নিভৃতে সুন্দরঃ লিংসে
লিংসে। আঞ্চলিক উচ্চারণে অনেকটা ‘লিংজে’। এখানে সাধারণভাবে ভ্রমণার্থীদের মুখে মুখে উচ্চারিত ‘লিংসে’ উচ্চারণটিই ব্যবহৃত হল। কালিম্পংয়ের পশ্চিম প্রান্তে, সিকিম সীমান্তের কাছাকাছি লিংসে খাসমহল। লিংসে ইকো ভিলেজ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে পার্বত্য আঞ্চলটা। ৪৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত লিংসের অপূর্ব নৈসর্গিক শোভা, পাহাড়ের সারি, পাহাড়ের ধাপে ধাপে জৈব চাষের খেত, ফুল, প্রজাপতি, পাখি আর নানা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক মানুষজনের আন্তরিক আতিথেয়তা যে আপনার মন কাড়বে সে-কথা আবশ্যই করে বলা চলে।
![](https://torsa.in/wp-content/uploads/2022/03/jj.jpg)
লিংসে। ফটো সৌজন্যেঃ দিশা হোমস্টে।
বিষমুক্ত খাবারদাবার, বিশুদ্ধ বাতাস আর সর্বক্ষণ সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্য প্রকৃতই প্রাণের আরাম। কালিম্পং থেকে লিংসে ৫২ কিলোমিটার। পেডং থেকে ২৪ কিলোমিটার। উত্তরবঙ্গ ভ্রমণপথের নতুন বাঁক লিংসে। দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শিলিগুড়ি বা এন জে পি থেকে সিকিমের রংপো, রেনক হয়েও লিংসে আসা যায়।
ঝুসিং
লিংসেতে থাকার ব্যবস্থা হলে ঝুসিং ভিউপয়েন্টে তো যেতেই হবে। ঝুসিং লিংসে খাসমহলেরই একটি গ্রাম। ঝুসিং ভিউপয়েন্টে থেকে দেখবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার আসাধারণ দৃশ্য। সেরভাং জলপ্রপাতের কাছেও তো একবার যেতে হবে। উত্তরবঙ্গের অন্যতম দীর্ঘ প্রপাত ধারা। দূর থেকে জলপ্রপাতের ধ্বনি শোনা যায়। নেওড়া ভ্যালির প্রান্ত ঘেঁষে ঝুসিং। উৎসাহীরা সঙ্গে গাইড নিয়ে ঝুসিং থেকে নেওড়া উপত্যকায় ট্রেক করতে পারেন।
![](https://torsa.in/wp-content/uploads/2022/03/WhatsApp-Image-2022-03-09-at-3.12.38-PM.jpeg)
ঝুসিং। ফটো সৌজন্যে: ঝুসিং হোমস্টে।
সমন্বিত সংস্কৃতি
লিংসেতে দেখবেন লেপচা, শেরপা ও ভুটিয়া জনগোষ্ঠীর মনাস্ট্রি। যে যাঁর নিজের সংস্কৃতি অনুসারে ধর্ম পালন করেন। জীবনযাপন করেন মিলেমিশে। সেই জীবনযাপন ধারার নানা ছবি চোখে পড়বে লিংসের পাহাড়ে। রীতি, সংস্কৃতির ভিন্নতা সামাজিক চর্চায় শান্তির বাতাবরণ। পাহাড়, পাহাড়ি পরিবেশ ভর করবে আপনার ওপর। সে সত্যিসত্যিই আনন্দের।
![](https://torsa.in/wp-content/uploads/2022/03/WhatsApp-Image-2022-03-09-at-2.15.35-PM.jpeg)
ফটো: সৌজন্যেঃ ঝুসিং হোমস্টে।
পথ
শিলিগুড়ি বা এন জে পি থেকে সিকিমের রংপো, রেনক হয়েও লিংসে আসা যায়। সেও বেশ এক নতুন দেখাশোনার পথ। শিলিগুড়ি থেকে রংপো আসার শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। আবার রংপো থেকে রেনক যাওয়ার নির্দিষ্ট সময়-ভিত্তিক শেয়ার-ভিত্তিক গাড়ি পাওয়া যায়। কালিম্পংয়ের শেষ প্রান্তে লিংসে। রাজ্য সীমান্তের ওপারে সিকিমের রেনক। এন জে পি অথবা শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার গাড়িতে কালিম্পং এসে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে রামধুরা, ইচ্ছেগাঁও, পেডং ছাড়িয়ে লিংসে। এটা আয়াশের যাত্রা। অন্যদিকে রংপো, রেনক দেখতে দেখতে পৌঁছানো। শিলিগুড়ি থেকে যে-কোনও একটা পথ ধরে লিংসেতে এসে সেখান থেকে অন্য পথটি ধরে শিলিগুড়ি বা এন জে পি ফেরা যেতে পারে। একটা পরিক্রমা হয়ে যায় কার্যত।
আরিতার
লিংসে থেকে ৭ কিলোমিটার আরিতার লেক। ৪৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের আকৃতির প্রাকৃতিক ( পরে খানিকটা সংস্কার হয়) আরিতার লেক। পাইন বনে ঘেরা সবুজ-রঙা জলের হ্রদ আরিতার তথা লামপোখরি ও তার সামগ্রিক পরিবেশ আপনাকে মুগধ করবে অবশ্যই। হ্রদের ধার ধরে খানিকটা হাঁটুন না, কত দৃশ্যকল্প। পায়ে হেঁটে লেক পরিক্রমা করা যায়। বোটে চড়েও লেকের দূরপ্রান্তে পৌঁছনো যেতে পারে। আর আরণ্যের ওপর দিয়ে চাইলে আকাশের গায়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা। আরিতারের উপরের দিকে একটি পাহাড়ের শীর্ষে মানখিম গ্রাম। মানখিম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য সহজে ভোলবার নয়।
![](https://torsa.in/wp-content/uploads/2022/03/WhatsApp-Image-2022-03-09-at-2.16.46-PM.jpeg)
আরিতার লেক। ফটো সৌজন্যে: কর্মা হোমস্টে।
কাঞ্চনজঙ্ঘার জলছবি
লিংসের উপরের দিকে মূলখাড়কা লেক। পশ্চিমবঙ্গ-সিকিম সীমান্তের এক পাহাড়ের ৭৫০০ ফুট উচ্চতায় রয়েছে একটি জলাশয়। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে মূলখাড়কা লেকের তীর থেকে আকাশে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং জলাশয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ প্রতিফলন দেখে অভিভূত হয়ে পড়তে হয়। আশেপাশে ছড়িয়ে থাকে ফুল, পাখির কথা, আর বাতাসের শব্দ। উত্তরাখণ্ডের দেওরিয়াতালে চৌখাম্বার প্রতিবিম্ব এক অপার্থিব দৃশ্য রচনা করে। এখানে কাঞ্চনজঙ্ঘা।
পাহাড়শীর্ষের প্রতিফলনে জাগে মূলখাড়কার জলাশয়। দূরের পর্বত কাছে আসে। জলাশয়টি আঞ্চলিক বাসিন্দাদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। যাঁরা রাচেলা পিক ট্রেক করেন তাঁরা সাধারণত মূলখাড়কায় ক্যাম্প করেন।
![](https://torsa.in/wp-content/uploads/2022/03/WhatsApp-Image-2022-03-09-at-3.18.34-PM.jpeg)
মূলখাড়কা লেকের আরেক ছবি। ফটো সৌজন্যেঃ দিশা হোমস্টে।
লিংজে থেকে মূলখাড়কা লেক ৪-৫ কিলোমিটার। ছোট ট্রেক। প্রাপ্তিটা বড়। পথ একটু চড়াই। ৮-১০ কিলোমিটারের যাতায়াত। লিংজে বা ঝুসিং গ্রাম থেকে তাগাথান হয়ে মূলখাড়কা। সঙ্গে আঞ্চলিক কেউ গাইড হিসেবে থাকলে পথ ভুলের আশঙ্কা থাকে না। চাইলে মূলখাড়কায় রাত্রিবাস করা যেতে পারে।
লিংসে, আরিতার, মানখিম থেকে সিল্করুট যাত্রা শুরু হয়। সিল্করুটে মনের মতো করে বেড়াতে খানিকটা সময়ের প্রয়োজন। দিনে দিনে জুলুক পথের খানিকটা বেড়িয়ে লিংসে বা আরিতারে ফিরে আসা যায়।
থাকার ব্যবস্থা
লিংসেতেঃ দিশা হোমস্টে,ফোন ৯৬৭৯৬-০৩৯৯৮।ঝুসিং হোমস্টে, ফোন ৯৬৭৯৭-০০৪২৮। অর্গানিক হোমস্টে
৯০০২১৪১৯৬৯। চুরিবোটায় হোমস্টে, ফোন ৯৬৩৫৬-০৪৩৮১।
মূলখাড়কায়ঃ মূলখাড়কা হোমস্টে, ফোন ৯৭৪৯০৬০৫৯৩
আরিতারেঃ কর্মা হোমস্টে, ৯৫৯৩৩-৮৬১২৩। গ্রিন ভ্যালি হোমস্টে, ফোন ৯৪৩৪৮-৬৬৩৯৩। কার্ডামম ব্লুজ হোমস্টে, ৯০৮৩৮-৩৪২৮৯। ট্রাগোপান হোমস্টে (মানখিম রোড), ফোন ৮১৪৫৯-৯০৫৫৫।
উপরের মূলখাড়কা লেকের প্রথম ছবি সৌজন্যেঃ দিশা হোমস্টে।