অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং এক খ্যাতনামা ভ্রমণ ঠিকানা। সেই তাওয়াং থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে ৮০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত জেমিথাং এখনও খুব যে পরিচিত তেমন দাবি করা যাবে না। জেমিথাং কিন্তু এক আড়ালে থাকা স্বর্গ। পাহাড়ে ঘেরা প্রশস্ত সব উপত্যকা, সোনালী খেত, বুনো ফুল, চাঁদনী রাতের কবিতা জেমিথাং রয়েছে তার আপন মনে। তাওয়াং তথা অরুণাচল ভ্রমণে যুক্ত করে নেওয় যায় জেমিথাংকেও। জেমিথাং-সহ কী ভাবে অরুণাচল বেড়াবেন, কী কী দেখবেন, কোথায় কী ভাবে যাবেন সে-সব তথ্য নিয়ে ভ্রমণ পরিকল্পনাটি তৈরি করেছেন তুষার পাত্র।
কী ভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে প্লেন বা ট্রেনে গুয়াহাটি। গুয়াহাটি থেকে গাড়িতে ভালুকপং হয়ে অরুণাচলে প্রবেশ।
কোথায় কোথায় যাবেন
গুয়াহাটি, ভালুকপং, বমডিলা, দিরাং, তাওয়াং, জেমিথাং।
কী ভাবে বেড়াবেন
প্রথম দিনঃ হাওড়া থেকে বিকেলে ৩.৫০এ ১২৩৪৫আপ সরাইঘাট এক্সপ্রসে গুয়াহাটির উদ্দেশে যাত্রা।
দ্বিতীয় দিনঃ সকালে গুয়াহাটিতে নেমে সোজা হোটেলে। লাঞ্চের পর কামাখ্যা মন্দির দর্শন। সময় থাকলে ব্রহ্মপুত্রের ওপর দিয়ে লঞ্চে করে ঘুরে আসুন উমানন্দ মন্দির থেকে।
তৃতীয় দিনঃ গুয়াহাটি থেকে গাড়িতে ভালুকপং। দূরত্ব ২৩৮ কিলোমিটার। সময় লাগবে ছ’ ঘন্টা। ভালুকপংয়ে রাত্রিবাস।
চতুর্থ দিন: আজ ভালুকপং থেকে গাড়িতে দিরাং । দূরত্ব ১৩৮ কিলোমিটার। পথে আমরা দেখে নেব বমডিলা মনাস্ট্রি। এ দিন দিরাংয়ে রাত্রিবাস।
পঞ্চম দিনঃ দিরাং থেকে আজ আমরা যাব তাওয়াং। দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার। পথে অতিক্রম করবো বিখ্যাত সেলা পাস। এ পথের সৌন্দর্য অতুলনীয়। উচ্চতা প্রায় ৪১৭০মিটার।সেলা পাস থেকে নামার পথে আমরা দেখব বীর যোদ্ধা যশবন্ত সিং স্মৃতি মন্দির। এখানে সেনাবাহিনীর কাফেতে সকলকে বিনা পয়সায় চা খাওয়ানো হয়। এরপর হোটেলে। এ দিন তাওয়াংয়ে রাত্রিবাস।
ষষ্ঠ দিনঃ আজ তাওয়াং থেকে প্রথমে আমরা যাব বুমলা পাস। এখানে যাওয়ার জন্যে পারমিট করতে হয়। ১৯৬২-তে এই পথ ধরেই চিনা সেনারা প্রবেশ করেছিল ভারতে। বুমলা পাস থেকে ফেরার পথে দেখে নেব সাংগাটসার লেক এবং পি টি সো লেক। লাঞ্চের পর দেখতে যাব তাওয়াং মনাস্ট্রি । এটি ভারতের বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার। আর দেখব হ্যন্ডিক্রাফট সেন্টার, বুদ্ধ মূর্তি এবং ওয়ার মেমোরিয়াল। এখানকার লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো অবশ্যই দেখবেন।
সপ্তম দিনঃ আজ তাওয়াং থেকে আমরা যাব জেমিথাং। যাওয়ার রাস্তাটি দারুণ সুন্দর। জেমিথাং যেন অন্তরালে থাকা এক স্বর্গভূমি। উচ্চতা ৮০০০ ফুট। চাষের স্বর্নাভ ভূমি, আকাশে মাথা তোলা সব পাহাড়ে ঘেরা সুবিস্তৃত উপত্যকা, নানা পাখির সুরেলা ডাক, সবমিলিয়ে সুন্দর, শান্ত জেমিথাং অরুণাচল প্রদেশের পর্যটন মানচিত্রে বিশিষ্ট গন্তব্য হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে।
জেমিথাংয়ের পথে প্রথমে আসবে লুমনা। দেখে নেব লুমনা মনাস্ট্রি। তারপর দেখব বাপটেঙ ক্যাং জলপ্রপাত। চারদিকের সবুজ প্রেক্ষাপটের মধ্যে পাহাড়ের ১০০ ফুট উচ্চতা থেকে সগর্জনে নেমে আসছে জলধারা। জেমিথাং প্রবেশের পথে এই জলপ্রপাতটি অবশ্য দ্রষ্টব্য। তারপর আপনাকে স্বাগত জানাবে গোরসাম চোর্তেন। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম চোর্তেন এটি। মনে করা হয় প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে তৈরি হয়েছিল এই চোর্তেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুবই পবিত্র এই চোর্তেনটি। প্রতি বারো বছর অন্তর চোর্তেনের দরজা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। দেখবেন নিঃশব্দে আপনার সঙ্গী হয়ে বয়ে চলেছে ন্যামজাং চু বা ন্যামজাং নদী। ঝর্ণা,পাহাড় আর নদী দিয়ে ঘেরা, চিন তথা তিব্বত সীমান্ত ঘেঁষা ছবির মতো গ্ৰাম জেমিথাং। এ যেন স্বপ্নের দেশ। আর অবশ্যই কৃতিত্ব প্রাপ্য জেমিথাং গ্রামের বাসিন্দাদের। পরিবেশ রক্ষায় তাঁরা সদা সচেতন, সদা সচেষ্ট।
জেমিথাং থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে লুমপো গ্রাম, আর লুমপো থেকে চড়াই পথে আরও ৭ কিলোমিটার উঠে গেলে মুচেট গ্রাম। মুচেট থেকে জেমিথাং ফেরার পথে রাজকীয় গরিচেন শৃঙ্গের দেখা পাওয়া যাবে। উৎসাহীরা জেমিথাং থেকে গরিচেন ট্রেক করেন। জেমিথাংয়ে থাকতে চাইলে হোমস্টে পাওয়া যাবে।
অষ্টম দিনঃ আজ সকালে আমরা রওনা হবো দিরাংয়ের উদ্দেশে। রাস্তায় দেখবো জং জলপ্রপাত। এ দিন দিরাংয়ে রাত্রিবাস।
নবম দিনঃ আজ আমরা এখান থেকে ফিরে যাব ভালুকপং। পৌঁছে দেখব ভারতের সর্ববৃহৎ টিপি অর্কিড সেন্টার। এখানে প্রায় ৭৫০০ রকমের অর্কিড রয়েছে। আর সামনে দিয়ে বয়ে চলা জিয়াভরলি নদীর তীরে তো একবার আসতেই হবে। নদী আর জঙ্গলই ভালুকপংয়ের সৌন্দর্য। আজকের রাতটাও কাটবে ভালুকপংয়ে।
দশম দিনঃ সকালে ভালুকপং থেকে গুয়াহাটির উদ্দেশে যাত্রা। গুয়াহাটি থেকে রাত ১০.৫৩মিনিটের কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রস ধরা যায়।
অথবা বিমানযাত্রা।
একাদশতম দিন: সারাদিন ট্রনে। সন্ধ্যায় শিয়ালদহ স্টেশন।