প্রদর্শনী, নানা প্রতিযোগিতা আর মেলার উচছলতা নিয়ে বিষ্ণুপুর মেলা ও উৎসব ওই শীতের বিষ্ণুপুরকে সরগরম করে রাখে। দিনমানে থাকুক ঘুরে বেড়িয়ে টেরাকোটা শিল্পের আসাধারণ সব নিদর্শন।
শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা
কোভিডের কারণে ২০২০-তে পৌষ মেলা আয়োজিত হয়নি। এ বছর, এখনো পর্যন্ত ঠিক আছে, মেলা হবে। পৌষ মেলার সূচনা ঘটে ৭ পৌষ। সেই হিসেবে এ বছর মেলা শুরুর দিন ২৩ ডিসেম্বর। সরকারি ভাবে মেলার সময়সীমা তিন দিন। তবে সামগ্রিক ভাবে মেলা চলে মোট ৬ দিন ধরে। পৌষ মেলা মানে বৈচিত্রপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, হস্তশিল্প ও খাদ্যের বিপুল সমাহার। পৌষ মেলা উপলক্ষে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি ঘটে শান্তিনিকেতনে।
হর্নবিল উৎসব
এ বছর নাগাল্যান্ডের কোহিমায় হর্নবিল উৎসব শুরু হচ্ছে ১ ডিসেম্বর। চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি বিশেষ উৎসব এই হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল। নাগা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির পরিচয় পাওয়া যায় এই উৎসবে। নাগাল্যান্ডের আদিবাসীদের ঐতিহ্যশালী রণনৃত্য, রক কনসার্ট, আদিবাসীদের দ্বারা তৈরি হস্তশিল্প সামগ্রীর প্রদর্শনী, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, নাগা ঘরানার রকমারি খাদ্য ইত্যাদির সমাহারে জমজমাট হয়ে থাকে উৎসবের দিনগুলো।
রাজস্থানে শীত উৎসব
রাজস্থানের মাউন্ট আবুতে ২৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর আয়োজিত হবে শীতকালীন উৎসব। মেলা, রাজস্থানী ঘরানার নৃত্য ও সঙ্গীতের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান, মেলা, রাজস্থানের নানা হস্তশিল্পের প্রদর্শনী, রাতে আকাশে বাজির রোশনাই, সবমিলিয়ে মাউন্ট আবুর শীতের উৎসব বড় বর্ণময়।
রান উৎসব
গুজরাটের কচ্ছ জেলায় ঐতিহ্যবাহী রান উৎসব শুরু হয়ে গেছে অক্টোবর মাস থেকে। চলবে ২০২২-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। রান অঞ্চলটি প্রাকৃতিকভাবেই একটি লবনাক্ত মরুভূমি। এরকম একটা মরুভূমি-সংলগ্ন মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস প্রভৃতি যে ভিন্নতর হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সামগ্রিক সেই জীবনযাত্রার খোঁজ মেলে রান উৎসবে।
চেন্নাই সঙ্গীত উৎসব
ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে সঙ্গীতের বিরাট আসর বসে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে। উৎসবের চেহারা নেয় সেই সঙ্গীতানুষ্ঠান। চেন্নাইয়ের টি টি কৃষ্ণমাচারী অডিটোরিয়ামে সঙ্গীতের আসর আয়োজিত হয়। কন্ঠসঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীতের সঙ্গে থাকে নৃত্যানুষ্ঠান ও নাটক।
মহাবলীপুরম নৃত্য উৎসব
চেন্নাই থেকে ৫৮ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রাচীণ মন্দির, মণ্ডপমের শহর, সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের শহর, ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটস-এর তালিকাভুক্ত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী মহাবলীপুরম তামিলনাড়ু তথা দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের তালিকায় থাকবেই। ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মহাবলীপুরমে নানা ঘরানার শাস্ত্রীয় নৃত্যের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে থাকে। বিখ্যাত ‘অর্জুনস পেনান্স’ রিলিফের কাছে ওপেন-এয়ার অডিটোরিয়ামে নৃত্যানুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
পাঁচমারি উৎসব
‘সাতপুরার রানী’ নামে খ্যাত ৩৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত হিল স্টেশন পাঁচমারি। মধ্যপ্রদেশের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এই পাঁচমারিতে ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়োজিত হয় পাঁচমারি উৎসব। মেলা, শিল্পকলার প্রদর্শন, লোক সংস্কৃতির উপস্থাপনা, আঞ্চলিক খাদ্যের সম্ভার ইত্যাদি নিয়ে এই ক’টা দিন পাঁচমারি জমজমাট হয়ে থাকে। পাঁচমারি ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে বছর শেষের এই সময়টাকে বেছে নেওয়া যেতে পারে বেড়ানোর জন্য।
হাম্পির হট এয়ার বেলুন ফেস্টিভ্যাল
হট বেলুনের আসনে বসে পাখির চোখে বিশাল অঞ্চলজুড়ে থমকে থাকা ইতিহাসের রূপ প্রত্যক্ষ করতে হলে কর্ণাটকের হাম্পি আসতে হবে শীতেই। চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকের বিজয়নগর সাম্রাজ্যের মূল কেন্দ্র হাম্পি টেক্কা দিত ইউরোপের বড় বড় শহরের সঙ্গে। তুঙ্গভদ্রার নদীর দুই তীরে ছড়িয়ে রয়েছে বিষ্ময়কর সব সৌধ ও প্রাচীন হাম্পির ধ্বংসাবশেষ। হাম্পি বেড়ানোর সেরা দুই মরশুম শীত ও বর্ষা। । শীতে হাম্পির আকাশে চক্কর কাটে রং-বেরংয়ের বেলুন। বেলুনে সওয়ারী হয়ে হাম্পি দর্শন স্মরনীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। সারা ডিসেম্বর মাস ধরে হাম্পিতে চলে বেলুন উৎসব। হাম্পি ছাড়াও কর্ণাটকের বিদর ও মহীশূরেও শীতে বেলুন উৎসব আয়োজিত হয়।
কোচিন কার্নিভাল
কেরালার সমুদ্র-তীরবর্তী শহর কোচিন বা কোচিতে ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্রিসমাসের আবহে আয়োজিত হয় কার্নিভাল। নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সৈকতে খেলাধূলা, হাতির প্যারেড ইত্যাদি নিয়ে বছরের শেষ সময়টা উৎসবমুখর হয়ে থাকে।