Follow us
Search
Close this search box.

সে এক রোমান্টিক জগৎ

সে এক রোমান্টিক জগৎ

দার্জিলিং ও পার্শ্ববর্তী কালিম্পং জেলার পাহাড়ে পাহাড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ছবির মতো সব গ্রাম। প্রত্যেক গ্রামের নিজের মতো করে একটা নাম রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রামের মূল নামের সঙ্গে ‘গাঁও’ শব্দটি যুক্ত হয়ে থাকে। দার্জিলিং শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে প্রায় ৭০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মূলত লেপচা জনজাতির অধিবাসীদের গ্রামটির নামের সঙ্গে ‘জগৎ’ কথাটি যুক্ত হয়ে রয়েছে। এই পার্বত্য অঞ্চলে আর কোথাও গোটা একটা জগতকে যুক্ত করে আর কোনও গ্রামের নাম পাওয়া যায় কি? গ্রামের নাম লেপচাজগৎ। নামটি তো ‘লেপচা গাঁও’ হতেই পারত। না, লেপচাজগৎ। নামকরণের ইতিহাস যা-ই হোক না কেন, এই লেপচা গ্রামটি তার সমস্ত রূপ, রস নিয়ে এক জগৎ-ই বটে। এক আশ্চর্য রোমান্টিক জগৎ। সেটা টের পাওয়া যায়। আর সেখানেই মনে হয় লেপচাজগত বিশিষ্ট।

লেপচাজগৎ দার্জিলিং জেলার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে গেছে আগেই। কিন্তু এই পার্বত্য গ্রামটির পাল্টে পাল্টে যাওয়া ছবিগুলি পুরনো হবার নয়। এ গ্রামের বাতাসে ফুলের আঘ্রাণের মতো ভালোবাসার সুর উড়ে বেড়ায়।

পাইন, ওক, রডোডেন্ড্রনের জঙ্গলে ঘেরা গ্রামটিতে রোদ্দুর, মেঘ, কুয়াশার অনির্বচনীয় খেলা চলে দিনভর। দিগন্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও তার সাথী শৃঙ্গগুলিকে স্বপ্নের মতো মনে হয়। পাখির ডাক, বুনো ফুল, প্রজাপতি, মেঘ-কুয়াশা, আলো-ছায়া, ঝিঁঝিঁ’র তান। এক বাঙ্ময় নীরবতা ছেয়ে থাকে লেপচাজগতে। হাতে গোনা কিছু পরিবার ও অল্প কিছু মানুষের বসবাস এ গ্রামে। তাঁদের হাসিতে নিষ্কলুষ প্রকৃতিকে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়।

গ্রামে কয়েকটা হোমস্টে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের ইকো টুরিজম সেন্টার তথা রিসর্ট রয়েছে লেপচাজগতে। অবস্থানটি চমৎকার। রিসর্টের ছাদ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও তার সহচরদের তুষারাবৃত শৃঙ্গ বেশ দেখা যায়। ঘরের ভাড়া ২,০০০-৩,০০০ টাকা। সঙ্গে জি এস টি যোগ হবে। অনলাইনে ঘর বুক করা যাবে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমেঃ https://wbfdc.net/ ফোন (বন উন্নয়ন নিগম) – 7604044479.

লেপচাজগতে থাকলে ঘরে মন টিঁকবে না। জঙ্গল-পথ ক্রমশ গভীরে ডাকে। রিসর্ট এলাকা থেকে বনের মধ্যে দিয়ে এক কিলোমিটার পথ হেঁটে পৌঁছানো যায় ভিউ পয়েন্টে। জঙ্গলের পথ ধরে সেই হাঁটাটাই প্রথমত ভালো লাগবে। ভিউ পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা শেণির দৃশ্য দেখে মন ভরে যায়। গ্রামের কেন্দ্রীয় এলাকা থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের ‘ঘুম রক’ থেকে বালাসন উপত্যকা খুব ভালো দেখা যায়। এখান থেকে চমৎকার সূর্যোদয় দেখার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সঙ্গ দেবে হরেক কিসিমের পাখি।

লেপচাজগৎ থেকে দার্জিলিংয়ের আরেক টুরিস্ট স্পট জোরপোখরি ৫ কিলোমিটার। জোরপোখরির কাছাকাছি সুখিয়াপোখরি। লেপচাজগৎ থেকে সান্দাকফু যাওয়ার বেস ক্যাম্প মানেভঞ্জন ১১ কিলোমিটার। লেপচাজগৎ থেকে নেপালের পশুপতি মার্কেট ১৫ কিলোমিটার।

দার্জিলিংয়ের শহরের সঙ্গে লেপচাজগৎকে যুক্ত করে সুন্দর একটি টুর প্ল্যান তৈরি করা যায়। দুটো দিন লেপচাজগতে থাকা গেলে জায়গাটার রস উদ্ঘাটনে সুবিধা হয়। শরীর-মনও তরতাজা হয়।

শিলিগুড়ি থেকে লেপচাজগতের দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার। দু’ ভাবে যাওয়া যায়। একটি পথ ঘুম হয়ে, আরেকটি পথ মিরিক, সুখিয়াপোখরি হয়ে। এন জে পি থেকে শেয়ার গাড়িতে ঘুম পৌঁছে ওখান থেকে শেয়ার গাড়িতে লেপচাজগৎ যাওয়া যায়। বছরভরই লেপচাজগতে বেড়াতে যাওয়া যায়। উদাত্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সেরা সময় অক্টোবর থেকে মার্চ।

থাকার জন্য রয়েছেঃ লেপচাজগৎ হোমস্টে (097336 95089), ভুটিয়া হোমস্টে (070479 35044), পাখরিন হোমস্টে (096142 70044), আলিশা হোমস্টে (094762 93017). আরও কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে লেপচাজগতে।

ফটো
প্রথম (স্লাইডার), দ্বিতীয় ও সর্বনিম্ন ফটো – তুষার পাত্র
তৃতীয় ও চতুর্থ ফটো সৌজন্য: পাখরিন ও আলিশা হোমস্টে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *