Follow us
Search
Close this search box.

পাহাড় ঢালের গ্রামগুলি

পাহাড় ঢালের গ্রামগুলি

পাহাড়ের গ্রাম সব। ছবির মতো দেখায়। রসিকজনেরা সেখানকার মানুষের প্রাণে টোকা দিয়ে আলাপ জমাতে পারেন। পাহাড় থেকে পাহাড়ে, গ্রাম থেকে গ্রামে বদলে বদলে যায় প্রকৃতির ছন্দ, পাল্টে যায় দৃশ্য। আথিথেয়তার মিস্টি হাসিটি একইরকম। এখানে দার্জিলিং জেলার কয়েকটি গ্রামে বেড়ানোর কথা।

দার্জিলিং জেলার তাকদা, তিনচুলে আর লামাহাটার পারস্পরিক অবস্থান ভ্রমণার্থীদের কাছে বেশ পছন্দের। সুবিধা হল, যে কোনও একটি ঠিকানায় থেকে সহজেই অন্য দু’টি জায়গা বেড়িয়ে নেওয়া যায়। মন চাইলে একাধিক জায়গাতেও থাকার ব্যবস্থা করে নেওয়া যেতে পারে বৈচিত্রের কারণে। ট্রেক করেও যাওয়া যায় এ গ্রাম সে গ্রাম। যেমন, তাকদা থেকে লামাহাটা ও তিনচুলে হয়ে তাকদায় ফিরে আসা যায় কয়েক ঘন্টায়। বিজনবাড়ি ও লামাগাঁও পাশাপাশি। নিবিড় নৈঃশব্দ, পাখি আর ঝিঁঝিঁর ডাক, ঝোরার কলধ্বনির বন্য পালমাজুয়া বেড়াতে গেলে শ্রীখোলায় দার্জিলিংয়ের আরেক রূপ দেখে আসা যায়।

তাকদা

ছবির মতো গ্রাম তাকদা। লেপচা ভাষায় ‘তুকদা’ শব্দের অর্থ ‘কুয়াশা’। তুকদা থেকে তাকদা। কুয়াশা-মাখা পাহাড়ি পথ, আশ্চর্য রং-রূপের অর্কিড, পাহাড়ের ধাপে ধাপে তরঙ্গায়িত সবুজ চা-বাগিচা, পাখির ডাক, ঝোরার জলধ্বনি, এ সব নিয়ে অপরূপ তাকদা। দার্জিলিং শহর থেকে ত ২৮ কিলোমিটার। রাতে তাকদার পাহাড় থেকে আলোকমালায় সজ্জিত দার্জিলিংয়ের রূপটি দেখবার মতোই।

৪০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত তাকদাকে মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে গড়ে তুলেছিল ব্রিটিশরা। তৈরি হয়েছিল সুন্দর সুন্দর বাংলো। কোনও কোনও বাংলো এখন হেরিটেজ হোমস্টে হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাকদার অর্কিড সেন্টারটি কিন্তু না দেখলেই নয়।

তাকদা বাজার এলাকা থেকে ২ কিলোমিটার নীচে রংলি রংলিয়ট চা বাগান দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। অনেক নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা। তাকদা বাজার এলাকা ছাড়িয়ে একটু এগলেই দেখবেন বোল্ডার বাঁধানো একটি পথ উঠে গেছে উপরের দিকে। ওই পথ ধরে পৌঁছাবেন একটি মনাস্ট্রিতে। মনাস্ট্রি চত্বর থেকে চারপাশের দৃশ্য, বিশেষ করে চা বাগানের অসাধারণ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায়। ঘুরে দেখতে পারেন ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীর বাংলোগুলি। সিডার আর পাইন বনের মধ্যে দিয়ে এক চক্কর বেড়িয়ে আসতে পারেন। বনপথে ট্রেক করে যেতে পারেন লামাহাটায়। চাইলে লামাহাটা থেকে তিনচুলে হয়ে তাকদায় ফিরে আসতে পারেন। এই ট্রেকিংয়ে একজন আঞ্চলিক গাইড সঙ্গে থাকলে সুবিধা হবে।

যাওয়ার পথ

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে তাকদা ৬০ কিলোমিটার, শিলিগুড়ি থেকে ৫২ কিলোমিটার। উভয় জায়গা থেকেই গাড়ি ভাড়া করে তাকদা চলে আসা যায়।

থাকার ব্যবস্থা

সাইনো-দি হেরিটেজ গেস্টহাউস, ফোনঃ ৯৪৩৪৪-৬২৮০৬। তাকদা হেরিটেজ কলোনিয়াল বাংলো নম্বর ১২, ফোনঃ ৯০০২৬-৭৭৭৭৯।সাই হৃদয়ম-আ ব্রিটিশ হেরিটেজ বাংলো, ফোনঃ ৮০০১৯-০১১৭২। গ্লেন মারি হোমস্টে, ফোনঃ ৮২৫০২-১২১৪১, ৬২৯৫৩-৫৬৮০৯।

তিনচুলে

তিনচুলের ভিউপয়েন্টকে কাঞ্চনজঙ্ঘায় বর্ণবহুল সূর্যোদয় দেখার ব্যালকনি বলা চলে। সূর্যোদয়ের অপরূপ সেই দৃশ্য বহুদিন মনে থাকবে। একটি ছোট্ট ও নিরালা গ্রাম। ছবির মতো অল্প কিছু বাড়িঘর। তিনচুলে ফুলেরও গ্রাম। বাড়িতে বাড়িতে যত্নলালিত অর্কিড ও অন্যান্য ফুলের গাছ, চলার পথের ধারে ধারে চেনা-অচেনা ফুলের ঝাড় তিনচুলেকে রঙিন করে রাখে বছরভর। দার্জিলিং শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে ৫৮০০ ফুট উচ্চতায় তিনচুলের আবস্থান। তাকদা থেকে তিনচুলে মাত্র ৩ কিলোমিটার। সামান্য ঊর্ধমুখী পথ ধরে তাকদা থেকে তিনচুলে পৌঁছাতে
হয়।

তিনচুলে থেকে রংলি রংলিয়ট ও পেশক চা বাগানের দৃশ্য অতীব সুন্দর। দেখবেন তিনচুলে মনাস্ট্রি। একটু হেঁটে অবশ্যই গুম্বাদাড়া ভিউ পয়েন্টে যাবেন। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও এবং রঙ্গীত নদীর দৃশ্য অপরূপ। তিনচুলেতে যদি থাকার ব্যবস্থা হয় তবে ডে টুরে অবশ্যই তাকদা বেড়িয়ে আসবেন। কাছেই আরেক ভ্রমণ ঠিকানা লামাহাটা।

যাওয়ার পথ

এন জে পি থেকে তিনচুলে ৭৩ কিলোমিটার। এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে তিনচুলে যাওয়ার গাড়ি পাবেন।

থাকার ব্যবস্থা

গুরুং গেস্টহাউস ফোনঃ ৯৯৩৩০-৩৬৩৩৬। তিনচুলে হিমালয়ান হোমস্টে, ফোনঃ ৯৭৩৩২-৬৬৬৩৩।তিনচুলে রাই রিসর্ট, ৯৭৩৩২-৪২৮৭৬।হামরো তিনচুলে হোমস্টে, ৯৭৩৩২-৮১৭৮৪।

লামাহাটা

তাকদা, তিনচুলের প্রতিবেশী আরেকটি শান্ত, সুন্দর গ্রাম লামাহাটা। উচ্চতা ৫৭০০ ফুট। দার্জিলিং থেকে লামাহাটার দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। তিনচুলে থেকে পেশক চা বাগানের মধ্যে দিয়ে রাস্তা ধরুন। পেশক ভিউ পয়েন্ট থেকে চারপাশের অপরূপ দৃশ্যপট দেখুন। চা বাগানের ওই রাস্তা পেশক রোডে মিলিত হয়েছে। পেশক রোডে পৌঁছে বাঁয়ে মোড় নিয়ে লামাহাটায় চলে আসুন।

পরিবেশবান্ধব পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অতি দ্রুত সুনাম অর্জন করেছে লামাহাটা। পথের ধারে যত্নলালিত চমৎকার একটি বাগান লামাহাটার বিশেষ আকর্ষণ। মরসুমী ফুল, বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিডের বাহার দেখা যায় এই বাগানে। একটি নজরমিনার রয়েছে বাগানের মধ্যে। সেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা, তিস্তা ও রঙ্গীত নদী, সিকিমের পর্বতশ্রেণি দেখা যায়।

লামাহাটায় থাকলে বনের মধ্যে দিয়ে খানিকাটা হেঁটে আসতে পারেন। পাহাড়ের উপরের দিকে রয়েছে ছোট একটি জলাশয়। আঞ্চলিক অধিবাসীদের কাছে এটি অত্যন্ত পবিত্র জলাশয়। ছোট ট্রেক করে চলে যেতে পারেন এই জলাশয়টির কাছে। এরকমই ছোট ট্রেকপথে যেতে পারেন ৮-মাইল অর্গানিক সেন্টার। দেখতে পারেন জৈবচাষের নানা পদ্ধতি। মাঝারি দৈর্ঘ্যের ট্রেক করতে চাইলে যেতে পারেন মাটি, পাথর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি বৌদ্ধ মনাস্ট্রির চত্বরে। ট্রেকিংয়ের পথটি অসাধারণ। এই পথে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও সিঙ্গালিলা রেঞ্জের দৃশ্য ভালো লাগবে। পথে পড়বে তুতি হাত্তা চা বাগান। চা বাগানের ছোট্ট টি-শপে ঢুকে প্রকৃতই অর্গানিক চায়ের স্বাদ যাচাই করে নিতে নিতে ভুলবেন না যেন।

যাওয়ার পথ

এন জে পি অথবা শিলিগুড়ি থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে-৩১, লপচু ও পেশক টি এস্টেট রোড ধরে লামাহাটা ৬৯ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে জোরবাংলো হয়ে লামাহাটা ৭২ কিলোমিটার। দার্জিলিং থেকে লামাহাটা ২৩ কিলোমিটার। কালিম্পং থেকে লামাহাটা ৪১ কিলোমিটার।

থাকার ব্যবস্থা

এভারেস্ট হাট হোমস্টে,ফোনঃ ৮৫৩৮০-৮৭১০৫।লামাহাটা মাউন্টেন ভিউ হোমস্টে, ফোনঃ ৯৭৭৫৪-৮২০২৭। লামাহাটা ফার্মস,ফোনঃ ৯৮০০০-২৪৫৫৩। লামাহাটা দ্রুক হোমস্টে,ফোনঃ ৯৯৩৩০-২০৩৯১।

বিজনবাড়ি-লামাগাঁও

উৎরাই পথে পেরবেন হিমা জলপ্রপাত। পথে পড়বে চোখ জুড়ানো চা বাগান। আর পথের কয়েকটি জায়গা থেকে উপরের দিকে দার্জিলিং শহরটিকে দেখা যাবে নতুন চোখে। অপূর্ব সুন্দর সেই পথ ধরে পৌঁছাবেন পাহাড়ে ঘেরা এক উপত্যকায়। বিজনবাড়ির আঙিনায়। উচ্চতা ২,৫০০ ফুট। ঘুম স্টেশন রোড় থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরের বিজনবাড়ি দার্জিলিংয়ের ভ্রমণ মানচিত্রে দ্রুত বিশিষ্ট জায়গা করে নিচ্ছে।

বিজনবাড়ির এক প্রান্ত দিয়ে বইছে ছোটা রঙ্গিত নদী। এ কারণে বিজনবাড়ির উপত্যকাটি সুফলা। নদী-সন্নিহিত এলাকায় রয়েছে কমলালেবু্, আনারসের বাগিচা। ফল ছাড়াও নানা সবজি ও শস্যের চাষ হয় বিজনবাড়ির উর্বর জমিতে। বিজনবাড়ির লোধমা এলাকায় একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। বিজনবাড়ির পুলবাজার বা পালবাজার এলাকায় রয়েছে সুন্দর একটি মন্দির। পাথর খোদাই করে দুর্গা, শিব, গণেশের মূর্তি তৈরি করা হয়েছে।

বিজনবাড়ি ঘুরে দেখতেই অনেকটা সময় লেগে যাবে। দেখবেন দার্জিলিংয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাহাড়ি মানুষের জীবনযাপন। উপত্যকার নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ান। নদীর পারে গিয়ে বসুন। চাইলে নদীতে মাছ ধরতে পারেন। হাইকিং, ট্রেকিংয়ে আগ্রহ থাকলে বিজনবাড়ি দারুণ এক স্ট্র্যাটেজিক কেন্দ্র। বিজনবাড়ি থেকে রেলিং (৮ কিলোমিটার) হাইকিং হতে পারে। হেঁটেই চলে যাওয়া যায় সোম টি এস্টেট, ঘন্টা চারেক সময় লাগবে। চলে যেতে পারেন কলবংয়ে। এখান থেকে সিকিমের কিছু অঞ্চল দেখা যায়। দিনে দিনে দার্জিলিং শহর বেড়িয়ে ফিরে আসুন বিজনবাড়ি। আর সবুজ, নিষ্কলুষ প্রকৃতির মধ্যে বিশ্রাম।

এ ভ্রমণে বিজনবাড়ির সঙ্গে লামাগাঁওকে যুক্ত করে নেওয়া গেলে তার চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে। বিজনবাড়ি থেকে লামাগাঁও ১২ কিলোমিটার। ছবির মতো পাকদণ্ডী পথ। ৫,২০০ ফুট উচ্চতার লামাগাঁও থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য এককথায় অসাধারণ।

শীতে লামাগাঁওয়ের গভীর খাদ ঘন কুয়াশায় ভরে থাকে। জানলা, দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে আসে সেই কুয়াশা। গ্রীষ্মের লামাগাঁও খুব আরামদায়ক। পাহাড়ের ঢালে জৈব চাষ হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে লামাগাঁওয়ের ঘন সবুজের সঙ্গে কমলা রঙের মিশেল ঘটে। কমলালেবুর ফলনে লামাগাঁও তখন বড় বর্ণময়।

পরিষ্কার দিনে লামাগাঁওয়ের পাহাড় থেকে দার্জিলিংয়ের বিশাল চা বাগান দেখা যায়। দেখা যায় দার্জিলিং শহরটিকেও। রাতের দার্জিলিংয়ের আলোর মালা এক অনবদ্য দৃশ্য রচনা করে। মাথার উপরে থাকবে তারকাখচিত আকাশ, পরিষ্কার দিনে অবশ্যই। সকালে লামাগাঁওয়ের রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুন। পাখির ডাকে চমৎকৃত হবেন। পাহাড়ি ফুলের রঙের বাহার মন ভালো করে দেবে। চোখে পড়তে পারে অর্কিডগুচ্ছ।

যাওয়ার পথ

এন জে পি থেকে বিজনবাড়ি ৯০ কিলোমিটার। সকালে দার্জিলিংয়ের বাসস্ট্যান্ড থেকে বিজনবাড়ি যাওয়ার বাস ছাড়ে। দার্জিলিংয়ের চক বাজার এলাকা থেকে বিজনবাড়ি যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পাবেন। ঘুম থেকেও বিজনবাড়ি যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যাবে।

এন জে পি থেকে লামাগাঁও ১০২ কিলোমিটার। এন জে পি অথবা শিলিগুড়ি থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি লামাগাঁও পৌঁছে যাওয়া যায়। অন্যথায় এন জে পি অথবা শিলিগুড়ি থেকে ঘুম পর্যন্ত এসে সেখান থেকে আরেকটি গাড়িতে লামাগাঁও চলে আসা যাবে। দার্জিলিং থেকে লামাগাঁও ৩০ কিলোমিটার, ঘুম থেকে ৪০ কিলোমিটার। বিজনবাড়ি থেকে লামাগাঁও ১২ কিলোমিটার।

থাকার ব্যবস্থা

বিজনবাড়িতেঃ বিজ্জু ভ্যালি ভিলেজ রিট্রিট, ফোনঃ ৯৭৩৫৫-৮৫৫৫৫। মেগিটার হোমস্টে, ফোনঃ ৯৯৩২১-৭৮১১৩, ৯৩৮২২-০৫৬৭২। রেলিং রঙ্গীত রিসর্ট, ফোনঃ ৯৮০০৩-১৫৩৪০। বাঁশবাড়ি ফার্মস্টে, ফোনঃ ৯৯৩২২-৪০৫৩৭।

লামাগাঁওয়েঃ লামাগাঁও হোমস্টে। এটি লামাগাঁওয়ের পুরনো হোমস্টে। হোমস্টের জমিতে বিভিন্ন সবজি ও ফলের চাষ করা হয়। ট্রেকিং, ফিশিং, সাইটসিয়িংয়ের ব্যাপারে হোমস্টে থেকে সহায়তা করা হয়। ফোনঃ ৭০৪৭০-৯৮৬৯৫।

পালমাজুয়া-শ্রীখোলা

দার্জিলিংয়ের মানেভঞ্জন থেকে ধোতরে ১৭ কিলোমিটার। ধোতরের উচ্চতা ৮৫০০ ফুট। ধোতরে থেকে খানিকটা ঢালু পথে আরো ৫ কিলোমিটার অতিক্রম করলে সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের প্রান্তসীমায় ছবির মতো ছোট্ট গ্রাম পালমাজুয়া। নিবিড় নৈঃশব্দ ছেয়ে থাকে পালমাজুয়ায়। গ্রামে কয়েকটি পরিবারের বসতি। চতুর্দিকে পাহাড়। একটা ঝরনা আছে। ছবির মতো ছোট্ট একটা সেতু। আর আছে নির্দোষ বাতাস। দিনদুয়েকের নির্ভেজাল অবকাশ যাপন করতে চাইলে পাহাড়ি গ্রাম পালমাজুয়া এক চমৎকার ঠিকানা। এখানে ঘুমপাড়ানিয়া ঝরনার কলধ্বনি সারারাত জেগে থাকে।

একেবারে পালমাজুয়া গ্রাম থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পাবেন না। ভোর ভোর গাড়ি নিয়ে চলে যান তিনশুলে। তিনচুলে নয় কিন্তু, তিনশুলে। এখানে জঙ্গলের পথ ধরে একটু এগোলেই সেই সোনার পাহাড়ের দেখা পাবেন। পাখি পর্যবেক্ষণের নেশা যাঁদের, তাঁদের কাছে এ জায়গাটা স্বর্গরাজ্য। পালমাজুয়া গ্রাম থেকে কমবেশি আড়াই কিলোমিটার দূরে মনিখোলাতেও নানা জাতের পাখির দেখা মেলে।

হাতে একটু সময় থাকলে আর সঙ্গে গাড়ি থাকলে শ্রীখোলা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন। গাড়িতে ঘন্টা দেড়েক সময় লাগবে। একটু থেমে থেমে গেলে ঘন্টা দুয়েক। রিম্বিক হয়ে যেতে হবে। রিম্বিক থেকে শ্রীখোলা ৪ কিলোমিটার। পালমাজুয়া থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার। মানেভঞ্জন থেকে শ্রীখোলা ৪১ কিলোমিটার। পথে পড়বে লোধমা নদী। নদীর ধার দিয়ে সে এক চমৎকার যাত্রা।

সান্দাকফু, ফালুট ট্রেক করে ফেরার পথে সাধারণত শ্রীখোলা বিশ্রামস্থল। সান্দাকফু-ফালুট থেকে ফেরত-পথে ট্রেকিংয়ের শেষ পয়েন্ট শ্রীখোলা। গাড়ি চলাচল করে শ্রীখোলা পর্যন্তই।

নদীর নামে গ্রামের নাম। নদীর নাম শ্রীখোলা ।নদীর নামে গ্রামের নাম। ৩,৬০০ ফুট উচ্চতার শ্রীখোলা বৃহত্তর দার্জিলিংয়ের আরেক রূপ। সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ। তার মধ্যে ইতিউতি ছড়িয়ে কিছু কাঠের বাড়িঘর। বাড়িগুলো সুদৃশ্য কটেজের মতো দেখতে লাগে। সামনে ছোট ছোট ফুলের বাগান। পাথরে ধাক্কা খেতে খেতে বয়ে চলেছে শ্রীখোলা। নদীর ধারে গিয়ে বসুন। বিশুদ্ধ বাতাসে শরীর-মনের ক্লান্তি উধাও হবে। চাইলে নদীতে মাছ ধরতে পারেন। প্রচুর ট্রাউট মাছ আছে শ্রীখোলা নদীতে।শ্রীখোলা নদীর ওপর ছোট্ট সেতুটি ছবির মতো মনে হয়। বেড়ান গ্রামের মধ্যে। একটি মনাস্ট্রি আছে শ্রীখোলা গ্রামে। সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের পাদদেশে শ্রীখোলা গ্রামের অবস্থান। গ্রামের প্রান্তে বার্চ, পাইনের বন। গ্রামের মধ্যে বড় এলাচ, ভুট্টার চাষ হয়।

শ্রীখোলা থেকে নানা দিকে ট্রেকিংয়ের সু্যোগও যথেষ্ট। শ্রীখোলা থেকে ৬ কিলোমিটার ট্রেক করে ৭,১৫০ ফুট উচ্চতার গুরদাম উপত্যকায় যাওয়া যায়। ঘন অরণ্যে ঘেরা গুরদাম উপত্যকার বন্য রূপের একটা বিশেষ সৌন্দর্য আছে। এই গুরদাম থেকে আরও ১০ কিলোমিটার ট্রেক করে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পয়েন্ট ১১,৯২৯ ফুট উচ্চতার সান্দাকফুতে পৌঁছে যাওয়া যায়। অর্থাৎ শ্রীখোলা থেকে মোট ১৬ কিলোমিটার ট্রেক করে সান্দাকফু পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে। আবার শ্রীখোলা থেকে ১২ কিলোমিটার ট্রেক করে রাম্মাম পৌঁছানো যায়। রাম্মামের উচ্চতা ৮,৪০০ ফুট। রাম্মাম থেকে ৯ কিলোমিটার এগলে গোর্কে গ্রাম। গোর্কে থেকে আরও ১৫ কিলোমিটার ট্রেক করে পৌঁছানো যায় ফালুট, উচ্চতা ১১,৮১১ ফুট। সান্দাকফু থেকে ফালুটের দূরত্ব ২১ কিলোমিটার।

যাওয়ার পথ

শিলিগুড়ি বা এন জে পি থেকে গোটা টুরের জন্য গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে মিরিক হয়ে যাওয়ায় ঠিক হবে। পথের দৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত কম হবে। পথের বৈচিত্র বেশি। এ পথ অনেকবারই নেপালের মধ্যে ঢুকবে। চাইলে দার্জিলিং বা ঘুম পৌঁছে সেখান থেকেও গোটা টুরের জন্য গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। দার্জিলিঙের চকবাজার থেকে মানেভঞ্জন পর্যন্ত শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। মানেভঞ্জন পৌঁছে সেখান থেকেও পালমাজুয়া অথবা পালমাজুয়া ও শ্রীখোলা ট্রিপের জন্য গাড়িভাড়া করতে পারেন। শেয়ার গাড়িতে করেও গোটা ট্রিপটা সম্পূর্ণ করা যায় অবশ্য। তাতে সময় বেশি লাগবে। খানিকটা অনিশ্চয়তাও কাজ করবে।

ইচ্ছে করলে শুধু শ্রীখোলা থেকেই বেড়িয়ে আসা যায়। সঙ্গে একটা ছোট ট্রেকিং যুক্ত করে নিলে সে ভ্রমণ হবে আরও রোমাঞ্চকর। এন জে পি স্টেশন থেকে শ্রীখোলা ১৩২ কিলোমিটার। দার্জিলিং থেকে পুলবাজার-জোরথাং রোড হয়ে শ্রীখোলা ৬১ কিলোমিটার। এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে মানেভঞ্জন বা ঘুম চলে আসা যায়। ঘুম থেকে মানেভঞ্জন যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পাওয়া যাবে। মানেভঞ্জন থেকে শ্রীখোলা ৪১ কিলোমিটার। বেলা ১টা নাগাদ শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড় থেকে সরাসরি শ্রীখোলা যাওয়ার শেয়ার জিপ ছাড়ে (সাধারণত)। দার্জিলিং থেকেও সকালে ও দুপুরে শ্রীখোলা যাওয়ার শেয়ার জিপ ছাড়ে। ম্যাল থেকে খানিকটা নেমে জিপ স্ট্যান্ডে গিয়ে শেয়ার জিপের খোঁজ নেবেন।

থাকার ব্যবস্থা

সিঙ্গালীলা জঙ্গল লজ পালমাজুয়ায় থাকার একটি সুন্দর ব্যবস্থা। এখানে রয়েছে দুটি দ্বিশয্যার কটেজ, দুটি ডিলাক্স রুম, একটি চার শয্যার কটেজ। যোগাযোগের নম্বর: ৮৬৭০৮৯১৫৭৪।

শ্রীখোলায়ঃ হোটেল শোভরাজ, ফোনঃ ৯৯৩৩৪-৮৮২৪৩, ৯৮৩২৩-৭৫৫৪৬। লিপ্পোহোচ্ছা হোমস্টে, ফোনঃ ৮৯৭২৮-৫৯২৩১, ৯৭৩৫০-৩৪৬২৬, পানকর্মা হোমস্টে, ফোনঃ ৭০০১৯-৬৭২৯৭। রেড পান্ডা হোটেল, হোমস্টে, ফোনঃ ৯৭৩৩০-৬১৭৯৩।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *