বর্ষায় গোপালপুরের বৃষ্টিসিক্ত নিরিবিলি সৈকতে হেঁটে বেড়ানোর তুলনা হয় না। দক্ষিণ ওড়িশায় বঙ্গোপসাগরের তীরে গোপালপুর অন-সি একটি শান্ত, সুন্দর সৈকত শহর। সমুদ্রতীরের কোনও হোটেলে ব্যালকনিতে ধূমায়িত চা নিয়ে বসে নানা ছন্দের সমুদ্র দেখতে দেখতেই কেটে যায় সময়। সে বিলাসী অলসতা, ছুটির মেজাজ। আবার বর্ষার উত্তাল সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টেতে ভেজার অন্য স্বাদ। বৃষ্টি না থাকলে বেরিয়ে পড়ুন। বেড়িয়ে নিন আশপাশটা। ব্রহ্মপুর বা বেরহামপুর স্টেশন থেকে গোপালপুরের সৈকতের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার।
প্রাচীণকালে, কলিঙ্গ রাজাদের আমলে গোপালপুর একটি বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। তবে গোপালপুর ‘গোপালপুর অন-সি’ হয়ে উঠেছে ব্রিটিশ আমলে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশরা গোপালপুরকে বন্দর হিসেবে ব্যবহার করেছিল।
ওড়িশার প্রথম আধুনিক হোটেলটি গড়ে উঠেছিল এই গোপালপুরেই। সিগনর ম্যাগলিওনি নামের এক ইতালীয় ১৯১৪ সালে গোপালপুরে তৈরি করেছিলেন পাম বিচ রিসর্ট। অনেকের মতে এটিই ভারতের প্রথম বিচ রিসর্ট। ওবেরয় গ্রুপের হাত ঘুরে বর্তমানে মেফেয়ার গ্রুপের মালিকানাধীন এই হোটেলটি। গোপালপুর শহরের মধ্যে দিয়ে বেড়ালে প্রায়-ধ্বংসপ্রাপ্ত অনেক প্রাসদোপম সব বাড়ি পুরনো গোপালপুরের সমৃদ্ধির সাক্ষ্য বহন করছে।
গোপালপুরের সৈকতে দাঁড়িয়ে অসাধারণ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সাক্ষী থাকা যায়। সৈকতে পদচারনা শরীর ও মনকে উজ্জিবীত করে। ভোরে ও শেষ বিকেলে মাছধরা নৌকাগুলো ফিরে আসে। ঢেউ ভাঙার শব্দ শুনতে শুনতে ঘোর লেগে যায়। সৈকতের লাইটহাউস থেকে সমগ্র গোপালপুরকে দেখা যায় পাখির চোখে।
আশেপাশে
বেড়িয়ে আসতে পারেন চিলিকা হ্রদের প্রবেশদ্বার রম্ভা থেকে। গোপালপুর থেকে দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। গোপালপুর থেকে তারাতারিনী মন্দির ৩০ কিলোমিটার। ঋষিকুল্যা নদীর তীরে একটি ছোট পাহাড়ের উপরে চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে এই মন্দিরটি। এটি একটি শক্তিপীঠ।
প্রাচীণ ইতিহাসে যাঁদের বিশেষ আগ্রহ, তাঁরা গোপালপুর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের যৌগদা যেতে পারেন। তারাতারিনী মন্দিরের কাছাকাছি জায়গাটি। প্রাচীণ শিলালিপি, নানা টেরাকোটা সামগ্রী, মুদ্রা ইত্যাদির সংগ্রহ দেখা যায় এখানে। অতীতে ঋষিকুল্যা উপত্যকায় যে একটি উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তার সাক্ষ্য দেয় এইসব সামগ্রী।
ওড়িশার আরেক নিরালা ও শান্ত সৈকত আর্যপল্লী। গোপালপুরে থেকেই বেড়িয়ে নেওয়া যায়। দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। নীল সমুদ্র, তীর বরাবর ঘন সবুজ কাজু গাছের সারি, মাঝে সোনালী বালির ঝকঝকে সৈকত। ব্যস্ত ব্রহ্মপুর শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্ব মাত্র। সৈকত তীরে রয়েছে মৎসজীবীদের বসতি। আদিগন্ত বঙ্গোপসাগরকে সামনে রেখে শান্তিতে বেড়ানো যায় আর্যপল্লী সৈকতে। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তে আর্যপল্লীর আকাশে, জলে রঙের খেলা চলে। কাছাকাছি শহর ছত্রপুর।
গোপালপুর থেকে তপ্তপানি ৬৫ কিলোমিটার। উষ্ণ প্রস্রবণের জন্য বিশেষ খ্যাতি তপ্তপানির। প্রস্রবণের সালফার-সমৃদ্ধ জল শরীরের পক্ষে নানাভাবে উপকারী। তপ্তপানির নৈসর্গিক সৌন্দর্যও কম যায় না। তপ্তপানিতে থাকার জন্য ওড়িশা পর্যটনের পান্থনিবাস রয়েছে।
যাওয়ার পথ
হাওড়া-এর্নাকুলাম স্পেশাল, হাওড়া-যশবন্তপুর সুপারফাস্ট, শালিমার-সেকেন্দ্রাবাদ স্পেশাল, ফলকনামা এক্সপ্রেস-সহ বিভিন্ন ট্রেন ব্রহ্মপুর যাচ্ছে।
থাকার ব্যবস্থা
পান্থনিবাস, গোপালপুর, ফোনঃ ৬৮০২৩-৪৩৯৩১। মেফেয়ার পাম বিচ রিসর্ট (ওড়িশার প্রথম হোটেল), ফোনঃ ৯২৩৭৫-০০১০১। হোটেল সি পার্ল, ফোনঃ ৬৮০২৩-৪৩৫৫৭। গোপালপুর পাম রিসর্ট, ফোনঃ ৯৩৩৭৪-৭৬৪৭৮। হোটেল ময়ূরী, ফোনঃ ৬৮০২২-৫০৮৮২।
ফটো সৌজন্য
হেডার ফটোঃ টুরিজম অব ইন্ডিয়া।
দ্বিতীয় ছবিঃ ওড়িশা টুরিজম।