Follow us
Search
Close this search box.

পুজোর পুরী জমজমাট, কম যায় না কটকও

পুজোর পুরী জমজমাট, কম যায় না কটকও

পুরী বছরভরই জমজমাট। রথযাত্রায় পুরী জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে আরেক আঙ্গিকে সেজে ওঠে শ্রীক্ষেত্র পুরী। রাস্তায় আলোর রোশনাই, জনাকীর্ণ দোকান-বাজার, ভিড়ে ঠাসা রেস্তোরাঁ, পটচিত্রের গ্রাম রঘুরাজপুর, চিল্কা লেক বা কোনার্কের দিকে ছুটে চলা গাড়ি, শহরের মধ্যে রিকশা, টোটোয় চড়ে মন্দির-পরিক্রমা, মুখর হোটেল-লজ, মেলার মেজাজের স্বর্গদ্বার, সব মিলিয়ে পুজোর পুরী উৎসবমুখর। চেনা সমুদ্রের আবারও কত রূপ, রং। শরতের সমুদ্র।

পুরীর পুজো, ঐতিহ্যের গোসানি যাত্রা

পুরীর দুর্গোৎসব নিজের মতো করে ‘গোসানি যাত্রা’ নামে পরিচিত, বিশেষ করে ভূমিপুত্রদের কাছে। পুজোর নানা উপকরণ, কাঠের মূর্তি ও সরঞ্জামের ব্যবহার, মহিষাসুরমর্দিনী দেবীর সঙ্গে মণ্ডপে, মন্দিরে দানবের মূর্তি, রাবণের মূর্তির উপস্থিতি, এলাকা ভেদে গোসানি যাত্রার নানা নাম ইত্যাদির কারণে পুরী এবং সামগ্রিক ভাবে ওড়িশার দুর্গাপুজোর উৎসবের উৎসটি লোক-সংস্কৃতির সঙ্গে প্রবল ভাবে যুক্ত বলে বলে মনে করা হয়। দুর্গাপুজোর সময় পুরীতে থাকলে ঠাকুর দেখার সময় এরকম অনুষঙ্গগুলোর দিকে একটা চোখ রাখতে পারেন।

গঙ্গ সাম্রাজ্যের চোড়গঙ্গ দেব একাদশ শতকে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে শক্তির উপাসনা করেছিলেন বলে জানা যায় প্রাচীন নানা বিবরণী থেকে। হয়তো লোক-ধর্মাচরণ রাজন্য আনুকূল্য পেল এ সময়ে। এ হল আধুনিক সময়ের কথা। মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে বর্তমান ওড়িশা অঞ্চলে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৩০০ বছর আগে, চেদি সাম্রাজ্যের রাজা সুরথ দেবীর পুজো করেছিলেন ওই সময়ে।

পুরীর পুজোগুলো বেড়িয়ে দেখলে চোখে পড়বে, অসুরের মাথাটি মহিষের, বাকি শরীরটা মানুষের। দেবী যুদ্ধরতা। অসুর ও দেবী পরস্পরের দিকে চেয়ে রয়েছেন এক দৃষ্টিতে। সোলা ও জরির কাজে মূর্তিগুলি উজ্ঞ্বল। অনেক মণ্ডপেই থাকে ‘নাগা’ মূর্তি। বলশালী পুরুষের মূর্তি। সেই লোক-স্ংস্কৃতির সঙ্গে ধর্মের যোগাযোগের কথা আসে, জনজাতি মানুষের প্রসঙ্গ আসে।

দশেরা বা বিজয়াদশমীর পরের দিন পুরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শোভাযাত্রা-সহ প্রতিমা এসে পৌঁছায় জগন্নাথদেবের মন্দিরের সামনে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি ‘ভাসানি যাত্রা’ নামে পরিচিত। মন্দিরেরর সামনে বিপুল ভিড় হয় এদিন। তারপর সমুদ্র, নদীতে সপার্ষদ দেবীমূর্তির বিসর্জন।

বিমলা মন্দিরের দুর্গাপুজো

পুরীর জগন্নাথ মন্দির চত্বরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে, রোহিণী কুণ্ডের পাশে বিমলা দেবীর দেউল আকৃতির মন্দিরটির অবস্থান। এটি একটি শক্তিপীঠ হিসেবে মান্যতা পায়। বিমলা দেবী জগন্নাথদেবের তান্ত্রিক আচরণের সহযোগী। জগন্নাথ দেব ভৈরব। বৈষ্ণব ও তান্ত্রিক ভাবধারার সহাবস্থানের এক প্রকৃষ্ট নিদর্শন। দেবী বিমলা জগন্নাথ মন্দিরের রক্ষাকর্ত্রীও বটে।

দেবতা জগন্নাথকে অর্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করা খাদ্য সামগ্রী দেবী বিমলাকে অর্পণ না করা পর্যন্ত তা ‘মহাপ্রসাদ’ হয় না। দেবী বিমালা দুর্গারই আরেক রূপ। জগন্নাথ মন্দির চত্বরের এই বিমলা দেবীর মন্দিরে ঐতিহ্যমণ্ডিত দুর্গাপুজো দেখার সুযোগ রয়েছে।

পুজোর কটক উৎসবমুখর

ওড়িশার পূর্ববর্তী রাজধানী কটকে সাড়ম্বরে দুর্গোৎসব পালিত হয়। কটককে ওড়িশার সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। অন্তত ১০০০ বছরেরে প্রাচীন শহর। বর্তমান কটক ওড়িশার বাণিজ্যিক রাজধানী। বড় বড় মণ্ডপ, আলোর ঝরনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জনসমাগমে কটক শহরটি গমগম করে দুর্গাপুজোর সময়ে। অনেকেরই, বিশেষ করে কটকের পুরনো বাসিন্দাদের মতে, আড়ম্বর উৎসাহ ঐতিহ্যের দিক থেকে কটকের দুর্গোৎসবের স্থান কলকাতার পরেই।

পুরী থেকে ট্রেন ও সড়কপথে কটক যথাক্রমে ৯০ ও ৮০ কিলোমিটার। দিনে দিনে বেড়িয়ে আসা যায়। একটা দিন কটকে থাকার ব্যবস্থা করা গেলে এখানকার বড় পুজোগুলো সময় নিয়ে বেড়িয়ে দেখা যায়।

কটকের ওড়িয়া বাজার এলাকায় যে বাড়িতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্ম সেটি এখন একটি সংগ্রহশালা, ‘নেতাজি বার্থ প্লেস মিউজিয়াম’। নেতাজির ব্যবহৃত বই, তাঁর লেখা গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র রয়েছে এখানে। ঘুরে দেখা যায় সংগ্রহশালাটি। কটকে এবং কটকের কাছাকাছি বেড়িয়ে দেখার অনেক জায়গা আছে। কটকের সামুদ্রিক মিউজিয়ামটির যথেষ্ট খ্যাতি আছে। কটক থেকে চিড়িয়াখানা নন্দনকানন ১৪ কিলোমিটার। কটক শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে ধবলেশ্বর মন্দির ২৭ কিলোমিটার। গোদাবরী নদীর মধ্যে একটি দ্বীপে এই শিবমন্দিরটির অবস্থান। হৃষিকেশের রামঝুলা, লক্ষ্মণঝুলার মতো একটি সেতু পেরিয়ে মন্দিরে পৌঁছাতে হয়।

ওডিশা টুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের কটক ঘুরিয়ে দেখানোর একটি প্যাকেজ আছে। তথ্যের জন্য যোগাযোগের নম্বরঃ ০৬৭১-২৩০৬৯১৬, ০৬৭১-২৩০৬৮৬৭।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *