চারধাম > কাঞ্চনঞ্জঙ্ঘা > টেনডং পাহাড়ে ট্রেকিং > টেমি টি গার্ডেন > রাবাংলা > তারেভির
দক্ষিণ সিকিম জেলার প্রধান শহর। হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকানপসার, স্কুল-কলেজ ইত্যাদি নিয়ে নামচি এক জমজমাট শহর এবং সিকিমের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র তো বটেই। সিকিমের সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় পর্যটনের কথা উঠলেও নামচির প্রসঙ্গ আসবেই। শহরের কেন্দ্রস্থলটি সুন্দর করে সাজানো। তবে নামচির প্রকৃত সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করতে হলে শহরের সীমানা ছাড়িয়ে একটু বেরিয়ে আসতে হবে। নামচির নানা প্রান্ত থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জের দর্শন পাবেন। নামচির হেলিপ্যাড গ্রাউন্ড থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য অসাধারণ। এখান থেকে রঙ্গীত ভ্যালির দৃশ্যও অপরূপ।
নামচি শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সলোফক পাহাড়ে ২৬ একর জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছে ‘চারধাম’ তথা সিদ্ধেশ্বর ধাম। পূর্ব ভারতের জগন্নাথ ধাম, পশ্চিম ভারতের দ্বারকা, উত্তর ভারতের বদ্রীনাথ ধাম এবং দক্ষিণ ভারতের রামেশ্বরমের আদলে নির্মিত হয়েছে বিশাল বিশাল মন্দির। মাঝখানে রয়েছে ১০৮ ফুট উচ্চতার শিবমূর্তি।
নামচি শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে ৭০০০ ফুট উচ্চতার সামদ্রুপৎসে পাহাড়ের উপরে গুরু পদ্মসম্ভবের ১৪৭ ফুট উচ্চতার মূর্তিটি যেন নামচি শহরের ওপরে জাগ্রত এক আশীর্বাদী দৃষ্টি। সিকিমের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মূর্তিটি চোখে পড়ে। সামদ্রুপৎসে পাহাড়ের ঢালে রয়েছে চমৎকার একটি রক গার্ডেন। এই সামদ্রুপৎসে পাহাড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা, নেপালের পূর্বাংশ, কালিম্পং, দার্জিলিংয়ের কিছু অংশ ও নামচি শহর পাখির চোখে দেখা যায়।
সামদ্রুপৎসের কাছাকাছি নগদক মনাস্ট্রি। সিকিমের প্রাচীণতম মনাস্ট্রিগুলির মধ্যে একটি। সিকিমের প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর পরিচয় পাওয়া যাবে এই মনাস্ট্রির গঠনে। নামচির হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডের কাছাকাছি সিরিডি সাইবাবার মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে।
টেনডং পর্বতের নীচের দিকে সামদ্রুপৎসে পাহাড়। ট্রেক করে টেনডং পর্বত শীর্ষে ওঠা যায়। টেনডং শীর্ষের উচ্চতা ৮৫৩০ ফুট। বনের মধ্যে দিয়ে পথ। সে পথে অনেক পাখিরও দেখা পাওয়া যাবে। পর্বতের শীর্ষে রয়েছে একটি ছোট মনাস্ট্রি। রয়েছে একটি ওয়াচটাওয়ার। এই নজরমিনার থেকে সিঙ্গালিলা ও চোলা রেঞ্জ, নাথুলা, গ্যাংটক শহর ও দার্জিলিংয়ের অপূর্ব ভিউ পাওয়া যায়।
নামচি থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন টেমি টি গার্ডেন। সিকিমের একমাত্র চায়ের বাগান। নামচিতে থাকলে অন্তত একটা বেলা টেমির জন্য রাখা যেতেই পারে। ৪৪০ একর এলাকা জুড়ে টেমি চা বাগানের সৌন্দর্য আপনাকে মোহিত করবেই। নভেম্বর মাসে টেমির রাস্তায় চেরি ফুলের দেখা পাওয়া যায়। নামচি থেকে টেমি ২০ কিলোমিটার। দিগন্তবিস্তৃত সবুজ চা বাগান আর তার পিছনে উন্নতশির কাঞ্চনজঙ্ঘা, আহা, সে-দৃশ্য ভোলবার নয়।
নামচিতে থাকছেন যখন, রাবাংলা আর কতদূর? রাবাংলা সিকিমের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। নামচিতে থাকার ব্যবস্থা হলে একটা দিন রাখা উচিত রাবাংলা বেড়ানোর জন্য। উল্টোটাও হতে পারে। অর্থাৎ, রাবাংলায় থাকলে সহজেই নামচি বেড়িয়ে আসা যেতে পারে। নামচি ও রাবাংলার মধ্যে দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার।
নামচি থেকে তারেভির বেড়িয়ে আসতে পারেন। সিকিমের ভ্রমণ মানচিত্রে তারেভির একটি নতুন সংযোজন। ১০০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গিরিশিরার একাংশে তৈরি একটি রাস্তার এক দিকে গভীর খাদ। ৩৫০০ ফুট গভীর সেই খাদের দিকে চাইলে অনেকেরই বুক কেঁপে যায়। খাদের ধার দিয়ে বেড়া দেওয়া আছে। রাস্তার অন্য ধারে পাইনের জঙ্গল। বাঁধানো রাস্তায় দাঁডিয়ে খাদ ছাড়িয়ে দূরের দিকে চাইলে নদী-উপত্যকার বিস্তার, অরণ্য, তিস্তা ও রঙ্গীতের সঙ্গমের সম্মিলিত দৃশ্য আপনাকে মন্ত্রমুগধ করে রাখবে। নামচি বাজার থেকে তারেভির ১৮ কিলোমিটার। গাড়ি ভাড়া করে চলে যাওয়া যায় অল্প সময়েই। দিনে দিনে তারেভির বেড়িয়ে নামচি ফিরে আসতে পারেন। তারেভিরে থাকার ব্যবস্থা সীমিত। সুযোগ থাকলে একটা রাত তারেভিরে থাকতে পারেন। সকালের তারেভির সহজে ভোলবার নয়।
যাওয়ার পথ
গ্যাংটক থেকে নামচি ৯০ কিলোমিটার। এন জে পি থেকে থেকে ১০০ কিলোমিটার।
নামচিতে থাকার ব্যবস্থা
ব্লু ট্যামারিন্ড হোটেল, ফোনঃ ৯৬৭৯১-৫৬৯৭২। দাংমালি হেরিটেজ ভিলেজ রিসর্ট, ফোনঃ ৯৭৩৪১-২৬০৩৯। হোটেল মায়াল, ফোনঃ ৯৬০৯৮-৫৫৩৪৭। ডং বস্তি নামচি হোমস্টেঃ ফোনঃ ৯৬০৯৮-০৪২৬৭। ফোর সিজন হোমস্টে নামচি, ৯৪৮৩৩-২১৬৩৮। হোটেল পরিচিত, ফোনঃ ৭৭১৮৩-৮৩২০৭। কাভা স্যুইটস, ফোনঃ ১২৪৬২-০১৩২৫, পদ্মশোভা হোটেল, ফোনঃ ৭৭৯৭৭-০৭৯৭৯।
তারেভিরে
তারেভির রিসর্ট, ফোনঃ ৮৯২৭৭-৯৪২৭১।