কিছু পর্যটন ব্যবসায়ী পর্যটকদের বোঝান, জয়ন্তী বেড়ানো মানে নদীর বেডে খানিক হাঁটাহাঁটি করে ফিরে যাওয়া। বলতে বাধ্য হচ্ছি, এটা পর্যটকদের ভুল বোঝানোর অসাধু প্রয়াস। পর্যটকদের বিপথে চালিত করা। কেন, সে প্রসঙ্গেই এই লেখার অবতারণা।
জয়ন্তীকে ডুয়ার্সের রানি বলা হয়। কেন বলা হয়? কিছু কারণ আছে নিশ্চয়ই। জয়ন্তী বক্সা টাইগার রিজার্ভের অন্তুর্গত একটি সবুজ গ্রাম। সেই গ্রামের এক পাশ দিয়ে কলকল করে বয়ে চলে জয়ন্তী নদী। চোখ তুলে তাকালে পাহাড়শ্রেণি। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখির কিচিরমিচির শোনা যায়। লেপার্ড, হাতি, বাইসন, হরিণ, ময়ূর, প্রজাপতির রাজ্য জয়ন্তী-সংলগ্ন জঙ্গল। নিষ্কলুষ বাতাস। প্রচুর অক্সিজেন। দুটো দিন এখানে কাটালে শরীর-মন তাজা হয়।
জয়ন্তীর গ্রামে নানা জাতি, নানা ভাষা ও বিভিন্ন ধর্মের মানুষের একত্রিত বসবাস। বর্তমান জয়ন্তী পর্যটন-নির্ভর ও আত্মনির্ভরশীল আরণ্যক গ্রাম।
জয়ন্তীতে থাকার জন্য রয়েছে ৩৬ টি ইকো-টুরিজম ফ্যামিলি হোমস্টে, পি. ডব্লিউ. ডি.-র একটি ইনস্পেকশান বাংলো, পি. এইচ. ই.-র ইন্সপেকশন বাংলো, সরকারি বনবিভাগের বনবাংলো, সি. ই. এস. সি.-র অবকাশ বাংলো রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন বিভাগের কটেজও আছে (এখন বন্ধ রয়েছে)। একটি ধর্মশালাও রয়েছে জয়ন্তীতে।
জয়ন্তী বেড়িয়ে দেখার জন্য রয়েছে –
১. জয়ন্তী ২৬ মাইল কোর জঙ্গল জিপসি সাফারি।
২. পুকুরি পাহাড় এবং তাঁসিগাও নজর মিনার।
৩. ভুটিয়াবস্তি ও চুনিয়া জংগল সাফারি।
৪. ছোট এবং বড় মহাকাল গুহা।
জয়ন্তী থেকে ১০ কিমি দুরত্বে রয়েছে ঐতিহাসিক বক্সা দুর্গ ও লেপচাখা গ্রাম। এই জায়গাগুলিকে ডুর্য়াসের ভূস্বর্গ বলা হয়। জয়ন্তী থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে রাজাভাতখাওয়াতেও জিপসিতে জঙ্গল সাফারি করা যায়। চমৎকার একটি মিঊজিয়াম, প্রজাপতি উদ্যান ও শকুন পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে রাজাভাতখাওয়ায়। জয়ন্তী থেকে ২৮ কিমি দুরত্বে সিকিয়াঝোরায় নৌকায় জঙ্গল সাফারি করা যায়। সিকিয়াঝোরায় জলপথ ডুর্য়াসের অ্যামাজন নামে পরিচিত। জয়ন্তীর রূপ, রহস্য দেখা ও অনুভবের জন্য ৪ রাত্রি ৫ দিনের প্রোগ্রাম শ্রেয়। শরীর-মনও তরতাজা হয়ে উঠবে এই ক’টা দিনে।
জয়ন্তীতে থেকেই বেড়িয়ে নেওয়া যায় রায়মাটাং (হোমস্টে আছে), চিলাপাতার জঙ্গল (হোমস্টে ও জঙ্গল সাফারির ব্যবস্থা আছে), সেন্ট্রাল ডুর্য়াস, রাঙামাটি, হাতিপোতা, ভুটানঘাট, নারাথলি, রায়ডাক, ভুটানের ফুন্টশেলিং(এখন বন্ধ রয়েছে), কোচবিহারের রাজবাড়ি, মদনমোহন মন্দির ও রসিকবিল। একটি গাড়ি ভাড়া করে খুব আরামদায়ক ভাবেই বেড়ানো যায় এই জায়গাগুলো।
জয়ন্তী আসার জন্য ট্রেনে নিউ আলিপুরদুয়ার বা আলিপুরদুয়ার জংশন স্টেশনে নামতে হবে। একটা প্রাইভেট গাড়ি করে স্টেশন থেকে জয়ন্তীতে চলে আসবেন। নর্থ বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্টের বাস আলিপুরদুয়ার ডিপো থেকে সকাল ৭টা এবং দুপুর ২টোয় পাওয়া যাবে।
আলিপুর দুয়ার চৌপথি থেকে জয়ন্তী ৩২ কিলোমিটার।
(জয়ন্তী ও সামগ্রিক ভাবে ডুয়ার্স ভ্রমণ-সংক্রান্ত তথ্যের জন্য লেখকের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরেঃ ৮৮০৩৪৭০৭৩৭ / ৭০৪৭১০০৩৮৮)।
ফটোঃ লেখক