নদীর নামে গ্রামের নাম। নদীর নাম শ্রীখোলা। গ্রামের নামও তাই, শ্রীখোলা। ৬,৯০০ ফুট উচ্চতার শ্রীখোলা বৃহত্তর দার্জিলিংয়ের আরেক রূপ। সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ। তার মধ্যে ইতিউতি ছড়িয়ে কিছু কাঠের বাড়িঘর। বাড়িগুলো সুদৃশ্য কটেজের মতো দেখতে লাগে। সামনে ছোট ছোট ফুলের বাগান। পাথরে ধাক্কা খেতে খেতে বয়ে চলেছে শ্রীখোলা নদীটি। নদীর ধারে গিয়ে বসুন। বিশুদ্ধ বাতাসে শরীর-মনের ক্লান্তি উধাও হবে। চাইলে নদীতে মাছ ধরতে পারেন। প্রচুর ট্রাউট মাছ আছে শ্রীখোলা নদীতে। নদীর ওপর ছোট্ট সেতুটি ছবির মতো।
সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের পাদদেশে শ্রীখোলা গ্রামটির অবস্থান। গ্রামের প্রান্তে বার্চ, পাইনের বন। গ্রামের মধ্যে বড় এলাচ, ভুট্টার চাষ হয়। সান্দাকফু, ফালুট ট্রেক করে ফেরার পথে সাধারণত শ্রীখোলা বিশ্রামস্থল। এদিকটায় সেই ট্রেকিংয়ের শেষ পয়েন্ট শ্রীখোলা। গাড়ি চলাচল করে শ্রীখোলা পর্যন্তই। দার্জিলিং শহর থেকে শ্রীখোলা পথের বিচারে ৬১ কিলোমিটার। কিন্তু দার্জিলিংয়ের হৈ চৈ, ভিড়ভাট্টা থেকে সে এক এক অনেক দূরের জগৎ। গ্রাম বেড়ান। আঞ্চলিক মানুষজনের সঙ্গে আলাপ জমান। একটি মনাস্ট্রি আছে শ্রীখোলা গ্রামে।
শ্রীখোলা থেকে ৬ কিলোমিটার ট্রেক করে ৭,১৫০ ফুট উচ্চতার গুরদাম উপত্যকায় যাওয়া যায়। ঘন অরণ্যে ঘেরা গুরদাম উপত্যকার বন্য রূপের একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। এই গুরদাম থেকে আরও ১০ কিলোমিটার ট্রেক করে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পয়েন্ট ১১,৯২৯ ফুট উচ্চতার সান্দাকফুতে পৌঁছে যাওয়া যায়। অর্থাৎ শ্রীখোলা থেকে মোট ১৬ কিলোমিটার ট্রেক করে সান্দাকফু পৌঁছানো যায়। আবার শ্রীখোলা থেকে ১২ কিলোমিটার ট্রেক করে রাম্মাম যাওয়া যায়। রাম্মামের উচ্চতা ৮,৪০০ ফুট। রাম্মাম থেকে ৯ কিলোমিটার এগলে গোর্কে গ্রাম। গোর্কে থেকে আরও ১৫ কিলোমিটার ট্রেক করে পৌঁছানো যায় ফালুট, উচ্চতা ১১,৮১১ ফুট। সান্দাকফু-ফালুট দূরত্ব ২১ কিলোমিটার। বেশি হাঁটাহাঁটিতে ইচ্ছে না থাকলে শ্রীখোলাতেই বিশ্রাম নিন নিজের মতো করে।
দার্জিলিং শহর থেকে শ্রীখোলা ৮৭ কিলোমিটার। এন জে পি থেকে ১৩২ কিলোমিটার। এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার গাড়িতে মানেভঞ্জন বা ঘুম চলে আসা যায়। ঘুম থেকে মানেভঞ্জন যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পাওয়া যাবে। মানেভঞ্জন থেকে শ্রীখোলা ৪১ কিলোমিটার। বেলা ১টা নাগাদ শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড় থেকে সরাসরি শ্রীখোলা যাওয়ার শেয়ার জিপ ছাড়ে (সাধারণত)। দার্জিলিং থেকেও সকালে ও দুপুরে শ্রীখোলা যাওয়ার শেয়ার জিপ পাওয়া যেতে পারে। দার্জিলিংয়ের মল এলাকা থেকে খানিকটা নেমে জিপ স্ট্যান্ডে গিয়ে শেয়ার জিপের খোঁজ করতে পারেন। এন জে পি বা শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি শ্রীখোলা যাওয়া যেতে তো পারেই। এন জে পি থেকে শ্রীখোলা ১৩২ কিলোমিটার। মানেভঞ্জন পৌঁছে সেখান থেকেও শ্রীখোলা ট্রিপের জন্য গাড়িভাড়া করতে পারেন। শেয়ার গাড়িতে করেও গোটা ট্রিপটা সম্পূর্ণ করা যায় অবশ্য। তাতে সময় বেশি লাগবে। খানিকটা অনিশ্চয়তাও কাজ করে।
থাকার ব্যবস্থা
হোটেল শোভরাজ, ফোনঃ ৯৯৩৩৪-৮৮২৪৩, ৯৮৩২৩-৭৫৫৪৬। লিপ্পোহোচ্ছা হোমস্টে, ফোনঃ ৮৯৭২৮-৫৯২৩১, ৯৭৩৫০-৩৪৬২৬, পানকর্মা হোমস্টে, ফোনঃ ৭০০১৯-৬৭২৯৭। রেড পান্ডা হোটেল, হোমস্টে, ফোনঃ ৯৭৩৩০-৬১৭৯৩।