Follow us
Search
Close this search box.

মরসুমি কাশ্মীরঃ বর্ষায়, হেমন্তে

মরসুমি কাশ্মীরঃ বর্ষায়, হেমন্তে

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর কাশ্মীরে বর্ষা। তুমুল বৃষ্টি তেমন হয় না উপত্যকায়। স্বল্প থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। সাধারণভাবে কাশ্মীরে এই বর্ষার মরসুম অফ-সিজন বলে গণ্য হয়। এটা ঠিক যে, বর্ষায় হোটেলের ভাড়ায় ছাড় পাওয়ার সুযোগ থাকে।

কাশ্মীরের জলছবি দেখতে হলে তো বর্ষার মরসুমেই আসতে হয় উপত্যকায়। ঝিলম, লিডার, নীলম, সিন্ধু, রাভি, পুঞ্চ এবং উপত্যকার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা আরও সব নদী তখন প্রাণচঞ্চল। গর্জন করে, গান গায়, কথা বলে তারা। ডাললেক, মানসবল লেক, নাগীন লেক, উলার লেকে মেঘ-রোদ্দুরের অকল্পনীয় সব ছবি আঁকা হয়।

তখন সরোবরের পদ্মবন থেকে পদ্মডাঁটি সংগ্রহ করবেন আঞ্চলিক মানুষজন। ওটা বিভিন্ন কাশ্মীরি খাদ্যে ব্যবহৃত হয়। শুকনো পদ্মডাঁটি বিক্রি হয় বর্ষার পরে। সরোবরগুলিতে ঝিকিয়ে উঠবে মাছেরা। উৎকৃষ্ট মানের ট্রাউট পাওয়া যায় লেকগুলিতে। লেক থেকে ট্রাউট ধরে পারে বসে রান্না করে খাওয়ার সে মজার কথা সহজে ভোলা যায় না।

বর্ষায় গাঢ় সবুজ অরণ্য, তৃণভূমি। কোকেরনাগ, অহরবল, নুরি চ্যাম্ব, সিয়ারবাবা টেম্পল জলপ্রপাতগুলির জাগ্রত রূপ দেখা যায় এই বর্ষার মরসুমেই।

অগস্ট মাসে থেকে শুরু হয়ে যায় আপেলের ফলন ঘরে তোলার কাজ। আপেল বাগিচাগুলিতে এ সময় তুমুল ব্যস্ততা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উপত্যকায় আপেল বাগানের ছবিগুলিও খুব রঙিন।

বর্ষার পরে অবাক করা রং ধরে চিনারের বনে। রাস্তার ধারে ধারে চিনারের সারিতে। দিকে দিকে। আকাশে-বাতাসে লাল, গোলাপী, সবজে হলুদ, গাঢ় হলুদ, রঙের কত শেড। এক সময় আগুনের শিখা ক্রমশ সোনালী হয়ে উঠবে। অনেকে স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে ওঠা এই হেমন্তেই কাশ্মীরে বেড়াতে পছন্দ করেন।

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর কাশ্মীরে হেমন্ত। শীতের আগে আগে। বাতাসে ঠাণ্ডার শিরশিরানি। উপভোগ্য আবহাওয়া। পাল্টে যায় ডাললেক তীরের বুলেভার্ড রোডের রং। শ্রীনগর ও তার আশেপাশের এলাকাগুলোর দৃশ্যপট বদলে যায় ওই চিনারের বর্ণ-বাহারে। অক্টোবরের শেষের দিকে পাতা ঝরবে। চলার পথে ছড়ানো থাকবে ঝরাপাতা। জোরে হাওয়া দিলে গায়ে এসে পড়ে প্রজাপতির মতো। পাতা ঝরার শব্দ শোনা যায়। ঝরে যাওয়া শুকনো চিনার পাতা অনেকে সংগ্রহ করে রাখেন। শীতে কাংরি জ্বালানোর জন্য। প্রবল ঠাণ্ডায়, তুষারপাতে মাটির পাত্রে তুষের আগুনের মতো ধিকি ধিকি জ্বলে চিনারের পাতা। ব্যবহৃত হয় কাঠকয়লাও। শীতে কাংরি সঙ্গী বাড়িতে, বাড়ির বাইরেও।

নভেম্বরে আসন্ন শীতের পদধ্বনি শোনা যায়। তাপমাত্রা নেমে যায় অনেকখানি। হঠাৎ হঠাৎ তুষারপাত হয় উপত্যকার কোথাও কোথাও। রাতের তাপমাত্রা ৩-৪ সেন্টিগ্রেডে নেমে যায়। কখনো শূণ্য ডিগ্রিতেও নেমে আসে। শীতের সূচনা ঘটে যায়। সবুজ তৃণভূমিতে সাদা বরফ বিছিয়ে থাকবে তখন। গুলমার্গের গন্ডোলা থেকে সে দৃশ্য পুরনো হবার নয়।

তারপর তো চিলাই কালানের মরসুম। ‘চিলাই কালান’ একটি পারসিক শব্দবন্ধ। বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘প্রচণ্ড শীত’। কাশ্মীরিরা দুর্দান্ত শীতকে’চিলাই কালান’ বলে থাকেন। ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে গোটা জানুয়ারি চিল্লাই কালানের সময়কাল। তুষারপাত। বরফে মোড়া কাশ্মীর। স্কিয়িংয়ের আসর বসবে গুলমার্গে। এ সময়ের জমাটবাঁধা বরফ দেখা যায় এপ্রিল-মে মাসেও।

ফটোঃ তপন মুখোপাধ্যায় (শ্রীনগর)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *