আলিপুরদুয়ার জেলার পর্যটন মানচিত্রে বক্সা ফোর্ট, লেপচাখা, তাসিগাঁও, আদমা অঞ্চলগুলি এখন যথেষ্ট সম্ভাবনাময়।
বক্সা পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় ১৩ টি গ্রামে ডুকপা জাতির মানুষের বসবাস। ডুকপাদের আদি নিবাস মূলত ভুটান। তবে বক্সা পাহাড়ে বসবাসকারী ডুকপারা ভারতীয়। এরা জোংখা ভাষায় কথা বলেন। সকলেই বৌদ্ধ ধর্মালম্বী।
‘লোসার’ তিব্বতি ক্যালেন্ডার অনুসারে নতুন বছরের সূচনা ও নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। তিব্বতি ও অন্য বিভিন্ন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষজন নববর্ষকে স্বাগত জানান লোসার উৎসবের মধ্যে দিয়ে। পূর্ব ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা পাহাড়ের ডুকপারা লোসার উৎসব পালন করেন সাড়ম্বরে। আলিপুরদুয়ার জেলা তথা ডুয়ার্স পর্যটনে বক্সা পাহাড়ার লোসার উৎসব একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
শীত-বসন্তের সন্ধিক্ষণে ৩-৪ দিন ধরে লোসার উৎসব চলে। লোক সমক্ষে উঠে আসে ডুকপা সম্প্রদায়ের ভাষা, নাচ-গান, পূজা পদ্ধতি, পোষাক, খাদ্য, ডুকপা সংস্কৃতি। পুরুষেরা এদিন তাদের ট্র্যাডিশনাল পোশাকক বোখখু ও মহিলারা কিরা ও গুচ্ছুম পরিধান করে নাচে-গানে অংশ গ্রহণ করেন। সাথে ধূপ-ধুনো, ঘি, মাখন দিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে লামারা নিজ কুল দেবতাদের পুজো করেন। তাঁদের বিশ্বাস এই পুজোর ফলে পাহাড়ে থাকা সকলকে রোগব্যাধি, বাধা-বিপত্তি থেকে ভগবান রক্ষা করবেন।
বক্সা পাহাড়ের লোসার উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ তীরন্দাজি। ডুগো বা দুগো খেলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন পুরুষেরা। ডুগো/দুগো পাথর ছুঁড়ে ফেলার এক ধরনের খেলা। মহিলারা ব্যাস্ত থাকেন রান্নাবান্না ও খাবারদাবার তৈরির কাজে। উৎসবের দিনগুলিতে সকলে মিলেমিশে একসাথে খাওয়াদাওয়া করেন। ডুকপাদের ঐতিহ্যের খাবার পাঁ (ভাত-মাংস দিয়ে তৈরি) রান্না হয়। বাকি দিনগুলোর মতো আলাদা ভাবে আর বাড়িতে উনুন জ্বলে না এই লোসার উৎসবের সময়ে। পানীয় হিসেবে তৈরি হয় মাখন-সহযোগে তৈরি ঠান্ডা চা জাঁর ও নিঙ্গার।
সন্ধ্যায় গুম্ফায় প্রদীপ জ্বালিয়ে মহিলারা মেতে ওঠেন ঐতিহ্যের নাচে-গানে। পুরুষেরাও তালে তালে কোমর দুলিয়ে এগিয়ে আসেন, অংশ নেন নাচ-গানে। ছোটো-বড় সকলেই এই লোসার উৎসবের প্রাঙ্গণে নিজস্ব ঘরানার কলা-কৌশল প্রদর্শন করে থাকেন। চিত্তাকর্ষক ও রোমাঞ্চকর এই লোসার উৎসব বক্সা পাহাড়ের পর্যটনে এক নতুন দিশা হয়ে উঠেছে।
নিষ্কলুষ প্রকৃতির কোলে লোসার উৎসব দেখতে বহু পর্যটকের জমায়েত ঘটে বক্সা পাহাড়ে। তিন থেকে চারদিন উৎসব চলে। লোসার উৎসব উত্তরবঙ্গের অন্যতম এক ঐতিহ্যশালী উৎসব। ডুয়ার্সের এক বিশেষ পার্বণ।
ফটোঃ লেখক।
লেখকের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরঃ ৮৮০৩৪ ৭০৭৩৭