হাতে দিন দশেকের সময় নিয়ে দিব্যি বেড়িয়ে নেওয়া যায় মহীশূর, বন্দিপুর, মুদুমালাই ও উটি। অর্থাৎ এ ভ্রমণে যেমন থাকছে রাজকীয় ঐতিহ্য ও স্থাপত্যের শহর মহীশূর বেড়ানোর সুযোগ, তেমনই থাকছে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর বিখ্যাত দুই অরণ্য সফর এবং দক্ষিণ ভারতের দারুণ সুন্দর শৈলশহর উটির কুয়াশা, রোদ্দুর গায়ে মেখে পাহাড়ি পথে হেঁটে বেড়ানোর রোমান্টিকতা। বৈচিত্রপূর্ণ এই ভ্রমণ পরিকল্পনাটি ছকেছেন ভ্রমণ অন্ত প্রাণ তুষার পাত্র ।
কীভাবে বেড়াবেন
প্রথম দিনঃ
হাওড়া থেকে বিকেল চারটে দশে ২২৮১৭ মাইশোর সাপ্তাহিক এক্সপ্রেসে মহীশূরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু।
দ্বিতীয় দিন :
ট্রেনে
তৃতীয় দিন:
ট্রেন রাইট টাইম থাকলে ভোরে পৌঁছে যাবেন মহীশূর। স্টেশনের বাইরে চা খেয়ে রওনা দিন হোটেলের উদ্দেশে। সারা শহরে প্রচুর মাঝারি মানের হোটেল আছে। তবে বেড়ানোর মরশুমে খুব ভিড় হয়। তাই আগে থেকে অনলাইনে বা ফোনে হোটেল বুক করে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে অটোতে সওয়ারী হয়ে শুরু করুন টিপু সুলতান ও হায়দার আলির বহু স্মৃতির শহর মহীশূর দর্শন।
বেড়ানোর জায়গা অনেক। তবে অবশ্যই দেখবেন মাইসোর প্যালেস, বৃন্দাবন গার্ডেন, চামুণ্ডেশ্বরী মন্দির এবং মহীশূর শহর থেকে চোদ্দ কিলোমিটার দূরের শ্রীরঙ্গপত্তনম।
চতুর্থ দিন:
মহীশূর থেকে সকাল সকাল একটা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন বন্দিপুরের উদ্দেশ্যে। কর্ণাটক স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাস স্ট্যাণ্ড থেকে বন্দিপুরের বাসও পাওয়া যায়।যদি মনে হয় বন্দিপুরে না থেকে মুদুমালাইয়ে থাকবেন তাও পারেন। দুটোই ঘেঁষাঘেঁষি অরণ্য। যদিও বন্দিপুর কর্ণাটকে আর মুদুমালাই তামিলনাড়ুতে।যেখানেই থাকুন, দু দিনের জন্য হোটেল নেবেন। বন্দিপুর জাতীয় উদ্যান এবং মুদুমালাই, দু-জায়গাতেই সরকারি রিসর্ট আছে। বুকিং হয় অনলাইনে। আমি বলব, প্রথম দিনের জন্যে রাখুন বন্দিপুর।এখানে সকাল ৬টা থেকে ৮টা এবং বিকেল ৩টে থেকে ৫টা জঙ্গল সাফারি হয়।জঙ্গল যদি ভালোবাসেন, এখানে এলে খুশি হতে বাধ্য। হাতির অবাধ বিচরণক্ষেত্র এই বন্দিপুর অরণ্য।ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে বাঘের দেখা পেয়েও যেতে পারেন। এই সফর মনে থাকবে আর একটা কারনে।এই বন্দিপুরের জঙ্গলই ছিল চন্দনদস্যু বিরাপ্পানের সাম্রাজ্য।আজ না আছে বিরাপ্পান আর না আছে আগেকার সেই চন্দনবন।
রাস্তায় চেকপোস্ট দুই রাজ্য তথা কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর সীমানায় চেকপোস্ট রয়েছে। প্লাস্টিক-সামগ্রীর ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। প্ল্যাস্টিকের ক্যারিব্যাগ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। সঙ্গে মিনারেল ওয়াটারের বোতল থাকলেও বিপদ।
পঞ্চম দিন :
আজ আমরা দেখব মুদুমালাই জাতীয় উদ্যান এবং ব্যঘ্র প্রকল্প। এখানেও দু’বেলা সাফারি হয়।সকাল ৭টা থেকে ৯টা এবং বিকেল ৩টে থেকে ৬টা। তিন ভাবে হয়। জিপ,বাস এবং হাতির পিঠে চড়ে। তবে সাফারি সকালে করে বিকেলে বিশ্রাম নিতে পারেন।মায়ার নদী বয়ে গেছে এই জাতীয় উদ্যানের মধ্যে দিয়ে। এই নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া জলপ্রপাতটি খুব সুন্দর। আর হাতিশালাটি দেখতেও ভালো লাগবে। জঙ্গলের ওয়াচটাওয়ার থেকে দেখা চারপাশের অপরূপ প্রাকৃতিক শোভা মনে থাকবে বহুদিন।
মহীশূর-উটি রাস্তাটা দারুণ সুন্দর। এই রাস্তার উপরেই বন্দিপুর এবং মুদুমালাই। রাস্তাতেই হয়তো দেখা হয়ে যাবে ময়ূর,হরিণ,সম্বর কিম্বা বাইসনের দলের সঙ্গে।
ষষ্ঠ দিন:
আজ আমরা মুদুমালাইকে বিদায় জানিয়ে যাত্রা করব উটির উদ্দেশে। উটির দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার।এখান থেকে উটির বাস পাওয়া যায়।তবে একটা কথা, এই রাস্তায় কিন্তু ভয়ঙ্কর সব বাঁক রয়েছে।কাকে বলে ‘হেয়ার পিন বেণ্ড’দেখবেন। বমির উপসর্গ থাকলে সাবধান। উটিতে প্রচুর হোটেল আছে।বুক করে যেতে পারেন, না হলে ওখানে গিয়ে খোঁজ করলেও পেয়ে যাবেন। কলকাতার বহু সংস্থার হলিডে হোম রয়েছে উটিতে। কলকাতা থেকেই বুক করে যেতে পারেন। হোটেলে পৌঁছে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে বেরিয়ে পড়ুন। দুটো দিন থাকছেন উটিতে। সেইভাবে প্রোগ্ৰাম করুন।এই দু’দিনে যা অবশ্যই দেখবেন তার মধ্যে থাকবে, কুন্নুর টি গার্ডেন,ডোড্ডাবট্টা পিক, নীলগিরি টি গার্ডেন ও ফ্যক্টরি, ওয়েলিংটন,গল্ফ কোর্স,পাইন ফরেষ্ট,পাইকারা লেক,পাইকারা ফলস, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সুটিং স্পট, রোজ গার্ডেন এবং বোট হাউস।
সপ্তম দিন:
সারা দিন উটি এবং তার আশেপাশের স্পটগুলো নিজেদের মতো করে ঘুরতে পারেন। হোমমেড চকলেট এবং নীলগিরি চা কিনতে ভুলবেন না।
অষ্টম দিন:
সকালের দিকটা থাকছে হাতে। যদি কোন জায়গা বাদ পড়ে যায় অনায়াসে ঘুরে আসতে পারেন। কেনাকাটা করতে পারেন। ঘন্টা চারেক সময় আছে। দুপুর দুটোর সময় উটি থেকে টয় ট্রনে মট্টুপালয়ম। এখান থেকে সন্ধ্যে ৭.৪৫এ নীলগিরি এক্সপ্রেস ধরে ভোরবেলায় পৌঁছে যাবেন চেন্নাই।
নবম দিনঃ
চেন্নাই স্টেশনে ফ্রেশ হয়ে নিন। তারপর উঠে পড়ুন সকালের করমণ্ডল এক্সপ্রেসে
দশম দিন:
দুপুরে আপনি পৌঁছে যাবেন হাওড়া স্টেশনে।
হাতে সময় থাকলে মহীশূরে অতিরিক্ত একটা দিন থাকতে পারেন। এত দূর থেকে গিয়ে একটু বিশ্রাম হবে।সে ক্ষেত্রে টুরটা হবে এগারো দিনের।