Follow us
Search
Close this search box.

কাশ্মীরে কানি শালের গ্রাম

কাশ্মীরে কানি শালের গ্রাম

শ্রীনগর থেকে গুলমার্গ যাওয়ার পথে পড়ে গ্রামটি। বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট শাল তৈরি হয় এ গ্রামে। কানি পশমিনা শাল। সহস্রাধিক বছরেরে প্রাচীন এর বয়ন প্রক্রিয়া। গ্রাম পর্যটনের একটি বিশিষ্ট ঠিকানা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে শ্রীনগর থেকে মাত্র ২৩ কিলোমিটার দূরের এই চমৎকার গ্রামটি।

তোর্সা ডট ইন প্রতিবেদনঃ গ্রামের নাম কানিহামা। যেমন হয় কাশ্মীরে, আরেকটি ছবির মতো গ্রাম। এ গ্রামে ঢুকলে হাতে চালানো তাঁতের শব্দ শোনা যায় ঘরে ঘরে। ‘কানি’ হল কাঠের বা বেতের তৈরি সুচ। ‘হামা’ অর্থ গ্রাম। কানিহামা তাঁতিদের গ্রাম। এ গ্রামে হাতে চালানো তাঁতে শাল তৈরি হয়। বিশ্বখ্যাত কানি শাল। শাল বোনার কাজে ওই কাঠ, বেতের সুচ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বুনন, নকশা ফুটিয়ে তোলার সব কাজই হয় দক্ষ হাতে।

গ্রামে একসঙ্গে জড়াজড়ি করে রয়েছে বাড়িঘর। প্রাচীন গ্রাম। পাথরের কিছু বাড়ি এই বসতির প্রাচীনতার সাক্ষ্য দেয়। পাহাড়ে ঘেরা সবুজ উপত্যকায় এই বর্ধিষ্ণু গ্রামটি। এখানকার কানি শাল কুর্নিশ পায় বিশ্বের দরবারে।

কাশ্মীরের প্রাচীনতম হস্তশিল্পগুলির মধ্যে একটি এই কানি শাল। উপত্যকায় এই পশমিনা কানি শাল তৈরির ইতিহাস অতি প্রাচীন। সম্রাট আকবর খুব পছন্দ করতেন এই কানি শাল। আইন-ই-আকবরিতে কানি শালের উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে। শিখ মহারাজা ও পরবর্তীকালে অভিজাত ও ধনী ইংরেজরা কানি শালের ভক্ত ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’এ কাশ্মীরের কানি শালের প্রসঙ্গ এসেছে। কানি শাল তৈরির ইতিহাস আরও অনেক অনেক পুরনো।

জম্মু-কাশ্মীর সরকার কানিহামাকে তাঁত বয়নের গ্রামের স্বীকৃতি দিয়েছে। কানিহামা কানি শাল তৈরির জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন পেয়েছে। অর্থাৎ এই শাল কানিহামার বাইরে তৈরি করে ব্যবসা করা যাবে না।

জাতীয় সড়ক-১ ধরে শ্রীনগর থেকে গুলমার্গে যাওয়ার পথে পড়ে কানিহামা। গ্রামটি বাদগম জেলার অন্তুর্ভুক্ত। শ্রীনগর থেকে দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। হাতে সময় থাকলে গুলমার্গ যাতায়াতের পথে একবার ঢুঁ মারা যায় কানিহামায়। আগ্রহীরা এক বেলার কানিহামা ভ্রমণের সূচি রাখতে পারেন আলাদা করে। কেনাকাট না করলেও ঘুরে দেখা যায় গ্রাম। বিশিষ্ট এই হস্তশিল্প সামগ্রীটি তৈরির প্রক্রিয়া চাক্ষুষ করা যায়। কাশ্মীর উপত্যকার গ্রাম পর্যটন মানচিত্রে ঐতিহ্যবাহী কানিহামা একটি বিশিষ্ট ঠিকানা।

পশমিনা তন্তু কানি শালের মূল উপকরণ। ওই তন্তু পশমিনা ছাগলের পশম। আঞ্চলিক ভাবে চাংপা ও চাংথাঙ্গি ছাগল নামে পরিচিত। কাশ্মীর ও লাদাখে এই প্রজাতির ছাগল পালন করা হয়। প্রসঙ্গত, লাদাখের দক্ষিণ-পূর্বের সীমানার প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার বরাবর তিব্বতের (চিন) চাংথাং মালভূমি প্রলম্বিত। প্রাচীন কাল থেকেই তিব্বতের এই হাই অল্টিটিউড় মালভূমিতে এই প্রজাতির ছাগল পালন হয়ে আসছে। ভারতে লাদাখের দক্ষিণ-পূর্বের সুউচ্চ মালভূমিতে উৎকৃষ্ট মানের পশমিনা উৎপাদিত হয়। প্রবল ঠান্ডার কারণেই এই ছাগলের গায়ে প্রচুর লোম লোম হয়। বসন্তে উষ্ণতা খানিক বাড়তে প্রাকৃতিক ভাবেই লোম পরিত্যাগ এই পাহাড়ি ছাগলকুল। সেই লোম সংগ্রহ করা হয় কানি শাল বোনার কাজে। বছরে মাত্র একবারই, এই বসন্ত ঋতুতে মূল কাঁচামাল সংগ্রহ করা যায়।

একটি পশমিনা কানি শাল তৈরি করতে ৩-৬ মাস সময় লাগে। কোনও কোনওটি সম্পূর্ণ করতে ১ থেকে দেড় বছর সময় লেগে যায়। ডিজাইন, মোটিফের সূক্ষ্মতা অনুসারে দাম নির্ধারিত হয়। একটি পশমিনা কানি শাল কয়েক হাজার টাকা থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

ফটোঃ উপর থেকে যথাক্রমে –

কাশ্মীরি শাল
কানিহামা কাশ্মীর এম্পোরিয়াম
স্নো লেপার্ড ট্রাস্ট
কাশ্মীর লাইফ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *