জয়ন্তী নামটির পাশে ‘ডুয়ার্সের রানি’ শব্দটি না বসলে কোথাও যেন ধারণাটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। জঙ্গলের গহীনে এক গ্রাম। চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। একটা দিক জয়ন্তী পাহাড় দিয়ে ঘেরা। গ্রামের পাশ দিয়ে বইছে জয়ন্তী নদী। তার কলকল শব্দ। সঙ্গে নানা পাখির কিচিমিচির। লেপার্ড, হাতি, বাইসন, হরিণ, ময়ূর, প্রজাপতির রাজ্যপাট জয়ন্তীর জঙ্গল।
বিশুদ্ধ হাওয়া, প্রচুর অক্সিজেন। শরীর, প্রাণ তাজা হয়। রিভার বেডের জলে পা ভিজিয়ে হাঁটা, নদীতে স্নান, গা-ছমছমে জঙ্গলে প্রবেশ। সাফারি। রাত বিরেতে দূরাগত কোনও বণ্যপ্রাণীর ডাক। প্রকৃতই অরণ্য-বাস যাকে বলে।
থাকা ও বেড়ানো
বক্সা টাইগার রিজার্ভের মধ্যে একটি ছোট্ট গ্রাম জয়ন্তী। নানা ভাষা, নানা জাতি, নানা ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বহু দিন ধরে বসবাস করছেন এখানে। প্রধাণত পর্যটন-নির্ভর গ্রাম। ভ্রমণার্থীদের থাকার জন্য বনের গ্রাম জয়ন্তীতে রয়েছে ৩৬ টি ইকো টুরিজম ফ্যামিলি হোমস্টে, পি.ডব্লু. ডি. ইনস্পেকশান বাংলো, পি.এইচ.ই-র ইন্সপেকশন বাংলো, রাজ্যের বনবিভাগের বনবাংলো, সি. ই. এস. সি.-র অবকাশ বাংলো ও একটি ধর্মশালা।
বেড়িয়ে দেখার জন্য জয়ন্তীর নিজস্ব চারটি স্পট
১. জয়ন্তী ২৬ মাইল কোর জঙ্গল জিপসি সাফারি।
২. জয়ন্তী পুকুরি পাহাড় ও তাসিগাঁও নজর মিনার।
৩. জয়ন্তী ভুটিয়াবস্তি ও চুনিয়া জংগল সাফারি।
৪. জয়ন্তী ছোট এবং বড় মহাকাল গুহা।
জয়ন্তীর কাছাকাছি
১. জয়ন্তী থেকে ১০ কিলোমিটার দুরত্বে ঐতিহাসিক বক্সা দুর্গ, তাসিগাঁও, লেপচাখার মতো পাহাড়ি গ্রাম রয়েছে। ডুকপা জনজাতির মানুষের বসবাস জায়গাগুলোতে। সামগ্রিক ভাবে এই অঞ্চলটিকে ডুর্য়াসের ‘স্বর্গ’ বলা হয়।
২. জয়ন্তী থেকে ১৪ কিমি দূরত্বে রাজাভাতখাওয়া। এখানেও জিপসিতে জঙ্গল সাফারি হয়। রাজাভাতখাওয়ায় রয়েছে মিউজিয়াম, প্রজাপতি উদ্যান ও শকুন পুনর্বাসন কেন্দ্র।
৩. জয়ন্তী থেকে সিকিয়াঝোরা ২৮ কিলোমিটার। সিকিয়াঝোরায় বোটিংয়ের মাধ্যমে জংগল সাফারি করা যায়। সিকিয়াঝোরাকে ‘ডুর্য়াসের অ্যামাজন’ বলা হয়।
উপরোক্ত জায়গাগুলো বেড়াতে ৪ রাত ৫ দিন সময়ের দরকার হয়। সেই সময়টা দিতে পারলে ডুয়ার্সের অরণ্যাঞ্চলকে আবিষ্কার করা যায় নানা রূপে।
হাতে সময় থাকলে
জয়ন্তীতে থেকেই গাড়ি ভাড়া করে বেড়িয়ে নেওয়া যায় রায়মাটাং (হোমস্টে আছে), চিলাপাতার জঙ্গল (হোমস্টে ও জঙ্গল সাফারির ব্যবস্থা আছে), সেন্টাল ডুর্য়াস, রাঙামাটি, হাতিপোতা, ভুটানঘাট, নারাথলি, রায়ডাক, ভুটানের ফুন্টশেলিং, কোচবিহারের বিখ্যাত রাজবাড়ি মদনমোহন মন্দির ও রসিকবিল।
আসবেন কী ভাবে
ট্রেনে জয়ন্তী আসতে আপনাকে নিউ আলিপুরদুয়ার বা আলিপুরদুয়ার জংশন স্টেশনে নামতে হবে। একটা প্রাইভেট গাড়ি করে চলে আসতে হবে জয়ন্তী। ভিস্তাডোমে ট্রেনে আসা যায়। নামতে হবে রাজাভাতখাওয়ার স্টেশনে।
আলিপুরদুয়ার থেকে নর্থ বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্টের বাস পাবেন আলিপুরদুয়ার ডিপো থেকে সকাল ৭টা এবং দুপুর ২টো’য়। জয়ন্তী থেকে আলিপুরদুয়ার চৌপথি ৩২ কিলোমিটার। রাজাভাতখাওয়া থেকে জয়ন্তী ১৫ কিমি।
ফটোঃ লেখক।
লেখকের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরঃ 88034 70737.