Follow us
Search
Close this search box.

অফবিট পুরুলিয়াঃ বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তের তুলিন

অফবিট পুরুলিয়াঃ বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তের তুলিন

সৈকত বসুঃ সুবর্ণরেখা নদীর এপারে পুরুলিয়ার শেষ গ্রাম তুলিন। নদীর ওপারে ঝাড়খণ্ড রাজ্য। শিল্পীর তুলিতে আঁকা একটি মায়াময় গ্রাম যেন এই তুলিন। ট্রেনে গেলে নামবেন ঝাড়খণ্ডের মুরি স্টেশনে। ওখান থেকে অটোয় বড়জোর আধঘন্টায় পৌঁছাবেন তুলিনে।

অনুচ্চ সব পাহাড়। জঙ্গল। পাখির ডাক যত্রতত্র। নদীর প্রবাহে ঝিকিমিকি আলো। লালমাটির পথ ঢুকেছে আদিবাসী গ্রামে। আর অপার শান্তি। মরসুম থেকে মরসুমে রং বদলায় পুরুলিয়া। তুলিন গ্রীষ্মে পলাশ-রাঙা, বর্ষার তুলিন অপূর্ব এক জলছবি, আর শীতে গাঢ় নীল আকাশের তুলিন যেন পটে আঁকা এক ছবি।

পুরুলিয়ার ঝালদা-১ ব্লকের অন্তুর্গত এই তুলিন গ্রামটি। পুরুলিয়া শহর থেকে দূরত্ব কমবেশি ৫৭ কিলোমিটার। তুলিন থেকে অযোধ্যা পাহাড় ৪২ কিলোমিটার। ঝাড়খণ্ডের মুরি স্টেশন থেকে তুলিন ৩ কিলোমিটার। মুরি থেকে ঝাড়খণ্ডের রাজধানী শহর রাঁচি ৬০ কিলোমিটার। তাই তুলিনের সঙ্গে একচক্কর রাঁচি বেড়ানোর পরিকল্পনা ছকা যায়। রাচিকে ভিত্তি করে হুন্ডরু, জোনহা, দশম, হিরনির মতো বিখ্যাত জলপ্রপাতগুলি দেখে নেওয়া যায়। রাঁচি থেকে ছিন্নমস্তার মন্দির ৬৫ কিলোমিটার। সড়কপথেই রাঁচি থেকে ‘ছোটনাগপুরের রানি’ নামে খ্যাত নেতারহাটের দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার।

যাইহোক, তুলিনে ফেরা যাক। সুবর্ণরেখা নদী-তীরের তুলিন। পাহাড়ে ঘেরা তুলিন। তুলিনকে ঘিরে আছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় টুরিস্ট সার্কিটের অনেকগুলো পয়েন্ট। কাছেই মালশা আর বুঁদি পাহাড়ে ট্রেক করা যায়। শীতের মরসুমে তুলিন ও ঝালদা শহরের মধ্যেকার বাঁসা পাহাড়টি পর্বতারোহণে পাঠ নেওয়ার জন্য একটি আদর্শ জায়গা।

সামনেই কেরওয়ারির জঙ্গল। জঙ্গলপ্রান্তের গ্রাম থেকে মাদলের বোল বাতাসে বাতাসে ভাসে। এ জঙ্গলে নানা পাখির দেখা পাবেন। জঙ্গলের পথে হাঁটতে হাঁটতে শুনতে পাবেন ময়ূরের ডাক। বুনো শুয়োর আছে।

নানা পরব লাগে তুলিনে, এলাকায় এলাকায়, মরসুমে মরসুমে। করম, বাঁধনা, সরহুল, বাহা, আরও কত পরব। চাইলে চেখে দেখা যায় আদিবাসী ঘরানায় রান্না করা পদ। এখানে দিনের গভীর নীল আকাশ রাতে তারায় তারায় ভরা। বিষমুক্ত বাতাস, কত দৃশ্যের আবিষ্কার। এক অমলিন ভ্রমণ ঠিকানা। বিশ্রাম নিন, চলে যান কোনও আদিবাসী পাড়ায়, পাহাড়-জঙ্গলে বেড়ান। সুবর্ণরেখার তীরে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখুন। তুলিনে থেকেই বেড়িয়ে নিতে পারেন পুরুলিয়ার নানা জায়গা।

প্রতি বুধ ও শনিবার হাট বসে তুলিনে। সুদূর গ্রামের সেই বাজার দেখাও একটা অভিজ্ঞতা। আঞ্চলিক বাজার, বিকিকিনির সামগ্রী, আদিবাসীদের জমায়েত, তাজা সব্জি, মাছ, মহুয়া ফল। শহরবাসীদের ক্ষেত্রে নতুন অভিজ্ঞতা তো বটেই। তুলিনেও একটি রেল স্টেশন আছে। ছোট নিরিবিলি স্টেশন। দূরপাল্লার ট্রেন পাওয়া যাবে না। তবে নিরালা একটি স্টেশন কেমন হতে পারে তার একটি ছবি দেখা যাবে।

কল্পনার রাজ্যের কথা মনে হচ্ছে? তুলিন জায়গাটি যে এমনই। তুলিন আবিষ্কৃত হচ্ছে।
তুলিন হেরিটেজ বাংলো

তুলিনে থাকার চমৎকার ব্যবস্থা ব্রিটিশ আমলের এক বাংলোয়। তুলিন হেরিটেজ বাংলো। ১৯৩০ সালে তৈরি বাংলোটিই একটি দ্রষ্টব্য।

অতীতে সরকার বাংলো নামে পরিচিত ছিল বর্তমান বাংলোটিই। বিশাল বাংলোটি তৈরি করিয়েছিলেন মহিমচন্দ্র দে সরকার। ছিলেন কলকাতার নামী পরিবারের নামী ব্যবসায়ী। তাঁর পিতামহ শ্যামচরণ দে সরকার ঊনবিংশ শতকের প্রথম ভাগে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরের দায়িত্ব সামলেছেন। মূলত কলকাতা-ভিত্তিক পরিবারের সদস্য মহিমচন্দ্র একটি বাংলো বানালেন পশ্চিমবঙ্গের একদিকের শেষ প্রান্তে এই লালমাটির দেশে। স্থান নির্বাচন নিয়ে ব্যবসায়ী মহিমচন্দ্রের রোমান্টিকতার তারিফ করতেই হয়।

আড়াই একর জায়গা জুড়ে বাংলোর চৌহুদ্দি। সেখানে গাছপালা, ফুলের বাগান। নদী, পাহাড়, জঙ্গলে ঘেরা এক বাংলো। দেওয়ালে বন্যজন্তুর স্টাফ করা মাথা। চওড়া বারান্দা। লাল মেঝে। বহু পুরনো কাঠের জানলা-দরজা। খাদ্যে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া তো থাকবেই, চাইলে পেয়ে যাবেন চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল পদও। ঘরের ভাড়া ২,৮০০ থেকে ৩,১৩৬ টাকা (ট্যাক্স-সহ)।

তুলিন হেরিটেজ বাংলো কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরঃ ৯০৮৮৮-১০৬১১।

যাওয়ার পথ

ট্রেনে ঝাড়খণ্ডের মুরি। হাওড়া থেকে ক্রীয়াযোগ এক্সপ্রেস, হাওড়া-রাঁচি শতাব্দী এক্সপ্রেস ইত্যাদি ট্রেন রয়েছে। মুরি থেকে অটো। কলকাতার দিক থেকে সড়কপথে নিজেদের গাড়ি নিয়ে আসতে চাইলে দুর্গাপুর-বাঁকুড়া-পুরুলিয়া-ঝালদা রোড ধরে তুলিন আসা যাবে। অন্যদিকে, আসানসোল-রঘুনাথপুর-পুরুলিয়া-ঝালদা রুটে তুলিন আসা যেতে পারে। কলকাতার ধর্মতলা থেকে তুলিন যাওয়ার বাসও পাওয়া যাবে।

Comments are closed.