Follow us
Search
Close this search box.

এবার বর্ষায় জগদলপুর

এবার বর্ষায় জগদলপুর

বর্ষায় এবং বর্ষার পরে পরেই জগদলপুরের তিরথগড় এবং চিত্রকোট জলপ্রপাত দুটি তাদের প্রকৃত রূপ ধারণ করে। চিত্রকোট জলপ্রপাতকে ‘ভারতের নায়াগ্রা’ বলা হয় কেন তা এই বর্ষাতেই সঠিক বোঝা যায়। জলপ্রপাত, অরণ্য, দন্তেশ্বরী মন্দির, আদিবাসী জীবনের নানা ছবি, সবমিলিয়ে বর্ষায় ছত্তিশগড়ের জগদলপুর ভ্রমণ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কীভাবে যাবেন, কোথায় কোথায় যাবেন, কীভাবে বেড়াবেন সে-সব তথ্য নিয়ে ভ্রমণ পরিকল্পনাটি তৈরি করেছেন তুষার পাত্র

কী ভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে সরাসরি এক মাত্র ট্রেন ১৮০০৫ কোরাপুট এক্সপ্রেস।এ ছাড়াও বিশাখাপত্তনম গিয়ে গিয়ে ওখান থেকে  ৫৮৫০১  কিরনডুল প্যাসেঞ্জারে জগদলপুর যাওয়া যায়। বিমান বা ট্রেনে রায়পুর গিয়ে ওখান থেকে বাসে বা প্রাইভেট গাড়িতে জগদলপুর যেতে পারেন। রায়পুর থেকে জগদলপুরের দূরত্ব ২৮৬ কিলোমিটার।

কী দেখবেন

জগদলপুরে রয়েছে দুটি স্বপ্নের জলপ্রপাত। তিরথগড় এবং চিত্রকোট। সঙ্গে থাকবে কুটুমসার কেভ এবং দন্তেশ্বরী মন্দির। আছে আরো কিছু দ্রষ্টব্য।

কোথায় থাকবেন

জগদলপুর স্টেশনের বাইরে এবং সারা শহর জুড়ে বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। হোটেল লক্ষী প্যালেস,সুরি ইন্টারন্যাশানাল, রবি রেসিডেন্সি, পার্থ ইন, সুধা প্যালেস, হোটেল অতিথি, হোটেল মোনা, হোটেল প্রিন্স এবং হোটেল অশোকা। চিত্রকোট জলপ্রপাতের কাছাকাছি রয়েছে ছত্তিশগড় ট্যুরিজিমের দানদানি লাক্সারি রিসর্ট। দারুণ অবস্থান রিসর্টটির। অনলাইনে বুকিং করতে হয়।

কী ভাবে বেড়াবেন

আমরা এ সফরে দুদিন থাকবো জগদলপুরে।

প্রথম দিনঃ

আজ আমাদের সফর শুরু হবে জগদলপুর থেকে। প্রথমেই আমরা ঘুরে দেখবো বস্তার রাজবাড়ি। দেখব তৎসংলগ্ন বালাজি মন্দির এবং ট্রাইবাল মিউজিয়াম। মনে রাখবেন, রাজবাড়ির দন্তেশ্বরী মন্দিরটি কিন্তু মূল মন্দির নয়। মূল মন্দির আমরা দেখব পরের দিন।

বালাজি মন্দির

এ দিন আমাদের পরবর্তী গন্তব্য চিত্রকোট জলপ্রপাত। ‘ভারতের নায়াগ্রা’ বলা হয় চিত্রকোট জলপ্রপাতকে। জগদলপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ইন্দ্রাবতী নদীতে এই জলপ্রপাতের অবস্থান। উপর থেকে বিস্তৃত জলরাশি প্রায় ৯০ ফুট নীচে আছড়ে পড়ছে। এ দৃশ্য সত্যি নয়নাভিরাম। বর্ষা কালে বা বর্ষা শেষের চিত্রকোটের সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। মনে হয় জীবন সার্থক। নীচে ইন্দ্রাবতী নদীতে নৌকা ভ্রমনের ব্যবস্থা আছে। মন চাইলে উঠে পড়ুন নৌকায়।

চিত্রকোট জলপ্রপাত

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক। পার্কের প্রবেশদ্বারে এন্ট্রি ফি দিতে হয়। এই জাতীয় উদ্যানের মধ্যেই রয়েছে কুটুমসার গুহা এবং তিরথগড় জলপ্রপাত। প্রথমে আমরা দেখব কটুম্বসার গুহা। এটি ভারতবর্ষের একটি বড় এবং প্রাচীন গুহা। গুহার প্রবেশপথ বেশ অপরিসর এবং খানিকটা দুর্গমও বটে।

কুটুমসার গুহা

কুটুম্বসার গুহায় প্রবেশের জন্য গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক। একটু কষ্ট করে ভিতরে ঢুকে যা দেখবেন তা সারা জীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকবে। চুনাপাথরের ওপর দিনের পর দিন জল চুঁইয়ে গুহার মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা প্রতিকৃতি। গাইডের মুখে শুনবেন নানা পৌরাণিক গল্প-গাঁথা। এক অনন্য অভিজ্ঞতা হবে।

পরের গন্তব্য তিরথগড় জলপ্রপাত। জলপ্রপাতের চারপাশে পাহাড় আর ঘন সবুজ জঙ্গল। এলাকাটিতে প্রবেশ করতেই গাছের ফাঁকে ফাঁকে দেখা দিতে লাগল জলপ্রপাতের নানা অংশ। দোকানপাট, পর্যটক, সব মিলিয়ে জায়গাটা তুলনামূলক ভাবে জমজমাট।

তিরথগড় জলপ্রপাত

জলপ্রপাতের আসল রূপটি দেখতে হলে শ’দুয়েক সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে নীচে। প্রায় ১১০ফুট উপর থেকে বিস্তৃত জলরাশি উদ্দাম গতিতে পাথর বেয়ে ধেয়ে আসছে নীচে। শুভ্র ফেনিল জলরাশি শুধু দু’ চোখ ভরে দেখতে হয়। উপরের দিকে তাকিয়ে তার এই ভয়ঙ্গর-সুন্দর রূপ মুগ্ধ হয়ে দেখতে দেখতে সময়ের হিসেব হারিয়ে ফেলবেন। ফিরতে মন চাইবে না।

আরও কয়েকটি ছোটখাটো জলপ্রপাত আছে । বর্ষায় দেখতে মন্দ নয়। মেন্দ্রি ঘুমর প্রপাত, চিত্রধারা প্রপাত ও তামড়া ঘুমর প্রপাত। সকালে ভ্রমন শুরুর সময় ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে একটা পরিকল্পনা ছকে নেবেন।

তামডা ঘুমর প্রপাত

দ্বিতীয় দিন:

আজ আমাদের গন্তব্য দান্তেওয়াড়া। জগদলপুর থেকে দূরত্ব ৮৮ কিলোমিটার। উদ্দেশ্য দন্তেশ্বরী মাতার মন্দির দর্শন। ৬৩ নং জাতীয় সড়ক বরাবর এ পথের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক কথায় অসাধারণ। একান্ন সতীপীঠের এক পীঠ দন্তেশ্বরী মাতার মন্দির

দন্তেশ্বরী মাতার মন্দির

আনুমানিক চতুর্দশ শতকে এই মন্দির নির্মিত হয় বলে জানা যায়। কালো কষ্টি পাথরে তৈরি মায়ের মূর্তি।

মা দন্তেশ্বরী

মন্দিরটি মূলত চার ভাগে বিভক্ত। গর্ভগৃহ, মহামণ্ডপ, মুখ্যমণ্ডপ এবং সভামণ্ডপ। মন্দির প্রাঙ্গনের পরিবেশটি ভারি সুন্দর। অনায়াসেই কাটিয়ে দেওয়া যায় কয়েকটা ঘণ্টা। মন্দিরের পিছনে ডঙ্কিনি এবং শঙ্কিনি নদীর সঙ্গমস্থলটি অবশ্যই দেখবেন। খুব ভালো লাগবে। এখানের দশেরা উৎসব বিখ্যাত। এই উৎসব উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমায় এখানে। রাজ পরিবারের অংশগ্রহণে এবং বস্তারের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপস্থিতিতে দশেরা হয়ে ওঠে বর্ণময়। সবার কাছে এখানকার দশেরা নিয়ে চূড়ান্ত আবেগ আর উন্মাদনার কথা শুনেছি। আমার মনে হয় জগদলপুর আসার সেরা সময় দশেরা। একবার এলে সে সফর আপনার মনে থাকবে সারা জীবন।

কী ভাবে ফিরবেন

জগদলপুর থেকে হাওড়া আসার একমাত্র সরাসরি ট্রেন কোরাপুট-হাওড়া এক্সপ্রেস। জগদলপুর থেকে ভোর ৪টে ১৫মিনিটে ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় পরের দিন ভোরবেলায়।
এ ছাড়াও জগদলপুর থেকে ট্রেনে বিশাখাপত্তনম এসে সেখান থেকে হাওড়ার ট্রেন ধরতে পারেন। চাইলে জগদলপুর থেকে রায়পুর গিয়ে সেখান থেকে হাওড়া ফেরার ট্রেন ধরতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *