ভিতরে ভিতরে ইচ্ছেটা ছিল অনেক দিন ধরেই। সময় আর হয় না। অবশেষে পেল পরিণতি। কয়েকদিন আগে ঘুরে এলাম রিমিল থেকে। বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ সীমান্তে সবুজের চাদরে ঢাকা এক ছোট্ট জনপদ ঝিলিমিলি। এই ঝিলিমিলিতেই শালের জঙ্গলের মধ্যে টিলার উপরে রাণীবাঁধ পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে গড়ে উঠেছে রিমিল প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র। রিমিল লজ তার মধ্যমণি। লিখতে বসে ভাবছি লজের রিভিউ হয়ে যাবে না তো? আসলে রিমিল শুধু লজ নয়, এখন ছুটি কাটানোর অন্যতম জনপ্রিয় টুরিষ্ট ডেস্টিনেশন-ও। সবুজের ছায়া মাখা রিমিলের প্রেমে পড়তে আপনি বাধ্য।
প্রান ভরে অক্সিজেন নিয়ে দু-একটা দিন অনায়াসেই কাটিয়ে দেওয়া যায় সবুজ জঙ্গল আর লাল মাটির ঝিলিমিলিতে। নিখাদ বিশ্রাম পাবেন। প্রকৃতির মাঝে রিমিল লজের বারান্দায় কিংবা নীচে খাটিয়ায় বসে গল্প করতে করতে দিন কেটে যায়। গাছের ফাঁকে ফাঁকে সূর্যের আলোর ছটা দিনভর মাটিতে কত আলপনা এঁকে চলে। সন্ধ্যে নামলেই জংলি ঝিঁঝিঁ পোকার কলতানে মুখরিত গোটা অঞ্চল। কখনো দূর থেকে ভেসে আসে মাদলের দ্রিম দ্রিম বোল। রাতের বন ফায়ারে আছে এক অদ্ভুত মাদকতা।
জঙ্গলের মধ্যে হলেও অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রিমিলে মজুদ। ছোটদের জন্যও রয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থা। থাকার জন্যে আছে ট্রি হাউস, টেন্ট হাউস, ডিলাক্স রুম ও কটেজ। খাওয়াদাওয়ার জন্য রয়েছে রিমিলের নিজস্ব রেস্তোরাঁ ‘সুরুচি’। এখানে এসে মনপসন্দ সব খাবারদাবার পাব, আমি সত্যিই ভাবিনি। লজের সর্বত্রই জঙ্গলমহলের আন্তরিকতার ছোঁয়া। রিমিলকে কেন্দ্র করে ঘুরে নেওয়া যায় মুকুটমণিপুর (২৮কিমি) , সুতান(২০কিমি) এবং তালবেড়িয়া ড্যাম(৪কিমি)।চাইলে যাতায়াতের পথে দু-একটা দিন থেকে এ সফরে যোগ করতে পারেন ঝাড়গ্ৰাম এবং বেলপাহাড়ি। আমরা রিমিল থেকে গিয়েছিলাম তালবেড়িয়া ড্যাম।
রিমিল লজ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে রাউতাড়া গ্রামের শেষ প্রান্তে তালবেড়িয়া ড্যাম। সবুজ টিলা আর জঙ্গলের মধ্যে তালবেড়িয়া জলাধার। ড্যামের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত চলে গেছে পিচঢালা রাস্তা। মাঝে লকগেট। প্রথম দর্শনেই কেরালার পেরিয়ার লেকের সঙ্গে সবুজে ঘেরা এই বিস্তৃত নীল জলরাশির একটা মিল খুঁজে পেলাম। চাইলে নৌকায় ভেসে বেড়ানো যায় জলাধারে। নির্জন নীল-সবুজের মধ্যে শুধু সামনে চেয়ে বসে থাকা। ইতিউতি পাখি ডাকে। কোথা দিয়ে সময় বয়ে যায়।
কখন যে বেলা গড়িয়ে গেছে খেয়াল করিনি। এদিকে গোধূলির রং লেগেছে তালবেড়িয়ার জলে। মন চায় না, কিন্তু ফিরতে তো হবেই। সেচ দফতরের এক আধিকারিকের কাছে শুনেছিলাম, তালবেড়িয়ায় সূর্যোদয়ের দৃশ্য নাকি অসাধারণ। বুঝলাম ঠিক-ই বলেছেন ভদ্রলোক। তবে সে দৃশ্য এ যাত্রায় আধরা থেকে গেল। কথা দিয়ে এসেছি, আবার আসিব ফিরে, কোনও এক বর্ষাশেষের ভোরে।
যাওয়ার পথ
বাঁকুড়া থেকে ঝিলিমিলির দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে গাড়িতে জাতীয় সড়ক ধরে খড়্গপুর হয়ে চলে আসুন ঝাড়গ্ৰাম। ট্রেনেও আসা যায় ঝাড়গ্ৰাম। ঝাড়গ্ৰাম থেকে বিনপুর, শিলদা, বেলপাহাড়ি হয়ে পৌঁছে যান রিমিলে। ঝাড়গ্ৰাম থেকে দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে খড়্গপুর না গিয়ে মেদিনীপুর, ধেড়ুয়া হয়ে ঝাড়গ্ৰাম যাওয়া যায়। এ পথের দূরত্ব কিছুটা কম। কলকাতা থেকে ঝিলিমিলি নাইট সার্ভিস বাস আছে।
বুকিং কীভাবে
ফোনে যোগাযোগ করলে লজ থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ব্যাঙ্ক ডিটেলস। অগ্ৰিম টাকা পাঠিয়ে বুকিং করতে হয়। লজের ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর: ৮৫৩৮৮৩৪০৩১।
কখন যাবেন
সারা বছরই যাওয়া যায়। এই শীতেও খুবই উপভোগ্য হবে রিমিল ভ্রমণ। তবে আমার মতে বর্ষার শেষে শরতের রিমিলই হবে সেরা। সঙ্গে সুতানের মন ভালো করা সবুজ এবং জল টল টল মুকুটমণিপুর আর তালবেড়িয়া ড্যাম। সে হবে এক অনবদ্য সফর।