সকালে এন জে পি পৌঁছে রওনা দিলাম রিনঘিমের উদ্দেশে। এন জে পি থেকে উত্তর সিকিমের রিনঘিমের দূরত্ব ১৪৬ কিলোমিটার। পথে ব্রেকফাস্ট হল সেবকে। তারপর বেশ কয়েক ঘণ্টা পথচলা। পেরিয়ে যাচ্ছি একটার পর একটা অজানা পাহাড়ি জনপদ। যেদিকে চোখ যায় শিল্পীর তুলিতে আঁকা সবুজের ক্যানভাস যেন। গাড়ির চালকের পরামর্শ মতো একটা ছোট ফ্যামিলি রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ সারা হল। জায়গাটার নাম ডিকচু। প্রকৃতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে রেস্তোরাঁর চেয়ার টেবিল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে কাঠের গুঁড়ি। রেস্তোরাঁর কোল ঘেঁষে কুলকুল করে বয়ে চলেছে তিস্তা।
ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। বৃষ্টির মধ্যেই রওনা দিলাম ফের। সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতি হল তিস্তা পারের মঙ্গন। উত্তর সিকিমের একটি জেলা মঙ্গন। মঙ্গন শহর থেকে রিনঘিমের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। আধ ঘন্টার পথ। চড়াই পথ বেয়ে যখন রিনঘিমে পৌঁছালাম তখনও দিনের আলো স্পষ্ট। মঙ্গন, রিনঘিম হয়েই লাচেন, লাচুং যাওয়ার পথ। লাচেন থেকে গুরদোংমার লেক এবং লাচুং থেকে ইয়ুমথাং ভ্যালি যেতে হয়। রিনঘিমে খুব যে পর্যটকরা থাকেন এমনটা নয়। আমি রিনঘিমে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
একটি হেলিপ্যাড আছে রিনঘিমে। হেলিপ্যাডের পাশেই আমার দু’দিনের আস্তানা। সিকিমের এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ এবং মোবাইল পরিষেবা অনিয়মিত। আকাশ মেঘলা। লেপচা অধ্যুষিত এক ছোট্ট জনপদ হল রিংঘিম। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ১৬০টির মতো পরিবারের বাস এখানে। পায়ে হেঁটেই বেড়িয়ে নেওয়া যায় সমগ্র গ্ৰামটি। এখানের বিশেষ আকর্ষণ হল ওই হেলিপ্যাড গ্ৰাউণ্ড।
হোমস্টেতে শুয়ে-বসে, হেলিপ্যাডে পায়চারি করে, আর ছবির তুলতে তুলতে কখন যে সময় কেটে যাবে জানতেই পারবেন না। যে দিকে চোখ যাায় দিগন্ত-প্রসারিত পাহাড়ের ঢেউ। কোথাও উঁকি দিচ্ছে বরফ-আচ্ছাদিত পর্বতশৃঙ্গ। পাখির ডাক আর পাহাড়ি ঝর্ণাধারার কলধ্বনি রিনঘিমকে আরও মোহময় করে তুলেছে। অবস্থানগত বৈশিষ্ট্যের জন্য রিনঘিমকে ঝুলন্ত বারান্দা বলা হয়। একটু খাড়াই পথ হলেও হাঁটাপথেই দেখে নেওয়া যায় রিনঘিম মনাস্ট্রি। ভিতরের পরিবেশটা ভারি সুন্দর।
নির্ভেজাল প্রকৃতি যদি আপনার আত্মার টান হয়ে থাকে তাহলে রিনঘিমে দুটো দিন কাটিয়ে যেতে পারেন। ঠকবেন না।
ফটোঃ লেখক।