Follow us
Search
Close this search box.

মুসৌরির কাছেই রোমান্টিক ল্যান্ডোর

মুসৌরির কাছেই রোমান্টিক ল্যান্ডোর

 

পথ গেছে পাহাড় ঢালের কুয়াশামাখা দেওদার বনের পাশ দিয়ে। বাতাসে কাঠের সোঁদা গন্ধ। পথের পাশে পাশে কত ফুলের বাহার। স্বপ্নের মতোই। তবে বাস্তব। মুসৌরির বাজার অঞ্চল থেকে হাঁটা শুরু করলে এরকম একটি পথ ধরেই ৪৫-৫০ মিনিট সময় লাগবে। আপনি পৌঁছে যাবেন ল্যান্ডোরে। ছবির মতো এই পথ ধরে হাঁটা মনে থাকবে। হাঁটতে অসুবিধা থাকলে অবশ্য মুসৌরি থেকে গাড়ির ব্যবস্থা আছে। গাড়ি সঙ্গে রাখার দরকার নেই। ল্যান্ডোরে পৌঁছে গাড়ি ছেড়ে দিন। ওখান থেকে মুসৌরি ফেরার গাড়ি পাবেন। সারাদিন ল্যান্ডোর বেড়িয়ে রাতে ফিরে আসুন মুসৌরিতে।

সময় যেন থমকে আছে ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা এই ক্যান্টনমেন্ট শহরটিতে। ল্যান্ডোরের স্থাপত্যে, রুচিশীলতায়, খাবারদাবারে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির ছোঁয়া লেগে থাকে।

 

 

ল্যান্ডোরে রাসকিন বন্ডের দেওদার গাছেরা ফিসফিস কথা বলে। ‘দ্য রুম অন দ্য রুফ’ থেকে শুরু করে ‘আ সং অফ ইন্ডিয়া’ পর্যন্ত বহু মরমী গ্রন্থের স্রষ্টা ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ভারতীয় লেখক রাসকিন বন্ড বাস করেন ল্যান্ডোরে। বাড়ির নাম   ‘আইভি কটেজ’।

ওই আইভি কটেজ সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে খানিকটা এগোলে পাবেন ‘চার দুকান’। দেখনদারির ঝকঝকানিতে নয়,দীর্ঘ ঐতিহ্যে পুষ্ট পাশাপাশি চারটি পুরনো দোকান। এখন অবশ্য আরো দু-তিনটে দোকান গড়ে উঠেছে একই চত্বরে। ঔপনিবেশিক আমলে ল্যান্ডোর ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের খাবার ব্যবস্থার জন্য কাফেগুলো গড়ে উঠেছিল। বিদেশীদের রসনা তৃপ্তির উপযোগী নানা স্ন্যাক্স, কফি পরিবেশিত হতো এখান থেকে, এখনো হয়। স্কুলটি এখনো চালু রয়েছে। পড়ুয়ারা প্রধানত বিদেশী। কালে কালে বিখ্যাত হয়ে ওঠে চার দুকান। এখানকার অনিলস কাফে ও টিপ টপ টি শপ অর্ধশতক ধরে খাদ্যরসিকদের প্রশংসা পেয়ে আসছে। এই দুই কাফের ওয়াফেল, প্যানকেক, পিৎজা, বাটার ফ্রায়েড ম্যাগি, জিঞ্জার-লেমন-হানি টি প্রভৃতি খাদ্য-পানীয় ল্যান্ডোর ঐতিহ্যের বহমান ধারা।। অনিলস কাফের বান-ওমলেট চেখে দেখতে পারেন। এটি রাসকিন বন্ডের একটি প্রিয় পদ। সকাল সকাল চার দুকানে প্রাতরাশ সেরে এক কিলোমিটার চড়াই পথ ট্রেক করে চলে যেতে পারেন লালটিব্বা। এটি মুসৌরি-ল্যান্ডৌর অঞ্চলের উচ্চতম জায়গা। সুন্দর ভিউপয়েন্ট। এখান থেকে কেদারনাথ ও বদ্রীনাথের পাহাড় দেখা যায়।

ল্যন্ডোরে এলে সেন্ট পলস চার্চটি না দেখলে হয়? ১৮৩৯ সালে তৈরি এই আংলিকান চার্চটি অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। ১৮৫৯ সালে জিম করবেটের পিতা-মাতা ক্রিস্টোফার ও মেরি করবেটের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল এই চার্চে। ল্যান্ডোর ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের কাছেই কেলগ মেমোরিয়াল চার্চ। গথিক স্থাপত্যশৈলীর এই প্রেসবিটারিয়ান চার্চটি তৈরি হয় ১৯০৩ সালে। চার্চের রঙিন কাঁচের বিরাট বিরাট জানলাগুলি দেখবার মতো। চার্চটির নামকরণ হয় রেভারেন্ড ড:স্যামুয়েল এইচ কেলগের নামে। রেভারেন্ড কেলগ ছিলেন আমেরিকান প্রেসবিটারিয়ান মিশনারি। ল্যান্ডোর ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের উন্নতিতে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। তাঁর ইংরেজিতে লেখা হিন্দি ব্যাকরণের বইট একসময় শিক্ষার্থীমহলে যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছিল।

 

একবার ঢুঁ মারতে হবে সিস্টারস বাজারে। এখানকার ল্যান্ডোর বেকহাউস ‘ল্যান্ডোর কুকবুক’-এর স্পিরিটটিকে বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছে। অতীতে ল্যান্ডোরের বিদেশী বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে নানা রেসিপির আদানপ্রদান করতেন। ল্যান্ডোরের পরিবেশ,আবহাওয়া অনুসারে সেইসব মেনু নির্ধারিত হতো। তারপর ১৯৩০ সালে সেইসব মেনু পুস্তকারে প্রকাশিত হয় ‘ল্যান্ডোর কুকবুক’ নামে। রাসকিন বন্ড ও গনেশ সইলি সম্পাদিত ‘ল্যান্ডোর কুকবুক’ বইটি পাওয়া যায়। অ্যামাজন, ফ্লিপকার্টে খোঁজ করতে পারেন। রাসকিন বন্ডের ‘ল্যান্ডোর ডেজ, এ রাইটার্স জার্নাল’ বইটি লেখকের ল্যান্ডোরে বসবাসের অভিজ্ঞতা, অনুভবের রোজনামচা। প্রকাশক: পেঙ্গুইনে বুকস ইন্ডিয়া ।
ল্যান্ডোর বেকহাউস-এর চকোলেট ব্রাউনি, ভ্যানিলা কুকি, পি-নাট বাটার, ব্লন্ডি,মুলমুলি কাবাব সেই ঔপনিবেশিক ল্যান্ডোরের খাদ্য সংস্কৃতির পরিচয় দেবে।

 

পাশেই প্রকাশ এন্ড কোম্পানির শোরুম ‘অনিলস স্টোর’। অনেক ইতিহাস যুক্ত হয়ে আছে শতবর্ষ প্রাচীন এই স্টোরটির সঙ্গে। এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন আমেরিকান ঘরানার চিজ, পি-নাট বাটার, ব্ল্যাকবেরি জ্যাম, স্ট্রবেরি জ্যাম, নানারকমের জেলি, মারমালেড।

যাওয়ার পথ

দেরাদুন থেকে ল্যান্ডোর ৩৮ কিলোমিটার। দেরাদুন থেকে ট্যাক্সি পাওয়া যাবে। থাকার ঠিকানা মুসৌরি হলে হেঁটে বা ট্যাক্সিতে ল্যান্ডোর যেতে পারেন। দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। হাঁটাপথ খুবই আকর্ষণীয়।

থাকার ব্যবস্থা

মুসৌরিতে প্রচুর হোটেল। মুসৌরিতে থেকেই বেড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে ল্যান্ডোরকে আরেকটু চিনতে , জানতে একটা দিন ল্যান্ডোরে থাকা যেতেই পারে। নীচে কয়েকটি হোটেলের হদিস থাকল।
রকবি ম্যানর : একটি বিলাসবহুল হোটেল। সেটাই একমাত্র পরিচয় নয়। সুদীর্ঘ ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে বাড়িটির পাথরের দেওয়াল, ব্রিটিশ স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত খিলান, ফায়ারপ্লেস, আসবাবপত্র,বাসনকোসনের সঙ্গে। ১৮৪০ সালে ক্যাপ্টেন জি এন চৌথি ল্যান্ডোরে ২ একর জায়গা কিনে প্রাসাদোপম একটি বাংলো তৈরি করেছিলেন। স্যার ওয়াল্টার স্কটের একটি কবিতায় ইংল্যান্ডে রকবি ক্যাসেলের সামনে একটি যুদ্ধের উল্লেখ রয়েছে। ওই দুর্গের নামানুসারে এই বাংলোর নামকরণ করা হয়।
যোগাযোগের নম্বর: ৯৬৩৪৪৪৩৬৬৬, ৯৭৬০২৪৫৪৪৫।
ই-মেল: respjunction@rokebymanor.com

লা ভিলা বেথানি:  ফোন নম্বর : ৯৯১০০৪৯৬৪৪, ১৩৫-২৬৩০০৫৪ ।
দেওদার উডস : ১৩৫-২৬৩২৬৪৪,১৩৫-২৬৩২৫৪৪।
আইভি ব্যাঙ্ক গেস্ট হাউস : ৯৮৯৭৬০৪৯৯৯,১৩৫-২৬৩১৪৩৩।
উডসাইড :  ৯৮১১৩২২২৮৫, ১৩৫-২৬৩০৪১৬।
ডোমাস ইন : ১৩৫-২৬৩৪৮৭৪ , ই -মেল : domasinn@gmail.com
কটেজ ইন দ্য হিলস (আনহোটেল কোম্পানি): ৯৬৫০০৩৩৩৫৩ , ই -মেল : stay@unhotel.in
সি ফোর্থ লজ : ১৩৫-২৬৩২৮০১
ক্লিফ কটেজ : ৯৬৩৪১৭০২২৪

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *