বেড়াতে গেলে আঞ্চলিক দোকান-বাজার একটু ঘুরে তো দেখতেই হয়। ওটা বেড়ানোরই অঙ্গ। কেনাকাটা যতটা, তারচেয়ে বেশি দেখাশোনা। আত্মীয়-পরিজনদের জন্য টুকটাক উপহার সামগ্রী কিনতে হয়। নিজেদের পরিবারের জন্যেও দরকার হয় এটা সেটা। আর বাজারহাট পর্যবেক্ষণ করে আঞ্চলিক সংস্কৃতির নানা দিক সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া যায়। সেটাও কম পাওনা নয়।
বছরভর পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমে বেড়াতে যান লাখো মানুষ। সমতল থেকে পর্বত। আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটে যায় রুচিতে, পোশাক-আশাকে, সংস্কৃতিতে। সেই পরিবর্তনটা ধরা পড়ে বাজারগুলিতেও। সিকিমে ভুটানি, লেপচা ও নেপালি সংস্কৃতির মধ্যে মিশ্রণ ঘটেছে কয়েক শতক ধরে। তিব্বতীয় সংস্কৃতিরও একটা বড় প্রভাব রয়েছে সিকিমের জীবনধারায়। সব মিলেমিশে সিকিমিজ সংস্কৃতি।
কেনাকাটা
ফ্যাশন জুয়েলারিঃ মিশ্র ধাতু ও নানারকমের পাথর ব্যবহার করে তৈরি ফ্যাশন জুয়েলারি তৈরি হয় সিকিমে, সংগ্রহ করা যেতেই পারে। তিব্বতীয়, লেপচা, নেপালী ঘরানার নানা অলঙ্কার পাওয়া যাবে। তিব্বতীয় কিছু অলঙ্কারে মঙ্গোলিয়ার অলঙ্কার-ঐতিহ্যের নিদর্শন পাওয়া যাবে।
কাঠের মুখোশঃ সিকিমের কাঠ-খোদাই ও কাঠের মুখোশ শিল্পের ঐতিহ্য দীর্ঘকালের। অতীতে সিকিমের বৌদ্ধ মঠগুলিতে কাঠ-খোদাই শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করা হত। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সিকিমের কাঠের মুখোশের যথেষ্ট চাহিদা আছে।
থাঙ্কাঃ সিকিমের থাঙ্কা পেন্টিংয়ের সুনাম পৃথিবীজুড়ে। থাঙ্কা শিল্পের উদ্ভব ঘটেছিল তিব্বতে। আগে সিকিমের মনাস্ট্রিগুলিতে সন্ন্যাসীরা থাঙ্কা আঁকতেন। সিকিমের মনাস্ট্রিগুলিতে প্রাচীণ সব থাঙ্কা দেখা যায়। কালক্রমে থাঙ্কাশিল্পের প্রসার ঘটে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সাধারণত রেশমের বস্ত্রখণ্ডে নানা রঙ ব্যবহার করে থাঙ্কা আঁকা হয়। গৌতম বুদ্ধের জীবনের নানা কাহিনি, বৌদ্ধধর্ম-বিষয়ক নানা উপকথা উপস্থাপিত হয় থাঙ্কা চিত্রে।
কার্পেটঃ সিকিমের উলের তৈরি কার্পেটের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে দেশে-বিদেশে। সাধারণত ভুটিয়া মহিলারা উল্লম্ব তাঁত ব্যবহার করে কার্পেট তৈরি করেন। মেঝে, চেয়ার, সোফা, ঘরের দেওয়ালে টাঙানোর উপযোগী নানা মাপের কার্পেট পাবেন সিকিমের বাজারে।
চিত্রিত কাপঃ বাইরের দিকে নানা মোটিফ আঁকা চা-কফি খাওয়ার কাপ সিকিমের একটি বিশিষ্ট শিল্প সামগ্রী। মশলা রাখারও ভালো পাত্র ঢাকনা দেওয়া এই কাপগুলি উপহার দেওয়ার পক্ষে খুবই ভালো।
চোকসি টেবিলঃ সূক্ষ্ম ডিজাইনার টেবিল চোকসি। ঐতিহ্যশালী তিব্বতীয় দারুশিল্পের দারুণ এক নমুনা এই চোকসি টেবিল।
প্রার্থনা চক্রঃ প্রার্থনা চক্র বা প্রেয়ার হুইল সিকিমের ধর্মীয় সংস্কৃতির মর্যাদাপূর্ণ প্রতীক। গ্যাংটকের যে কোনও বাজারে কিনতে পাবেন।
শীতবস্ত্রঃ ঠান্ডার জায়গা সিকিম। ফলে সেখানে যে নানারকমের শীতবস্ত্র পাওয়া যাবে সেটাই স্বাভাবিক। সোয়েটার, জ্যাকেটের সম্ভার মুগধ করবে। হস্তচালিত তাঁতে বোনা জ্যাকেট সিকিমের পোশাক সংস্কৃতির একটি বিশিষ্ট উদাহরণ।
হোম মেড চিজঃ সিকিমের হোম মেড চিজের সুনাম আছে। সংগ্রহ করতে পারেন।
ওয়াইনঃ সিকিমে রডোডেনড্রনের ফুল, আদা, এলাচ থেকে তৈরি ওয়াইন পাওয়া যায়। রসিকজনেরা সংগ্রহ করতে পারেন। উপহার দেওয়ার জন্য ওয়াইন ও নানা স্পিরিটের ছোট ছোট সুদৃশ্য পাত্রের সংগ্রহ কিনতে পাওয়া যায় লিকার শপগুলিতে।
বাজার
সিকিমের বড় ও নামী বাজারগুলি অবস্থিত রাজধানী গ্যাংটকেই। সংগ্রহযোগ্য যাবতীয় সামগ্রী পাওয়া যাবে এই বাজারগুলিতে। নীচে নামী কয়েকটি বাজারের কথা জানানো হল।
এম জি মার্গ মার্কেটঃ এম জি মার্গ প্রকৃতপক্ষে গ্যাংটকের প্রাণকেন্দ্র। সারি সারি হোটেল, রেস্তোরাঁ, শোরুম। সামগ্রিক ভাবে একটি ঝকঝকে বাণিজ্যিক অঞ্চল। গ্যাংটকের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, এম জি মার্গে পর্যটকদের পা পড়বেই। সংগ্রহযোগ্য সবকিছুই পাওয়া যাবে এম জি মার্গ মার্কেটে। বইপ্রেমিরা এম জি মার্গেই পেয়ে যাবেন বড় বুক স্টোর। সিকিম টুরিজম ইনফর্মেশন সেন্টার এই এম জি রোডের ওপরেই।
এম জি মার্কেটের পূর্বপ্রান্ত থেকে একটু ডাইনে গেলে টিবেট রোড। সিকিম সরকারের ডিরেক্টরেট অফ হ্যান্ডিক্রাফটস অ্যান্ড হ্যান্ডলুমসের এম্পোরিয়াম এই টিবেট রোডে। সিকিমের হস্তশিল্প সামগ্রীর বিপুল সম্ভার পাওয়া যাবে এখানে।
নিউ মার্কেট
এম জি রোডের এক প্রান্তে নিউ মার্কেট একটি জনপ্রিয় বাজার এলাকা। এখানে পাবেন পোশাকের সম্ভার, ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজ। নানা কিসিমের জ্যাকেট ও শাল প্রলোভন দেখাবে। পাবেন হরেক ডিজাইনের ফ্যাশন জুয়েলারি। ড্রাই ফ্রুটস।
ওল্ড মার্কেট
এখানে পাবেন নানান হস্তশিল্প সামগ্রী। ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজ।
লাল বাজার (কাঞ্চনজঙ্ঘা শপিং কমপ্লেক্স)
গ্যাংটক ও সংলগ্ন অঞ্চলগুলির রান্নাঘরের প্রায় সমস্ত উপকরণের সরবরাহ হয় এই লাল বাজার থেকে। পর্যটকরা এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন ঘরে তৈরি চিজ, অ্যালপাইন চিজ, পাহাড়ি ডালে লঙ্কা (খুব ঝাল) ও ব্যাম্বু শুটের আচার। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত শাক-সবজির সম্ভার দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। রবিবার লাল বাজারে হাটের দিন। এদিন লাল বাজার আরও জমজমাট। আশেপাশের গ্রামগুলি থেকেও প্রচুর মানুষ আসে বাজারে। নানা ভাষা নানা পরিধানের সিকিমকে দেখা যায় লাল বাজারে। কেনাকাটার প্রয়োজন না থাকলেও লাল বাজারটা একবার ঘুরে দেখে নেওয়াই যায়। সিকিমের খাদ্য সংস্কৃতিরও একটা আন্দাজ পাওয়া যায় লাল বাজারে।